What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected ব্যাটেল অফ কোকোস এবং কলকাতার সুকুমার রায়। (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
Anwoy Gupta লিখেছেন :

ব্যাটেল অফ কোকোস এবং কলকাতার সুকুমার রায়।

কবীর সুমন ঠিক বলেছিলেন - সুকুমার রায়ের মতো একজন জিনিয়াসের জন্য মন্দির বানানো উচিত।

আমরা হতভাগ্য বাঙালিরা ' শিশুসাহিত্যিক' বলে দেগে দিয়ে তাঁকে সীমাবদ্ধ করে রেখে দিয়েছি। ঐটুকুই!

সালটা ১৯১৪ কি ১৯১৫। সারা পৃথিবীতে দামামা বেজে গেল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের। রবীন্দ্রনাথ নোবেল পেয়ে গেছেন। ভারতবর্ষে তখন পুরোদস্তুর ব্রিটিশ শাসন। চারদিক থেকে অজস্র বিপ্লবী আর স্বদেশীরা আর তাঁদের কার্যকলাপ ব্রিটিশদের ঘুম একেবারে ছুটিয়ে দিয়েছিলেন।

গোঁদের উপরে বিষফোঁড়ার মতো এরই মধ্যে আরও একটা উপদ্রব ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষকে একপ্রকার নাস্তানাবুদ করেছিল বলা যায়।
১৯১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের বঙ্গোপসাগর থেকে জার্মান লাইট ক্রুজার এস.এম.এস এমডেন গোলাবর্ষণ করে মাদ্রাজ শহরের অধিবাসীদের ভয় খাইয়ে দিয়েছিল। পুরো নাম ' সাইনার মাজেস্টেট সিফ'। জার্মান ভাষায় এর অর্থ ' হিজ ম্যাজেস্টিজ শিপ'।
এই এমডেন ছিল জার্মান নেভির ড্রেসডেন শ্রেণীর লাইট ক্রুজার। উত্তর পশ্চিম জার্মানির ফ্রিসিয়া নামক এলাকায় এমস নদীর ধারে অবস্থিত এক বন্দর শহরের নাম এমডেন। সেই নামেই জাহাজটার নাম রাখা হয়। সেই জাহাজে ছিল সর্বসাকুল্যে দশটা মতো চার ইঞ্চি বোড়ের বড় কামান, আটটা দু ইঞ্চি বোরের ছোট কামান আর খান দুয়েক টর্পেডো। এই এমডেন ধীরে ধীরে সারা ভারতজুড়ে ত্রাস তৈরি করা শুরু করে। মাদ্রাজ বন্দর ১৯১৪ সাল অনুযায়ী ছিল খুবই সুরক্ষিত একটা জায়গা। কিন্তু সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখে সবার চোখে রীতিমতো ধুলো দিয়ে চুপিসাড়ে বঙ্গোপসাগরে ঢুকে পড়ে এমডেন। কলকাতা-কলম্বো রুটের বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর উপরে এমডেনের প্রথম নজর পড়ে। বর্মার রেঙ্গুনের থেকে শুরু করে কলম্বো অবধি দাপট দেখিয়ে এমডেন অন্তত একুশটা রণতরী কব্জা করে ফেলে। এতদিন অযথা ত্রাস যাতে সৃষ্টি না হয়, সেজন্য ব্রিটিশরা খবরটা চেপে রেখেছিলেন। কিন্তু দু'সপ্তাহ ধরে বঙ্গোপসাগর তছনছ করে ২২ তারিখে মাদ্রাজে এসে এমডেন গোলাবর্ষণ শুরু করতেই সবকিছু প্রকাশ্যে চলে আসে।

অগ্নিযুগের বিপ্লবী উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ' নির্বাসিতের আত্মকথায় লিখেছিলেন এই ঘটনায় কালাপানি পেরিয়ে যাঁরা দ্বীপান্তরে গেছিলেন, তাঁরা উল্লসিত হয়ে উঠেছিলেন।

তখন বছর সাতাশের বাঙালি ছোকরা সুকুমার কলকাতায় বসে লিখে ফেললেন একটা নিরীহ মজার কবিতা। কতকটা যেন ফাজলামো মেরেই লেখা।
সুকুমার লিখলেন -
' গান জুড়েছেন গ্রীষ্মকালে ভীষ্মলোচন শর্মা -/ আওয়াজখানা দিচ্ছে হানা দিল্লী থেকে বর্মা।'

গবেষকেরা বলছেন ভীষ্মলোচনের অন্য পদবীও তো থাকতে পারত, 'শর্মা' ই কেন? এই পদবী আসলে আনা হয়েছে 'বর্মা' র সঙ্গে মিলিয়ে লেখার জন্য। তাই
'বর্মা' এখানে ফেলনা নয়, কেন আগেই বলা হয়েছে। দিল্লি থেকে বর্মা নড়েচড়ে বসেছিল ' গান' অর্থাৎ 'Gun' এর ভয়ে। ভীষ্মলোচনের ' গান' শুনে সবাই বললো -' প্রাণটা গেল, গানটা থামাও ঝটপট। '
সেই সময় ' দ্য হিন্দু ' এই বিষয়টা নিয়ে একটা রিপোর্ট করেছিল। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী - ' এমডেনের কামানের গোলাবর্ষণে সমগ্র মাদ্রাজ শহর আতঙ্কিত। লোকজন বাড়িঘর, গবাদি পশু ফেলে সপরিবারে পালাচ্ছে। রাস্তায় পা ফেলা যায় না। '
সুকুমারের কবিতায় আছে- ' ছুটছে লোকে চারদিকেতে ঘুরছে মাথা ভনভন ' কিংবা ' বাঁধন ছেঁড়া মহিষ ঘোড়া পথের ধারে চিৎপাত '। ' দ্য হিন্দু ' একটা ছবিও ছেপেছিল বাড়ি-অট্টালিকা এমনকি বড় বড় গাছপালাও ভেঙেচুরে পড়ে আছে। সুকুমারের কবিতায় 'গান' কে যদি 'gun' দিয়ে রিপ্লেস করা যায়, তাহলে পাব- 'গাছের বংশ হচ্ছে ধ্বংস পড়ছে দেদার ঝুপঝাপ।' কিংবা ' gun' এর দাপে আকাশ কাঁপে দালান ফাটে বিলকুল।
এক্কেবারে যেন ' দ্য হিন্দু' র রিপোর্টের সঙ্গে খাপে খাপে মিল।

এর পরে একটা বিশেষ লাইনে চোখ রাখা যাক - ' জলের প্রাণী অবাক মানি গভীর জলে চুপচাপ। '

প্রশ্ন উঠতে পারে ' জলের প্রাণী ' এতগুলো জাহাজকে যে এমডেন ঘোল খাইয়ে ছাড়ল, ' গভীর জলে চুপচাপ ' কথাটার মানে তো দাঁড়াচ্ছে না!
আসলে আসল অর্থ লুকিয়ে আছে ' গভীর জলে ' র মধ্যেই। গভীর জলের প্রাণী এখানে হ'ল সাবমেরিন।
১৯১৪ সালেও সাবমেরিন ছিল। প্রথম ব্রিটিশ সাবমেরিন তৈরি হয়েছিল ১৯০৩ সালে ভিকার্স কোম্পানি ' বি ক্লাস' এর হাতে। আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের প্রধান সাবমেরিন ছিল ' ই ক্লাস '।
সুকুমার এজন্যই ' অবাক মানি ' লিখেছেন যে, এমডেনের এমন উপদ্রবের সময়ও সাবমেরিন চুপচাপ ছিল? পাল্টা আঘাত হানেনি?

ভীষ্মলোচনের গানের উৎপাত শেষে ঠান্ডা হয় এক ছাগলের ঢুঁ খেয়ে -
'এক যে ছিল পাগলা ছাগল, এমনি সেটা ওস্তাদ, / গানের তালে শিং বাগিয়ে মারলে গুঁতো পশ্চাৎ।/ আর কোথা যায় একটি কথায় গানের মাথায় ডান্ডা/
'বাপরে' বলে ভীষ্মলোচন এক্কেবারে ঠান্ডা। "

শেষমেশ এই এমডেন ঠান্ডা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান যুদ্ধজাহাজ ' এইচ.এম.এ.এস সিডনী'র 'gun' এর গুঁতোয়।
ইতিহাসে এই যুদ্ধের নাম ' ব্যাটল অফ কোকোস '।

জাহাজের পুরো নাম ছিল ' হিজ ম্যাজেস্টিজ অস্ট্রেলিয়ান শিপ'। অস্ট্রেলিয়া তখন ছিল ভারতের মতোই ব্রিটিশ কলোনি। এই যুদ্ধজাহাজের অবস্থান ছিল অস্ট্রেলিয়ার কোকোস কিংবা কীলিঙ দ্বীপের কাছের এক বন্দরে।

সিডনীর কামান ছিল এমডেনের তুলনায় বহুগুণে শক্তিশালী। গোলা মেরে এমডেনকে একেবারে ঝাঁঝরা করে দেয় সিডনী। জাহাজডুবি থেকে বাঁচার জন্য কুখ্যাত এমডেনের ক্যাপ্টেন ভন ম্যুলার কীলিঙ দ্বীপের মাটিতে কোনোক্রমে এমডেনকে ভিড়িয়ে নেন।
এমডেনের বাড়বাড়ন্তে লাগাম পড়ে।

গল্প এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু এখনো অবধি চমক অনেকটাই বাকি আছে। এত বুদ্ধিদীপ্তভাবে একেকটা শব্দ ব্যবহার করার পরেও শেষমেশ ' ছাগলের গুঁতো' কেন আনতে হ'ল সুকুমার রায়কে?
হঠাৎ কী থেকে তাঁর মাথায় এরকম একটা আইডিয়া খেললো?

অস্ট্রেলিয়ার সিডনী শহরের কাছে ' ব্র‍্যাডলিজ পয়েন্ট ' এ ' এইচ.এম.এ.এস সিডনী'র স্মৃতিসৌধ আছে। তার নিচে লেখা আছে - ' ওনলি থার্টি মিনিটস ড্রাইভ ফ্রম গোট আইল্যান্ড।'

এই ' Goat Island ' বা 'ছাগল দ্বীপ' ছিল কোকোস বা কীলিঙ দ্বীপগুলোয় অবস্থিত সিডনী বন্দরের ট্রাস্ট একটা শিপইয়ার্ড অর্থাৎ জাহাজের রক্ষণাবেক্ষণের গ্যারেজ।
সম্ভবত ' গোট আইল্যান্ড' ই ছিল সিডনীর আবাসভূমি। সেইসময় বিভিন্ন কাগজে সিডনীর বিজয়গাথা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে নিশ্চয়ই প্রচুর লেখা হয়েছিল, সুকুমার রায় নিশ্চয়ই সেরকম কিছু পড়েছিলেন।

আর ' গান ধরেছেন গ্রীষ্মকালে' কথাটা আরও প্রমাণ করে দেয় এই ঘটনাটাই উঠে এসেছে এই কবিতায় কারণ পুরো ঘটনা ঘটেছিল সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে। দক্ষিণ গোলার্ধের অস্ট্রেলিয়ায় তখন গ্রীষ্মকাল।

এক ক্যুইজে আমাদের ক্যুইজমাস্টার এই প্রশ্নটা করেছিলেন। আমরা কেউউ উত্তর দিতে পারিনি। তারপর 'আবোল তাবোল ' নিয়ে যত পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছি, পাগল হয়ে গেছি।

গবেষকেরাও আমি জানি পাগলের মতো লাফিয়ে উঠেছেন, চিৎকার করে বলেছেন - ' লোকটা মানুষ না কি! সমসাময়িক সামাজিক আর রাজনৈতিক বিষয় এবং বক্তব্যগুলোকে কেউ ছোটদের জন্য লেখা কবিতায় এভাবে লুকিয়ে রাখতে পারে!'

' আবোলতাবোল ' এর ' বাবুরাম সাপুড়ে ' আসলে সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রূপ। অনেকটা বঙ্কিমচন্দ্রের কমলাকান্তের মতো - ' জয় রাধেকৃষ্ণ ভিক্ষা দাও গো, ইহাই আমাদের পলিটিক্স। '

'হাতুড়ে' আসলে ব্রিটিশ আইসিএস অফিসারদের ব্যঙ্গ করে লেখা, ' ভুতুড়ে ' কবিতা অবনীন্দ্র ঠাকুরকে নিয়ে বিদ্রূপ, ' একুশে আইন' ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন আইনকে ব্যঙ্গ করে লেখা। ' কাঠবুড়ো ' আসলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতীয় সৈন্য সংগ্রহ করার হিড়িক এবং ' লড়াই ক্ষ্যাপা' মহাযুদ্ধের সময় ভারতীয়দের উন্মাদনাকে ব্যঙ্গ করে লেখা।

নিচের দুটো ছবি- একটা 'দ্য হিন্দু'র ছাপা আর অন্যটা সুকুমার রায়ের নিজের হাতে আঁকা অলঙ্করণ। ল্যাম্পপোস্ট ইত্যাদি দেখে বুঝবেন দুইয়ের মিল খুবই চোখে পড়ার মতো।

ব্যাটেল অফ কোকোসকে এভাবে অভিনব জ্যাকেট পরিয়ে কবিতায় আনা একজন ঐশ্বরিক ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের পক্ষেই সম্ভব।

এই ঘটনাটা কিন্তু লুকিয়ে আছে সুকুমার রায়ের লেখা একটা প্রবন্ধেও - ' প্রথম মহাযুদ্ধের গরম দিনগুলোর একদিন। এমডেন নামের একটি জার্মান যুদ্ধজাহাজ কয়েক দিন বঙ্গোপসাগরে থেকে ভারি উৎপাত করেছে এবং যথেষ্ট উত্তাপ সঞ্চারিত করেছে।... সেই জাহাজের একটা গোলা মাদ্রাজের একটা প্রকাণ্ড কেরোসিনের চৌবাচ্চায় পড়িয়া সমুদ্রের ধারে যে অগ্নিকাণ্ড লাগাইয়াছিল "তামাসা" হিসাবে সে দৃশ্য নাকি অতি চমৎকার হইয়াছিল। আর কেরোসিনের জন্ম যেখানে সেখানে ব্যবসার জন্য খনি খুঁড়িয়া, কুয়া বসাইয়া, কেরোসিনের হ্রদ বিল ও কেরোসিনের ফোয়ারার সৃষ্টি করা হয়, সেখানে যখন আগুন ধরিয়া যায় আর লক্ষ লক্ষ মণ কেরোসিন ধূ ধূ করিয়া জ্বলিতে থাকে তখন ব্যাপারটি যে কেমন হয় তাহার আর বর্ণনা হয় না। পেটুক আগুন তখন মনের মতো খোরাক পাইয়া উল্লাসে লক্ষ লক্ষ জিভ মেলিয়া ধোয়ার হুঙ্কার ছাড়িয়া স্বর্গ মর্ত্য গ্রাস করিতে চায়। তাহার কাছে লঙ্কাকাণ্ডই বা কি আর খাণ্ডব দহনই বা লাগে কোথায়।'

( অন্বয় গুপ্ত)

ঋণ :

১) Rhymes of Whimsy: The Complete Abol Tabol by Sukumar Ray, Niladri Roy

২) গানের গুঁতো রহস্যে ফেলুদা - নীলাদ্রি রায়

৩) নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

( যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কিছু বানানে সমস্যা হয়েছে, সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top