What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বরই খান, ভালো থাকুন (1 Viewer)

Welcome! You have been invited by Shuvo Dey to join our community. Please click here to register.
vEQkxN2.jpg


বরইতে ভিটামিন সি–এর পরিমাণ অনেক বেশি। ১০০ গ্রাম বরই খেলে ভিটামিন সি–এর দৈনিক চাহিদার ৭৭ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়। এতে আরও আছে ভিটামিন এ ও বি কমপ্লেক্স। প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থেরও ভালো উৎস বরই।

ধনেপাতা, কাঁচা মরিচে শিলপাটায় ছেঁচে টক বরই ভর্তা হোক আর ডাঁশা কচকচে মিষ্টি নারকেলি কুল হোক, শীতের নরম রোদের এ সময় যেন বরইয়ের। এ সময়ে দেশে ছোট-বড় টক–মিষ্টি বরই, নারকেলি কুলের সঙ্গে নতুন ধরনের বাণিজ্যিক উচ্চফলনশীল জাতের বাউকুল, আপেল কুল ইত্যাদিও পাওয়া যাচ্ছে হাটবাজারে, এমনকি ফেরিওয়ালার ঝুড়িতেও। লবণ-মরিচ মেখে কাঁচা–পাকা বরই এমনিতেই জিবে জল আনে। আবার বরই শুকিয়ে যুগ যুগ ধরে আমাদের উপমহাদেশে আচার, চাটনি বানানো হয়ে আসছে নানা মসলা আর গুড়ের সমন্বয়ে। মজার ব্যাপার হলো আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও রাশিয়া, দক্ষিণ ইউরোপ, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যে জন্মায় এ বরইয়ের নানা জাত। চাইনিজ ভেষজ ওষুধে সেই হাজার হাজার বছর ধরে শুকনা বরইয়ের ব্যবহার হয়ে আসছে। জুজুবে ফ্রুট বলে পরিচিত এ বরই–জাতীয় ফলটির অন্তত ৩০০ জাতের সন্ধান পেয়েছেন উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা। অত্যন্ত উপাদেয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর রয়েছে অবাক করা সব স্বাস্থ্যগুণ।

বরইয়ের মধ্যে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো আছে যথেষ্ট পরিমাণে। এতে ভিটামিন সি–এর পরিমাণ অনেক বেশি। ১০০ গ্রাম বরই খেলে ভিটামিন সি–এর দৈনিক চাহিদার ৭৭ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়। এতে আরও আছে ভিটামিন এ ও বি কমপ্লেক্স। প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থেরও ভালো উৎস বরই। এতে আছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস। এই ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও হাড় ভালো রাখে। এর পটাশিয়াম আমাদের শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

Znw8wFN.jpg


১০০ গ্রাম বরই খেলে ভিটামিন সি–এর দৈনিক চাহিদার ৭৭ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়

এত পুষ্টিকর এই ফলে পানি ও আঁশের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এটি অনেক কম ক্যালরিযুক্ত। এতে প্রায় ১০ শতাংশ আঁশ থাকে। এর ৮০ শতাংশই হচ্ছে জলীয় অংশ। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে যেকোনো ধরনের বরই খেতে পরামর্শ দেন ডায়েটেশিয়ানরা। এতে চর্বির পরিমাণ একেবারে নেই বললেই চলে।

পরিপাকতন্ত্রের যত্নেও বরই খুব উপকারী। এর অন্তত ৫০ শতাংশ শর্করা থাকে আঁশ হিসেবে। এতে উপস্থিত আঁশ বা ডায়টারি ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এতে প্রাকৃতিক পেকটিন থাকার কারণেও কোষ্ঠ পরিষ্কার করায় এর ভূমিকা আছে। কারণ, পেকটিন নিজে থেকেই জেল তৈরি করতে পারে পরিপাকতন্ত্রে। এ ছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, 'পাইলরি' নামের একধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বর্তমান যুগে ঘরে ঘরে অ্যাসিডিটি আর গেস্ট্রিক আলসারের জন্য অনেকাংশে দায়ী। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণের কারণে বরই এই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কার্যকর বলে বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষায় জানা গেছে। যুগে যুগে চীনে শুকনা বরইয়ের চা পান করা হয় এর অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহরোধী গুণের জন্য। তাজা বরইও প্রদাহ উপশম করতে পারে বলে পুষ্টিবিদেরা মনে করেন।

NvBpYdH.jpg


পরিপাকতন্ত্রের যত্নেও বরই খুব উপকারী

বরইয়ে বিভিন্ন পলি স্যাকারাইড, ফ্ল্যাভেনয়েড আর ট্রাই টারপেনিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আছে প্রচুর পরিমাণে। এতে ভিটামিন সি হিসেবে থাকা এসকরবিক অ্যাসিডও কিন্তু একধরনের অত্যন্ত কার্যকর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। ফ্রি র‍্যাডিকেলের বিরুদ্ধে এই অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের লড়াই করার অনন্য ক্ষমতা রয়েছে। তাই গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বরই খেলে তা ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। লিভারের ক্ষতিকর উপাদান নিষ্কাশন করতেও বরইয়ের ফ্ল্যাভেনয়েড বেশ কার্যকর, এমনটাও গবেষণায় উঠে এসেছে।

বরইয়ের এক আশ্চর্যজনক গুণ হচ্ছে অনিদ্রার চিকিৎসায় এর উপকারী ভূমিকা। আদিকাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশের আয়ুর্বেদ ও চাইনিজ ভেষজ চিকিৎসার ক্ষেত্রে বরইকে ইনসমনিয়ার ওষুধ হিসেবে ধরা হয়। এর বীজের নির্যাসও একই কাজে লাগতে পারে। সুনিদ্রা আনা, এমনকি মানসিক অবসাদ, বিষাদ ও অতি দুশ্চিন্তায় বরই সমানভাবে কার্যকর বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বরইতে পাওয়া স্যাপোনিন নামের ফাইটোনিউট্রিয়েন্টের এতে জোরালো ভূমিকা থাকতে পারে।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতেও বরইতে অবস্থিত এই স্যাপোনিনের ভালো প্রভাব থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। এটি মস্তিষ্ককে শান্ত করে। দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা কমিয়ে আনে। কিছু গবেষণাপত্রে আলঝেইমার ও ডিমেনশিয়া রোগীদের ব্রেন ফাংশন আরও ভালো করতে বরইয়ের নির্যাসের ভালো ভূমিকা পাওয়া গেছে।

beUPGIt.jpg


বরইয়ের এক আশ্চর্যজনক গুণ হচ্ছে অনিদ্রার চিকিৎসায় এর উপকারী ভূমিকা

এখনো বিষয়টি পরীক্ষাধীন থাকলেও ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বরই–জাতীয় ফলের অনন্য ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস এবং অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের ভূমিকা নিয়ে বিজ্ঞানীরা খুবই আশাবাদী। বিশেষ করে স্যাপোনিন ও ট্রাই টারপেনয়েডের যৌগ ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে একে ধ্বংস করা বা অন্তত দুর্বল করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখতে পারে বলে গবেষকেরা যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন। কিন্তু এখনো এই কেস স্টাডিগুলো পরীক্ষাগারেই সীমাবদ্ধ আছে বলে একেবারে জোর দিয়ে এ ব্যাপারে কিছু বলা যায় না। তবে ক্যানসার প্রতিরোধে এসব ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট যে খুবই উপকারী, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

সুস্থ ও নীরোগ জীবনের জন্য আমাদের দৈনিক খাদ্যতালিকায় বরই–জাতীয় ফলকে প্রাধান্য দেওয়াই যায়। খুব দুর্লভ কিছু ক্ষেত্রে কোনো কোনো ব্যথানাশক ওষুধের সঙ্গে বরইয়ের কিছু বিপরীতধর্মী ভূমিকা দেখা যায়, যা কিনা এই ওষুধের পরিপূর্ণ শোষণ কিছুটা বাধাগ্রস্ত করে। বরই নিজেই একটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট হওয়ায় দিনে যথেষ্ট পরিমাণ বরই খাওয়া হলে অবসাদের জন্য নেওয়া নিয়মিত ওষুধের ডোজ কমিয়ে আনা উচিত। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি প্রযোজ্য।

সময়টা বরইয়ের। চারদিকে প্রচুর বরই পাওয়া যাচ্ছে এখন। ফলে যত পারা যায় এখন বরই খেয়ে নিন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top