What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected বৃষ্টি এবং তুমি (1 Viewer)

9xcBBXm.png


খুব চেনা এ পথ দিয়ে রূপকথার নিত্য আসা-যাওয়া। ব্যস্ত সকালে প্রতিদিনই অফিসে যাওয়ার জন্য রিকশার জন্য অপেক্ষা করে রূপকথা। টুংটাং শব্দ করে ছুটে চলা রিকশাগুলো যেন আপন গতিতে ছুটতে থাকে। কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যাওয়ার জন্য কখনো রিকশা পায় তো কখনো পায় না। এভাবেই রূপকথার গন্তব্যে যাওয়ার জন্য প্রতিদিনই অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়। ব্যস্ত শহরে মানুষগুলোর সকাল মানেই বিরামহীন ছুটে চলা। তবে প্রতিদিন সকালের এই প্রতীক্ষাটুকু এখন রূপকথার বেশ লাগে। রাস্তার ঠিক অপর প্রান্তে প্রতিদিন সকালে আরও একজন একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকে রিকশার খোঁজে। দুজনের গন্তব্য যদিও বিপরীতমুখী, তবু উদ্দেশ্য এক। কর্মস্থলে যাত্রা। এ ছাড়া আর কি কোনো উদ্দেশ্য আছে? সে কথা অবশ্য রূপকথার জানা নেই। তাকে দেখলেই কেন যেন মন কেমন করা অনুভূতিগুলো ফিসফিস করে কানের কাছে কী বলে। রূপকথার ভীষণ লজ্জা হয়। অচেনা কারও জন্য এমন ভাবনা মনে আসা নিয়ে একটু অস্বস্তি হবে, এটাই স্বাভাবিক।

ছেলেটার সঙ্গে কখনো কথা হয়নি রূপকথার। শুধু জানে পাশের এলাকায় থাকে। প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য রূপকথার ঠিক অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে রিকশার খোঁজে। সুদর্শন, নম্র, ভদ্র একজন প্রাণবন্ত তরুণ। যতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে, ততক্ষণই আশপাশের সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করে। রূপকথার দিকে তাকিয়ে সৌজন্যমূলক হাসিটা যেন নিত্যদিনের নীরব উপহার। রূপকথাও সেই নির্মল হাসির উত্তরে ফিরিয়ে দেয় একটুকরো লাজুক হাসির ছোঁয়ায়। প্রতিদিনের সাক্ষাতে কেবল হাসিটুকুই সম্বল। এ সম্বলটুকু নিয়ে রূপকথার সারাটা দিন ভালো কাটে। এই ভালো লাগার কারণ কী, রূপকথার জানা নেই। নাম না জানা সেই মানুষটাকে রূপকথা ভালোবাসে কি না, সে প্রশ্ন কখনো রূপকথা নিজেকে করেনি। যার সঙ্গে কখনো কথা হয়নি, তাকে কি আদৌ ভালোবাসা যায়? রূপকথার বেখেয়ালি মনে কত প্রশ্ন এমন করে উঁকি মারে। এমন করেই কেটে যায় দিনগুলো।

কিন্তু বেশ কিছুদিন হলো ছেলেটির কোনো দেখা নেই। সকালে রূপকথা রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপর প্রান্তের শূন্য স্থানটির দিকে উদাস নয়নে তাকিয়ে থাকে। মনের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়। অজানা আশঙ্কারা ভিড় করে মনের আঙিনায়। কোনো বিপদ হয়নি তো? রূপকথার মন বিষণ্নতায় ছেয়ে যায়। কাউকে যে ছেলেটার কথা জিজ্ঞেস করবে, সে উপায় নেই। আজ পর্যন্ত তার নাম জানা হয়নি। শুধু জানা হয়েছিল একজন মানুষকে অন্য রকম ভালো লাগার অনুভূতির কথা। রূপকথার দিন ভালো কাটে তাকে ভেবে ভেবে। এ কদিনে তার অনুপস্থিতি বলে দিয়েছে রূপকথা মনের অজান্তেই তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। ভালো না বাসলে একজন মানুষের শূন্যতা এতটা পোড়ায় না। তাকে একনজর দেখার জন্য অধীর হয় না দুটি চোখ।

এভাবেই কেটে গেল সাত দিন। এ সাত দিন রূপকথার ব্যস্ত সকাল ছিল এক বিবর্ণ প্রজাপতি। দীর্ঘশ্বাস ছিল একা দাঁড়িয়ে থাকা নিশ্চুপ সহযাত্রী। পাশের এলাকার এক তরুণের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে দুমড়েমুচড়ে গিয়েছিল রূপকথা। ভেবেছিল সেই ছেলেটা বোধ হয়; কিন্তু পত্রিকায় ছবি দেখে নিশ্চিত হয়েছিল, অন্য কেউ। মনে ক্ষীণ আশা জেগেছিল তখন, আবার হয়তো দেখা হবে সোনালি মিহি রোদ্দুরমাখা সকালে, আলতো প্রেমের ছোঁয়ায় মোহনীয় হবে সেই দিনটি।

পয়লা আষাঢ়। রূপকথা পরেছে নীল শাড়ি। কপালে ছোট একটা নীল টিপ। দুহাতের নীল কাচের চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ জানিয়ে দিচ্ছে আজ রূপকথার মন বেশ ভালো। যদিও আকাশে মেঘ জমেছে, তবে বৃষ্টির বার্তা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। এলোমেলো হাওয়া বইছে আপনমনে। রূপকথা অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছে।

দাঁড়িয়ে আছে সেই চেনা জায়গায়। দু-চারটা রিকশা চলে গেল পাশ কেটে। রূপকথা স্থির দাঁড়িয়ে একই জায়গায়। রাস্তার ওপারটা আজও শূন্যতায় হাহাকার করছে। রূপকথার মনটা খারাপ হয়ে গেল মুহূর্তেই। ভেবেছিল আজ হয়তো দেখা হবে তার সঙ্গে। দেখা হলেই জিজ্ঞেস করবে এত দিন কোথায় লুকিয়ে ছিল? কিন্তু আজও সে এল না। আজকের পয়লা আষাঢ়ে রূপকথা নীলবসনা সেজেছিল কেবল তার জন্য।
রূপকথার চোখ দুটো জলে টইটম্বুর হয়ে গেল। হঠাৎ টুপটাপ বৃষ্টি। আজ রূপকথা ছাতা নিয়ে বের হয়নি। ভেবেছিল বৃষ্টি হবে না। কিন্তু বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টি ঝরছে রূপকথার দুচোখ বেয়েও। একদিকে ভালোই হয়েছে। নিজের কষ্ট লুকানোর এর চেয়ে উত্তম পন্থা আর নেই। রূপকথা এক পা দু পা করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। অফিসে তো যেতেই হবে।

এতক্ষণ এত রিকশা ছিল, এখন রিকশারও দেখা নেই। জোরেশোরে বৃষ্টিও নেমে গেছে। রূপকথা ভিজে যাচ্ছে আষাঢ়ের ছোঁয়ায়। হঠাৎ লক্ষ করল কে যেন মাথার ওপর ছাতা তুলে ধরেছে। রূপকথা পেছন ফিরে তাকাল। বিস্ময়ে বাক্‌রুদ্ধ হওয়ার উপক্রম। সেই ছেলেটি! ঠোঁটের কোণে রহস্যের হাসি।

রূপকথার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে জিজ্ঞেস করল, 'এত দিন কোথায় ছিলেন?' ছেলেটি রূপকথার জলছোঁয়া চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, 'কারও হিয়ার মাঝে।' রূপকথা জিজ্ঞেস করল, 'কার হিয়ার মাঝে?' ছেলেটি এবার রূপকথার মুখোমুখি এসে দাঁড়াল। মৃদু হেসে বলল, যে মেয়েটি এ কদিন হন্যে হয়ে খুঁজেছে তাকে? আজ তার দেখা না পেয়ে দুচোখ ভিজিয়েছে জলে, সেই মেয়েটির হিয়ার মাঝেই লুকিয়ে ছিল।

রূপকথা লজ্জায় লাল হয়ে গেল। ছেলেটির এক হাতে ছাতা আর এক হাতে একগুচ্ছ কদম ফুল। ফুলসহ হাতটি পেছনের দিকে লুকিয়ে রেখেছিল। এবার রূপকথার হাতে ফুলগুলো দিয়ে বলল, 'বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল, শুধু তোমার জন্য। আমার নাম মেঘ। শুধু তোমায় দেখব বলেই প্রতিদিন আমার এখানে দাঁড়িয়ে থাকা। তোমার চোখের লাজুক চাহনি দেখে বুঝে ফেলেছিলাম হয়তো তোমার মনে আমার জন্য একটু জায়গা তৈরি হয়েছে। পুরোটা জায়গা পাওয়ার লোভ তাই সামলাতে পারলাম না। কিছুদিন গা ঢাকা দিলাম শুধু এটুকু দেখতে যে তুমি আমায় খোঁজো কি না।'
রূপকথা অভিমানী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, 'কী দেখলেন?'

'দেখলাম, কারও চোখের পদ্মপুকুরে আমারই জলছবি। বুঝলাম, সে-ও আমাকে ভালোবাসে, যেমনটা আমি তোমায় ভালোবাসি। তোমার নামটা আমি আগেই জানতাম, তাই কখনো জিজ্ঞেস করিনি। ভেবেছি, যেদিন কাছে আসব, সেদিন "আপনি" সম্বোধনের দেয়াল তুলে দেব না দুজনের মাঝে। তুমি আমায় "তুমি" করে বলবে তো?'
আকাশ ভেঙে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে তখন। কথা বলতে বলতে কখন অনেকটা পথ হেঁটে এসেছে দুজন, টের পায়নি। রূপকথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো মেঘের কথা শুনেই যাচ্ছে। খুব করে চাইলে সত্যিই কাউকে পাওয়া যায়। রূপকথার স্বপ্ন ছিল, প্রিয় মানুষটার সঙ্গে এমনই কোনো বাদল দিনে নীল শাড়ি পরে একগুচ্ছ কদম হাতে হেঁটে যাবে অজানার পথে। আজ তেমনই একটি দিন। ইচ্ছা করছে হারিয়ে যেতে মেঘের হাত ধরে দূরে কোথাও। রূপকথা হঠাৎ মেঘের হাত থেকে ছাতাটা নিয়ে বন্ধ করে ফেলল। আবেগঘন কণ্ঠে বলল, 'বৃষ্টি আমার খুব পছন্দ।' মেঘ জিজ্ঞেস করল, 'আর?' রূপকথা মেঘের হাতটা আলতো করে ধরে বলল, 'এবং তুমি!'

মেঘ রূপকথার হাতটা শক্ত করে ধরে বুকের মাঝে চেপে ধরে বলল, 'আজ তবে বৃষ্টিবিলাস হোক। বৃষ্টি এবং তুমি মিলেমিশে একাকার হবে আমার তৃষিত ভুবনে। একটি দিন না হয় কাজকে ছুটি দিলাম দুজনে। আজ এই ঘন বরষায় দুজন না হয় হারিয়ে যাই অজানায়।'

* লেখক: শাহীন আক্তার স্বাতী, কানাগাওয়া কেন, জাপান
 

Users who are viewing this thread

Back
Top