What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কেউ পাখি মারে, কেউ দেয় আশ্রয় (1 Viewer)

hfrXDkU.jpg


ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় ৯ এপ্রিল এবং পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলায় ১০ এপ্রিল বাবুই পাখির বাচ্চা, ডিমসহ অসংখ্য বাসা নষ্ট করেছেন কিছু মানুষ। খেতের ধান খাওয়ার অপরাধে ঝালকাঠিতে বাচ্চা, ডিমসহ পাখির বাসাগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কী বীভৎস চিন্তা ও কর্মের মানুষ তাঁরা! পাখিকে ধান খেতে দেবে না এমন কৃপণ ব্যক্তিও থাকতে পারেন! যাঁর ধান খেয়েছে, তিনি টিন বাজিয়ে পাখি তাড়াতে পারতেন। প্রয়োজনে পাহারা বসাতেন। তাই বলে আগুনে পুড়িয়ে পাখি মারা? ডিম, বাচ্চাসহ বাসা নষ্ট করা? যে পাখিগুলো ধান খেয়েছে, প্রতিশোধ নিতে তাদের সন্তানদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করা কীভাবে সম্ভব?

পাখির দিকে একটুখানি তাকিয়ে থাকলে তাদের প্রতি গভীর মায়া কাজ করে। ভীষণ নির্মম না হলে পাখি মারা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের সব পাখি দেখতে সুন্দর। এই পাখির জীবনযাপনের প্রতি একটু মনোযোগ দিলেই আবিষ্কার করা সহজ হবে যে তারা বাচ্চাদের প্রতি কী অবিশ্বাস্যরকম ভালোবাসাপ্রবণ ও দায়িত্বশীল। এসব পাখির মধ্যে বাবুই পাখি বিশেষ স্থান জুড়ে আছে। পরম যত্নে দারুণ শিল্পনৈপুণ্যের পরিচয় দিয়ে তারা বাসা তৈরি করে। বাবুইয়ের বাসা করার দিকে তাকিয়ে থাকলে বোঝা যায়, তারা কীভাবে বাসা বানানোর সামগ্রী সংগ্রহ করে দিনের পর দিন। বাবুই নিজের থাকার জন্য বাসা করে না। মূলত সেখানে ডিম দিয়ে বাচ্চা বড় করাই প্রধান উদ্দেশ্য। বাবুইয়ের বাচ্চা বড় হয়ে গেলে মা-বাবা পাখিও বাসা ছেড়ে চলে যায়। ধান খাওয়ার অপরাধে বাবুইয়ের প্রতি এমন চরমতম নিষ্ঠুর আচরণ করেছে ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের ধানখেতের মালিকেরা।

বিভিন্ন জায়গায় আমি পুকুরের ওপরে জাল টানানো দেখেছি। পানকৌড়ি যেন পুকুরে নেমে মাছ খেতে না পারে, সে জন্য এই ব্যবস্থা। প্রকৃতিতে তো পাখিদেরও বাঁচার অধিকার আছে। তাদের আবাসভূমি ও খাবারের আধার ধ্বংস করছে মানুষ। প্রকৃতির ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকারী মানুষই তো পাখিদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। সেই মানুষদের মধ্য থেকে পাষণ্ড কিছু মানুষ পাখি মারতে উদ্যত হয়েছে।

শীত মৌসুমে লাখ লাখ পরিযায়ী পাখি আসে বাংলাদেশে। অনেক পাখিশিকারি অপেক্ষায় থাকে শীতকাল এলে পাখি মারার জন্য। নদীর বুকে কোথায় কোথায় পরিযায়ী পাখি আসে, সেখানেই তারা গুলি চালিয়ে পাখি শিকার করে। বর্তমানে এই প্রবণতা কমলেও দূর হয়নি। গত বছর দুই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে রংপুরের একটি বিলে পাখি শিকার করতে এসেছিলেন। পাখির আলোকচিত্রী ও নদীকর্মী প্রকৌশলী ফজলুল হক তাঁদের ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা বের করতেই তাঁরা দ্রুত সরে যান। ফজলুল হক একদিন বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া শামুকখোল পাখি ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।

বছর দুয়েক আগে রংপুর শহরে খুবই মায়াবী দুটি ডাহুক একজন বিক্রি করতে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁকে অনেক বুঝিয়েও ছেড়ে দেওয়ার জন্য সম্মত করতে পারিনি। শেষাবধি তাঁকে নিয়ে রংপুরের পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। বর্তমান এসপি বিপ্লব কুমার সরকারের সহযোগিতায় পরে সেই ডাহুক দুটি ছেড়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।

1y9JSn1.jpg


রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার একটি বাড়ির উঠানের গাছে পাখির বাসা

চলতি বছরের শুরুতে দেখি কারমাইকেল কলেজের ভেতরের বিলে একজন বক ও মাছরাঙা শিকার করে খাঁচার ভেতর রেখেছেন। আমার সঙ্গে ছিল প্রকৃতি সংরক্ষণের কর্মী ও আলোকচিত্রী সব্যসাচী সেবক। আমরা দুজন মিলে তাঁর কাছ থেকে ফাঁদ নিই এবং পাখি দুটি ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। শিকারিদের সামনে পেলেই তাঁদের নিবৃত্ত করি। কিন্তু যাঁদের সামনে পাই না, যাঁরা গোপনে পাখি শিকার করেন; তাদের তো সচেতনতা প্রয়োজন। যে ব্যক্তিরা ভোরবেলা বিষ মেশানো মাছ নদী-বিলে রেখে পাখি শিকার করেন, তাঁদের সচেতনতা এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ জরুরি।

গত মাসে কুড়িগ্রাম জেলার দুধকুমার নদের চরে কয়েকজন শিশু কারেন্ট জাল পেতে ঘুঘু শিকার করছিল। তাদের যখন বুঝিয়ে বললাম, ঘুঘু শিকার করা খারাপ; তখন তারা শিকার করা ঘুঘুটি ছেড়ে দেয় এবং আর শিকার করবে না বলে সম্মত হয়।

পাখি হত্যাকারীর সংখ্যা অনেক। পাখি সুরক্ষায় কাজ করা মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে বাড়ির উঠানে একটি বড় শিমুলগাছভর্তি পাখি থাকে। গত বছর জুলাই মাসে দেখতে গিয়েছিলাম সেই পাখি। দেখলাম, শামুকখোল, বক আর বাদুড়। সেই গাছের নিচে কয়েকটি বাড়ি। সেই বাড়ির লোকজন বলছিলেন, পাখির উচ্ছিষ্টের খুব গন্ধ হয়। বিশেষ করে যখন পাখির বাচ্চাদের খাওয়ানোর সময় হয়, তখন গন্ধ আরও বেড়ে যায়। তবুও তাঁরা চান, এই পাখিগুলো তাঁদের বাড়ির উঠানের গাছে আসুক, থাকুক। কেউ যেন পাখিগুলোকে বিরক্ত না করে, সে বিষয়েও তাঁরা তৎপর। একবার একটি বাচ্চা গাছ থেকে পড়ে গিয়েছিল। সেই বাচ্চাকে তাঁরা খাইয়ে বড় করে তুলেছিলেন। বড় হয়ে পাখিটি উড়ে গেছে।

hnSj9i2.jpg


রংপুরের পীরগাছা উপজেলার এক বাজারের গাছে আশ্রয় নেওয়া এই পাখিদের দেখে রাখেন দোকানিরা

রংপুর জেলার নব্দিগঞ্জে তো এক ব্যক্তির বাঁশবাগানে শত বছর ধরে পাখিদের অভয়াশ্রম। এখানে স্থানীয় লোকজনই পাহারাদার। যেসব বাঁশে পাখি বাসা করে, সেসব বাঁশ কাটা থেকে বিরত থাকেন বাগানের মালিক। রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার একটি ছোট বাজারের মাঝখানে গাছজুড়ে অসংখ্য পাখি। বাজারের লোকজনের অনেক অসুবিধা হলেও তাঁরা পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়ের কথাই ভাবেন। এ রকম দৃষ্টান্ত দেশজুড়ে অনেক আছে।

ধরা যাক, কোনো এক ব্যক্তি এমন একটি পাখি শিকার করল যে পাখিটি তার ছানার জন্য খাবার সংগ্রহ করতে এসেছিল। সেই পাখিটিকে মেরে ফেলা হলো। বাসায় বসে ডাকতে ডাকতে ক্ষুধা নিবারণ করতে না পেরে ছানাগুলো মারা গেল। এই দৃশ্যকল্প ভাবলেও তো মানুষ পাখি শিকার থেকে বিরত থাকে। জীববৈচিত্র্যের প্রতিটি প্রাণ একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কিত। শুধু মানুষ নামের প্রাণ পৃথিবীতে বেঁচে থাকলেই প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকবে, এমনটি ভাবার কোনো অবকাশ নেই। পাখির সর্বনাশ করে মানুষও বাঁচতে পারবে না। হয়তো সেটাকেই প্রাকৃতিক প্রতিশোধ বলে।

আসুন, আমরা সবাই পাখির প্রতি সদয় হই, দায়িত্বশীল হই।

লেখক: তুহিন ওয়াদুদ | বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক এবং পরিচালক, রিভারাইন পিপল
 

Users who are viewing this thread

Back
Top