কর্মময় সুস্থ শরীর ও মনের জন্য দরকার সুষম খাদ্য। এতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান সঠিক চাহিদা অনুপাতে থাকে। প্রয়োজনীয় ছয়টি খাদ্য উপাদান হলো শর্করা, চর্বি, আমিষ, ভিটামিন, খনিজ ও পানি।
সাধারণত একজন ৭০ কেজি ওজনের প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিদিনের খাদ্যে ৪০০ গ্রাম শর্করা, ১০০ গ্রাম আমিষ ও ১০০ গ্রাম চর্বি থাকা আবশ্যক। এর সঙ্গে প্রয়োজনমতো অন্য উপাদানগুলোও থাকা চাই। একেই বলা হয় আদর্শ খাদ্য। দৈনন্দিন কাজের জন্য সাধারণত একজন কর্মক্ষম প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের তিন হাজার কিলোক্যালরি প্রয়োজন। এর অন্তত অর্ধেক আসে শর্করাজাতীয় খাবার থেকে। অনেকে দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে খাদ্যাভ্যাসে এমন পরিবর্তন আনেন, যাতে ক্যালরির সঠিক অনুপাত থাকে না। কিটো ডায়েটেও সব খাদ্য-উপাদান প্রয়োজনীয় অনুপাতে থাকে না।
কিটো ডায়েট কী
কিটো ডায়েটে দৈনিক খাদ্যতালিকায় শর্করাজাতীয় খাবারের পরিমাণ খুবই কম দেওয়া হয়। মোট খাবারের ২০ শতাংশের কম মাত্রার শর্করা থাকে এই ডায়েটে। এই চাহিদা মেটাতে চর্বি জাতীয় খাদ্য, যেমন ঘি, তেল, মাখন, ডিম বেশি খেতে বলা হয়। কিটো ডায়েটের উদ্দেশ্য শর্করা ছাড়াই শরীরকে কর্মক্ষম রাখা। ফলে শরীরে জমে থাকা চর্বি ভেঙে শক্তি জোগায়। ফলে ওজন কমতে থাকে। এটি একটি অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এভাবে দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে নানা বিপদ হতে পারে। শরীরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যেতে পারে। এর ফলে দেহের চর্বি ও আমিষ ব্যাপক হারে ভাঙতে থাকে। এতে শরীরে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিটো অ্যাসিড তৈরি হতে পারে, যা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়।
কিটো ডায়েটের সমস্যা
- শরীরের চর্বি ও আমিষ ভেঙে যাওয়ায় দৈহিক গঠন নষ্ট হতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যেতে পারে।
- রক্তে অতিরিক্ত কিটো অ্যাসিড তৈরি হলে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
- শরীরে চর্বি ভেঙে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং তা হৃদ্যন্ত্রের রক্তনালিতে জমে হৃদ্রোগের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
- আমাদের মস্তিষ্ক ও হৃদ্যন্ত্রের কর্মক্ষমতার অন্যতম প্রধান উৎস হলো শর্করা। কিটো ডায়েট ব্যবহারকারীরা যেহেতু একেবারেই শর্করা খান না, অথবা খুব সামান্য পরিমাণে খান, তাই মস্তিষ্ক ও হৃদ্যন্ত্রের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে।
- দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে মনোযোগহীনতা, অতিরিক্ত ঘুম, কাজকর্মে সমন্বয়হীনতা, শারীরিক দুর্বলতাসহ খিটখিটে মেজাজ, বিষণ্নতা ও অন্যান্য মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গার পেশিতে ব্যথা হতে পারে।
আপাতদৃষ্টে দ্রুত ওজন কমানো আর দেহকে মেদহীন করতে কিটো ডায়েট বেশ আকর্ষণীয় মনে হলেও এটি সবার জন্য নয়। খুব প্রয়োজন ছাড়া দ্রুত ওজন কমানোর দরকারও নেই। দীর্ঘমেয়াদে আদর্শ ওজন ধরে রাখার দিকে মনোযোগ দিতে হবে বেশি। তাই সব সময় অনুসরণ করা সম্ভব, এমন সুষম খাদ্যতালিকা দিয়েই ডায়েট করুন।
* অধ্যাপক লিয়াকত হোসেন, বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি বিভাগ, খুলনা মেডিকেল কলেজ