গল্প: একগুচ্ছ নীল গোলাপ
লেখা: সুহানা সুলতানা
লেখা: সুহানা সুলতানা
-মিলি? মিলি?
-কি হয়েছে অভি? এতো চিৎকার কেন করছো?
-আমাকে শেভ করিয়ে দাও। দাঁড়িগুলো বেশ বড় হয়ে গেছে।
-আচ্ছা জনাব আপনি কি জানেন না আপনার খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো আমি ভীষন ভালোবাসি?
অভি মিলির কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো। ওর কপালের সঙ্গে কপাল ঠেকিয়ে দিয়ে বললো,
-আমার বউটার পছন্দ অপছন্দের খবর আমি রাখবো না তো কে রাখবে?
বলেই ওর বড় বড় দাঁড়িগুলো মিলির গালে ঘষে দিল।
-আহ্! তুমি কি বোঝনা এত শক্ত দাঁড়িগুলো গালে ফুটে যায়?
-হুঁ বুঝিতো।
বলেই ওর হাতে শেভিং মেশিনটা তুলে দিলো। আর মিলিও ওকে শেভিং করাতে লাগল। এই ছোট ছোট ভালবাসা ভরা কাজগুলো মিলিকে দিয়ে করিয়ে নিয়ে এক অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করে অভি। কাজটা শেষ করে মিলি রান্নাঘরে গেল। এখনও বাকি রয়েছে কিছুটা রান্না। আর অভি ওয়াশরুমে ঢুকলো।
-মিলি আমার ওয়ালেটটা পাচ্ছি না।
-মিনি ওয়ার্ডরোবে রাখা আছে।
-মিলি আমার বেল্টটা পাচ্ছি না।
-বেডেই রাখা আছে।
-মিলি আমার শার্টটা পাচ্ছি না।
কোনো উত্তর না দিয়ে মিলি রুমে এসে দেখলো অভি পুরো তৈরি হয়ে রয়েছে অফিসের জন্য। ওকে রুমে দেখেই ওর দিকে এগিয়ে এলো অভি।
-এতক্ষণ ধরে নাটক করছিলে কেনো?
-তুমি তো জানোই তোমাকে না দেখে আমি অফিসে যাই না। এসেই যখন পড়েছো আমাকে টাইটা পরিয়ে দাও।
মিলি, অভির চেয়ে অনেকটাই হাইটে ছোটো। অভির কাঁধ পর্যন্ত উচ্চতা মিলির। তাই পা দুটো উঁচু করে দাঁড়িয়ে টাই বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করলো আর অভি ওর কোমড় জড়িয়ে ধরলো। মিলি শাড়ি পড়ে থাকায় ওর উন্মুক্ত কোমড়ে পেটে হাতের আঙুল দিয়ে আঁকিবুঁকি কাটতে থাকলো অভির দুষ্ট হাতজোড়া।
-কি হচ্ছে কি? ঠিক করে বাঁধতে দাও।
চোখ গরম করে তাকিয়ে বলে উঠলো মিলি।
-ইশ বউ এভাবে তাকিয়ে না প্লীজ, আমাকে অফিসে যেতে হবে তাই তোমার সঙ্গে রোমান্স করতে পারবো না।
-দিন দিন তোমার অসভ্যতামি বেড়েই চলেছে।
-বউয়ের কাছে কোনো পুরুষই সভ্য নয়।
-তুমি কিন্তু......
ততক্ষণে অভি ওর মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর ওকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
-এখন হাতে বেশি সময় নেই তাই বাকিটুকু রাতে সুদে আসলে ফিরিয়ে দেব।
মিলি লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো।
-খেতে দেবেন নাকি অফিসে চলে যাবো?
-চলো দিচ্ছি।
দুজনে খেয়ে নিল। অভি মিলির কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পরে মিলির মা ফোন করলো।
-হ্যাঁ মা, কেমন আছো?
-হ্যাপি বার্থডে মিলু।
-মা তোমারও মনে আছে?
-তো আমার একমাত্র মেয়ের জন্মদিন কি আমার মনে থাকবেনা নাকি?
-মা?
-আজকে সময় করে যদি জামাইকে নিয়ে আসতে পারতিস।
-মা আজকে যাওয়া হবে না। ও অফিসে চলে গেছে। আসতেই তো রাত্রি আটটা বেজে যাবে।
-আচ্ছা যেদিন সময় হবে আসিস।
-হুম মা। রাখছি।
-হুম, সাবধানে থাকবি।
-আচ্ছা।
সবাইয়েরই মনে আছে জন্মদিনের কথা আর তুমি একটা উইশ পর্যন্ত করলে না মিস্টার অভি। মিলি মন খারাপ করে টিভি অন করে ড্রামা দেখতে শুরু করলো। দুপুরে একটু ঘুমিয়েও নিলো। উঠে ফোন চেক করে দেখলো অভি কল করেনি। অথচ প্রতিদিন দুই তিন বার করে কল করে। তাই মিলি নিজেই ফোন করলো কিন্তু ফোন রিসিভ হল না।
লোকটা পেয়েছেটা কি নিজেও কল করেনি আবার আমি করলাম ধরছে না।
আবারও মন খারাপ করে বাগানে গিয়ে গাছ গুলোতে জল দিলো তারপর ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় বসলো। এর মধ্যেই ফোনটা বেজে উঠল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ছয়টা বাজছে আর এখন কল করেছে অভি। ও কলটা রিসিভ করল।
সকাল থেকে তোমার ফোনের আশায় বসে আছি আর এখন সময় পেলে ফোন করার?
-ম্যাম আপনি কি মিলি বলছেন?
-হ্যাঁ। কিন্তু আপনি কে?
-ফ্লাওয়ার স্ট্রীটে যেই ব্যক্তির অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে তারই মোবাইল এটা আর এমারজেন্সি থেকে আপনার নাম্বার পেয়ে কল করলাম। হ্যালো! হ্যালো! ম্যাম আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?
মিলি প্রথম কথাটুকু শুনেই বেরিয়ে পড়েছে বাড়ি থেকে ওর মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে "আমার অভির অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে"।
বাড়ির একটা গাড়িতে বসেই বলে উঠল,
-কাকা তাড়াতাড়ি ফ্লাওয়ার স্ট্রীটে চলো।
ড্রাইভার কাকাও আর বাক্য বিনিময় না করে গাড়ি স্টার্ট দিলেন।
ওনার স্পট ডেথ হয়েছে।
ইশ বেচারার বয়সটাও বেশি না। হয়তো কিছুদিন হয়েছে বিয়ে হয়েছে তাই হয়তো ফুল কিনতে এসেছিল।
আজকালকার লরির ড্রাইভাররাও সিগন্যাল মানে না যদি মানতো তাহলে আর এই দুর্ঘটনা ঘটতো না।
গাড়ি থেকে নেমে ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল মিলি।
অভির শরীরের রক্তে পুরো রাস্তা ভেসে আছে। নিথর শরীরটার পাশে রক্তলাগা একগোছা নীল গোলাপগুলো ছড়িয়ে আছে।
-ওকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছেন না কেন? প্লীজ কেউ অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন প্লীজ।
-ওনার স্পট ডেথ হয়েছে।
কথাটা মিলির ফাঁকা মস্তিষ্কে আঘাত হানলো। ফলস্বরূপ জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ল মিলির শরীরটা। ড্রাইভার কাকা এসে তাড়াতাড়ি অচেতন মিলিকে গাড়িতে বসিয়ে হসপিটালে নিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর ওর জ্ঞান ফিরতেই ডক্টর বললেন কংগ্রাজুলেশন মিসেস চৌধুরী আপনি প্রেগন্যান্ট। কথাটা শুনেই ও চিৎকার করে উঠল,
-অভি, অভি কোথায়?
ওর মা এসে শান্ত করতে চাইলো কিন্তু পারলো না তাই ওকে বাড়িতে নিয়ে এলো। এসেই দেখলো বাড়িতে প্রচুর লোকের ভিড়। ভিড় ঠেলে এগিয়ে গিয়ে অভির নিথর শরীরটার পাশে বসলো মিলি।
-এই অভি দেখো আমি মা হবো আর তুমি বাবা। তোমার ভালোবাসার অংশ আমার মধ্যে একটু একটু করে বেড়ে উঠবে। তোমায় পাপাই আর আমাকে মাম্মাম ডাকবে। এই তুমি চুপ করে আছো কেন? কথা বলো না আমার সাথে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে অভি। প্লীজ কিছু তো বলো। তুমিই তো বলতে আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তাহলে এখন কেনো আমাকে একা করে দিয়ে চলে যেতে চাইছো? তোমার পাগলামিগুলোকেই ভালোবাসি অভি। ভীষন ভালোবাসি তোমায়।
বলেই অভির কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো মিলি। তারপর ওর নিথর শরীরটা আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে আবারও জ্ঞান হারালো।
Last edited: