সিডিসি বা সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, বিশ্বে প্রতি পাঁচজন নারীর মধ্যে একজনের পিরিয়ডে (ঋতুস্রাব) অস্বাভাবিক ভারী রক্তপাত হয়। ভারী রক্তপাত স্বাভাবিক, কিন্তু তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেই সতর্কতা জরুরি। কারণ, পিরিয়ডে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ মেনোরেজিয়ারও লক্ষণ।
ইউনাইটেড হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ অবস্টেট্রেশিয়ান ও গাইনোকলোজিস্ট ডা. হাসিনা আফরোজ বলেন, 'কেউ মেনোরেজিয়ায় (menorrhagia) আক্রান্ত কি না, তা জানার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, পিরিয়ডের সময় আপনার প্যাড বা স্যানিটারি ন্যাপকিনটি কতবার পরিবর্তন করতে হবে তা নোট করা। যদি প্রতি এক বা দুই ঘণ্টায় একাধিকবার প্যাড পরিবর্তনের প্রয়োজন হয় বা পিরিয়ড ১ সপ্তাহের চেয়ে বেশি সময় ধরে থাকে, তবে হয়তো আপনি মেনোরিয়াজিয়ায় ভুগছেন। এর অসংখ্য কারণ আছে, একই সঙ্গে প্রতিকারও রয়েছে।'
বয়ঃসন্ধিকাল বা কৈশোরে এবং মেনোপজ শুরু হওয়ার কয়েক বছর আগে পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার সময় নারীদের শরীরে হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করে। এই ওঠানামা প্রায়ই জরায়ুতে অতিরিক্ত রক্তপাতের প্রবণতা তৈরি করে। জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি এবং হরমোন চিকিৎসার সাহায্যে এটি প্রতিরোধ করা যায়।
৩০ বা ৪০ বছরের নারীদের জরায়ুতে ফাইব্রয়েড বা ক্যানসারবিহীন টিউমার হলেও মেনোজেরিয়া হতে পারে। এই টিউমারগুলো মূলত এস্ট্রোজেন নির্ভর। এর চিকিৎসা হিসেবে মায়োমেকটমি, এন্ডোমেট্রিয়াল অ্যাবলেশন, জরায়ু ধমনির এম্বোলাইজেশন, জরায়ু বেলুন থেরাপি এবং হিস্টেরেক্টোমি। এই অস্ত্রোপচারের চিকিৎসাগুলো এখন বেশ সহজলভ্য। অস্ত্রোপচার করতে না চাইলে জিএনআরএইচ অ্যাগ্রোনিস্টস এবং মুখে গ্রহণ করার বড়ি সেবনও কাজে আসে। তবে মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পরে জরায়ুর ফাইব্রয়েড টিউমারগুলো সাধারণত চিকিত্সা ছাড়াই সংকুচিত এবং অদৃশ্য হয়ে যায়।
কোনো সংক্রমণ, জরায়ুতে অবস্থিত রক্তনালিতে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে সার্ভিক্যাল পলিপ হলেও বাড়তে পারে রক্তক্ষরণ। অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে এর চিকিৎসা সম্ভব।
এন্ডোমেট্রিয়াল পলিপসের প্রসারণ: এন্ডোমেট্রিয়াল পলিপগুলো সাধারণত ক্যানসারের ঝুঁকি ছাড়াই তৈরি হয়। এর অবস্থান জরায়ুর আস্তরণে। কেন হয়, তার কারণ অস্পষ্ট। তবে হিস্টেরোস্কোপি এবং ডিঅ্যান্ডসি চিকিৎসাপদ্ধতির সাহায্যে এর অপসারণ সম্ভব।
শ্রোণী প্রদাহজনিত রোগ বা পিআইডি: পিআইডি হলো এক বা একাধিক অঙ্গের সংক্রমণ, যা ফ্যালোপিয়ান টিউব ও জরায়ুকে প্রভাবিত করে। মূলত যৌন সংক্রমণ হলেও কখনো কখনো প্রসব, গর্ভপাত বা অন্যান্য স্ত্রীরোগের কারণে এর জন্ম। অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপির সাহায্যে এর চিকিৎসা করা যায়।
জরায়ুর ক্যানসার
জরায়ুর ক্যানসার এমন একধরনের ক্যানসার হয়, যখন জরায়ুর কোষগুলো অস্বাভাবিক হয়ে যায়, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং শরীরের স্বাস্থ্যকর অংশগুলোর ক্ষতি করে। সমস্ত জরায়ু ক্যানসারের নব্বই শতাংশের বেশি কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি। জরায়ুর ক্যানসারের চিকিত্সার মধ্যে রয়েছে সার্জারি, কেমো ও রেডিয়েশন থেরাপি।
এন্ডোমেট্রিয়াল বা জরায়ুর আস্তরণের ক্যানসার
জরায়ুতে অবস্থিত কিছু কোষ মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে জরায়ুর আস্তরণ এবং অন্য অঙ্গগুলোর ক্ষতিসাধন শুরু করে, যাকে বলা হয় এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার। গবেষণায় জানা গেছে, সাধারণত পঞ্চাশের বেশি বয়সী নারী, যাঁদের এন্ডোমেট্রিয়াল হাইপারপ্লাজিয়া থাকে বা দীর্ঘদিন ধরে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি) ব্যবহার করছেন, তাঁদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি থাকে। এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারের প্রথম চিকিত্সা সাধারণত হিস্টেরেক্টমি, তারপরে কেমোথেরাপি নিতে হয়।
গর্ভনিরোধের জন্য ব্যবহৃত আইইউডি ডিভাইস ভারী রক্তপাত বা মেনোরেজিয়ার আরেকটি সম্ভাব্য কারণ। দীর্ঘদিন আইইউডি ব্যবহার করছেন এবং ভারী রক্তপাত হচ্ছে, তাঁদের অবশ্যই জন্মনিয়ন্ত্রণের বিকল্প পদ্ধতি বেছে নেওয়া উচিত।
অস্বাভাবিক ভারী রক্তপাত হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। একই সঙ্গে নিজেকে শুষ্ক এবং পরিচ্ছন্ন রাখাও জরুরি। এ জন্য হেভি ফ্লো ধারণ করতে সক্ষম, এমন প্যাডই ব্যবহার করা উচিত। কেননা, এ সময় প্যাডের শোষণক্ষমতা কার্যকর না হলে প্রজননতন্ত্রের নানাবিধ দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হতে পারে। তাই বাজারে সুলভ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যে ফ্রিডমের হেভি ফ্লো স্যানিটারি ন্যাপকিন আপনি বেছে নিতেই পারেন। এর উচ্চ শোষণক্ষমতা সম্পন্ন ১১ দশমিক ৪ ইঞ্চি লম্বা প্যাড পিরিয়ডের পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করে কার্যকরভাবে। ফলে চিকিৎসা না হওয়া পর্যন্ত ভারী রক্তপাতের মধ্যেও আপনি অন্যান্য সংক্রমণ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারবেন।