করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন অনেক মানুষ। সংক্রমণ থেকে সুস্থ হলেও পরে নানা স্বাস্থ্যজটিলতা দেখা দিচ্ছে। এটিকে বলা হচ্ছে 'পোস্টকোভিড-১৯ সিনড্রোম' বা কোভিড–১৯–পরবর্তী লক্ষণ। এই সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে মাঝেমধ্যে মাথাব্যথা, অতিরিক্ত শারীরিক দুর্বলতা, নানা স্থানে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরানো, চুল পড়ার, ত্বকে ফুসকুড়ি (র্যাশ) ওঠার মতো নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া কোভিড সেরে যাওয়ার পর কারও শরীর মুটিয়ে যাচ্ছে, কেউ আবার শুকিয়ে যাচ্ছেন অস্বাভাবিকভাবে। এসব সমস্যা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দরকার সুষম খাদ্য গ্রহণ, পরিমিত হালকা শরীরচর্চা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।
করোনা জয় করার পর ঠিকঠাক খাবার খেলে অনেক সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তাই জেনে নিন বিভিন্ন খাবারের উপকারিতা সম্পর্কে।
কোনটা কতটুকু খাবেন
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফএও) এবং ডায়েটারি গাইডলাইনস অব বাংলাদেশের সুপারিশ অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ১০০ গ্রাম শাক, ২০০ গ্রাম অন্যান্য সবজি ও ১০০ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষম ও সুস্থভাবে বাঁচার জন্য ফল ও সবজি প্রাত্যহিক খাবার তালিকায় অপরিহার্য। কেননা ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে পানি, অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন, মিনারেল, ডায়েটারি ফাইবার, ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট ও কিছু পরিমাণ শর্করা বিদ্যমান।
শাকসবজি থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ও খনিজ দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা (ইমিউনিটি) বাড়ায়, ফলে পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত ফল ও শাকসবজি খেলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বছরে সুস্থ দিনের সংখ্যা বেড়ে যায়।
পটাশিয়াম মানবদেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে; আঁশ শরীরের কোলেস্টেরলসহ অন্যান্য দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বের করে আনতে সহায়তা করে ও রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে শরীরের লোহিত রক্তকণিকা (হিমোগ্লোবিন) তৈরি করে। ভিটামিন চোখের জ্যোতি ও মসৃণ ত্বকের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় ও কার্যকর। ভিটামিন ই বার্ধক্য রোধে, ভিটামিন সি শরীরের রক্তপাত রোধ, স্বাস্থ্যকর দাঁতের মাড়ি ও শরীরে অয়রন শোষণে ভূমিকা রাখে।
সহজলভ্য খাবারের পুষ্টিগুণ
সস্তা, সহজলভ্য অথচ পুষ্টিসমৃদ্ধ (প্রয়োজনীয় শর্করাসহ পান্তা ভাত থেকে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম পাওয়া যাবে এবং পান্তা ভাত হচ্ছে বি ভিটামিনের আধার (ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, বি৯ ও বি১২ উল্লেখযোগ্য)। গবেষণাগারে পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, ১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে চালের প্রকারভেদে সাধারণ ভাতের চেয়ে সর্বোচ্চ ৫৫.৮৩% আয়রন এবং ৪৯২% ক্যালসিয়াম বেশি পাওয়া যায়। তা ছাড়া ভর্তায় ব্যবহৃত তেল, ডিম, পেঁয়াজ থেকে প্রয়োজনীয় চর্বি, ফাইবার, ফলেট, জিঙ্ক, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-এ, বি-২সহ অন্যান্য অণুপুষ্টিকণা মিলবে। ডাল থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিনও মিলবে। সব সময় যে দামি খাবার খেতে হবে তা নয়, বরং সাধারণ এসব খাবারই আপনাকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
অনেকেরই জানা নেই যেসব ফল-সবজি খোসাসহ খাওয়া যায় তা খোসা না ফেলে খেতে হবে। বিভিন্ন ফল-সবজি যেমন আপেল, কলা, শসা, বেগুন, লাউ, কুমড়া, আলু পুষ্টিতে ভরপুর। আপেলের খোসায় কুয়েরসেটিন নামের একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে, যা হৎপিণ্ড, ফুসফুস ও মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। লাউয়ের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক, যা ত্বককে সতেজ রাখে। বেগুনের খোসায় রয়েছে 'নাসুনিন' নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা অ্যান্টি-এজিংয়ে সহায়ক। এ ছাড়া বেগুনের খোসা ত্বককে সতেজ রেখে উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। আলুর খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন আর পটাসিয়াম। এ ছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন বি, সি এবং প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান।
পোস্টকোভিড সমস্যা একেকজনের একেক রকম। তাই খাবারও খেতে হবে সেটা বুঝে। প্রয়োজনে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তারপর নিজের খাবার তালিকা তৈরি করে সেটাতে অভ্যস্ত হতে পারেন।