What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected এই বসন্তে - উপন্যাস (1 Viewer)

Kaptan Jacksparoow

Community Team
Elite Leader
Joined
Apr 6, 2019
Threads
328
Messages
5,981
Credits
45,360
T-Shirt
Profile Music
Recipe sushi
Rocket
Euro Banknote
Butterfly
এই বসন্তে
লেখক- হুমায়ূন আহমেদ

সে ছাড়া পেল বসন্তকালে।

কড়া রোদ চারদিকে। বাতাস উষ্ণ। গেটের বাইরে প্রকাণ্ড শিমুল গাছে লাল লাল ফুল। বসন্তকালের লক্ষণ এই একটিই। সে একটা সিগারেট ধরিয়ে উদাস চোখে শিমুল গাছের দিকে তাকিয়ে রইল। এ্যাসিস্টেন্ট জেলার সাহেব তাকে শম্ভুগঞ্জ পর্যন্ত রেলের একটি পাস এবং ত্রিশটি টাকা দিয়েছেন। এবং খুব ভদ্রভাবে বলেছেন, জহুর, তালোমতো থাকবে। ছাড়া পাবার দিন সবাই খুব ভালো ব্যবহার করে।


জহুর আলি ছ বছর তিন মাস পর নীলগঞ্জের দিকে রওনা হল। কড়া বোদ। বাতাস উষ্ণ ও আর্দ্র। বসন্তকাল।




দবির মিয়া নীলগঞ্জের বাজারে দশ মণ ডাল কিনতে গিয়েছিল। ডাল কেনার কথা ছিল পনের মণ। কিন্তু টাকার যোগাড় হয় নি। টাকাটা দেবার কথা তার শ্বশুরের। শেষ মুহূর্তে তিনি খবর পাঠিয়েছেন-এখন কিছুই দিতে পারবেন না, হাত টান। বৈশাখ মাসের দিকে চেষ্টা করবেন। বৈশাখ মাসে টাকা দিয়ে সে কী করবে? দবির মিয়া ডালের আড়তে ঘুরতে ঘুরতে তার শ্বশুরকে কুৎসিত একটা গাল দিল। এই লোকের ওপর ভরসা করাটা মস্ত বোকামি হয়েছে। শালা মহা হারামী।

দবির মিয়া মুখ কালো করে ডালের বাজারে হাঁটাহাঁটি করতে লাগল। দুই দিনে বাজার চড়ে গেছে। সরসটা হয়েছে দু শ পঁচিশ। এত দাম দিয়ে ডাল কিনে রাখলে কয় পয়সা আর থাকবে? ডালের পাইকারও বেশি আসে নি। সেতাবগঞ্জের কোনো বেপারী নেই। সেখানে কত করে বিক্রি হচ্ছে কে জানে?

সে বিষণ্ণ মুখে এক চায়ের স্টলে ঢুকে পরপর দু কাপ চা খেয়ে ফেলল। পঞ্চাশ পয়সা করে কাপ। কোনো মানে আছে? কী আছে এর মধ্যে যে পঞ্চাশ পয়সা দাম হবে? তার মেজাজ ক্রমেই উষ্ণ হতে লাগল। এই অবস্থায় সে খবর পেল জহুর ছাড়া পেয়ে বাড়ি এসেছে। খবরটা প্ৰথমে সে বিশ্বাস করতে পারল না। জহুরের মেয়াদ হয়েছেন বছরের। এখনোছ বছরও হয় নি। জেল ভেঙে পালিয়েছে নাকি? দবির মিয়া তৃতীয় কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে সিগারেট ধরাল।

এই মুহূর্তে বাড়ি ফিরে যাওয়া দরকার, কিন্তু পরের হাটে দাম আরো চড়বে। এই বছর ডালের ফলন কম হয়েছে। কিনতে হলে এখনই কিনে ফেলা উচিত। সেতাবগঞ্জের খবরটা তার আগে জানা দরকার।

দবির মিয়া শেষ পর্যন্ত দু শ উনিশ টাকা দরে ন মণ ডাল কিনল। আগামীকাল ডালের বেপারী বস্তাগুলো পৌছে দেবে।

বাড়ি ফিরতে তার অনেক রাত হল। আজ সকাল সকাল ফেরা দরকার ছিল অথচ আজই দেরি হল। জুমাঘর পার হতেই দবির মিয়া দেখল সমস্ত অঞ্চলটা অন্ধকার। ঝড় নেই, বাদল নেই অথচ কারেন্ট চলে গেছে। এর মানে কী? সেই যদি রোজ হারিকেনই জ্বালাতে হয় তাহলে টাকাপয়সা খরচ করে লাইন আনার মানে কি? এই সব ফাজলামি না?

দবির মিয়ার বাড়ির সামনের বারান্দায় জহুর বসে ছিল। তার সামনের মোড়াতে যে বসে আছে সে খুব সম্ভব অ–অন্ধকারে ভালো দেখা যাচ্ছে না। দবির মিয়া বলল, কে? অঞ্জু উঠে ভেতরে চলে গেল। জহুর অস্পষ্টভাবে বলল, দুলাভাই, ভালো আছেন?

এ্যাঁ, কে?

আমি, আমি জহুর।

আরে জহুর তুমি, তুমি কোত্থেকে?

দবির মিয়া এমন ভঙ্গি করল যেন জহুর আসার খবর সে আগে পায় নি।

এ্যাঁ, কী সর্বনাশ, আমি তো কিছুই জানি না। থাক থাক, সালাম করতে হবে না। টুনী, এই টুনী, ঘর অন্ধকার–বিষয় কি? কারেন্ট নেই নাকি? এ্যা।

দবির মিয়া অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

চা-টা কিছু দিয়েছে? টুনী, এই টুনী। এরা কোন কাজের না। একটা বাতিটাতি তো দিতে পারে। হাত-মুখ ধুয়েছ জহুর?

জ্বি-না।

কোনো খোঁজখবর করে নাই। অপদার্থের গুষ্টি। যাও, গোসল করে ফেল। অল্প পানি দিয়ে গোসল করবে। টিউবওয়েলের পানি ঠাণ্ডা, ফস করে সর্দি লেগে যাবে। হা-হা-হা।

দবির মিয়া হাসিটা মাঝপথে গিলে ফেলল। টিউবওয়েলের পানি ঠাণ্ডা, এর মধ্যে হাসির কিছু নেই। খামাকা হাসছে কেন সে?

জহুর বলল, আপনারা সবাই ভালো ছিলেন তো?

আর ভালো থাকাথাকি। বলবসব। তুমি গোসল-টোসল সার–আমি বালতি–গামছা আনি। আগে বরং চা খাও।

চা খেয়েছি আমি।

আরেক কাপ খাও। চায়ে না নাই।

দবির মিয়া আবার হাসি গিলে ফেলল। হয়েছেটা কি তার? কথায় কথায় হেসে উঠছে কেন? টুনী হারিকেন হাতে ঢুকল। দবির মিয়া ধমকে উঠল, অন্ধকারে বসিয়ে রেখেছিস মামাকে, বুদ্ধিশুদ্ধি কিছু আছে মাথায়?

টুনী মৃদুস্বরে বলল, একটা মাত্র হারিকেন। ছোট মা আবার ফিট হয়েছেন।

কুপি জ্বাললেই হয়। অন্ধকারে বসে থাকবে নাকি?

জহুর বলল, কোনো অসুবিধা হয় নাই দুলাভাই।

বললেই হল অসুবিধা হয় নাই। এদের কোনো কাণ্ডজ্ঞান নাই। সব কয়টা গরু।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top