What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

চীনের হাতিগুলো কেন ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিল (1 Viewer)

এমন ঘটনা কেউ দেখেনি আগে। দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে একপাল হাতি বাসস্থান ছেড়ে ছুটছে তো ছুটছেই! এ পর্যন্ত চীনের শহর, গ্রাম, বনাঞ্চল মিলিয়ে ৫০০ কিলোমিটার (৩০০ মাইল) পথ পাড়ি দিয়েছে এরা। তাই ওরা এখন সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বড় আলোচ্য বিষয়। এতটা পথ পাড়ি দেওয়ার পর ৮ জুন হাতির পাল অবশ্য বিরতি নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিরতিটা সাময়িক। কিন্তু কিসের টানে এবং কোথায় ওরা এভাবে ছুটে চলেছে? কেউ বলছে, ওদের হয়তো একটা মানচিত্র দরকার!

কোথা হইতে আসে হাতি কোথায় চলে যায়

dyrmKYe.jpg


হাতিগুলোর ছুটে চলা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরছেন, হু চাও, জিনহুয়া নিউজ এজেন্সি

বিজ্ঞানীরা বলছেন, 'ভিটেমাটি' ছেড়ে বুনো হাতির এমন যাত্রা এর আগে দেখা যায়নি। 'নিশিতে পাওয়া' বলে একটা বিষয় আছে মানুষের বেলায়। হঠাৎ মাঝরাতে নিশির ডাকে দিগ্ভ্রান্তের মতো মানুষ ছুটে চলে অজানায়। হাতিগুলোকেও কি অমন নিশিতে পেল? হাতির পালের বিচিত্র আচরণ দেখে বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরছেন। কোনটা যে ঠিক, তা বলার সময় অবশ্য আসেনি।

kiQ177R.jpg


হাতির পালের যাত্রাপথ, হু চাও, জিনহুয়া নিউজ এজেন্সি

আর কেউ নিশ্চিতও নয় যে বিপন্ন এশিয়ান প্রজাতির হাতির পালটা কবে বাসস্থান ছেড়েছিল। কারও ধারণা, ওরা এসেছে ইউনান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জিশুয়াংবানা এলাকার মেংইয়াংজি ন্যাচার রিজার্ভ বনাঞ্চল থেকে। চীনে বুনো পরিবেশে এশিয়ান প্রজাতির হাতি আছে মোটে ৩০০টির মতো। আর এদের বেশির ভাগই আছে এই ইউনান প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলে। গত বছরের মার্চে হাতিগুলো যখন বাসস্থান ফেলে সামনে ছুটতে শুরু করে, তখন অবশ্য কেউ অত গা করেনি। এপ্রিলের শুরুতে ওদের দেখা যায় জিশুয়াংবানার ১০০ কিলোমিটার উত্তরে। এলাকাবাসী ওদের দেখতে পাওয়ার কথা জানানোর পর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কর্তারা সতর্কতা জারি করেন।

gIqgrvu.jpg


ড্রোন উড়িয়ে হাতির পালের ওপর নজরদারি চলছে দিনের ২৪ ঘণ্টা

চীনের সরকার ও লোকজন অবশ্য বেশ সদয় হাতিগুলোর প্রতি। কুনমিংয়ের দৈনিক পত্রিকায় বলা হয়েছে, পুলিশ এবং জরুরি বিভাগের প্রায় ৭০০ সদস্য অস্ত্রশস্ত্র আর ১০ টন ভুট্টা, কলা, আনারসসহ অন্যান্য খাবার নিয়ে এদের জন্য তৎপর। হাতির পাল এবং একই সঙ্গে সাধারণ জনগণকে নিরাপদে রাখতে পথে পথে বিছিয়ে রাখা হচ্ছে খাবার। তবে আনারসে নাকি ওদের রুচি নেই, ভুট্টায় বেশ আগ্রহ। ড্রোন উড়িয়ে ওদের ওপর নজরদারি চলছে দিনের ২৪ ঘণ্টা। সঙ্গে প্রস্তুত আছে বেশ কিছু যানবাহনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। হাতিগুলো যেন ভুল পথে না এগোয়, সেদিকেও আছে সতর্ক দৃষ্টি। জনসাধারণকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে, হাতির পাল থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার জন্য। আর ভুলেও যেন কেউ পটকা ফুটিয়ে ওদের বিরক্ত না করে, তা-ও বলে দেওয়া হয়েছে পইপই করে। স্বাভাবিকভাবেই লোকজন উৎসুক, একই সঙ্গে তটস্থ। অনেকেই পাহারায় আছে দিনরাত এক করে।

ঘরছাড়াদের দলে কয়টি হাতি

L8ELK6C.jpg


টানা ৫০০ কিলোমিটার চলার পর কুনমিংয়ের অদূরে এক গ্রামে জিরিয়ে নিচ্ছে হাতির পাল, হু চাও, জিনহুয়া নিউজ এজেন্সি

চীনের একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘর ছাড়ার সময় হাতির পালে সদস্যসংখ্যা ছিল সম্ভবত ১৭। মজিয়াং এলাকায় এসে দুটি হাতি পিছু হটে। আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদতে দলে হাতি ছিল ১৬টি। গত বছরের এপ্রিলে দুটি পিছু হটে। এবং ডিসেম্বরে ইউনান প্রদেশের পু'এর এলাকায় হাতির পালে নতুন সদস্যের আগমনে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১৫। তারপর টানা পাঁচ মাস সেখানেই ছিল ওরা। সম্ভবত মাতৃত্বকালীন বিরতি! চীনের এক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হাতির পালে আছে ৬টি মেয়ে, ৩টি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ, ৩টি কিশোর আর ৩টি বাচ্চা হাতি। তো টানা পাঁচ মাসের বিরতি শেষে ওরা আবার ছুটতে শুরু করে এ বছরের এপ্রিলের ১৬ তারিখে।

eCOniae.jpg


লোকালয়ে ঢুকে মানুষের ঘরবাড়িতেও হানা দিয়েছে ওরা

দীর্ঘ এই যাত্রায় ওরা ছুটেছে নানান পথ ধরে। কখনো খেতখামারের ওপর দিয়ে, কখনো বুনো পথে, কখনো লোকালয়ের সরু আর ব্যস্ত রাস্তা ধরে আর কখনো পিচঢালা মহাসড়কের ওপর দিয়ে। তবে ওরা ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটেছে একেবারে বিরামহীন—দিন-রাত একটানা!

একপর্যায়ে ওরা মানুষের ঘরবাড়িতেও হানা দেয়। এর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ইউনান প্রদেশের কর্তারা বলেছেন, হাতির দলটা তাদের ঝামেলা ৪১২ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে!

A4I0PwH.jpg


ব্যস্ত সড়কেও দেখা গেছে ওদের, রয়টার্স

এমন খেদের কারণও আছে। চলতি পথে হাতির পালটা মাড়িয়ে দিয়েছে অসংখ্য শস্যখেত, হানা দিয়েছে কিছু মানুষের ঘরবাড়িতে। তাণ্ডব চালানোর মতো ঘটনা ঘটিয়েছে ছোটবড় মিলিয়ে ৪০০টির মতো! চীনের সংবাদমাধ্যম জিনহুয়া নিউজ এজেন্সি বলছে, এ পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০ লাখ টাকার বেশি। তবে মানুষ হতাহতের মতো দুঃখজনক কিছু ঘটেনি বলে রক্ষা!

মজার কিছু কাণ্ডও ঘটিয়েছে হাতিগুলো। এদের মধ্যে একটি হাতি, সম্ভবত বাচ্চা হাতি, গাঁজিয়ে রাখা শস্যে মুখ দিয়েছিল। গাঁজানো শস্য থেকে উৎপন্ন অ্যালকোহল পেটে যাওয়ায় নাকি মাতালও হয়েছিল 'ইঁচড়ে পাকা' বাচ্চা হাতি। ফলে দল থেকে হয়ে পড়েছিল বিচ্ছিন্ন। নেশা কেটে যাওয়ার এক দিন পর সে আবার ভিড়েছিল বাকিদের সঙ্গে।

হাতির পাল কেন বাসস্থান ছাড়ল

6lDYYvA.jpg


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতিদের এমন যাত্রা ভীষণ চিন্তার বিষয়

চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ রসিকতাও চলছে। কেউ কেউ বলছেন, হাতির পাল আসলে ছুটছে জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য। ওরা একটু আগেভাগেই রওনা হয়েছে হয়তো। কারণ, কুনমিংয়ে সম্মেলনটি বসবে এ বছরের অক্টোবরে।

যাহোক, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা একটা ভীষণ চিন্তার বিষয়। ইউনান প্রদেশের কৃষকদের সঙ্গে হাতির দ্বন্দ্ব বাড়ছে। জিশুয়াংবানা বনাঞ্চলের এক কর্তা লি জোংগুয়ান মনে করেন, হাতিরা যা খায়, তা চাষের পরিমাণ ক্রমেই কমতির দিকে। কারণ, চাষিরা ইদানীং ভুট্টা আর আখ চাষেই মন দিয়েছেন। অদূর ভবিষ্যতে হাতিরা হয়তো আরও 'দেশান্তরি' হবে। কারণ, রাবার এবং অন্যান্য শস্যের চাষ বাড়ছে, যা হাতির খাদ্য নয়।

লন্ডনের জিওলজিক্যাল সোসাইটির পরামর্শক বেকি শু চেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, মানুষের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে হাতিদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসছে। ওরা ঘাস বা গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের পাশাপাশি ভুট্টা ও আখের মতো মনুষ্য খাবারও চেখে দেখছে, যা ওদের কাছে বিশাল এক মিষ্টির দোকান খুঁজে পাওয়ার মতো ব্যাপার হয়তো। কাজেই ওদের ওজনও বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে, যা ভীষণ চোখে লাগছে।

DTihp48.jpg


সব হাতি ঘুমিয়ে আছে, জেগে আছে কেবল নবীন সদস্যটি

ইউনান ইউনিভার্সিটির এশিয়ান এলিফ্যান্ট রিসার্চ সেন্টারের অধ্যাপক চেন মিংইয়ংয় জিনহুয়া নিউজ এজেন্সিকে বলেন, হাতির বেলায় বাসস্থান ছেড়ে এতটা দূর পাড়ি দেওয়া অবশ্যই অস্বাভাবিক। এবং একটানা একই দিকে ছুটতে থাকাও বিচিত্র একটা ব্যাপার। হয়তো হাতির দলের নেতাটা অনভিজ্ঞ। ফলে পুরো দলটাই বিভ্রান্ত।

চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের ম্যাগনেটিজম বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন, সাম্প্রতিক সৌরঝড়টি হাতিগুলোর ভেতরের 'কম্পাস'কে জাগিয়ে তুলতে পারে। এবং এর ফলে ওদের ভেতরে আরও উত্তর দিকে ছুটে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে হয়তো।

আবার কিছু বিজ্ঞানীর ধারণা, সংখ্যা বৃদ্ধির কারণেও হাতিরা বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র যেতে পারে। ওরা হয়তো সুবিধাজনক জায়গা পেলে থেমে যাবে। সমস্যা হলো, আরও উত্তরে যেতে থাকলে বাসযোগ্য স্থান খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কমবে। তাই এখনই সময় ওদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার।

তবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন ইউনানের এক গাড়িচালক লিয়াও। তিনি বলেন, 'আমরা অনেক টাকা বানিয়েছি। কিন্তু আমাদের সব কর্মকাণ্ড হাতিদের অনেক দুর্ভোগের কারণও হয়ে উঠেছে।'

* সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

ঘরছাড়া হাতিদের ভিডিও দেখতে পারেন এখানে:

To view this content we will need your consent to set third party cookies.
For more detailed information, see our cookies page.
 

Users who are viewing this thread

Back
Top