সুস্বাস্থ্যের জন্য সঠিক ওজন থাকা প্রয়োজন। সে ছোট বা বড় যে বয়সেরই হোক না কেন। শিশু ওজন নিয়ে মা-বাবাদের চিন্তা কিছুটা অন্য রকম হয়ে থাকে। অনেকেই শিশুর ওজন বেড়ে গেলে দুশ্চিন্তায় পড়েন। আবার অনেকে ওজন কমে গেলে বা না বাড়লে চিন্তায় থাকেন। কিন্তু এত চিন্তার ভিড়ে শিশুর জন্য সঠিক কাজটি করতেই ভুল করে ফেলেন মা-বাবা। ওজন কমে বা বেড়ে গেলে দরকার শিশুর জীবনযাত্রায় সঠিক পরিবর্তন আনা। খাওয়া বন্ধ করলে বা অতিরিক্ত খাওয়ালে সেটা অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতি।
শিশুর জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে তার ওজন বাড়া-কমা
শিশুদের বিশেষ করে ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ওজন বাড়া বা কমা শুধু খাওয়াদাওয়ার ওপর নির্ভর করে না। অনেকেই জানেন না শিশুর জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে তার ওজন বাড়া-কমা। ওজন বেড়ে গেলে খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া বা কমে গেলে সারা দিন অতিরিক্ত খাওয়ানো শিশুর জন্য মানসিক চাপ। এই ভুল শিশুর শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক ক্ষতি করে মারাত্মকভাবে। এর সমাধানে সঠিক গাইডলাইন দেন পারসোনা হেলথের প্রধান পুষ্টিবিদ শওকত আরা সাঈদা।
ফ্যাটযুক্ত খাবার বেশি খেলে বা কিছুই না খেলে
শিশুদের ক্ষেত্রে দুই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। একটি হলো অনেক বাচ্চা ফ্যাটযুক্ত খাবার খেতেই বেশি পছন্দ করে, আবার অনেক বাচ্চা একেবারেই কোনো খাবার খেতে চায় না। এর সমাধান হলো, খাদ্যের পাঁচটি উপাদান প্রতিদিন নিয়ম করে শিশুকে দেওয়া। এই পাঁচটি উপাদান যেকোনো ফর্মেই শিশুকে দিতে হবে। দুধ রাখতে হবে প্রতিদিন। তবে দুধে সমস্যা থাকলে দই, চিজ দেওয়া যাবে। শিশুদের ওজন বেড়ে গেলে ডিম বয়েল বা পানিতে পোচ করে দেওয়া যাবে। আর ওজন কমে গেলে ডিম একটি ঘি বা বাটার দিয়ে দিলে পুষ্টির পাশাপাশি ওজন বাড়ার উপকারও পাবে। এ ছাড়া ভাতের সঙ্গে ঘি বা ডিমের পুডিংয়ের সঙ্গে খেজুর মিশিয়ে দেওয়া গেলে ওজন বাড়বে।
অতিরিক্ত ক্যালরি নয়।
খাদ্যের পাঁচটি উপাদান প্রতিদিন নিয়ম করে শিশুকে দেওয়া দরকার
যে শিশুদের ওজন বেশি, তাদের প্রয়োজনীয় ভিটামিন কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। এতে শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগবে। তবে খাবার তৈরির পদ্ধতিতে হালকা পরিবর্তন করতে হবে। যেমন ডিম তেল দিয়ে ভাজা যাবে না। এতে ডিমে থাকা ক্যালরির পাশাপাশি তেলের ক্যালরিও যোগ হবে। অর্থাৎ শিশুর চাহিদা পূরণের পর যেন বাড়তি ক্যালরি যুক্ত না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবার দুধ দিতে হবে লো ফ্যাটের। প্রতিদিন শিশুদের ফল দেওয়া জরুরি। তবে খুব বেশি চিনিযুক্ত ফল নয়।
শারীরিক কার্যক্রম বাড়ানো
শিশুকে সক্রিয় রাখা জরুরি
শিশুর ওজন বাড়লে বা কমে গেলে তার খাওয়া না কমিয়ে বা অতিরিক্ত না খাইয়ে শারীরিক কার্যক্রম বাড়ানো উচিত। এটি সব থেকে ভালো উপায়। মা-বাবাদের খেয়াল রাখতে হবে শিশু যেন সারাক্ষণ বসে না থাকে। বাইরে বের হতে না পারলে গ্যারেজে বা ছাদে সাইকেল চালাতে পারে। এ ছাড়া স্কিপিং করা, বাস্কেটবল খেলা বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করলে শারীরিক কার্যক্রম বাড়বে। এতে ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া দুই ধরনের প্রবণতাই কমে।
খাদ্য তৈরির উপায় পরিবর্তন
শিশুদের কম বা অতিরিক্ত না খাইয়ে খাবার তৈরির পদ্ধতি পরিবর্তন করা উচিত। ওজন বেশি হলে ডুবো তেলে না ভেজে বেক করে খাবার দেওয়া দরকার। স্যান্ডউইচে অতিরিক্ত মেয়োনিজ না দিয়ে ব্রাউন ব্রেড দিয়ে ঘরে তৈরি করে দেওয়া যায়। শাকজাতীয় খাবার সব ওজনের শিশুদের দরকার। এটি মাছের সঙ্গে মিশিয়ে কাটলেট তৈরি করে দেওয়া যায়। রঙিন সবজি চায়নিজ রেসিপিতে বানালে শিশুর আগ্রহ বাড়বে। আবার নুডলসে একটু বেশি করে সবজি, মাংস ও ডিম দিলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায়। বার্গারে ফ্রোজেন পেটি না দিয়ে ঘরে থাকা মাংস দিয়ে তৈরি করে দিতে হবে।
ক্যালরির হিসাব
ওজন কমানোর দরকার থাকলে শিশুরা দিনে ১৫০০ থেকে ১৬০০ ক্যালরি খেতে পারে। ওজন বাড়াতে হলে ১৫০০ থেকে ১৮০০ পর্যন্ত বাড়ানো যায়। তবে শিশুদের বয়স ও উচ্চতা অনুসারে তফাত হতে পারে।