নারকেল দুধ আর চুঁই ঝালে হাঁস রান্না
উপকরণ: পাতিহাঁসের মাংস ২ কেজি, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, পেঁয়াজবাটা ২ টেবিল চামচ, আদা ও রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ, মরিচগুঁড়া দেড় টেবিল চামচ, নারকেলের ঘন দুধ ২ কাপ, ভালো মানের চুঁই ঝাল ৮-১০ টুকরা, শুকনা মরিচ ৮-১০টি, লবণ ও হলুদ পরিমাণমতো, তেজপাতা ৩-৪টি, তেল ২ কাপ, দারুচিনি ও এলাচিবাটা ১ চা-চামচ, বড় রসুনকুচি ২টি, আধা চা-চামচ গরমমসলার গুঁড়া।
প্রণালি: প্রথমে মাংস ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে একটু হলুদ, লবণ দিয়ে মেখে রাখুন। এরপর ফ্রাই প্যানে তেল দিয়ে তার মধ্যে পেঁয়াজকুচি দিয়ে হালকা ভেজে নিন। ভাজা পেঁয়াজের মধ্যে তেজপাতাসহ বাটা সব উপকরণ ও সঙ্গে একটু পানি দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে। মসলা কষানো হয়ে গেলে এর মধ্যে ঝালের গুঁড়া ও শুকনা মরিচগুলো চিরে দিয়ে দিন। হলুদ, লবণ ও একটু পানি দিয়ে হালকা ভেজে নিতে হবে। এরপর ওই ভাজা মসলার মধ্যে মাংস দিতে হবে। ১০-১৫ মিনিট মাঝারি আঁচে ভালোভাবে নেড়ে কষিয়ে নিতে হবে। অল্প পানি দিয়ে আরও ১০ মিনিটের মতো ঢেকে রান্না করতে হবে। এর মধ্যে চুঁই ঝাল, নারকেলদুধ এবং একটু পানি দিয়ে আরও ১৫-২০ মিনিট রান্না করতে হবে। ওপরে তেল ফুটে উঠলে তার ওপর গরমমসলার গুঁড়া দিয়ে নামিয়ে গরম-গরম পরিবেশন করতে হবে।
ছোট চিংড়ি দিয়ে কচুর লতি
উপকরণ: লতা ১ কেজি, ছোট চিংড়ি ২৫০ গ্রাম, শিদল শুঁটকি ৪ থেকে ৫টি (পরিষ্কার করে বেটে নেওয়া), পেঁয়াজবাটা দুই টেবিল চামচ, রসুনবাটা দেড় টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া পরিমাণমতো, মরিচগুঁড়া দুই চা-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, যেকোনো টক ফল ২/৩টি অথবা লেবুর রস দুই টেবিল চামচ, নাগা বা বোম্বে মরিচ সামান্য কুচি করা (যদি ঝাল খেতে চান)।
প্রণালি: লতাগুলো আঁশ ছাড়িয়ে কেটে টুকরা করে নিতে হবে। সামান্য লবণ মেখে ৩০ মিনিটের মতো রেখে দিতে হবে। এরপর লতাগুলো ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নেবেন। একটি ছড়ানো কড়াই অথবা হাঁড়িতে তিন টেবিল চামচ তেল গরম করে নিন। এতে একে একে সব কটি মসলা আর লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নিতে হবে। মসলা কষানো হয়ে গেলে এর মধ্যে শুঁটকিবাটা দিয়ে দিতে হবে, কিছুক্ষণ নেড়ে মসলার সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে সামান্য পানি দেওয়া যাবে। এবার কড়াইয়ে চিংড়ি আর লতাগুলো দিয়ে মসলার সঙ্গে খুব ভালোমতো মেখে নিন। মাখানো হয়ে গেলে সামান্য পরিমাণ পানি আর টক ফল, যেমন বরই অথবা জলপাই দিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে। লতাগুলো সেদ্ধ হয়ে গেলে ঢাকনা তুলে নেড়ে দিন। লতা সেদ্ধ হয়ে নরম হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলতে হবে।
কালো ভুনা
উপকরণ: গরুর মাংস ২ কেজি, পেঁয়াজ আধা কেজি (অর্ধেকটা কুচি, অর্ধেকটা বাটা), আদাবাটা ২ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ, নারকেলবাটা ২ টেবিল চামচ, চিনাবাদাম বাটা ২ টেবিল চামচ, সাদা শর্ষেবাটা ২ টেবিল চামচ, শুকনো মরিচের গুঁড়া ৪ টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া ২ চা-চামচ, ধনেগুঁড়া ২ টেবিল চামচ, জিরাগুঁড়া ২ টেবিল চামচ, গোটা গরমমসলা ২ টেবিল চামচ, টমেটো টুকরা আধা কেজি, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, শর্ষের তেল ৪ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো, তেজপাতা কয়েকটি, মেজবানি মসলা ২ টেবিল চামচ, গরমমসলা ২ টেবিল চামচ, শাহি জিরা ১ চা-চামচ, গোলমরিচ ২ চা-চামচ, জায়ফল অর্ধেক, জয়ত্রী ২-৩টি, জোয়ান ১ চা-চামচ, মেথি ১ চা-চামচ, রাঁধুনি ১ চা-চামচ, গোটা ধনে ১ টেবিল চামচ, জিরা ১ টেবিল চামচ, সয়াবিন তেল ১ কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ।
প্রণালি: মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। মেজবানের মসলা ও ১ কাপ পেঁয়াজকুচি ছাড়া বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে মেখে নিন। ১ কাপ পানি দিয়ে মোটা তলা আছে এমন ডেকচি চুলায় বসিয়ে দিন মাঝারি আঁচে। মাংস সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত কম আঁচে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে নেড়েচেড়ে দিতে হবে, হয়ে এলে মেজবানের মসলা দিয়ে আরেকটু কষিয়ে নামিয়ে নিন। আরেকটি পাতিলে ১ কাপ তেল দিয়ে পেঁয়াজকুচি দিয়ে দিন। বেরেস্তা করে মাংসে বাগার দিয়ে নাড়তে হবে ভুনা ও কালো হয়ে না আসা পর্যন্ত। সুন্দর কালো রং হয়ে এলে ঘি দিয়ে নামিয়ে নিন কালো ভুনার মাংস। পাত্রে নিয়ে ওপরে বেরেস্তা দিয়ে পরিবেশন করুন।
খেজুরের গুড়ের রসগোল্লা
উপকরণ: দুধ ৬ লিটার, ফিটকিরি বা সাইট্রিক লবণ ৫০ গ্রাম, চিনি সাড়ে ৩ কেজি, ময়দা ১ কাপ, সুজি আধা কাপ ও খেজুরের পাটালি গুড় ১ কেজি।
প্রণালি: ছয় লিটার দুধ কড়াইয়ে জাল দিয়ে বলক ওঠাতে হবে। এবার চার লিটার পানিতে সাইট্রিক লবণ বা ফিটকিরি মিশিয়ে গরম করে নিতে হবে। একটু ঠান্ডা দুধে আস্তে আস্তে পানি ঢালতে হবে। সবুজ রং এলে পানি ঢালা বন্ধ করতে হবে। ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এবার গামছা বা সাদা সুতি কাপড়ে ছানা টাঙিয়ে পানি নিংড়ে নিতে হবে। এরপর ট্রে–জাতীয় কিছুতে ছানা ঢেলে নিয়ে এক কাপ ময়দা, সামান্য পরিমাণ সুজি, সাদা এলাচগুঁড়া দিয়ে ছানা মেখে নিয়ে ছোট ছোট রসগোল্লা তৈরি করতে হবে। এদিকে আলাদা কড়াইয়ে চার লিটার পানিতে সাড়ে তিন কেজি চিনি জাল দিয়ে সিরা তৈরি করতে হবে। সামান্য দুধ দিয়ে সিরার ময়লা পরিষ্কার করে নিন। সিরায় ছানার মিষ্টি ছেড়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। সেদ্ধ হওয়ার পর পরিমাণমতো পানি ঢেলে সিরায় মিষ্টি ডুবিয়ে রাখতে হবে। এবার এক কেজি খেজুরের পাটালি গুড়ের সঙ্গে তিন লিটার পানি মিশিয়ে জাল দিয়ে সিরা তৈরি করতে হবে। চিনির সিরা থেকে মিষ্টি আলাদা করে গুড়ের সিরায় রেখে হালকা জালে গরম করতে হবে। ঠান্ডা হলে পরিবেশন করতে হবে।
নার্গিসি পোলাও
উপকরণ: কালিজিরা চাল ৫০০ গ্রাম, চর্বি ছাড়া খাসির মাংস ৫০০ গ্রাম, আলু ৪টা (ছোট আকারের, মাঝবরাবর লম্বা করে কেটে নেওয়া), গাজর ১টা (মাঝারি আকারের), ফুলকপি দেড় কাপ (একটু বড় করে কেটে নেওয়া), টমেটো ১ কাপ (কিউব করে কাটা), পালংশাক আড়াই কাপ (ধুয়ে ছোট করে কাটা), পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, আস্ত জিরা আধা চা-চামচ, আস্ত গোলমরিচ ১ চা-চামচ, আস্ত দারুচিনি ২ ইঞ্চি, আস্ত লবঙ্গ ৪/৫টা, আস্ত ছোট এলাচি ৪/৫টা, আস্ত বড় এলাচি ৩টা, আস্ত কাবাব চিনি ১ চা-চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া স্বাদমতো, গরমমসলার গুঁড়া আধা চা-চামচ, টক দই ২ টেবিল চামচ, জাফরান আধা চা-চামচ, ঘন দুধ আধা কাপ, কেওড়াজল ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, ঘি দেড় কাপ, ডিম ৬টা, পানি প্রয়োজনমতো।
প্রণালি: চাল ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে। ডিম সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। প্যানে ঘি গরম করে কুচোনো পেঁয়াজ দিয়ে বেরেস্তা করে তুলে নিন। সেই ঘিতেই লবণ মাখানো ফুলকপি ও গাজর কম আঁচে ভেজে তুলে নিন। তারপর অল্প জাফরান ও লবণ মাখানো সেদ্ধ ডিম ও আলু লালচে করে ভেজে তুলে রাখতে হবে। সেই ঘিতেই আঁচ বাড়িয়ে পালংশাক স্যতে করে নামিয়ে নিন। ভেজে রাখা ডিম থেকে দুটি ডিম কিউব করে কেটে রাখুন। অন্য একটা প্যান বা কড়াইয়ে সিকি কাপ ঘি গরম করে তাতে সব আস্ত মসলার ফোড়ন দিয়ে দিন। সুঘ্রাণ বের হলে তাতে খাসির মাংস, আদা-রসুনবাটা ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে দিন। মাংসের পানি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত কষিয়ে নিন। তাতে টমেটো, ফেটানো টক দই, গোলমরিচের গুঁড়া ও অল্প অল্প করে গরম পানি দিয়ে রান্না করুন। মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে গরমমসলার গুঁড়া মিশিয়ে মাখা মাখা করে ঝোলসমেত নামিয়ে ফেলতে হবে। এবার পোলাও রান্নার পালা। হাঁড়িতে বাকি ঘি দিয়ে তাতে ধুয়ে রাখা চাল দিয়ে ভালো করে ভেজে নিন। ঘন দুধ, পরিমাণমতো ফুটন্ত গরম পানি ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে মাঝারি আঁচে ঢেকে রান্না করতে হবে। পানি ও চাল এক সমান হয়ে এলে আঁচ একদম কমিয়ে হাঁড়ির নিচে তাওয়া দিয়ে দমে বসাতে হবে। এই সময়ে এতে ভেজে রাখা সবজিগুলোও মিশিয়ে দিয়ে দমে সেদ্ধ হতে দিন। এ সময় কেওড়াজল দিয়ে দিতে হবে। পোলাও রান্না হয়ে গেলে অপর একটা হাঁড়িতে রান্না করা পোলাও, মাংস, স্যতে করা পালংশাক, টুকরা করা ডিম ও বেরেস্তা স্তরে সাজিয়ে ওপরে ভেজে রাখা আস্ত ডিম দিয়ে একদম কম আঁচে আবারও দমে বসিয়ে দিন। ১০/১৫ মিনিট রেখে নামিয়ে গরম-গরম পরিবেশন করতে হবে।