What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মরু গোলাপে সাজানো ঘর (1 Viewer)

ZEA4otF.jpg


বাড়ি সাজানোর জনপ্রিয় সাকিউলেন্ট–জাতীয় উদ্ভিদ বেশির ভাগই রসাল পাতার হয়ে থাকে। তবে অ্যাডেনিয়াম বা মরু গোলাপ সাকিউলেন্টদের থেকে অনেকটাই আলাদা। অ্যাডেনিয়ামের সবুজ পাতা আর রংচঙে ফুলের সঙ্গে সঙ্গে এর আছে এক বিশেষ ধরনের নাদুসনুদুস কাণ্ড। এই গাছের গোড়া একেবারেই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ, যা দেখে উদ্ভিদটিকে খুব সহজে চেনা যায়।

HXmrKWi.jpg


একটি বিশেষ প্রজাতির মরু গোলাপ, ছবি: আইস্টক

উপযুক্ত পরিবেশে অ্যাডেনিয়ামগাছের গোড়া একেবারে ত্যাড়াবাঁকা হয়ে ফুলেফেঁপে যায়। মূলত এ গাছের গোড়া আর কাণ্ড পানি সঞ্চয় করে রসাল হয়ে ওঠে বলে এমনটা হয়। এ ধরনের গাছগুলোকে বলা হয় কডেক্স (Caudex) প্ল্যান্ট। এই অ্যাডেনিয়ামগাছের কিন্তু প্রচলিত অনেকগুলো নাম আছে। যেমন ডেজার্ট রোজ, ইম্পালা লিলি, সাবি স্টার ইত্যাদি। এর মধ্যে ডেজার্ট রোজ বা মরু গোলাপ নামেই গাছটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

ধরা হয়, এই অ্যাডেনিয়াম গাছের উৎপত্তি আফ্রিকার শুষ্ক, রুক্ষ প্রকৃতির বুকে। তাই তো সুযোগ বুঝে এ গাছ তার কাণ্ডে পানি ধরে রাখে অন্য সব মরুজ উদ্ভিদের মতোই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, অ্যাডেনিয়ামপ্রেমী বাগানিদের লক্ষ্যই থাকে, এর এই বিশেষ ধরনের কাণ্ডটিকে যত পারা যায় ফুলিয়ে–ফাঁপিয়ে রসাল করে তোলা। সে জন্য এর শিকড়, পাতা, ডাল ছেঁটে–কেটে সামলে রাখা হয় যেন বেশ মোটাসোটা একটি কাণ্ড পাওয়া যায়। গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার সময় খুব সাবধানে দিতে হয় মরু গোলাপের বেলায়। কারণ, অতিরিক্ত আর্দ্রতা গাছের এই গোড়া পচিয়ে দিতে পারে।

nsleo9Z.jpg


অ্যাডেনিয়াম বোহেমিয়ানাম প্রজাতির বুশম্যান পয়জন, ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস

শুষ্ক আবহাওয়ায় অভ্যস্ত এই গাছের কিন্তু সুয্যিমামার সঙ্গে আছে বেজায় ভাব। বিশেষ করে এর উজ্জ্বল গোলাপি ফুল থোকায় থোকায় ফুটে ওঠে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পেলে। সাধারণত আমাদের দেশের মতো আবহাওয়ায় এ গাছ কিছুটা চিরহরিৎ প্রকৃতিরই হয়ে থাকে। তবে শীতকাল এলে এর পাতা ঝরার প্রবণতাও দেখা যায়। খুব শীতপ্রধান দেশে এ গাছ ঘরের ভেতরেই ভালো হয়। আর আমাদের দেশে অ্যাডেনিয়াম ঘরে-বাইরে সব জায়গাতেই খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে।

সাধারণ অবস্থায় বাড়তে দিলে মরু গোলাপের গাছ কয়েক ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। আবার ছেঁটে–কেটে অনেকে একে বনসাইয়ের মতো করেও বাড়তে দেন। এই অ্যাডেনিয়ামগাছের ধূসর স্ফীত গোড়া ও অসমভাবে প্রস্থ বিস্তার করা কাণ্ডের ওপরে এর ঝকঝকে মসৃণ সবুজ পাতার গুচ্ছ ভরে বৃত্তাকার সজ্জা এক অনন্য বৈপরীত্য আনে। আর তার ওপরে যখন থোকা বেঁধে রঙিন ফুলের মেলা বসে, তখন মনে হয় অ্যাডেনিয়াম বাগানিরা নিজেদের সার্থক ভাবেন। গোলাপি ছাড়াও অ্যাডেনিয়ামের ফুল কিন্তু উজ্জ্বল কমলা, লাল বা মিশ্রবর্ণেরও হতে পারে।

ji0I2ri.jpg


অ্যাডেনিয়াম মাল্টিফ্লারাম প্রজাতির সাবি স্টার, ছবি: উইকিপিডিয়া

অ্যাডেনিয়ামগাছ বিভিন্ন প্রজাতির হতে পারে। এর মূল ১২টি ভাগের কথা জানা যায়। তবে নিঃসন্দেহে এর মধ্যে অ্যাডেনিয়াম ওবেসাম বা মরু গোলাপের জনপ্রিয়তাই সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত আরও রসাল ও স্ফীতকায় এবং শাখাযুক্ত অ্যাডেনিয়াম অ্যারাবিকামও কিন্তু ঘরের বাইরে লাগানোর জন্য আজকাল অনেক শৌখিন বাগানিদের পছন্দের তালিকায় উঠে আসছে। এরপরই নাম নিতে হয় একেবারেই আলাদা রকমের অ্যাডেনিয়ামগাছ, অ্যাডেনিয়াম মাল্টিফ্লোরামের কথা। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, এতে ফুলের আধিক্য অন্য জাতের তুলনায় বেশি। আবার সারা বছর বিরান থাকার পর শীতকালেই এই গাছে ঝাঁকে ঝাঁকে গোলাপি ফুল আসে। এর পাপড়ির ধার বরাবর ও মাঝে থাকে লালচে আভা।

অ্যাডেনিয়ামের একটি অন্য রকম আবেদন আছে সারা বিশ্বের বাগানবিলাসী মানুষের কাছে। যাঁরা অ্যাডেনিয়াম ভালোবাসেন, এ গাছ তাঁদের নিজের শক্তিতে ভেতর থেকে বিকশিত হওয়ার উদ্দীপনা জাগায়। ধূসর কাণ্ডের ওপরে সজীব পাতার ঝোপমতো সবুজ আর বর্ণিল ফুলের থোকা জীবনের জয়গান গায়। আবার অ্যাডেনিয়ামপ্রেমীরা এর ঘাতসহতা, দীর্ঘ প্রতিকূলতাকে সহ্য করে আবারও ফুলে ফুলে ভরে ওঠা এসব থেকেই মানসিক শক্তি ও প্রশান্তি পেয়ে থাকেন।

5GDt1pn.jpg


অ্যাডেনিয়াম প্রজাতির একটি বনসাই, ছবি: উইকিপিডিয়া

আমাদের দেশে এখন বিশ্বের বহু দেশের মতো অ্যাডেনিয়াম অত্যন্ত প্রিয় হাউসপ্ল্যান্ট সবার কাছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইদানীং অ্যাডেনিয়াম বাগানি ও অ্যাডেনিয়ামপ্রেমীদের অনেক হৃদ্যতাপূর্ণ কমিউনিটি গড়ে উঠেছে। অ্যাডেনিয়ামের যত্ন–আত্তি নিয়ে ভিডিও সাইটগুলোতে পাওয়া যায় অগুনতি শিক্ষামূলক ভিডিও।

সাবধানতা

asL4Rbo.jpg


আউটডোর প্ল্যান্ট মরু গোলাপ, ছবি: উইকিপিডিয়া

এ গাছের কাণ্ডের ভেতরের রস থেকে অবশ্য একটু সাবধান থাকতে হবে। কারণ, এ মরু গোলাপের স্ফীত কাণ্ড বা কডেক্সে এর স্যাপ বা আঠালো রসে বিষাক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই শিশু বা পোষা প্রাণীর নাগাল থেকে অ্যাডেনিয়ামগাছ দূরে রাখলেই ভালো। তবে স্নেক প্ল্যান্ট বা আরও অনেক পাতাবাহার গাছেই এমন বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি থাকে এবং একেবারে একটি যথেষ্ট পরিমাণ সেবন করলেই কেবল এর বিষক্রিয়া সেভাবে ঘটতে পারে। মরু গোলাপের দেখভাল করা এখন বর্তমান যুগে এক অনন্য শখের কাজ বা হবি হিসেবে সবার কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমাদের দেশের নার্সারিগুলোও এ থেকে বেশ লাভের মুখ দেখছে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top