What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পোলাও ছাড়া জমবে কি ঈদ (1 Viewer)

নকশা আঁকা কাচের বারকোশে বিছিয়ে রাখা ধবধবে সাদা চিনিগুঁড়া চালের পোলাও। সরু দানাগুলো ঝরঝরে, তাদের ভেতর উঁকি দিচ্ছে কিশমিশ আর তেজপাতা। ওপরে সোনালি রঙের মুচমুচে বেরেস্তা এমনভাবে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে, যেমনটা শরতের সকালে হয়ে থাকে শিউলিতলা। ঘি আর চিনিগুঁড়া চালের এক অদ্ভুত খোশবাই, যা নাকে না এলে মনেই হয় না উৎসব।

JbgXk93.jpg


ঈদের দিনের দুপুরের পারিবারিক ভোজসভার টেবিল থেকে বিয়ের আসর, উৎসব মানেই পোলাও। মধ্য এশিয়ার পিলাফ বা পিলাউ কোনো ঘোড়সওয়ার সম্রাটের বাবুর্চির হাত ধরে কীভাবে আমাদের হেঁশেলে ঢুকে পড়েছে, সেই গবেষণা তোলা থাক ইতিহাসবিদদের জন্য। সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছিলেন দিল্লি গেলে কুতুব মিনার না দেখে খাঁটি মোগলাই খানা চেখে দেখতে। ভোজনশাস্ত্রে আমিও তার অনুসারী, কোথাকার কোন তুঘলক খাঁ পোলাও এ বঙ্গদেশে নিয়ে এসেছেন, সেটা না জেনে ঢাকা শহরের কোথায় সুস্বাদু পোলাও পাওয়া যায়, সেটা জানতেই আমি বেশি আগ্রহী।

YNONXLg.png


পোলাও মুরগির রোস্ট

অনেকে ঠাট্টা করেই বলেন, সাংবাদিকদের 'জাতীয় খাবার' নাকি মোরগ পোলাও। কথাটা একেবারে মিথ্যা নয়। যেকোনো সংবাদ সম্মেলন কিংবা অনুষ্ঠানের শেষে আগত সাংবাদিকদের জন্য যদি মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা থাকে, তাহলে ৮০ শতাংশ সময়ে তাতে থাকবে মোরগ পোলাও। ক্রিকেটপাড়ার এক সাংবাদিক স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনের পর স্টাইলোফোমের ছোট্ট বাক্সে তার হাতখানা ঢোকাতে মোটেও সুবিধা করতে পারছিলেন না।

GF8Wvzy.jpg


মোরগ পোলাও

আরেকজন মুরগিতে কামড় বসিয়ে বলেছিলেন, এগুলো বোধ হয় অ্যাথলেট মুরগি, পিটি ঊষার মতো চিকন চিকন পা। আগে থেকে প্যাকেটবন্দী হয়ে থাকা শুকনা সেই পোলাও আর দূরপাল্লার দৌড়বিদ মোরগের মাংস তপ্ত দুপুরে গলা দিয়ে নামানো দুঃসাধ্য, তাই বাড়তি ঝোলের বন্দোবস্ত যদিও সেটা আবার 'বোতলবন্দী'। নিজের পাতে ঝোল চাওয়ার পর সেই ঝোল আরেকজনের পাতে পড়তে দেখে একজনের সরস মন্তব্য ছিল, 'এত দিনে বুঝলাম, বিসিবির ঝোল কোথায় যায়।'

এত কথার সারমর্ম এই যে মুরগির মতো গণতান্ত্রিক একটি পাখিকে পোলাওর সঙ্গে যোগ করে দিলে সেটা সর্বজনভোজ্য হিসেবে পরিগণিত হয়। যদি কথাটা বুঝে না থাকেন, ভরদুপুরে চালু কোনো রেস্তোরাঁয় গিয়ে খালি দেখবেন মোরগ পোলাওয়ের পার্সেল কখানা যাচ্ছে। তাতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে ব্যপারটা।

yi3f1KP.jpg


ঝুনুর মোরগ পোলাও

পুরান ঢাকার নারিন্দার ঝুনুর মোরগ পোলাও, নান্না মিয়ার মোরগ পোলাও—এসব নিয়ে অনেক শব্দ খরচ করা হয়ে গেছে। মোদ্দা কথা, সেই রামও নেই আর অযোধ্যাও নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাবুর্চিও বদল হয়েছে, জিনিসপত্রের মানও কমেছে। তবে বিখ্যাত এ দুটি দোকানের বাইরেও পুরান ঢাকার সরু গলির ভেতর ছোট ছোট খাবারের দোকানও আছে, যেগুলো স্বাদে–গন্ধে পেট ও মন দুই–ই ভরাবে।

নান্নার মোরগ পোলাওয়ের বাবুর্চির শাগরেদ সোহেল বাবুর্চির হাতের মোরগ পোলাওয়ের স্বাদ নিতে যেতে পারেন গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড এলাকার নয়ন বিরিয়ানিতে। ঝরঝরে সাদা পোলাওয়ের সঙ্গে পাকিস্তানি মুরগির রোস্ট আর সঙ্গে পেঁয়াজের ভুনা মশলা মাখিয়ে খেতে মন্দ লাগবে না।

মাত্র ২১০ টাকায় আস্ত মুরগির সঙ্গে এক প্লেট পোলাও দিয়ে বেশ হইচই ফেলে দিয়েছিল লালবাগের জাইতুন বিরিয়ানি। বিয়েবাড়ির ধাঁচে আস্ত মুরগির রোস্টের সঙ্গে এক প্লেট ঝরঝরে, হালকা তৈলাক্ত স্বাদের পোলাও আর মেলামিনের ছোট পিরিচে পেঁয়াজের ভুনা মশলার স্বাদ দাম হিসেবে খারাপ নয়।

RmHA4LE.jpg


কবুতর পোলাও

বিহারি ক্যাম্পের মুস্তাকিম বা মিরপুরের কাল্লু কাবাবের মতো ভাজা চাপ নয়, বরং কাঁচা মরিচবাটার সঙ্গে আরও অনেক মশলায় মাখানো ভুনা চাপ বিক্রি করে গোড়ানের হাড়ভাঙা মোড়ের মুক্তা বিরিয়ানি। গরুর মাংসের চাপের সঙ্গে সাদা পোলাও মিলিয়ে চাপ পোলাও তাদের সবচেয়ে বিখ্যাত খাবার। কাছাকাছি খিলগাঁও অঞ্চলের ভোলা ভাই বিরিয়ানি ঘরের চাপ-পোলাও–ও খেতে মন্দ নয়। এখানে আবার পোলাওয়ের সঙ্গে খেতে পারেন আস্ত কবুতরের রোস্ট!

চানখাঁরপুল, বঙ্গবাজার এলাকায় গেলে চেখে দেখা যাবে ডিম পোলাও। মোরগ পোলাওয়ের মাংসের টুকরাটা সরিয়ে নিলে যা থাকে, তা–ই হচ্ছে ডিম পোলাও। এক প্লেট পোলাওয়ের সঙ্গে একটি সেদ্ধ ডিম আর খানিকটা মাংসের ঝোলে সস্তায় উদরপূর্তি হবে ছাত্র ও কর্মজীবী মানুষের।

শহরের নতুন কিংবা পুরোনো অভিজাত পাড়ার আকাশছোঁয়া দালান থেকে ধাঁধার চেয়েও জটিল গলির শেষ মাথার সব উনুনেই পোলাওয়ের হাঁড়ি চড়ে। কোথাও বছরে একবার, কোথাও হররোজ।

হররোজের কথাই যখন উঠল, তখন ঢাকার এক নবাব-উত্তরসূরির পোলাও দাস্তান দিয়ে শেষ করা যাক। তবে হ্যাঁ, এটা গল্প নয়, সত্যি। এই নবাবজাদার রোজ সকালের নাস্তা ছিল চপচপে ঘিয়ের পোলাও, গোটাকয়েক ডিমের পোচ আর একটি আস্ত মুরগির রোস্ট। না, এখানে থেমে যাওয়া যাবে না। তাতে মূল ঘটনার স্বাদবঞ্চিত হবেন পাঠক।

কারণ, সকালে মুরগির রোস্ট করা হতো কাঠকয়লায়। রোস্ট হয়ে যাওয়ার পর আগুন যেত থিতিয়ে। তখন সেই গরম কাঠকয়লার ওপর টিনের একটা পাত্র রেখে তার ওপর কাঁসার থালা রাখা হতো। এরপর সেই থালায় ঘি দিয়ে অন্তত হাফ ডজন ডিম পোচ করা হতো।

সন্ধ্যায় না হয়ে মুরগি পরিষ্কার করে টাঙাতে কিছুটা বিলম্ব হলে সকালবেলা নবাবজাদা খাওয়ার সময় মুরগির মাংস মুখে দিয়ে বলতেন, 'কাচ্চা হ্যায়!'

আর পোলাও পরিবেশনের পাত্রটিও ছিল অদ্ভুত। পাত্রটিতে থাকত বেশ কয়েকটি ছিদ্র। সেই পাত্রের নিচে থাকত আরেকটি পাত্র। পরিমাণমতো ঘিয়ে রান্না করতে হবে পোলাও। কিন্তু সেই ঘি খাওয়া হবে না। বরং আপনা–আপনি ঝরে যাবে। আর সেই ঘি গিয়ে জমা হবে নিচের পাত্রে।

ওহ! রোস্টের কথা তো বলাই হয়নি। সন্ধ্যাবেলায় মুরগি জবাই করে পরিষ্কার করে খোলা আকাশের নিচে টাঙিয়ে রাখা হতো। তারপর সকালে হতো সেই মুরগির রোস্ট। তবে সন্ধ্যায় না হয়ে মুরগি পরিষ্কার করে টাঙাতে কিছুটা বিলম্ব হলে সকালবেলা নবাবজাদা খাওয়ার সময় মুরগির মাংস মুখে দিয়ে বলতেন, 'কাচ্চা হ্যায়!'
 

Users who are viewing this thread

Back
Top