ডিপ্রেশনের কারণ হিসেবে জেনেটিক, পারিপার্শ্বিক ও শারীরিক অবস্থা, ব্যক্তিজীবনের অপ্রাপ্তি, অপূর্ণতা, পারিবারিক জীবনের অশান্তি, দ্বন্দ্ব ইত্যাদিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এগুলির পাশাপাশি খাদ্য ও পুষ্টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। খাদ্য ও পুষ্টি মানুষের মানসিক ও আবেগপ্রবণ বিষয়গুলোকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে মস্তিষ্কের সঠিক কার্যক্রম বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং অবসাদ, দুশ্চিন্তা ও হতাশা দেখা দেয়।
ডিপ্রেশন বা হতাশা একটি মেন্টাল ডিসঅর্ডার বা মানসিক অসুস্থতা। অতিমাত্রায় ডিপ্রেশনকে মানসিক রোগ বলে চিহ্নিত করা হয়।
ব্যক্তিজীবনের দৈনন্দিন কাজকর্ম, খাবার, ঘুম, অনুভূতি, চাওয়া-পাওয়া, পারিবারিক সম্পর্ক—সব ক্ষেত্রেই ডিপ্রেশনের প্রভাব দেখা যায়।
এই ডিপ্রেশনের কারণে মানুষ জীবনকে উপভোগ করতে পারে না। এমনকি কোনো কাজে মনোযোগী হতে পারে না। এ কারণে হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তি একটি দুর্বিষহ জীবন যাপন করে। অতিমাত্রায় ডিপ্রেশনের কারণে অনেক সময় মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নেয়।
ডিপ্রেশনের কারণ
বিভিন্ন কারণে ডিপ্রেশন দেখা যেতে পারে। ডিপ্রেশনের কারণ হিসেবে জেনেটিক, পারিপার্শ্বিক ও শারীরিক অবস্থা, ব্যক্তিজীবনের অপ্রাপ্তি, অপূর্ণতা, পারিবারিক জীবনের অশান্তি, দ্বন্দ্ব ইত্যাদিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ডিপ্রেশনের সঙ্গে আরেকটি বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেটি হচ্ছে খাদ্য ও পুষ্টি। খাদ্য ও পুষ্টি মানুষের মানসিক ও আবেগপ্রবণ বিষয়গুলোকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে মস্তিষ্কের সঠিক কার্যক্রম বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং অবসাদ, দুশ্চিন্তা ও হতাশা দেখা দেয়।
কিছু ভিটামিন ও মিনারেল আছে, যেগুলোর অভাবে ডিপ্রেশন দেখা দেয়। এই ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় যোগ করে ডিপ্রেশন চিকিৎসার প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া যায়। জরুরি প্রয়োজনে এসব ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও দেওয়া হয়।
ভিটামিন ডি
মাশরুমে মিলবে ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি সেরোটোনিন হরমোনের সঠিক কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই হরমোন আমাদের নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি ঘুম, খাবারের রুচি ও হজমের প্রক্রিয়াকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। এ ছাড়া সেরেটোনিন ফসফরাস শোষণে সাহায্য করে, যা আমাদের মস্তিষ্কের নতুন কোষ গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন ডির উৎস
সূর্যের আলো থেকে আমরা ভিটামিন ডি পেয়ে থাকি। এ ছাড়া ডিমের কুসুম, মাশরুম ও ফর্টিফায়েড খাবার থেকেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড
স্যামনে ভরপুর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড
এটি আমাদের মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য উপাদান। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের নিউরাল সিস্টেমের ইনফ্লামেশনকে প্রতিরোধ করে।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস
স্যামন, ইলিশের মতো সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম, বাদাম ইত্যাদিতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়।
ফোলেট
মটরশুঁটিতে মিলবে ফোলেট
ফোলেট সেরেটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা আলঝেইমার ও ডিপ্রেশন প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ফোলেটের উৎস
শিম, মটরশুঁটি, বিচি ও ডাল-জাতীয় খাবার, পালংশাক ইত্যাদিতে বেশি পরিমাণে ফোলেট পাওয়া যায়।
ভিটামিন বি
ডিমে আছে ভিটামিন বি
গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন বি৬ ও ভিটামিন বি১২ মানসিক সুস্থতা ও মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভিটামিন বির উৎস
মাছ, মাংস, ডিম, হোল গ্রেইন (পুরো শস্যদানা) ইত্যাদিতে বেশি পরিমাণে ভিটামিন বি পাওয়া যায়।
ম্যাগনেশিয়াম
ডার্ক চকোলেটে পাওয়া যাবে মাগনেশিয়াম
এটি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান। ম্যাগনেশিয়াম মস্তিষ্কের সঠিক কার্যক্রম ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
ম্যাগনেশিয়ামের উৎস
হোল গ্রেইন বা পুরো শস্যদানা, সবুজ শাক, ডার্ক চকলেট ইত্যাদি থেকে ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়।
জিংক
রেডমিটে আছে জিংক
জিংক আমাদের মস্তিষ্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি আমাদের মস্তিষ্কের সঠিক কার্যক্রমের জন্য কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। জিংক নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবেও কাজ করে। জিংকের অভাব হলে ডিপ্রেশনের পাশাপাশি মানসিক উদ্বেগ ও সিজোফ্রেনিয়া দেখা যায়।
জিংকের উৎস
মাংস (রেড মিট), পালংশাক, মিষ্টিকুমড়ার বিচি, ডার্ক চকলেট ইত্যাদিতে বেশি পরিমাণে জিংক পাওয়া যায়।
আয়রন
আয়রনের চমৎকার উৎস পালং শাক
আয়রন আমাদের দেহ ও মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে। তাই আয়রনের অভাবে ডিপ্রেশনসহ অন্যান্য মানসিক অসুস্থতা দেখা যায়।
আয়রনের উৎস
ডিম, শিম ও শিমের বিচি-জাতীয় খাবার, মাংস (রেড মিট), গরুর কলিজা, পালংশাক ইত্যাদি আয়রনের খুব ভালো উৎস।
অ্যামাইনো অ্যাসিড
ডাল জাতীয় খাবারে আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড
মস্তিষ্কের সুষ্ঠু কার্যক্রমের জন্য অ্যামাইনো অ্যাসিড অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। এর অভাবে ডিপ্রেশন বা হতাশা দেখা যায়।
অ্যামাইনো অ্যাসিডের উৎস
প্রোটিন-জাতীয় খাবার থেকে আমরা অ্যামাইনো অ্যাসিড পেয়ে থাকি। যেমন: ডিম, মাছ, মাংস, শিম ও শিমের বিচি, ডাল, বাদাম ইত্যাদি অ্যামাইনো অ্যাসিডের উৎস।
তাই হতাশা বা ডিপ্রেশন প্রতিরোধ করে সুন্দর জীবনযাপনের জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। সেই সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের বিভিন্ন হরমোনের কার্যকারিতা সঠিক রাখতে সাহায্য করে, যা মস্তিষ্কের সুস্থতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
* লেখক: সোনিয়া সাবরিন, পুষ্টিবিদ, লেকসিটি ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, খিলক্ষেত, ঢাকা