What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected দূর্ঘটনা (ছোটগল্প) (1 Viewer)

Kaptan Jacksparoow

Community Team
Elite Leader
Joined
Apr 6, 2019
Threads
328
Messages
5,981
Credits
45,360
T-Shirt
Profile Music
Recipe sushi
Rocket
Euro Banknote
Butterfly
গল্প (শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়) » দুর্ঘটনা


ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে অংশু যখন নানা ব্যথা-বেদনা সত্ত্বেও উঠে দাঁড়াতে পারল তখনও ধাঁধার ভাবটা তার যায়নি। সাধারণত দুর্ঘটনায় পড়লে খুব জোরালো ধাক্কায় মনের ক্রিয়া কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পূর্বাপর কিছু মনে পড়ে না। মন যুক্তিহীন আচরণ করতে থাকে। তবে এ স্মৃতিভ্রংশ নয়। অংশু জানে।

নিজের ছোট্ট প্রিয় ফিয়াট গাড়িটার ছয় ছত্রখান চেহারাটা অংশু খুব মন দিয়েই দেখল। যাকে বলা যায় টোটাল ডিজইন্টিগ্রেশন। চেসিস ছাড়া কিছু আস্ত নেই বা যথাস্থানেও নেই। একটা দরজা উপুড় হয়ে পড়ে আছে ঢালু জমির ঘাসের ওপর। দরজার একপ্রান্ত দিয়ে একজোড়া ভারি সুন্দর পা ও গোলাপি সালোয়ারের প্রান্ত দেখা যাচ্ছে। আঙুলে রুপোর চুটকি, নখে পালিশ।

নীচু হতে খুব কষ্ট হচ্ছিল অংশুর। কোমরটার জখম বোধ হয় বেশ গভীর। তার বয়স বিয়াল্লিশ। এ বয়সে এ ব্যথা সহজে সারবার নয়। তবু নীচু হয়ে অংশু দরজাটা তোলবার চেষ্টা করল। প্রথমবারে পারল না। দ্বিতীয় চেষ্টায় পারল।

অংশুর ভেতরে কোনো শব্দ এমনিতেই ছিল না। দরজার তলার দৃশ্যটা দেখে তার ভেতরটা যেন আরও নিস্তব্ধ ও চিন্তাশূন্য হয়ে গেল। রাণু বেশি যন্ত্রণা পায়নি নিশ্চয়ই। মাথাটা তুবড়ে গেছে। পিছন থেকে। মৃত্যু ঘটেছে তৎক্ষণাৎ।

অংশু দরজাটা ছেড়ে দিলে সেটা ফের রাণুর ওপর ধর্ষণকারীর মতো চেপে বসে যায়। অংশু হাইওয়ের দিকে মুখ তুলে তাকায়। হাইওয়ের এই অংশটা খুবই নির্জন। টানা লম্বা রাস্তার দু-দিকটাই ফাঁকা। তবু দুর্ঘটনার

গন্ধে লোক জুটবেই। এখনও জমেনি। একটু পর পর দু-দুটো লরি ঝড়ের বেগে চলে গেল।

তার গাড়িটাকে মেরেছে একটা লরি। তার দোষ সে লরিটাকে ওভারটেক করার চেষ্টা করেছিল। কয়েকবার চেষ্টা করেও প্রথমদিকে পারেনি। লরিটা সাইড দিচ্ছিল না। কতরকমের বদমাশ ড্রাইভার থাকে। অংশুর সন্দেহ লরিওয়ালা তার গাড়ির আয়নায় সামনের সিটে বসা অংশুর পাশে রাণুকে দেখছিল। রাণু তো দেখবার মতোই। মেয়েছেলে দেখলে কিছু কিছু পুরুষ অদ্ভুত আচরণ শুরু করে দেয়। লরির ড্রাইভার সম্ভবত সেরকমই একজন। বহুক্ষণ ধরে লরিটা অংশুর পথ আটকে রেখে যাচ্ছিল। কখনো খুব স্পিড় দিচ্ছিল, কখনো ঢিলাঢালাভাবে। এগোচ্ছিল।

ঠিক এই জায়গাটাতেই অংশু একটু ফাঁক পেতে অত্যন্ত তীব্র গতিতে লরিটাকে পাশ কাটাচ্ছিল। না কাটালেও ক্ষতি ছিল না। তবে রাণু বারবার বলছিল, উঃ! সামনের লরিটার ডিজেলের ধোঁয়া আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। ওটাকে কাটাও তো। তাই কাটাচ্ছিল অংশু। তবে এসময়ে সে একটা মারাত্মক ভুল করে। ড্রাইভারের কেবিনটা সমান্তরালে চলে আসতেই অংশু বাঁদিকে চেয়ে একটু নীচু হয়ে ড্রাইভারের উদ্দেশে চেঁচিয়ে গাল দিয়েছিল, এই শুয়ারকা বাচ্চা; মাজাকি হো রহা হ্যায়?

ড্রাইভারটা কোন দেশি তা বলা শক্ত। লরিওয়ালাদের কোনো দেশ থাকে কি? বিশেষ করে দূরপাল্লার লরিওয়ালাদের? অংশু দীর্ঘকাল হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে জানে, এইসব লরিওয়ালা যে দেশেরই হোক চন্ডীগড় থেকে ডিব্ৰুগড় বা দিল্লি থেকে বাঙ্গালোর ট্রিপ মেরে মেরে এদের গা থেকে প্রাদেশিকতা মুছে গেছে, এদের দেশ, ঘর সব এখন এক লরির প্রশস্ত কেবিন। ফিয়াটের ঘাতক লরিওয়ালার মুখটায় খোঁচা খোঁচা দাড়ি ছিল, মুখখানা ছিল প্রকান্ড, মাথায় বড়ো বড়ো রুক্ষ চুল, রোমশ হাত। একবার জানালা দিয়ে তাকাল ছোট্ট ফিয়াটের দিকে। তারপর আচমকা লরিটা ডানদিকে ঘেঁষতে শুরু করল অত্যন্ত বিপজ্জনকভাবে। অংশু তখনও পুরোপুরি কাটাতে পারেনি, পিছোনোরও উপায় নেই।

কী হচ্ছে তা বুঝবার আগেই রাণুর দিকটায় লরিটা প্রথম ধাক্কা মারে। সেটা এমন কিছু গুরুতর ছিল না। অংশু সামলে দিতে পারত। রাণু একটা তীব্র চিৎকার করে উঠেছিল বটে, কিন্তু তাও পারত অংশু। কিন্তু লরিটা রসিকতা করছিল না। টাটার সেই অতিকায় হেভি ডিউটি ট্রাক অংশুর দেওয়া গালাগালটা ফেরত দিল দ্বিতীয় ধাক্কায়। সেটা ঠিক ধাক্কাও নয়। রোড রোলার যেমন থান ইট ভেঙে চেপে বসিয়ে দেয় রাস্তায় অবিকল সেইভাবে পিষে দিল প্রায়।

অংশু নিজের ট্রাউজারের ভেজা ভাবটা টের পেল এতক্ষণে। না, রক্ত নয়। গাড়িটা যখন তাকে আর রাণুকে গর্ভে নিয়ে চক্কর খেয়েছিল তখন অংশুর পেচ্ছাপ হয়ে যায়। অনেকগুলো ঘটনার মধ্যে একটা। অংশুর একটু গা ঘিনঘিন করল।

বলতে কী এই গা ঘিনঘিন করাটাই দুর্ঘটনার পর অংশুর প্রথম প্রতিক্রিয়া। এ ছাড়া তার মন সম্পূর্ণ ফাঁকা, সুখ-দুঃখশূন্য।

একটু খোঁড়াতে খোঁড়াতে অংশু তার গাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে সরে এল। নীচের দিকে ঢালু জমি গড়িয়ে গিয়ে একটা চওড়া নালায় শেষ হয়েছে। নালাটা জলে ভরতি। দুটো ছাগল নির্বিকারভাবে আগাছা চিবোতে চিবোতে উঠে আসছে। অংশু একটা গাছের তলায় ছায়ায় বসল। কিছু করা উচিত। কিন্তু কী তা সে স্থির করতে পারছিল না।

একটা সমস্যা অবশ্যই রাণু। বেশ বড়োরকমের সমস্যা। বেঁচে থাকলে রাণুর সমস্যা হত না। যেমন করেই হোক নানারকম অনভিপ্রেত প্রশ্ন তারা দুজন মিলে এড়িয়ে যেতে পারত। কিন্তু রাণু এখন মৃত। অর্থাৎ নিরেট একটি বোঝা বা ভারমাত্র। অংশুর গাড়িতে তার উপস্থিতি নিয়ে যাবতীয় প্রশ্নের জবাব অংশুকে একাই দিতে হবে। রাণুর বদলে যদি সে নিজে মারা যেত বা দুজনেই, তাহলে কোনো সমস্যা ছিল না। সে মরে রাণু বেঁচে থাকলে রাণু শুধু ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়লেই হত। দুজনে মরলে অবশ্য প্রশ্ন উঠত কিন্তু জবাবদিহি করার কিছু ছিল না।

অবশ্য এসব সমস্যা খুব গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে না অংশু। তার ফাঁকা অভ্যন্তরে কিছু গুঞ্জন উঠছে মাত্র। বেকুব এবং রাগি এক লরিওয়ালা যে কী ঘটিয়ে গেল তা সে নিজেও জানে না। তবে প্রতিশোধটা সে বড়ো বেশি নিয়েছে। দূরপাল্লার লরি ড্রাইভারদের এত আত্মসম্মানবোধ থাকার কথা নয়। শুয়ার কি বাচ্চা বা ওই ধরনের। গালাগাল তাদের কাছে জলভাতের শামিল। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে এত বড়ো প্রতিশোধের পেছনে কারণ একটাই। দূরপাল্লার নারীবর্জিত দৌড়ে লোকটার ভিতরে একটা পুঞ্জিভূত যৌনকাতরতা ছিল। সেটাকে উসকে দিয়েছিল রাণু। আর সেই বেসামাল কাম থেকে এসেছিল ক্রোধ। ক্রোধ থেকে হিংসা। ইন্ধন ছিল অংশুর নিতান্তই বহুব্যবহৃত এবং বিষহীন একটি গালাগাল।

একটু দূর থেকে অংশু ধ্বংসস্তূপটা দেখতে পাচ্ছে। রাণুর পা দুটো এখান থেকে দেখা যাচ্ছে না। অংশুর মনে হচ্ছিল, তার এখান থেকে অবিলম্বে সরে পড়া উচিত। কিন্তু কাজটা খুব বাস্তববুদ্ধিসম্মত হবে না। ওই ধ্বংসস্তূপ হাজারটা আঙুল তুলে তাকে নির্দেশ করবে, চিহ্নিত করবে।

হাইওয়ের ওপর পাঁচ-সাতজন লোক দাঁড়িয়ে পড়েছে। দু-তিনটে গাড়ি এবং লরিও থামল। ঢালু বেয়ে উঠে আসছে কাছাকাছি গ্রামের কিছু লোক। তাদের ভয়, বিস্ময় ও কাতরতার স্বাভাবিক উক্তিগুলি শুনতে পায় অংশু।

একজন স্যুটপরা বয়স্ক ভদ্রলোক অংশুর সামনে এসে দাঁড়ায়। অংশু চোখ ভালো করে তোলে না। এক পলক তাকিয়ে মুখটা নামিয়ে রাখে।

লোকটা জিজ্ঞেস করে, গাড়ি কে চালাচ্ছিল? আপনি?

হ্যাঁ। বলেই অংশু টের পায় তার গলার স্বর ভাঙা এবং বিকৃত। কেমন কেটে যাচ্ছে।

কী করে হল বলুন তো!

লরি। ফের গলার স্বরে একটা কাঁপুনি টের পায় অংশু।

ভদ্রমহিলা…! বলে ভদ্রলোক কথাটাকে ভাসমান রাখেন।

অংশু গলা খাঁকারি দেয়। এতক্ষণে সে শরীরেও কাঁপুনিটা টের পাচ্ছে। বলে, কী অবস্থা?

ভালো নয়। হাসপাতালে রিমুভ করতে হবে।

অংশু নড়ে না। মাটির দিকে চেয়ে থাকে।

আপনার ইনজুরি কীরকম?

কিছু বলতে তো হবে! শেষ অবধি সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে পারল অংশু। দয়াপরবশ একজনের গাড়ি হাসপাতালে পৌঁছে দিল তাদের। তাকে ও মৃত রাণুকে।

ডিসিজড-এর নাম?

রাণু সরকার।

ঠিকানা?

ম্যাকওয়ে অ্যাণ্ড কোম্পানি। সিক্সটিন…

এটা তো অফিসের ঠিকানা?

আজ্ঞে হ্যাঁ।

হোম অ্যাড্রেস?

দেখুন, উনি ছিলেন, আমার কলিগ। আমরা একটা প্ল্যান্ট ভিজিট করতে যাচ্ছিলাম অন অফিসিয়াল স্ট্যাটাস। ওঁর হোম অ্যাড্রেসটা আমার জানা নেই।

অফিসে নিশ্চয়ই আছে!

আছে। বলে হাঁফ ছাড়ল অংশু।

আপনিও তো বেশ ইনজিয়োরড, না?

একটু তো লাগবেই। অত বড়ো অ্যাক্সিডেন্ট।

আপনি কি ভরতি হবেন না?

না। তার দরকার নেই। ওয়ান টেটভ্যাক উইল বি এনাফ। আমি কি যেতে পারি এখন?

কোথায় যাবেন?

বাড়ি। আমার একটু রেস্ট দরকার।

পুলিশ এনকোয়ারি হবে, জানেন তো!

জানি।

অংশু আরও কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে বেরিয়ে এল। রিকশা ধরল একটা।

.

সমীরণের বাগানবাড়িটা ভারি ছিমছাম, নির্জন, সুন্দর। বিশাল বাগানে অনেক পাখি ডাকছে। অংশু স্নান করেছে। প্যান্ট, আণ্ডারওয়্যার ধুয়ে রোদে শুকোতে দিয়েছে। একটা মস্ত তোয়ালে জড়িয়ে বসে আছে বারান্দায় বেতের চেয়ারে। দু-কাপ চা খেয়েছে সে। শরীর বা মনের অস্থিরতার কোনো উপশম ঘটেনি।

সমীরণের বাগানবাড়িটা মোটামুটিভাবে ফুর্তিরই জায়গা। সমীরণ নিজে তার মেয়েমানুষদের নিয়ে এখানে আসে মাঝে মাঝে। সুতরাং এখানে একটি বার আছে। অংশু মদ খায় না। সে আর রাণু এসে বড়োজোর চা বা কফি খেয়েছে, মুরগির ঝোল দিয়ে ভাত সেঁটেছে, তারপর একটা শোয়ার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছে। সেই আসঙ্গই ছিল মদ।

আজ দু-কাপ চায়ের পরও তার অন্য কিছু প্রয়োজন বলে মনে হল।

অংশু ডাকল, বিশু।

বিশু এলে বলল, কী আছে তোমাদের বলো তো! হুইস্কি বা ব্র্যাণ্ডি!

সব আছে।

একটু ব্র্যাণ্ডি দাও তো। সোডা মিশিয়ে কিন্তু।

বিশু চলে গেল। অংশু পাখির ডাক শুনতে লাগল। পাখি, অনেক পাখি।

বারান্দার সামনেই একটা ঢ্যাঙা লোহার ফ্রেমে শেকল বাঁধা একটা দোলনা ঝুলে আছে। তারা দু-জনে–অর্থাৎ অংশু আর রাণু যে দোলনায় চড়ত তা নয়। তবে মাঝে মাঝে রাণু গিয়ে বসত ওখানে। সে বসত পা। মুড়ে। হাতে থাকত স্কেচের প্যাড আর পেনসিল। অনেক পাখির স্কেচ করেছিল।

ওর ব্যাগটা কোথায় গেল? ভেবে অংশু হঠাৎ সোজা হয়ে বসে। তারপর ভাবে, যেখানেই থাক তাতে কী আর যায়-আসে? ভেবে ফের গা ছেড়ে দিল সে।

ব্র্যাণ্ডিতে প্রথম চুমুক দিয়ে তার খুব ভালো লাগল না। এর আগে এক-আধবার সে সামান্য খেয়েছে। কোনোবারই ভালো লাগেনি বলে অভ্যাস করেনি। আজ ভালো না লাগা সত্ত্বেও সে ধীরে ধীরে, জোর করে পুরোটা খেয়ে নিতে পারল। বেশি নয় অবশ্য। এক পেগ হবে।

মাথাটা একটু কেমন লাগছে কি?

অংশু চোখ বুজে বসে থাকে অনেকক্ষণ।

খাবেন না স্যার! লাঞ্চ রেডি।

অংশু একটু চমকে ওঠে। সামান্য সেই চমকে শরীরটা নড়তেই কোমর থেকে ব্যথাটা হিড়িক দিয়ে উঠে আসে মেরুদন্ড বেয়ে। স্পাইনাল কর্ডে যদি লেগে থাকে তবে ভয় রয়ে গেল। হাড়ের দিকেও একটা ব্যথা মাথাচাড়া দিচ্ছে। যদি স্পণ্ডিলাইটিসের মতো কলার নিতে হয়?

আজ স্যার দিদিমণি এলেন না?

ডাইনিং হল-এর দিকে যেতে যেতে অংশু বলল, না।

আপনি কি স্যার অসুস্থ?

অংশু একটা শ্বাস ফেলে বলল, একটু চোট হয়েছে। তেমন কিছু নয়।

গাড়িও আনেননি আজ স্যার।

সার্ভিসিং-এ গেছে।

এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে অংশুর রাগ হচ্ছিল না। কারণ, এসব সৌজন্যমূলক প্রশ্ন খুবই প্রাসঙ্গিক। বিশু তো আর জেরা করছে না। জবাব দেওয়াই উচিত। চেপে গেলে সন্দেহের বীজ বপন করা হবে।

অংশু প্রকৃত মুশকিলে পড়ল খেতে বসে। চমৎকার সরু চালের সাদা গরম ভাত, কাঞ্চনবর্ণ মুরগির কারি, ধোঁয়া-ওঠা ডাল, মুচমুচে আলু ভাজা, মাছের ফ্রাই, চাটনি দেখে আজ তার বারবার ওয়াক আসছিল। এতক্ষণে রাণুকে কাটাছেঁড়া করা হচ্ছে কি? নাকি ঠাণ্ডা ঘরে ফেলে রেখেছে। ওর সৎকারেরই বা কী হবে? কে এসে নেবে ডেডবডি? ওর স্বামী? কিন্তু ওই বডির কিছু দায়িত্ব তো অংশুরও আছে। অংশু তো কম ভোগ করেনি ওই শরীর, যতদিন জ্যান্ত ছিল।

অংশু বিস্তর নাড়াঘাটা করে সব ফেলে ছড়িয়ে উঠে পড়ল।

খেলেন না স্যার?

আজ পারছি না। একটা পান আনো তো বিশু। জর্দা দিয়ে।

এসব খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির অ্যারেঞ্জমেন্টের জন্য প্রতি রবিবার অংশুকে পঞ্চাশটা করে টাকা দিতে হয়। আজ আবার এক পেগ মদের দাম আছে। খরচটা আপাতত বেঁচে যাচ্ছে অংশুর। সামনের রবিবার সে অবশ্যই আসছে না।

বারান্দায় যেতে গিয়েই হলঘরের টেলিফোনটা নজরে পড়ল তার। একটু থমকাল সে। তাদের কলকাতার বাড়িতেও টেলিফোন আছে। কথা বলবে কি, একটু ইতস্তত করে অংশু। তারপর হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয়, বলবে। বলাই উচিত। ফিরলে সকলের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুর্ঘটনার কথা বলতে তার ভীষণ অস্বস্তি হবে। মুখ না দেখেই বলে দেওয়া ভালো। বলতে যখন হবেই।

কিছুক্ষণের চেষ্টায় সে বাড়ির লাইন পেল। ধরল তার বোন রীতা।

শোন, আজ একটা বিচ্ছিরি অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।

অ্যাক্সিডেন্ট–বলে রীতা একটা আর্তনাদ করে উঠল ওধারে।

শোন, ডোন্ট বি নার্ভাস। আমার কিছু হয়নি।

কিছু হয়নি?

আমার কিছু হয়নি, তবে গাড়িটা গেছে। আর…

আর কী?

আমার সঙ্গে আমার একজন কলিগ ছিল। তার অবস্থা ভীষণ খারাপ।

বাঁচবে না?

বোধ হয় না।

সে কী?

চেঁচাস না। ঠাণ্ডা হয়ে শোন। আমি ব্যাণ্ডেল থেকে কথা বলছি।

ব্যাণ্ডেল থেকে? ব্যাণ্ডেল থেকে কেন? তুমি তো প্ল্যান্টে গিয়েছিলে।

হ্যাঁ। প্ল্যান্টেই ভদ্রমহিলা ধরলেন আমাকে। ব্যাণ্ডেলে ওঁর কে একজন আত্মীয় থাকেন গুরুতর অসুস্থ। আমাকে একটু পৌঁছে দিতে বললেন।

ভদ্রমহিলা! কে গো?

আমাদের পাবলিসিটি অফিসার। রাণু সরকার।

তুমি ব্যাণ্ডেল গেলে পৌঁছে দিতে?

কী আর করব। ট্রেনের নাকি আজ কী সব গন্ডগোল ছিল হাওড়ায়, তাই।

ট্রেনের গন্ডগোল। তাহলে কী হবে। মা আর বউদি যে বড়দার সঙ্গে তারকেশ্বর গেল।

তারকেশ্বর। ও গড! অংশু হাল ছেড়ে দিল প্রায়।

কী বলছ?

অংশু মনে মনে নিজেকে বলল, ইডিয়ট, এর চেয়ে ঢের বেশি চক্করে পড়েও দুনিয়ায় চালাক লোকেরা বেরিয়ে আসে। তুমি কি গাড়ল? চালাও, চালিয়ে যাও।

অংশু একটু ধীর স্বরে বলল, ট্রেনের গন্ডগোল ছিল কিনা তা তো আমার জানার কথা নয়। ভদ্রমহিলা বলছিলেন, তাই ধরে নিয়েছি আছে।

ব্যাণ্ডেলে কোথায় আছ তুমি এখন? কোথা থেকে কথা বলছ?

অংশু এত মিথ্যে কথা একসঙ্গে জীবনে বলেনি। একটু ঢোঁক গিলে বলল, হাসপাতালের কাছ থেকে।

ভদ্রমহিলার কীরকম লেগেছে?

মাথাটা থেঁতলে গেছে।

উঃ মাগো!

একটু চুপ করে থেকে রীতা বলল, কী হয়েছিল মেজদা?

লরি। একটা লরি এসে মেরেছিল বাঁদিকে।

বাঁচার কোনো চান্স নেই?

না।

গাড়িটা?

গেছে। একদম গেছে।

তুমি তাহলে কী করে ফিরবে?

দেখছি। ফেরার জন্য চিন্তা নেই। পারব।

শোনো মেজদা, ছোড়দা একটু আড্ডা মারতে বেরিয়েছে সকালে। ও ফিরলে তোমাকে গিয়ে তুলে আনবে। ও ওর গাড়ি নিয়েই বেরিয়েছে। নইলে আমিই চলে যেতাম–

না, তার দরকার নেই।

বাবাকে বলব তো?

বলিস। তবে আগে বলিস যে আমার কিছু হয়নি।

সত্যিই হয়নি তো?

হলে কি আর ফোন করতে পারতাম?

তুমি কখন ফিরবে?

রাণুর একটা ভালোমন্দ খবর পেলেই। ছাড়ছি। ভাবিস না।

তুমি কিন্তু তাড়াতাড়ি এসো।

অংশু ফোন রেখে দিল। শোয়ার ঘরে এসে সে দরজা বন্ধ করে বিছানায় গড়িয়ে পড়ে। শরীরের ভার আর বহন করা যাচ্ছে না।

বিছানাটা নরম ফোম রবারের। ভারি নরম। এই বিছানাতেই সে আর রাণু–। কিন্তু রাণুর স্মৃতি তাকে একটুও তাড়া করছে না। তবে এতক্ষণে দুর্ঘটনার পুরো ভয়াবহতা সে একা ঘরে স্মরণ করতে পারল। ওইরকম ভাবে চুরমার হয়ে যাওয়া একটা গাড়ির ভিতরে থেকেও কী করে সে বেঁচে গেল সেটা এখনও ভেবে পাচ্ছে না সে। বাঁচলেও এমন আস্ত অবস্থায় তো কিছুতেই নয় তবু আশ্চর্য কিছু ব্যথা-বেদনা নিয়ে সে বেঁচেই আছে। ভাবতেই শিউরে উঠল সে। তার শরীর থেকে রক্তপাতও হয়েছে সামান্য। মাত্র চার জায়গায় ছড়ে বা। চিরে গেছে, জামাকাপড় অবশ্য ছিঁড়েছে কিন্তু তা ব্যবহারের অযোগ্য নয়। এত বড়ো একটা অ্যাক্সিডেন্ট যাতে রাণু তৎক্ষণাৎ মারা গেল, ফিয়াটটা হয়ে গেল খন্ড খন্ড, তাতে পড়েও সে এমন ফুলবাবুটির মতো অক্ষত, অনাহত রয়ে গেল কেন?

ক-দিন আগেই রিপ্লের বিলিভ ইট অর নট-এ সে পড়েছিল একজন লোক মোটরগাড়িতে লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় একটা ট্রেন এসে সেটার ওপর পড়ল এবং প্রায় ছশো মিটার মোটরগাড়িটাকে থ্যাঁতলাতে থ্যাঁতলাতে পিষে দলা পাকিয়ে নিয়ে গিয়ে ফেলে। আশ্চর্য এই যে, মোটরচালক সামান্য কিছু কাটা-ছেঁড়া নিয়ে তা সত্ত্বেও দিব্যি বেঁচে গিয়েছিল, হাসপাতালে পর্যন্ত ভরতি হতে হয়নি। অংশুর ব্যাপারটাও তাই নয় কি?

এ বাড়িতে যে এত পাখি ডাকে তা আগে কখনো লক্ষ করেনি অংশু। আজ সঙ্গে রাণু নেই বলেই বোধ হয় করল। পাখিদের গন্ডগোলেই বোধহয় তার ঘুম এল না। শরৎকালের দিব্যি মনোরম আবহাওয়াটি ছিল আজ। ভারহীন কিছু মেঘ পায়চারি করে ফিরছে আকাশে। এবার বাদলাটা গেছে খুব। তাই চারদিকটা ধোয়া-মোছা চমৎকার। কিন্তু এমন মনোরম আবহাওয়া পেয়েও তার ঘুম এল না এক ফোঁটা। অবশ্য তাতে আশ্চর্য হওয়ার। কিছু নেই। পেটে ভাত পড়েনি, রাণু মারা গেছে, ঘুম আসার কথাও তো নয়। তবু চুপচাপ চোখ বুজে অংশু পাখিদের গন্ডগোল শুনতে লাগল।

ঘুম তো নয়ই, একে বিশ্রামও বলে না। মন প্রশান্ত না থাকলে বিশ্রাম ব্যাপারটাও একটা শক্ত ব্যায়াম মাত্র। এই বিশ্রামের ব্যায়ামটা তাকে করতে হচ্ছে একটাই মাত্র কারণে। তার প্যান্ট এখনও শুকোয়নি। না শুকোলে বেরোবে কী করে?

নিজের ফিয়াট গাড়িটার কথা শুয়ে শুয়ে ভাবল অংশু। সেকেণ্ড হ্যাণ্ড কিন্তু চমৎকার অবস্থায় ছিল কেনার সময়। তার হাতে সেট হয়ে গিয়েছিল। ইনশিয়ের করা আছে, কিছু টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবে অংশু। তবে গাড়িটা আর ফিরবে না। পার্টসগুলো চুরি হয়ে যাবে অ্যাক্সিডেন্ট স্পট থেকে। চাকা, ব্যাটারি।

অংশু ফের উঠে হলঘরে বসে। খুবই কষ্টে। তারপর থানায় ফোন করে।

আপনারা অ্যাক্সিডেন্ট স্পট-এ কোনো পাহারা রেখেছেন?

না স্যার।

একটু পাহারা রাখলে ভালো হত না? পার্টস চুরি যাবে যে!

আমাদের লোক বড় কম।

তাহলে?

কিছু করার নেই স্যার। চুরি যাওয়ার হলে এতক্ষণে হয়ে গেছে।

হোপলেস। বলে অংশু ফোন রেখে দেয়।

ট্রাউজার এখনও শুকোয়নি। কোমরের কাছে বেশ ভেজা। তবু অংশু প্যান্ট পরে নেয়, জামা গায়ে দেয়, বিশুকে একটা রিকশা আনতে বলে বারান্দায় বসে পাখির ডাক শোনে।

রাত আটটা নাগাদ যখন বাড়ি ফিরল অংশু তখন সে অনেকটাই বিপর্যস্ত, বিভ্রান্ত, হা-ক্লান্ত। তবে বিপর্যয়ের ভাবটা সে ইচ্ছে করেই একটু বাড়িয়ে তুলেছিল। যাতে বেশি প্রশ্নের জবাব দিতে না হয়।

বাইরের ঘরেই তার জন্য অপেক্ষা করছিল সবাই। পারিবারিক ডাক্তারও তৈরি হয়েছিলেন। সে বাড়িতে পা দেওয়ামাত্র মা এসে তাকে প্রথম ধরল।

একটি প্রশ্নেরই জবাব দিতে হল তাকে।

মেয়েটা কি মারা গেছে?

হ্যাঁ।

ইশ।

ডাক্তার তাকে ঘুমের ওষুধ দিলেন। নাড়ি-টাড়ি দেখলেন একটু। তারপর ঘুমের হাতে ছেড়ে দিলেন।

অংশু ঘুমোল। প্রচন্ড গভীর টানা ঘুম। পরের দিনটাও পড়ে থাকতে হল বিছানায়। মাঝে মাঝে অফিস এবং থানা থেকে ফোন এল বাড়িতে। ভাগ্য ভালো যে, তাকে ফোন ধরতে হল না। সে অসুস্থ, শয্যাগত এবং আণ্ডার সেডেশন, সুতরাং জবাব দেওয়ার দায় নেই। বাড়ির লোকেরা সারাদিন প্রায় নিঃশব্দে রইল।

কিন্তু এই অবস্থা তো স্থায়ী হবে না। তাকে জাগতে হবে এবং মুখোমুখি হতে হবে সকলের। অনেক প্রশ্ন আছে ওদের। সংগত প্রশ্ন, বিপজ্জনক প্রশ্ন। প্রশ্ন করবে পুলিশ, প্রশ্ন করবে অফিসের সহকর্মীরা। একটু নিটোল, ছিদ্রহীন মিথ্যে গল্প বানানো খুব সহজ হবে না। কোনো মিথ্যেই তো ছিদ্রহীন নয়।

চোখ খুলতেই লজ্জা করছিল অংশুর। আলপনার মুখ শুকনো, চোখ সজল। মুখ দেখে মনে হয়, সারারাত তার পাশে বসে জেগে কাটিয়েছে। তার ছোটো ভাই অ্যাক্সিডেন্ট স্পট থেকে ঘুরে এসেছে, এটাও সে টুকরো টাকরা কথা থেকে টের পেল। থানা পুলিশ ইনশিয়য়ারেন্স সবই সে সামলাচ্ছে।

পরের রাত্রিটাও গভীর ঘুমে কেটে গেল অংশুর। জাগল বেলায়। আলপনা তার গায়ে মৃদু নাড়া দিয়ে বলল, তোমার অফিস থেকে ফোন এসেছে। জরুরি দরকার।

কে ফোন করেছে?

ডিরেক্টর নিজে। আধ ঘণ্টা পর আবার ফোন করবে।

অংশু চুপচাপ চেয়ে রইল। আস্তে আস্তে পর্দা উঠছে রঙ্গমঞ্চের। হাজার জোড়া চোখ তার দিকে চেয়ে থাকবে। সে রঙ্গমঞ্চে একা।

আধ ঘণ্টা পরই ফোনটা এল।

অংশু?

বলছি।

কেমন আছ?

একটু ভালো।

বেলা বারোটায় একবার অফিসে আসতে পারবে?

পারব।

আজ মিসেস সরকারের ডেডবডি রিলিজ করেছে সকালে। সোজা অফিসে আসছে। এখান থেকেই ক্রিমেশনে নিয়ে যাবে।

.

অফিসের সিঁড়িতে তারা নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে। সামনে লরি, লরির ওপর খাটে রাণু শুয়ে আছে। অফিস থেকে বিশাল একটা টায়ারের আকৃতির মালা দেওয়া হয়েছে তার বুকের ওপর।

প্রতীকটা চমৎকার। এক লরি মেরে দিয়ে গেছে রাণুকে। আর এক লরির ওপর এখন সে শোয়া। বুকে ফুলের চাকা। চমৎকার।

এতগুলো লোকের এই সমবেত নিস্তব্ধতা ভারি অস্বস্তিকর। অংশুর অল্প অল্প ঘাম হচ্ছে। লরিটা চলে যাচ্ছে কেন? কেন চলে যাচ্ছে না?

ডিরেক্টর চাপাস্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ফিলিং সিক অংশু?

একটু।

স্বাভাবিক। ইট ওয়াজ এ গ্রেট শক। মিসেস সরকারের হাজব্যাণ্ড আর বাচ্চাকে আনতে গাড়ি পাঠানো হয়েছে। দে আর বিয়িং লেট।

অংশু বুকের দুটো বোতাম খুলে ফেলল। স্টানস পালটাল পায়ের। তারপর একটা গাড়ি এসে থামল লরিটার পেছনে।

অংশু স্থির হয় এবার। পেছনের দরজাটা খুলে একজন রোগা ও পাগলাটে চেহারার লোক নেমে আসে। পরনে পায়জামা, হ্যাণ্ডলুমের খয়েরি পাঞ্জাবি। চুল বড়ো বড়ো। সামান্য দাড়ি আছে। চুল, দাড়ি কাঁচা-পাকা, কিন্তু লোকটার বয়স খুব বেশি নয়, পঁয়ত্রিশ-টয়ত্রিশ হবে। অংশুর বাঁ-পাশ থেকে কে যেন চাপাস্বরে বলে উঠল, এ রাসক্যাল। ডাউনরাইট রাসক্যাল।

লোকটার পেছনে একটা বাচ্চা নেমে এল। নীল প্যান্ট, সাদা জামা। বেশ রোগা। বছর পাঁচেকের বেশি বয়স নয়। মুখটায় কেমন ভ্যাবাচ্যাকা ভাব। চোখে ভয়।

নিস্তব্ধতা ভাঙল আচমকা। নিখুঁত একটা বিদ্যুৎগতি ছুঁচের মতো ঘুরে বেড়াতে লাগল। কানে হাতচাপা দিয়ে অংশু একটা কাতর শব্দ করল, উঃ!

ছেলেটাকে কে যেন লরির ওপর তুলে দিয়েছে। রোগা, হাড্ডিসার, হতভম্ব ছেলেটা আর কোনো শব্দ বা কথা খুঁজে পাচ্ছে না। শুধু তীক্ষ্ণ পাখির স্বরে ডাকছে, মা…মা…মা…মা…

অংশু ধীরে ধীরে বসে পড়তে থাকে। দু-হাতে প্রাণপণে বন্ধ করে থাকতে চেষ্টা করে শ্রবণ। কিন্তু সব প্রতিরোধ ভেঙে সেই তীক্ষ্ণ পাখির ডাক তার ভেতরে সূচিমুখ হয়ে ঢুকে যায়। লন্ডভন্ড করে দিতে থাকে তার অভ্যন্তর। মা…মা…মা…মা…

অংশু মাথা নাড়ে। শব্দটা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে সে। তবু দম আটকে আসতে থাকে। সে হাত তুলে বলতে চেষ্টা করে, ডেকো না! ওভাবে ডেকো না! আমি পারছি না…

কিন্তু কিছুই উচ্চারণ করতে পারে না অংশু। দু-হাতে কান চেপে সে অভিভূতের মতো চেয়ে থাকে। একটা শব্দের বুলেট বারবার এসে বিদ্ধ করে তাকে। ঝাঁঝরা করে দিতে থাকে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top