What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected অনুভবে অনুভূতি (1 Viewer)

Able31

Community Team
Elite Leader
Joined
Sep 21, 2021
Threads
25
Messages
5,640
Credits
31,899
Mosque
Automobile
Mosque
Audio speakers
Watermelon
Thermometer
গল্প: অনুভবে অনুভূতি
লেখা: সায়মা আক্তার



অফিস শেষ করে বের হয়েছি, এর মধ্যেই রাতুলের ফোন। রিসিভ করতেই,
- হ্যালো, দোস্ত ফার্মগেট চলে আয়।
- কেন, কি হয়েছে?
- তুই আসলেই জানতে পারবি। তাড়াতাড়ি চলে আয়। হাতে সময় কম।
- আরে, বলবি তো কারনটা কি?
- তোকে আসতে বলেছি, আয়। তারপর বলছি।

তাড়াতাড়ি করে বাসে উঠে ফার্মগেট রওনা হলাম। রাতুল নাছোড়বান্দা। আমাকে না নিয়ে ছাড়বেই না।
বিশ্রী গরম পরেছে। ঘেমে একাকার হয়ে রাতুল দাঁড়িয়ে আছে। আমার অবস্থাও কেরোসিন।

- কি হয়েছে, এবার বল। হঠাৎ এতো জরুরি তলব?
- একটা জিনিস কিনবো তোর ভাবির জন্য।
- শালা, এই আজাইরা কাজের জন্য এতো পথ পাড়ি দিয়ে কষ্ট করে ছুটে আসলাম! তুই শালা কোন মানুষই না।
- আচ্ছা মানুষ না আমি, গরু। এবার খুশি তুই? তবু আমার সাথে চল, একটা শাড়ী পছন্দ করে দিবি। তুই তো জানিস তোকে ছাড়া আমি কত অচল।
- তাই বলে তোর বউয়ের শাড়ীও আমি পছন্দ করে দেবো? এটা আসলে বাড়াবাড়ি। দেখ, বিয়ের আগে তোর সব ব্যাপারে আমি হেল্প করেছি। কিন্তু বিয়ের পর এখন এগুলো একান্তই তোর ব্যাপার। এসবে অন্তত আমাকে জড়াস না।
- তোর মাথা খারাপ! আমার পছন্দমত শাড়ী কিনে নিয়ে গেলে রুপা আমাকে কচুকাটা কাটবে। তুই জানিস না আমার পছন্দ কি জঘন্য শুধু রূপা ছাড়া। জীবনে শুধু একটা পছন্দই ঠিকঠাক করেছি, সেটা হলো আমার বউ। আজ এই হেল্পটা কর না ভাই।
- আচ্ছা চল। খুব জ্বালাস তুই।

দুজনে মিলে একটা শাড়ীর দোকানে ঢুকলাম। কত-শত শাড়ী দেখছি। কোনটাই পছন্দ হচ্ছে না।
- ঐ গোলাপি শাড়ীটা দেখান তো ভাই।

শাড়ীটা খুলতেই দুজনের চোখ আটকে গেল। এটাই ফাইনাল বলে রাতুলকে কনফার্ম করলাম। দাম জিজ্ঞেস করতেই দোকানদার বললো ৩৫০০ টাকা।

দাম পরিশোধ করে রাতুল আমাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। দুজনে খেতে খেতে গল্প করলাম।
- তো কি উপলক্ষে শাড়ী কিনলি?
- কোন উপলক্ষ না, এমনিই। বউ সারাক্ষণ খালি ঘ্যানঘ্যান করে আমি নাকি তাকে কোন সারপ্রাইজ দেই না, কোন গিফট দেই না, কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাই না। আমার সংসারে এসে নাকি তার জীবন ত্যানা ত্যানা। অথচ গত মাসেও ওকে নিয়ে ট্যুরে গেলাম। সেটা বেমালুম ভুলে গেছে। কোন কৃতজ্ঞতা বোধই নেই। বউ আসলে এমনই হয়। তুই যতই করবি ওদের জন্য, মন ভরাতে পারবি না।
- তোর সেই প্রজেক্টের কি খবর, গত মাসে যেটা হাতে পেলি?
- ক্যান্সেল
- মানে?
- মানে ওটা ক্যান্সেল করেই তো রুপাকে নিয়ে ট্যুরে গেলাম। ও বায়না ধরেছিল ঐ সময়ে না গেলে নাকি ও আর কখখনো আমার সাথে ট্যুরে যাবেনা।
- তাই বলে এতো বড় সুযোগটা হাতছাড়া করলি!
- কি করবো বল, বউ তো আগে তাইনা! তাছাড়া চাকরি তো আর চলে যায়নি। অমন প্রজেক্ট আবার পাবো, কিন্তু বউ হারালে আর বউ তো পাবো না হা হা হা...
- শালা পাগল একটা...

রাতুলকে বিদায় দিয়ে বাসার পথে পা বাড়ালাম। রাতুল আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একেবারে জানের জান। কলেজ জীবন থেকে ওর সাথে পরিচয়। ওর সব ব্যাপারে আমার পরামর্শ লাগবেই। আমাকে ছাড়া ওর একটা দিনও চলেনা। আমি একটু চাপা স্বভাবের। রাতুল আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হলেও সবকিছু ওর সাথে শেয়ার করতে ইতস্তত বোধ করি। একান্ত ব্যক্তিগত কিছু ব্যাপার থাকে মানুষের, সেগুলো আমি নিজের মধ্যে রাখতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

বাসার খুব কাছে এসেই নামলাম রিকশা থেকে। কলিং বেল চাপতেই মেঘা দরজা খুলে দিলো। দেখলাম অরণীকে পড়াচ্ছে। অরণী আমাদের একমাত্র মেয়ে, ক্লাস টু তে পড়ে। আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে কোলে উঠলো। বললো,
- বাবা আমার জিনিসগুলো এনেছো?
- এনেছি মা
- কই দাও দাও
- তাহলে চোখ বন্ধ করো...

অরণী চোখ বন্ধ করলো, আমি ওর হাতে ড্রয়িংয়ের সব মেটারিয়ালসগুলো তুলে দিলাম। চোখ খুলতেই সে কি আনন্দ! এই আনন্দ দেখতে আমার বড্ড ভালো লাগে। অথচ ওর ছোট ছোট এই আনন্দগুলোর কিন্তু খুব বেশি দাম না। খুব অল্প দামেই কেনা যায় প্রতিদিন, হয়তো ছোট্ট একটা চকলেট বা একটা আইসক্রিমের বিনিময়ে। দৌড়ে চলে গেল নিজের ঘরে। এখনি আঁকাআকি শুরু করবে।

আমি হাতমুখ ধুয়ে রুমে আসতেই মেঘা লেবুর শরবত এনে হাতে দিলো। প্রতিদিন এই কাজটা করতে ওর কখনো ভুল হয়না। খেয়ে একেবারে কলিজা পর্যন্ত যেন ঠান্ডা হয়ে গেল আমার।

রাতে বিছানায় শুয়ে রাতুল আর রুপার কথা ভাবছি। রাতুলের জীবনে রূপার গুরুত্বের কথা ভাবছি। ছেলেটা সত্যিই অনেক ভালোবাসে বউকে। নইলে বউয়ের খুশির জন্য এমন সব পাগলামি কেউ করে! ওদের নিয়ে আমার যে ভাবনাগুলো সেগুলোকে একপাশে সরিয়ে মেঘার ভাবনা মনে জায়গা করে নিলো। ভাবছি এই মেয়েটাকে আমি জীবনে কি দিয়েছি! পক্ষান্তরে এই মেয়েটাই জীবনভর শুধু আমাকে দিয়ে গেছে, এখনো দিচ্ছে। আমি তো ওর খুশির জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনা।

অথচ কি আশ্চর্য! মেয়েটা কখনো আমার কাছে কিছু আবদার করেনা। আমার উপর কিছু চাপিয়ে দেয়না। আমার সমস্যাগুলোকে সব সময় নিজের সমস্যা মনে করে। একবার অফিসের একটা হিসাবে গড়মিল করে ফেলেছিলাম। চাকরিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলাম। ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা! মেঘা আমার সেই ক্ষতিপূরণ অনায়াসে দিয়ে দিল কোন হিসাব ছাড়াই। কত বড় লজ্জার হাত থেকে আমাকে বাঁচিয়েছিলো সেদিন। পরে অবশ্য ঐ টাকার হিসাব মিলাতে পেরেছিলাম। এভাবেই সব সময় ছায়ার মত পাশে থাকে আমার বিপদে।

সংসারের শতশত কাজের ফাঁকে ও আমাদের মেয়েকে সামলায়, পাশাপাশি নিজের চাকরিটা। মেয়ের পড়াশোনা, খাওয়া দাওয়া, পোশাক, এমনকি চুলগুলো ঠিকমতো বাঁধলো কিনা সব। অরণীর কোন টিউটর রাখিনি আজ অবধি। মেঘাই পড়ায়। একাজে সময় দিতে ওর নাকি খুব ভালো লাগে।

প্রতিদিন রান্না হয় মেয়ের আর আমার পছন্দমত। অথচ মেঘার নিজেরও কিছু পছন্দ অপছন্দ আছে সেগুলো কখনো জানতে চেষ্টা করিনা। আমি তরকারিতে লবন কম খাই, ভাত নরম খেতে পছন্দ করি, তরকারিতে ঝাল, তেল বেশি খেতে পছন্দ করি। আমার জন্য মেঘা সেই অভ্যাসগুলো রপ্ত করে ফেলেছে।

কোথাও যাওয়ার শখ হলে মেঘা মেয়েকে নিয়ে চলে যায়। আমাকে বলতে সাহস পায়না, কেননা ছুটির দিনগুলোতে আমি ঘুমাতে পছন্দ করি। গত শীতে ওর অফিস থেকে রাঙ্গামাটি গিয়েছিলো সবাই ঘুরতে। আমাকে বলেছিলো ওদের সাথে যেতে। আমি কাজের বাহানা দেখিয়ে গেলাম না। কারন আমি প্রচন্ড ঘরকুনো টাইপের। ঘুরাঘুরি আমার একদম পছন্দ না। শেষমেশ মেয়েকে সঙ্গী করেই রাঙ্গামাটি গিয়েছিল।

আমার মনে পড়েনা মেয়ের জন্য বাবা হয়ে কখনো কিছু আনতে গিয়ে মেঘার জন্য স্বামী হিসাবে কখনো শখ করে কিছু এনেছি। মেয়ের আনন্দ দেখতে এতো উৎসুক হয়ে থাকি, অথচ মেঘার আনন্দের কথা কখনো মাথায়ই আসেনা। ওর চাকরিটা হওয়ার আগে কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলতো। আমি সেটা এনে দিতাম। কিন্তু চাকরি হওয়ার পর আজ অবধি আমার কাছে কিছুই আবদার করেনি। তাই আমিও সেচ্ছায় কখনো কিছু কিনে দেইনি। অথচ মেঘাকে আমি ভালোবাসি। মেঘা হয়তো চাকরি করে, আমার চেয়ে বেশি টাকা বেতন পায়। নিজের খেয়াল খুশিমত যা ইচ্ছা তাই কিনতে পারে। কিন্তু উপহার পেতে কার না ভালো লাগে। আমার হাতে কেনা একশো টাকার একটা জিনিসও যে মেঘার কাছে অনেক মূল্য পাবে তা আমি জানি। তার সাক্ষী আমাদের প্রথম ম্যারেজ ডে তে ওকে গিফট করা সেই হাতঘড়িটা যেটা নষ্ট হয়েছে অনেক আগেই কিন্তু যত্ন করে তুলে রেখেছে আজও। এই লক্ষী মেয়েটা তো প্রতিদিনই উপহার পাবার যোগ্য। আর আমি কিনা ওকে কিছু দেয়ার কথা মাথাতেই আনিনা কখনো।

বিয়ের বছর খানেক পর মেঘার চাকরি হলো। যত দোষ তো ওর ঐ চাকরি টার। চাকরিটা হওয়ার পর থেকেই মেঘাকে কোন কিছু উপহার দেয়ার কথা ভাবিনা। ভেবেছি ও চাকরি করে, নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো তো নিজেই কিনে নেয়। আমার আর দেয়ার দরকার টা কি! অথচ এই বোধটা আমার আগে কখনো হয়নি। আজ রাতুলের সাথে দেখা না হলে হয়তো আর হতোও না।

সকালবেলা মেঘার চেঁচামেচিতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আচমকা উঠে বসে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে? উত্তরে বললো, ফ্রিজ লক করা।
আমি মৃদু স্বরে বললাম, ও কাজ আমি করেছি।

- কেন এই অদ্ভুত কাজ করেছেন শুনি!
- কারণ আজকে আর ফ্রিজ খোলা যাবেনা তাই।
- তোমার কি মাথাটাথা খারাপ হয়ে গেছে না কি!
- আমার মাথা ঠিকই আছে। তাড়াতাড়ি রেডি হও, মেয়েকে রেডি করো। বাইরে গিয়ে নাশতা করবো।
- মানে???
- মানে আজ শুক্রবার, আমাদের ছুটির দিন। আমরা একসাথে কোথাও ঘুরতে যাবো, এই ধরো গাজীপুরের ওদিকে। আজ সারাদিন তাই বাইরে খাওয়াদাওয়া হবে। একারণে কিছু যাতে রান্না করতে না পারো তাই ফ্রিজটা লক করে রেখেছি।

মেঘার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে দিনের বেলা ভূত দেখছে। ওর চোখেমুখে শুধু বিস্ময়।

বালিশের নিচ থেকে গতরাতে মেঘার জন্য কেনা গোলাপি রঙ্গের শাড়িটা বের করে ওর হাতে দিলাম। রাতুলকে বিদায় দেয়ার পরই এটা কিনেছিলাম। যদিও এটা রাতুলের সেই ৩৫০০ টাকা দামের শাড়ির মত না, তার তুলনায় অতি ক্ষুদ্রই বটে। তবু আমার মেঘার কাছে এটা যথাযথ মূল্যই পাবে আমি জানি।

- এটা পরেই আজ বের হবে, বুঝলে?

মেঘার ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি দেখা দিয়েছে। এ হাসি আমি এই গোলাপি শাড়ির বিনিময়ে কিনি নি, কিনেছি মেঘার প্রতি আমার হৃদয় উজার করা ভালোবাসার বিনিময়ে যা অনুুভবে ধরা দিয়েছে আজ।

সমাপ্ত
 

Users who are viewing this thread

Back
Top