What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected গৌরীপুর জংশন - উপন্যাস (1 Viewer)

Kaptan Jacksparoow

Community Team
Elite Leader
Joined
Apr 6, 2019
Threads
328
Messages
5,981
Credits
45,360
T-Shirt
Profile Music
Recipe sushi
Rocket
Euro Banknote
Butterfly
গৌরীপুর জংশন
লেখক: হুমায়ুন আহমেদ​

০১.
মনে হচ্ছে কানের কাছে কেউ শিস দিচ্ছে।

শিসের শব্দে জয়নালের ঘুম ভেঙে গেল।

সে মনে-মনে বলল, বিষয় কি? কোন হালার পুতে… মনে-মনে বলা কথাও সে শেষ করল না। মনের কথা দীর্ঘ হলে ঘুম চটে যেতে পারে। ইদানীং তার কী যেন হয়েছে, একবার ঘুম ভেঙে গেলে আর ঘুম আসে না।

জয়নাল তার হাত পা আরো গুটিয়ে নিল। তবু শীত যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে শুয়ে আছে বড় একটা বরফের চ্যাঙের উপর। অথচ সে শুয়ে আছে কাপড়ের একটা বস্তার উপর। কম্বলটাও দুভাজ করে গায়ের উপর দেয়া। মাথা কম্বলে ঢাকা কাজেই যে উষ্ণ নিঃশ্বাস সে ফেলছে, সেই উষ্ণ নিঃশ্বাসও কম্বলের ভিতরই আটকা পড়ে থাকার কথা। তবু এত শীত লাগছে কেন? শীতের চেয়েও বিরক্তিকর হচ্ছে কানের কাছে শিসের শব্দ। বিষয়টা কি? কম্বল থেকে মাথা বের করে একবার কি দেখবে? কাজটা কি ঠিক হবে? কম্বলের ভেতর থেকে মাথা বের করার অর্থই হচ্ছে এক ঝলক বরফ শীতল হাওয়া কম্বলের ভেতর ঢুকিয়ে নেয়া। এ ছাড়াও বিপদ আছে, মাথা বের করলেই এমন কিছু হয়তো সে দেখবে যাতে মনটা হবে খারাপ। বজলু নামের আট-ন বছরের ছেলে কদিন ধরেই ইস্টিশনে ঘুরঘুর করছে। শীতের কোনো কাপড়, এমন কি একটা সুতির চাদর পর্যন্ত নেই। সন্ধ্যার পর থেকে ঐ ছেলে শীতের কাপড় আছে এমন সব মানুষের সঙ্গে ঘুরঘুর করে। দেখে অবশ্যই মায়া লাগে। কিন্তু মায়াতে তো আর সংসার চলে না। মায়ার উপর সংসার চললে তো কাজই হত। এই যে সে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে, এই কম্বলও যে-কেউ ফস করে টান দিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এখনও যে নেয় নি এটাই আল্লাহ্‌র অসীম দয়া।।

আবার শিস দেয়ার শব্দ হচ্ছে। বিষয়টা কি? নিতান্ত অনিচ্ছায় জয়নাৰ্ল কম্বলের ভেতর থেকে মাথা বের করল। অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়ল না। রাত প্রায় শেষ হয়ে আসছে। স্টেশনের আলো ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। মালঘরে রাখা প্রতিটি কাপড়ের কস্তার ওপর একজন দুজন করে শুয়ে আছে। এই কস্তাগুলো থাকায় রক্ষা হয়েছে। মেঝেতে ঘুমুতে হলে সৰ্বনাশ হয়ে যেত।।

জয়নাল চারদিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে দেখতে লাগল। যা ভেবেছিল তাই—বজলু পায়ের কাছে কুণ্ডুলি পাকিয়ে শুয়ে আছে। তার গায়ে চটের একটা বস্তা। শীতের সময় চটের বস্তাটা খারাপ না। ভেতরে ঢুকে মুখ বন্ধ করে দিলে বেশ ওম হয়। অল্প বয়স্কদের এর চে ভালো শীতবস্ত্ৰ আর কিছুই হয় না। বড় মানুষের জন্যে অসুবিধা। বস্তার ভেতরে পুরো শরীর ঢেকে না।

শিসের রহস্য এখন বের হল। ঐ হারামজাদা বজলু শিসের মতো শব্দ করছে। কোনো অসুখ বিসুখ না-কি? জয়নাল কড়া গলায় ডাকল, এ্যাই-এ্যাই। প্রচণ্ড শীতে ঘুম কখনো গাঢ় হয় না। বজলু সঙ্গে-সঙ্গে বাস্তার ভেতর থেকে মাথা বের করে বলল, জ্বি।

লাথি দিয়া ভোতা কইরা ফেলবাম। হারামজাদা শব্দ করস ক্যান?

বজলু কিছুই বুঝতে পারছে না। চোখ বড়-বড় করে তাকাচ্ছে।

শব্দ হয় ক্যান?

কি শব্দ?

সত্যি-সত্যি কি একটা লাথি বসাবে? বসানোনা উচিত। এই তারামজাদা সারাক্ষণ তার পেছনে-পেছনে ঘুরঘুর করে। এইভাবে ঘুরঘুর করলে এক সময় মায়া পড়ে যায়। গরিব মানুষের জন্যে মায়া খুব খারাপ জিনিস। জয়নাল খেকিয়ে উঠল, এই হারামজাদা নাম।

জ্বি।

কথায়-কথায় ভদ্রলোকের মত বলে জ্বি। টান দিয়া কান ছিইড়া ফেলমু। ছোড লোকের বাচ্চা। তুই নাম।

বিস্মিত বজলু উঠে বসল।

নাম। তুই নাম কইলাম।

বজলু চটের ভেতর থেকে বের হয়ে এল। জয়নাল দেখল সে সত্যি-সত্যি নেমে যাচ্ছে। তার মন খানিকটা খারাপ হল। এতটা কঠিন না হলেও হত। তবে এর একটা ভালো দিক আছে। এই ব্যাটা এর পর আর তার পেছনে পেছনে ঘুরঘুর করবে না। সে যখন ফেরদৌসের দোকানে পোটা ভাজি খাবে তখন একটু দূরে বসে চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে থাকবে না। হারামজাদা একেবারে কুকুরের স্বভাব পেয়েছে। জয়নাল কম্বলে পুরো মুখ ঢেকে ফেলল। বজলু এখন কোথায় যাবে, কোথায় ঘুমুবে—এই নিয়ে মাথাব্যথা নেই। যেখানে ইচ্ছা যাক। শিসের শব্দ কানে না এলেই হল। জয়নালের মন একটু অবশ্যি খচখচ করছে। সে মনের খচখচানিকে তেমন গুরুত্ব দিল না। ভেঙে যাওয়া ঘুম জোড়া লাগানোর চেষ্টা করতে লাগল। পৌষমাস শেষ হতে চলল, এখনো এত শীত কেন কে জানে। মনে হয় দুনিয়া উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। কেয়ামত যখন নজদিক তখন এই রকম উলট-পালট হয়। কেয়ামত যখন খুব কাছাকাছি চলে আসবে তখন হয়তো চৈত্র মাসেও শীতে হুহু করে কাঁপতে হবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top