What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

জাদুর লাঠি-রুটি, ফরাসি বাগেত (1 Viewer)

7swhee4.jpg


ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী রুটি—বাগেত।

ফ্রান্সের সঙ্গে 'পারফিউম'-এর ইমেজ মিশে আছে। কেউ কেউ আগবাড়িয়ে ফ্যাশনের কথাও উল্লেখ করেন। তবে রন্ধনকে শিল্প এবং বিজ্ঞানের সমন্বয়ে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে ফরাসিরা। এরা খেতে পছন্দ করে। আর এই পছন্দের দৈনন্দিন তালিকায় আছে রুটি। আবার রুটির মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে খাটো দণ্ডাকৃতির মতন দেখতে এক ধরনের রুটি, নাম 'বাগেত'। সরাসরি বাংলায় অনুবাদ করলে হবে 'যষ্টি' বা 'দণ্ড'। দণ্ডাকৃতির এই রুটি ফরাসি ভোজন সংস্কৃতিতে এমনভাবে মিশে আছে যে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফ্রান্সের অলিখিত প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এই বাগেত ফরাসিদের বাজেটের অনেকটাই দখল করে আছে।

fBNIkeP.jpg


একজন ফরাসি তরুণী বাগেত নিয়ে ঘরে ফিরছেন, ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) তথ্যানুযায়ী, ফ্রান্সে প্রতি সেকেন্ডে ৩২০টি বাগেত ফরাসিদের পাকযন্ত্রে চালান হয়। প্রতিটি বাগেতের ওজন ২৫০ গ্রামের মতো। গণিতজ্ঞরা হিসাবটি একটু অন্যভাবে দিয়েছেন, তা হলো, বছরে ফরাসিরা তাদের উদার উদরে চালান করে এক হাজার কোটি এই দণ্ডাকৃতির রুটি। কীভাবে, কেমন করে এমন জাদুর রুটির লাঠি ফরাসিদের খাবার টেবিলে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করল, সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, শ্রুতি আছে সম্রাট নাপোলিয়ন বোনাপার্টের সেনাবাহিনীকে রুটি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা রুটি প্রস্তুতকারকেরা প্রথম বাগেত তৈরি করেন।

সে যা-ই হোক, গত শতাব্দীর শুরুর দিকে প্যারিস এবং এর আশপাশের বেকারিগুলোতে এ রুটি পাওয়া যেতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ফ্রান্সের ত্রিসীমানা ছাড়িয়ে ফ্রান্স অধিকৃত দেশগুলোতেও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। বর্তমানে ফ্রান্স ছাড়াও আলজেরিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া ও ভিয়েতনামে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় বাগেত বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। মজার ব্যাপার হলো, ফরাসিদের টেক্কা দিয়ে এমন রুটির সমাদরে এগিয়ে আছে আলজেরিয়ানরা। প্রায় সাত কোটি ফরাসি যেখানে দিনে প্রায় তিন কোটি রুটি সাবাড় করে, সেখানে সাড়ে চার কোটি আলজেরিয়ান প্রতিদিন দিন-রাতে দুবেলা খেতে বসে শেষ করে প্রায় ৪ কোটি ৮৬ লাখ বাগেত। এটাও FAO-এর দেওয়া তথ্য। আর ফাও কখনোই ফাও কথা বলে না।

0glYcsA.jpg


রুটির দোকানে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা বাগেত।

লাঠিসদৃশ রুটিটি লম্বায় ৬৫ সেমি, প্রস্থে ৪ থেকে ৬ সেমি আর উচ্চতায় ৩ থেকে ৫ সেমি। ক্যারামেল রঙের বেশ খানিকটা শক্ত খোলসের মধ্যে স্পঞ্জের মতো মাখন রঙের রুটি। ৯৮ শতাংশ ফরাসি এ রুটির প্রতি তাদের আসক্তি আছে জানিয়েছে। এর মধ্যে ৮৩ শতাংশ ফরাসি তাদের নিত্যদিনের খাবারের অপরিহার্য অনুষঙ্গ বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বন্ধু-আত্মীয় আলী আর জামিল ব্যবসার কাজে যখনই ফ্রান্সে আসে, তখন দুপুরের খানেক আগে মহল্লার রুটির দোকান থেকে ফরাসিদের হাতে কাগজে মোড়ানো এমন একটি-দুটি বাগেত নিয়ে ঘরে ফেরার দৃশ্য অনেক পর্যটকের মতোই কৌতুকস্মিত চোখে তাকিয়ে দেখে।

'প্রথম প্রথম খেতে গিয়ে মুখের ছাল (চামড়া) উঠে গিয়েছিল, এখন খুব ভালো লাগে', উভয়ের অভিন্ন মন্তব্য। আবার জাপানপ্রবাসী বন্ধু হাসানুর রহমান জানিয়েছেন, 'ফ্রেঞ্চ ব্রেড নামের একটা পাউরুটি জাপানে পাওয়া যায়। এটার আকৃতি লাঠির মতো, এত শক্ত যে ছুরি দিয়ে কাটতে গেলেও ছুরিটা ব্যথায় ক্যাঁ ক্যাঁ শব্দ করে উঠে। কিন্তু আশ্চর্য, যত চিবাবেন ততই মজা। এটা আমার কাছে জাদুর খেলা মনে হয়। একটা সাদামাটা রুটি কীভাবে এত সুস্বাদু হতে পারে, বিস্ময়!'

bYsuivD.jpg


প্রাতরাশের সঙ্গে বাগেত কয়েক টুকরা করে মাঝখানে কেটে নিয়ে মাখন, জেম বা জেলি দিয়ে ধূমায়িত গরম কফি সঙ্গে খুবই মাজার।

তিনি খুব একটা বাড়িয়ে বলেননি। আসলেই এ রুটি বেশ সুস্বাদু এবং এর এমন আলাদা স্বাদের রহস্য লুকিয়ে আছে এর উপকরণ নির্বাচন ও প্রস্তুত প্রণালিতে। খাদ্য নিয়ে যাঁরা চিন্তাভাবনা করেন, সেই গবেষকেরা খুব সোজা করে বলে দিয়েছেন, এ রুটির স্বাদের রহস্য যার ওপর নির্ভর করে তা হলো ৫৩.৫ শতাংশ রুটি প্রস্তুতকারীর নিজস্ব মেধা, দক্ষতা ও তৈরির কৌশল, ৩৮.৭ শতাংশ আটার গুণাগুণ আর ৭.৮ শতাংশ নির্ভর করে শস্যদানার উৎসের ওপর।

fK8x0HH.jpg


৮৫ শতাংশ ফরাসি দিনে অন্তত একবার রুটি-পাতিসেরির দোকানে পদধূলি দেন। ছবি: সংগৃহীত

ফরাসি রুটিওয়ালা অর্থাৎ বেকারদের দক্ষতার কথা বিশ্ববিদিত। রুটি তৈরিতে যে আটা ব্যবহার করা হয়, তাতে আমিষ অর্থাৎ প্রোটিনের পরিমাণের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা হয়। দুই ধরনের আটা প্রধান উপকরণ হিসেবে বেশি ব্যবহার করা হয়, ১২.৮ এবং ৮.৭ শতাংশ আমিষযুক্ত আটা। নরম এবং সেই সঙ্গে স্থিতিস্থাপক করতে আমিষের আধিক্যের ভূমিকা আছে।

Ru420nH.png


সাধারণ চার উপরকরণে অসাধারণ স্বাদ

সাধারণত ১ কেজি আটায় ৬০০ গ্রাম পানি, দেড় চা-চামচ লবণ, ২ চা-চামচ শুকনো ইস্ট (কুসুমগরম পানিতে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে), আর তেমন কিছু প্রয়োজন নেই। উপকরণের তালিকায় ডিম, দুধ, মাখন প্রভৃতি নেই। তবে গ্লুটেনে যাদের এলার্জি আছে, তাদের কথা মনে রেখে গ্লুটেনমুক্ত আটা দিয়ে বাগেত পাওয়া যায়। আবার যারা নেমকবিহীন রুটি খেতে চায়, তাদের দিকে খেয়াল রেখেছে, তাই লবণবিহীন বাগেতও পাওয়া যাবে। যেহেতু রুটি বেশি খেলে মুটিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়, তাই ১০০ বছর আগে যে পরিমাণ রুটি ফরাসিরা গ্রহণ করত, বর্তমানে তা কমে অর্ধেক হয়েছে অর্থাৎ বর্তমানে এর পরিমাণ প্রতিদিন মাথাপিছু ১০৩.৩ গ্রাম। ২০০৩-এ ছিল মাথাপিছু প্রতিদিন ১৪৩.৩ গ্রাম। গেল ১৬ বছরে ৪০ গ্রাম কমে গেছে।

প্রাতরাশের সঙ্গে বাগেত কয়েক টুকরা করে, মাঝখানে কেটে নিয়ে মাখন, জ্যাম বা জেলি দিয়ে ধূমায়িত গরম কফির সঙ্গে খুবই মজার। দুপুরে যাঁদের খুব তাড়া থাকে, তাঁরা আধখানা বাগেতের পেট চিরে তাতে পনির, খানিকটা টুনা ফিশ বা মুরগির বুকের মাংস, টমেটো এবং আরও কত কি পুরে আগে থেকে তৈরি করা নানা রকম স্যান্ডউইচে তৃপ্ত হন। এসব স্যান্ডউইচের দাম ৫ ইউরোর বেশি হয় না। এমনিতে ২৫০ গ্রাম ওজনের সাধারণ বাগেতের দাম এক থেকে দেড় ইউরোর মধ্যে ওঠানামা করে। ২০১৮ সালের গণনায় ফ্রান্সে মোট বেকারির সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার আর ৮৫ শতাংশ ফরাসি দিনে অন্তত একবার রুটি-পাতিসেরির দোকানে পদধূলি দেন।

yhvLTO4.jpg


আধখানা বাগেতের পেট চিরে তাতে পনির, খানিকটা টুনা ফিশ বা মুরগির বুকের মাংস, টমেটো প্রভৃতি দিয়ে মজার স্যান্ডউইচ করা যায়।

ফ্রান্সে বেড়াতে এলে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, এ বস্তুটি আপনার চোখে পড়বে। চোখে যখন পড়বেই তখন চেখে দেখতে দোষ কি, এ এক বিস্ময় জাদুর লাঠি-রুটি, ফরাসি বাগেত !

* লেখক: মইনুল হাসান, ফ্রান্স
 

Users who are viewing this thread

Back
Top