কোনো বস্তুকে সঠিকভাবে দেখতে হলে চোখকে সমানভাবে ওই বস্তুর দিকে স্থির রাখতে হয়। কিন্তু জন্মগতভাবে চোখের মাংস দুর্বল হলে, মণি অস্বচ্ছ হলে, ছানি হলে, দুই চোখের দৃষ্টিশক্তির পার্থক্য হলে, গঠনগত অসামঞ্জস্য হলে দুটি চোখ একসঙ্গে কোনো বস্তুর দিকে স্থির থাকতে পারে না। দুটি চোখের কোনোটি নাক অথবা কানের দিকে বেঁকে যায়। তখনই একে টেরা বা বাঁকা চোখ বলা হয়। এর ফলে কখনো কখনো একটি বস্তু দুটি দেখা যায়, চোখে ঝাপসা দেখা যায়, এমনকি চোখ অন্ধ পর্যন্ত হতে পারে।
দীর্ঘদিন গ্রামবাংলার মানুষ চোখ টেরা বা বাঁকা থাকলে তাকে সৌভাগ্যের লক্ষণ বা লক্ষ্মীটেরা হিসেবে মনে করতেন। চিকিৎসা করানোর পরিবর্তে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে গ্রহণ করে, তা হাতছাড়া করতে চাইতেন না অভিভাবকেরা। বর্তমানে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। অভিভাবকেরা শিশুদের টেরা চোখের চিকিৎসা করতে আগ্রহী, কিন্তু অজ্ঞতার কারণে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নেন না। ফলে অনেক শিশুর একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। তা ছাড়া এর যে সুচিকিৎসা আছে, তা–ই অনেকে জানেন না। আবার শিশুর চোখ যে একটু টেরা, তা বুঝতেও অনেকের দেরি হয়।
যখন দুই চোখ একসঙ্গে কোনো বস্তু দেখতে পারে না এবং একটা চোখ আরেক চোখ থেকে দূরে সরে যায় বা বেঁকে যায়, সেই চোখকে টেরা চোখ বলে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলে অ্যাসটিগমেটিজম। কখনো কখনো বাঁকা চোখের মানুষকে সামাজিকভাবে হেয় হতেও হয়। তাই এটি একটি সামাজিক সমস্যা আর শিশুদের জন্য মানসিক চাপেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিয়ে, চাকরি ও নানা কর্মক্ষেত্রে টেরা চোখ অনেকের কাছে পীড়াদায়ক ও অস্বস্তিকর।
কেন চোখ টেরা হয়
- শরীরের সর্বাধিক কর্মক্ষম চোখের মাংসপেশিতে আঘাত লাগলে চোখ ঘোরানোর ক্ষমতা কমে যায়।
- বংশগত কারণে চোখ টেরা হয়।
- রেটিনা লেন্স, কর্নিয়া ও মণির রোগে চোখ টেরা হতে পারে।
- এক চোখের দৃষ্টিশক্তি আরেক চোখের দৃষ্টিশক্তি থেকে বেশি কমে গেলে চোখ টেরা হয় (তিন ডায়াপ্টরের বেশি)।
- চোখের মাংসে স্নায়ু থাকে, যেমন ৩, ৪, ৬ নম্বর ক্রানিয়াল নার্ভ আক্রান্ত হলেও চোখ টেরা হয়।
কী করবেন
- পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে সব শিশুর একবার চোখ পরীক্ষা করা দরকার।
- কখনো কারও চোখে একটির চেয়ে অন্যটি কম দেখতে পেলে অকুলোপ্লাস্টি সার্জনের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- একটি বস্তুকে দুটি অথবা ঝাপসা দেখলে অকুলোপ্লাস্টি সার্জনের সাহায্য নেওয়া উচিত।
- পড়াশোনা করার সময় কারও মাথাব্যথা হলে দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করা উচিত।
- যেকোনো বয়সের রোগীর টেরা চোখ থাকলে চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো সম্ভব।
- একটি চোখ বন্ধ করে, চোখের পাওয়ার নিরূপণ করে চশমা দিয়ে চোখের ব্যায়াম করে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে টেরা চোখ সারানোর চেষ্টা করা যায়।
- এ ছাড়া অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টেরা চোখ সম্পূর্ণ সোজা করা যায়।
* লেখক: অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ | চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।