What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected ভয় (ছোটগল্প) (1 Viewer)

Welcome! You have been invited by বান্টি দাস to join our community. Please click here to register.

Kaptan Jacksparoow

Community Team
Elite Leader
Joined
Apr 6, 2019
Threads
328
Messages
5,981
Credits
45,360
T-Shirt
Profile Music
Recipe sushi
Rocket
Euro Banknote
Butterfly
ভয়- হুমায়ুন আহাম্মেদ



ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার কীভাবে পরিচয় হলো আগে বলে নিই। কেমিস্ট্রি প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার এগজামিনার হয়ে পাড়াগাঁ ধরনের এক শহরে গিয়েছি (শহর এবং কলেজের নাম বলার প্রয়েজন দেখছি না। মূল গল্পের সঙ্গে এদের সম্পর্ক নেই। নামগুলি প্রকাশ করতেও কিছু অসুবিধা আছে)। এই অঞ্চলে আমি কখনো আসিনি। পরিত্যক্ত এক রাজবাড়িতে কলেজ বানানো হয়েছে। গাছ-গাছড়ায় চারদিক আচ্ছন্ন। বিশাল কম্পাউণ্ড। কিন্তু লোকজন নেই, পরীক্ষার জন্যে কলেজ ছুটি হয়ে গেছে। খা খা করছে চারদিক। আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম।

একটা সময় ছিল যখন এগজামিনারদের আলাদা খাতিরযত্ন ছিল। কলেজের প্রিন্সিপাল নিজের বাসায় রাখতেন। সকাল-বিকাল নানান ধরনের খাবার। জাল ফেলে পাকা রুই ধরা হতো। যত্নের চূড়ান্ত যাকে বলে। এখন সেই দিন নেই। কেউ পাত্তাই দেয় না। বিরক্ত চোখে তাকায়।

আমার জায়গা হলো কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরির পাশে একটা খালি কামরায়। প্রিন্সিপাল সাহেব বললেন, আপনাকে হোস্টেলেই রাখতে পারতাম। কিন্তু বুঝতেই পারছেন চারদিকে থাকবে ছাত্র। আপনি অস্বস্তি বোধ করবেন। ছাত্ররা তো আর আগের মতো নেই। মদটদ খায়। একবার বাজে মেয়ে নিয়ে এসে নানা কীর্তি করেছে। বিশ্রী ব্যাপার। তবে আপনার খাওয়াদাওয়ার কোনো অসুবিধা হবে না। আমার বাসা থেকে খাবার যাবে।

থাকার ঘর দেখে চমকে উঠলাম। আগে বোধহয় স্টোররুম ছিল। একটামাত্র জানালা। রেলের টিকিট দেয়ার জানালার মতো ছোট। ঘরভরতি মাকড়সার ঝুল। দুটি বিশাল এবং কুৎসিত মাকড়সা পেটে ডিম নিয়ে বসে আছে। এই নিরীহ প্রাণীটিকে আমি অসম্ভব ভয় পাই। এদের ছায়া দেখলেও আমার গা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। ঝাড়ুদারকে পাঁচটা টাকা দিলাম মাকড়সার ঝুল পরিষ্কার করার জন্যে। সে কী করল কে জানে! ঘর যেমন ছিল তেমনি রইল। দুটির জায়গায় এখন দেখছি তিনটি মাকড়সা। তৃতীয়টির গায়ের রং কালো। চোখ জ্বলজ্বল করছে।

সন্ধ্যাবেলা হারিস নামের একজন লোক একটা হারিকেন জ্বালিয়ে দিয়ে গেল। অথচ দিনের বেলায় ইলেকট্রিসিটি আছে দেখেছি। হারিস বললরাত দশটার পর কারেন্ট আসে। আমার বিস্ময়ের সীমা রইল না। রাত দশটার পর আমি কারেন্ট দিয়ে করব কী?

সন্ধ্যার পর এলেন কেমিস্ট্রির ডেমনেসট্রেটর সিরাজউদ্দিন। এঁর সঙ্গে আমার সকালে একবার দেখা হয়েছে। তখন বোধহয় তেমন মনোযোগ দিয়ে দেখিনি। মুখভরতি আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মতো চাপদাড়ি। মাথায় টুপি। চোখে সুরমা। গা থেকে আতরের গন্ধ বেরুচ্ছে। বেঁটেখাটো একজন মানুষ। বয়স পঞ্চাশের মতো হলেও চমৎকার স্বাস্থ্য। এই গরমেও গায়ে ঘিয়া রঙের একটা চাদর। তিনি কথা বলেন খুব সুন্দর করে।

স্যার কেমন আছেন?

ভালোই আছি।

আপনার খুব তকলিফ হলো স্যার।

না, তকলিফ আর কী?

আগে এগজামিনার সাহেবরা এলে প্রিন্সিপাল স্যারের বাসায় থাকতেন। কিন্তু ওঁর এক ছেলের মাথায় দোষ আছে। প্রিন্সিপাল স্যার এখন আর কাউকে বাসায় রাখেন না। ছেলেটা বড় ঝামেলা করে।

আমি বললাম, আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।

সিরাজউদ্দিন সাহেব ক্ষীণকণ্ঠে বললেন, স্যার, ভেতরে এসে একটু বসব?

নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই। আসুন গল্প করি।

সিরাজউদ্দিন সাহেব বসতে বসতে বললেন, এখানে ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের একটা ডাকবাংলো আছে। আপনাকে সেখানে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে রেভিনিউর সি.ও. তার ফ্যামিলি নিয়ে থাকেন। কোয়ার্টারের খুব অভাব।

বুঝতে পারছি। এই নিয়ে আপনি ভাববেন না। দিনের বেলাটা তো কলেজেই কাটবে। রাতে এসে শুধু ঘুমানো। বইপত্র নিয়ে এসেছি, সময় কাটানো কোনো সমস্যা না।

সিরাজউদ্দিন সাহেব ইতস্তত করে বললেন, রাতে ঘর থেকে বেরুতে হলে একটু শব্দ-টব্দ করে তারপর বেরুবেন। খুব সাপের উপদ্রব।

তা-ই নাকি? জী স্যার। এখন সাপের সময়। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গর্ত থেকে বের হয়। হাওয়া খায়।

আমার গা হিম হয়ে গেল। এ তো মহাযন্ত্রণা! প্রায় দুশো গজ দূরে ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে বাথরুম। আমার আবার রাতে কয়েকবার বাথরুমে যেতে হয়।

তবে স্যার ঘরের মধ্যে কোনো ভয় নেই। চারদিকে কার্বলিক অ্যাসিড দিয়ে দিয়েছি। সাপ আসবে না।

না এলেই ভালো।

যদি স্যার আপনি অনুমতি দেন পা উঠিয়ে বসি।

বসুন বসুন। যেভাবে আপনার আরাম হয় সেভাবেই বসুন।

ভদ্রলোক পা উঠিয়ে বসলেন এবং একের পর এক সাপের গল্প শুরু করলেন। সেইসব গল্পও অতি বিচিত্র। রাতে ঘুম ভেঙেছে, হঠাৎ তার মনে হলো নাভির উপর চাপ পড়ছে। চোখ মেললেন। ঘরে চাঁদের আলো। সেই আলোয় লক্ষ করলেন একটা সাপ কুণ্ডলী পাকিয়ে তার নাভির উপর শুয়ে ঘুমুচ্ছে, আসল সাপ–শঙ্খচূড়।

একসময় আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, সাপের গল্প আর শুনতে ইচ্ছা করছে না। দয়া করে অন্য গল্প বলুন।

ভদ্রলোক সম্ভবত সাপের গল্প ছাড়া অন্য কোনো গল্প জানেন না। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুরু করলেন সাপের সঙ্গমদৃশ্যের বর্ণনা। চৈত্রমাসের এক জ্যোৎস্নায় তিনি এই দৃশ্য দেখেছেন। বর্ণনা শুনে আমার গা ঘিনঘিন করতে লাগল। সিরাজউদ্দিন সাহেব বললেন, সাপ যে-জায়গায়

এইসব করে তার মাটি কবচে ভরে কোমরে রাখলে পুরুষত্ব বাড়ে।

বিজ্ঞানের একজন শিক্ষকের মুখে কী অদ্ভুত কথা! আমি ঠাট্টা করে বললাম, আপনি সেখানকার মাটি কিছু সংগ্রহ করলেন?

তিনি আমার ঠাট্টা বুঝতে পারলেন না। সরল ভঙ্গিতে বললেন, জী না স্যার।

লোকটি নির্বোধ। নির্বোধ মানুষের সঙ্গে আমার কথা বলতে ভালো লাগে না। কিন্তু এই লোক উঠছে না। সাপ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সে আমাকে দেবে বলে বোধহয় তৈরি হয়েই এসেছে। মুক্তি পাবার জন্যে একসময় বলেই ফেললাম, সারাদিনের জার্নিতে টায়ার্ড হয়ে এসেছি। যদি কিছু মনে না করেন বাতিটাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ব।

ভদ্রলোক অবাক হয়ে বললেন, কী বলছেন স্যার? ভাত না খেয়ে ঘুমাবেন? ভাত তো এখনও আসেনি। দেরি হবে। আমি প্রিন্সিপাল সাহেবের বাসা থেকে খোঁজ নিয়ে তারপর আপনার কাছে এসেছি। আমি যাওয়ার পর রান্না চড়িয়েছে। গোশত রান্না হচ্ছে।

তা-ই নাকি?

জী। আপনি গরু খান তো?

জী, খাই।

এখানে কসাইখানা নাই। মাঝে মাঝে গরু কাটা হয়। আজ হাটবার। তাই গরু কাটা হয়েছে। প্রিন্সিপাল সাহেব দুই ভাগ নিয়েছেন।

ও আচ্ছা।

পঁচিশ টাকা করে ভাগ।

তা-ই বুঝি?

প্রিন্সিপাল স্যারের স্ত্রীর রান্না খুব ভালো।

তা-ই নাকি?

জী। তবে আজ রান্না করছে তার ছেলের বউ। যে-ছেলেটা পাগল তার বউ।

ও আচ্ছা।

বিরাট অশান্তি চলছে প্রিন্সিপাল স্যারের বাড়িতে। ছেলে বঁটি নিয়ে তার মাকে কোপ দিতে গেছে। বউ গিয়ে মাঝখানে পড়ল। এখন ছেলেকে বেঁধে রেখেছে। এইজন্যেই রান্নায় দেরি হচ্ছে।

কোনো হোটেলে গিয়ে খেয়ে এলেই হতো। এদের দুঃসময়ে…

কী যে বলেন স্যার! আপনি আমাদের মেহমান না? তা ছাড়া ভ্রলোকের খাওয়ার মতো হোটেল এই জায়গায় নাই। নিতান্তই গণ্ডগ্রাম। হঠাৎ সাবডিভিশন হয়ে গেল। ভালো একটা চায়ের দোকান পর্যন্ত নাই।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top