অনেকের ধারণা, যোগ মানেই শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম। আসলে কিন্তু তা নয়। শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম যোগের একটা অংশ মাত্র। যাকে যোগের ভাষায় বলে যোগাসন। যোগ আরও গভীর এবং বৃহৎ বিষয়। যদি আমি খুব সাধারণভাবে বলি, তাহলে আপনার প্রতিদিনের জীবনযাপনে যে নিয়ম, সেটি শুদ্ধ ও সঠিকভাবে পালন করাকে যোগ বলে। যোগ মানেই একটি সঠিক পরিপূর্ণ জীবনযাত্রা।
আর পতঞ্জলি যোগসূত্র অনুযায়ী মূল যোগের আটটি শাখা বা ধাপ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছে ইয়াম, নিয়াম, ধ্যান, ধারণা, প্রত্যাহার, প্রাণায়াম, আসান ও সমাধি।
এই আটটি বিষয় যখন আপনার জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পূর্ণ যুক্ত করে নেবেন, তখনই আপনি পুরো যোগের সঙ্গে যুক্ত হবেন। আপনাকে তখনই যোগী বলা হবে।
যোগ আসন: যোগের আটটি ধাপের মধ্যে একটি হচ্ছে আসন। আসন মূলত শারীরিক ব্যায়ামকে বোঝানো হয়। যোগে এমন অনেক আসন আছে, যেগুলো নিয়মিত চর্চা করলে কোমর ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, পিঠের ব্যথা, ঠান্ডায় কষ্ট পাওয়া, বয়স্কদের বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এ ছাড়া অ্যাজমার সমস্যা থেকে শুরু করে শরীরে রক্তসঞ্চালন বাড়ানোর মতো কাজগুলোও আপনি যোগাসনের মাধ্যমে করতে পারেন।
আর এই আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে বৃক্ষ আসন, হলাসন, সেতুবন্ধন আসন, পবনমুক্ত আসন, বুজুঙ্গাসন, স্বর্পাসন, দণ্ডাসন, উত্থানপা আসন, বীরভদ্র আসন, শশংকা আসন, ধনুরাসন, উষ্ট্রাসন, বজ্রাসন ইত্যাদি।
প্রাণায়াম: যোগে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়ামকে (ব্রিদিং এক্সারসাইজ) প্রাণায়াম বলে। প্রাণায়াম করার মাধ্যমে আপনি অনেক শারীরিক ও মানসিক সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পেতে পারেন। বিশেষ করে যাঁরা অল্প ঠান্ডাতেই বেশি রোগাক্রান্ত হন। বিশেষ করে আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যাঁদের মানসিক পরিবর্তন ঘটে, তাঁদের জন্য প্রাণায়াম খুবই কার্যকর উপায়। শীতে শরীর উষ্ণ রাখতে, শ্বাসকষ্ট দূর করতে, ব্লাড সার্কুলেশন বাড়াতে—নাড়িশোধন প্রাণায়াম, সুরিয়া বেদি, উজ্জায়ী, ভস্তিকা, ভ্রমরি ইত্যাদি প্রাণায়াম খুব ভালোভাবে সঠিক নিয়মে করতে পারেন।
ক্রিয়া: আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গকে সচল রাখার প্রক্রিয়াকে ক্রিয়া বলে। কিছু ক্রিয়া আছে বিশেষ করে যাঁরা মাইগ্রেন ও সাইনাসের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য ক্রিয়া খুবই জরুরি। সহজে বলা যায়, যে ক্রিয়া যোগ আমাদের হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের শক্তি বৃদ্ধি করে, হজমের সমস্যা কমিয়ে ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। আমাদের শরীরের যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়সহ অন্যান্য যন্ত্রকে সচল ও রোগমুক্ত রাখে। ক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে—কপাল ভাতি (কপালিভাতি ক্রিয়া হলেও এটাকে অনেকে প্রাণায়াম হিসেবেই করে থাকেন), অগ্নিসার, জল নেতি, সূত্র নেতি, বমনধৌতি ইত্যাদি।
মেডিটেশন: অনেক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে নানা কারণে অনেকের বিষণ্নতা বেড়ে যায়। কাজে মন না বসা থেকে শুরু করে ডিপ্রেশনেও ভোগেন অনেকে। এসব সমস্যা থেকে আপনি মুক্তি পেতে পারেন মেডিটেশনের মাধ্যমে। তাই এই সময়টায় চেষ্টা করুন নিয়ম করে সঠিক নিয়মে মেডিটেশন করার।
সতর্কতা
যখন যোগচর্চা করার সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন অবশ্যই কোনো যোগ প্রশিক্ষকের কাছে শারীরিক সমস্যার কথা বলবেন। তারপর আপনার জন্য যে আসন, প্রাণায়াম, ক্রিয়া ও মেডিটেশন উপযোগী, শুধু সেগুলোই করুন। ক্রিয়া করার ক্ষেত্রে যদি আপনার পূর্ব–অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে কখনোই নিজ থেকে করতে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। এ ছাড়া যেকোনো যোগাসনে যাওয়ার আগে অবশ্যই জয়েন্ট মুভমেন্ট ও বডি ওয়ার্মআপ করে নেবেন। এই কাজগুলো না করলে হঠাৎ ব্যথা পাওয়াসহ নানা সমস্যায় পড়তে পারেন।
* লেখক: এলিজা চৌধুরী | ইয়োগা প্রশিক্ষক (ঢাকা)