What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

চালের আটার রুটি আর খাসির পায়া (1 Viewer)

4oRejlW.jpg


শীতের দিনে কোন খাবার খাবেন, বাঙালিকে সেটা বলে কোনো লাভ নাই। কারণ প্রবাদ বলে, বাঙালি খাদ্যরসিক জাতি। রসেবশে থাকতেই ভালোবাসে তারা। সুখের দিনেও তাদের খাবার লাগে, এন্তার দুঃখকষ্ট ভুলতে ওই খাবারই লাগে। নইলে প্রতিটা শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো রেস্তোরাঁ গজায়! কাজেই শীতের দিনে তাদের ঝোলা থেকে বেরোবে একটার পর একটা খাবারের রেসিপি আর তার অত্যাশ্চর্য গল্প, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমি অন্তত হই না।

g5O7uL8.jpg


চালের আটার রুটি

শীত মানেই নতুন চাল। নতুন চাল মানেই পিঠাপুলি। শুধু পিঠাপুলিই বা হবে কেন। এই ধরুন না, শীত মানেই চালের আটা দিয়ে বানানো ছিটা পিঠা আর হাঁসের মাংস ভুনার কথা! আহা, এ ছাড়া শীত পুরো হবে কেন! এই একটা আইটেমে কি আর বাঙালির মন ভরবে? ভরবে না। তাই একটু এপাশ-ওপাশে যাওয়া যাক।

দুধসাদা চীনামাটির বাটিতে ধোঁয়া ওঠা গরম ঘন সুরুয়া আর তার ওপর ভাসা খাসির পায়ার কথা কি ভুলে গেলে চলবে এই শীতে? আহা, তার সঙ্গে যদি থাকে চালের আটার গরমাগরম রুটি, তাহলে এই মাঘ মাসের শীতের রাতে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কনকনে ঠান্ডা পানিতে স্নান করতেও আমার বাধবে না। শুধু একবার ভেবে দেখুন, রাত ঠিক আটটা। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে আপনি হাজির হলেন বাসায়। হাত-মুখ ধুয়ে টেবিলে বসতেই আপনার সামনে হাজির হলো দুধসাদা চীনামাটির বাটিতে ধোঁয়া ওঠা কালচে খয়েরি রঙের খাসির পায়া! তার ওপর আদার কুচি আর বেরেস্তার টপিং। সঙ্গে উজ্জ্বল ছাই রঙের গরম-গরম চালের আটার রুটি। এ সময় যম এলেও আমি তাকে বলতে পারি, ওয়েট প্লিজ।

uCExmTM.jpg


চালের আটার রুটি আর খাসির পায়া

না, এই মেন্যুতে আপনাকে আর কষ্ট করে মিথ্যা মিথ্যা বউয়ের তারিফ করতে হবে না। নাকে সুড়সুড়ি দেওয়া ঘ্রাণে আপনার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসবে, 'আহা আহা। কী রেঁধেছ গো!' টিপস দিয়ে রাখি, এ সময় ভুলেও বলবেন না, 'অমুক রেস্টুরেন্টে তমুক দিন অমন পায়া খেয়েছিলাম।' তাহলেই আপনার আবেশ টুটে যেতে পারে। তা ছাড়া, বলবেনই-বা কেন? বাড়ির বানানো খাবারে যে মমতা আর ভালোবাসা থাকে, রেস্টুরেন্টের খাবারে সেটা পাবেন? বুকে হাত দিয়ে বলুন তো। পাবেন না। টাকা দিলে অনেক ভালো ভালো খাবার কিনতে পাওয়া যায় বটে, কিন্তু এই যে মমতা, খাবার এগিয়ে দেওয়ার সময় চুড়ির টুংটাং শব্দের আবেশ আর একজন পরিতৃপ্ত মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকা আর একজন মানুষের মায়াবী দৃষ্টি—এসবের দাম এক জীবনে দিতে পারা যাবে না।

এবার খেতে শুরু করুন। দুই আঙুল দিয়ে একটুখানি রুটি ছিঁড়ে নিন। তারপর ভাঁজ করুন। তার প্রান্ত ডুবিয়ে নিন কালচে খয়েরি সুরুয়ায়। তারপর মুখে পুরুন। চোখ বন্ধ হয়ে যাবে। স্বাদটা যদি একটু ঝাল ঝাল হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। এই যে খাসির পায়া নামের খাবারটা এত আবেশ নিয়ে খাচ্ছেন, এটাকে আবার নিহারিও বলা হয়। কিন্তু মনে রাখবেন, নিহারি আর পায়ার মধ্যে সূক্ষ্ম তফাত আছে। রসিক ছাড়া সে তফাতটা ধরা মুশকিল। এ তফাতের মূল বিষয় মসলা। আর নিহারিতে খাসি, ভেড়া বা গরুর পায়ার সঙ্গে থাকবে বিভিন্ন তরুণাস্থি অর্থাৎ নরম হার। সলিড কোনো মাংস থাকবে না। সারা রাত ধরে রান্না হতে হতে সব হার নরম হয়ে যাবে।

bocOPCx.jpg


নিহারিরই একটা ধরন পায়া

এই ফাঁকে বলে রাখি, নিহারি নামের খাবারটির জন্ম হয়েছে মোগল ভারতে। ধারণা করা হয়, হায়দরাবাদ বা পুরোনো দিল্লিতে এর জন্ম। এটি সকালবেলার খাবার। অর্থাৎ সারা রাত ধরে রান্না করে সকাল বেলা পরোটা বা রুটি দিয়ে এটি খাওয়া হবে- এটাই ছিল নিয়ম। এখনো নেহারি সকাল বেলা পরোটা বা রুটি দিয়েই খাওয়া হয়।

নিহারির বৈশিষ্ট্য, এটা দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করা হয়। মোগল হেঁশেলেও এটি প্রায় সারা রাত ধরে রান্না করা হতো। সুস্বাদু আর উত্তম মানের নিহারি খেতে গেলে আপনাকে অন্তত একটি রাত সময় দিতে হবে। ধীরে ধীরে জ্বাল দিয়ে রান্না করতে হবে নিহারি। একসময় দেখবেন, শক্ত হাড়ও কেমন গলে গেছে। আক্ষরিক অর্থেই মুখে দিলে মাখনের মতো গলে যাবে। আর পায়ায় শুধু খাসি, ভেড়া বা গরুর পা–ই থাকবে। বাড়িতে খাওয়ার জন্য এর সঙ্গে অল্প অল্প করে যোগ করতে ফুলকপি, শালগম, বাঁধাকপি। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এগুলোর যেটাই যোগ করুন না কেন, স্বাদে কিন্তু পরিবর্তন হতে থাকবে।

বহুত আলাপ করা হলো। এবার চলুন একেবারে চলতি একটা রেসিপি আপনাদের বলে দিই। বাড়িতে রান্না করতে পারবেন।

রেসিপি

উপকরণ

খাসি অথবা গরুর পায়া ১ কেজি, এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা কয়েকটা, পেঁয়াজবাটা, আদাবাটা, রসুনবাটা, ঝোল ঘন করার জন্য পোলাওর চালের গুঁড়া, লবণ স্বাদমতো, মরিচগুঁড়া, জিরাগুঁড়া, হলুদগুঁড়া, ধনেগুঁড়া, গোলমরিচ, তেঁতুলের পিউরি, পেঁয়াজ বেরেস্তা, আদাকুচি, পুদিনাকুচি, লেবুর রস। সব উপকরণ দেবেন পরিমাণমতো। এই পরিমাণটা নির্ধারণ করবেন কজন মানুষ খাবেন, তার ওপর নির্ভর করে।

FbgyAvB.jpg


পায়া, ছবি: উইকিপিডিয়া

প্রণালি

পায়া পরিষ্কার করে ধুয়ে ৮ থেকে ১০ কাপ পানি, আদাবাটা, রসুনবাটা, পেঁয়াজবাটা, গরমমসলা, হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া, গোলমরিচ—সব একসঙ্গে মৃদু আঁচে ৯-১০ ঘণ্টা (বা তারও বেশি সময়) চুলায় ঢেকে রাখুন। পায়া সেদ্ধ হলে তাতে স্বাদ, পছন্দ ও পরিমাণমতো সবজি যোগ করতে পারেন। খাবার সময় আদাকুচি, পুদিনা, লেবুর রস ও বেরেস্তা ওপরে ছড়িয়ে গরম-গরম খেতে হবে।

এবার শুভদিন দেখে রেঁধে ফেলুন খাসির পায়া বা নিহারি, যেটা আপনি বলতে পছন্দ করেন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top