What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Guillain-Barre Syndrome- করোনা পরবর্তী বিপদ (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
কি ভয়ানক ব্যাপার। ভালো ভাবেই বেঁচে থাকাতো ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আর কার যে কখন কী হচ্ছে বলা মুশকিল। দেবারতি মুখোপাধ্যায় এর নাম শুনেছেন নিশ্চয়। ডাকাত রাজা-শিখণ্ডী সহ অনেক বই লিখেছেন। খুব কম বয়সেই খুব নাম করেছেন। উনি একজন WBCS অফিসারও বটে। আমি দীর্ঘ দিন ধরেই উনার পেজ টা ফলো করি। সম্প্রতি তিনি একটি বিরল রোগে আক্রান্ত হন। দুর্গাপুজোর মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ভেন্টিলেটর সাপোর্টও দিতে হয় তাঁকে। Guillain Barre Syndrome-এ আক্রান্তদের দেহ ধীরে ধীরে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে যায়। শেষে আসে মৃত্যুু। জনসচেতনতার জন্য তার লেখা টা এখানে তুলে দিলাম।

🏵️🏵️ দীর্ঘ ভেন্টিলেশন থেকে ফিরে আসা আমি এবং অতি বিরল Guillain-Barre Syndrome- দেবারতি মুখোপাধ্যায়।।

♦️♦️ গত বাইশ দিনে আমার এবং আমার পরিবারটা লন্ডভন্ড হয়ে গেল। বিজয়াদশমীর দিন সকালবেলা উঠে নিজের পায়ের পাতা দুটোকে কেমন অবশ অবশ লেগেছিল। পুজোর ব্যস্ততায় আরও নানা কাজে সেরকম গুরুত্ব দিইনি।

একাদশীর দিন সকালে উঠে দেখলাম, সেই অবশভাব রূপ নিয়েছে প্রায় অসাড়তার, আর তা উঠে এসেছে হাঁটু অবধি। আমি টলতে টলতে হাঁটছি আর সঙ্গে জিভ থেকে গলা, পুরোটাই যেন বীভৎসভাবে পুড়ে গেছে। খাবারের স্বাদ তো নেই-ই, নিজেই নিজের জিভ কামড়ে গলগলিয়ে রক্ত বেরোলেও কিছু বুঝতে পারছি না।

তখনো ভয় পাইনি, বছরভর অত্যধিক পরিশ্রমে আজ এটা কাল সেটা লেগেই থাকে। হয়ত প্রেশার বেড়েছে কিংবা থাইরয়েড। স্থানীয় ডাক্তার দেখালাম। ভিটামিন দিলেন কিছু। সবই যে নরমাল।

দিন কাটে। কাজও চলছে, অসুস্থতাও বাড়ছে। ৪-৫ দিন পর থেকে আমার পুরো শরীরটাই গলা অবধি প্যারালাইজড হয়ে গেল। হ্যাঁ, প্যারালাইসিস। আমার সারা শরীরের কোথাও কোনো ন্যূনতম সাড় নেই, বিছানা থেকে ওঠা তো দূর, পাশ ফিরতে পারছি না, কখন টয়লেট হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না, কথা বলতে পারছি না। কথা বলতে গেলে মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেরোচ্ছে না।

ভয় পেলাম। বহুতলের ইলেভেটর দিয়ে চাদরে মুড়ে চ্যাংদোলা করে নামিয়ে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হল আমায়। সেখানেও একই ব্যাপার, এমারজেন্সিতে সব রুটিন রিপোর্ট করে জানানো হল, "সবই তো নরমাল, ভর্তি করব কীভাবে? ওঁর বোধহয় কোন মানসিক সমস্যা হচ্ছেন। উনি ভাবছেন উনি হাত পা নাড়াতে পারবেননা, আসলে কিন্তু পারবেন!"

যত বোঝাই, ওঁরা বোঝেন না। আমি নিষ্ফল রাগে কিছু করতে পারি না, চোখ টকটকে লাল হয়ে ওঠে। কপালে ঘাম। পরিবারও ততক্ষণে দ্বিধাগ্রস্ত, "তুমি কি কোনকারণে খুব টেনশন করছ?"

"এতগুলো ডাক্তার ভুল বুঝবেন?" ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি দাঁতে দাঁত চিপে মাথা নাড়ি। আকারে ইঙ্গিতে জানাই,"আমার শরীরে কী চলছে তা তো আমি জানি। ভর্তি আমি হবই।"

দ্বিতীয় হাসপাতাল ভর্তি নেয়। সঙ্গে প্রায় উল্কার গতিতে শুরু হয় আমার শারীরিক অবনতি। চোখ ঝাপসা হচ্ছে, গলা পেরিয়ে ফুসফুস তখন অচল হতে শুরু করেছে। তীব্র শ্বাসকষ্ট, অক্সিজেন ৮০ এর ঘরে, আমি জ্ঞান হারিয়েছি। আমায় ICU তে পাঠিয়ে অভিজ্ঞ রিউম্যাটোলজিস্ট, নিউরোলজিস্ট, পালমনোলজিস্টদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে টিম। নার্ভ কনডাকশন টেস্টের পর তাঁরা জানালেন, তাঁরা একটি বিরল রোগের আশংকা করছেন, আশংকা সত্যি কিনা তার জন্য কোমরের হাড় ফুটো করে করতে হবে Lumber Puncture Test. অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক সেই পরীক্ষা করতে হবে এখনই।

সবই হয়। ডাক্তারদের আশংকা সত্যি করে রিপোর্ট আসে। আমার যে অসুখটি হয়েছে, তার নাম গুলিয়ান ব্যারি সিনড্রোম, সংক্ষেপে G B Syndrome. ডাক্তাররা জানালেন, এই রোগে শরীরের নীচ থেকে অবশ হওয়া শুরু হয়, অত্যন্ত দ্রুত এগোতে থাকা সেই প্যারালিসিস ধীরে ধীরে প্যারালাইজ করে দেয় ব্রেইন থেকে ফুসফুস সব। ডাক্তাররা এও জানালেন, এই রোগ ১৮৫৯ সালে আবিষ্কৃত হলেও অত্যন্ত বিরল ছিল। কিন্তু একুশ শতকের পৃথিবীতে এই রোগ ক্রমশ বাড়ছে।

কারণ? দূষণ, ভেজাল খাবার কিংবা নতুন কোন ভ্যাক্সিন, অনেক কিছু হতে পারে। এই রোগে দেহের ইমিউনো সিস্টেম নিজেই নিজের শত্রু হয়ে উঠে ক্রমশ নিজের দেহের ইমিউনিটি ধ্বংস করতে থাকে। পরিণাম মাল্টি অর্গান ফেলিয়োর, মৃত্যু।

পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল। আমার শিশুপুত্র, আমার হাজার কাজ, লেখা, সব ছেড়ে আমি এগিয়ে যাচ্ছিলাম অমৃতলোকের দিকে। কোনভাবেই কিছু না হওয়ায় আমায় ভেন্টিলেশনে দেওয়া হল। কৃত্রিম সেই শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে চলতে লাগল IVIG treatment.

মৃত্যুপরবর্তী জীবন নিয়ে বড় কৌতূহল ছিল। সেই কৌতূহল নিরসনে বহুবার পড়েছি স্বামী অভেদানন্দের মরণের পারে কিংবা রেমন্ড মুডির লেখা Life After Life. কিন্তু আমার নিজের জীবনে যে near death experience এর অভিজ্ঞতা কোনদিন হবে, তা কল্পনাও করিনি। চলচ্ছক্তিহীন বাকহীন আমি যান্ত্রিকভাবে শ্বাস নিই আর দেখতে থাকি অদ্ভুত সব দৃশ্য! আমার প্রপিতামহ প্রপিতামহী প্রমাতামহ প্রমাতামহী কিংবা তারও আগের পূর্বপুরুষ পূর্বনারীরা যেন নেমে আসছেন, আমার মাথায় হাত রাখছেন তাঁরা, ডাকছেন! তাঁদের মুখ আমি চিনি না, কিন্তু যেন নিশ্চিতভাবে জানি, উনিই আমার পাঁচপ্রজন্ম আগের পূর্বপুরুষ হুগলীর জনাই গ্রামের জমিদার চুনীলাল মুখোপাধ্যায়, কিংবা উনি সেই অবগুণ্ঠিতা রামমনি দেবী, যিনি আড়াই বছর বয়সে বিবাহের পর স্বামীর কোলে করে নাকি পড়তে যেতেন বিদ্যাসাগর মশাইয়ের ইস্কুলে! আরো কত মানুষ!

আমার গায়ে কাঁটা দিতে থাকে, চোখ দিয়ে জল ঝরতে থাকে, তাঁরা বরাভয় দেন, ডাকেন!

আমি ভীতসন্ত্রস্ত চোখে খুঁজতে থাকি আমার বর্তমানকে, পিছু ফিরে খুঁজি, আমার পুত্র? কই সে! সব ছেড়ে চলে যেতে পারি, কিন্তু তাকে ফেলে কী করে যাব? আমি পূর্বপুরুষদের হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করি, প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকি। নাহ, আমি যাব না, কিছুতেই না!

হ্যালুসিনেশন? কী জানি! তবে এত জলজ্যান্ত এত জীবন্ত যদি হ্যালুসিনেশন হয়, তবে বাস্তব কোনটা?

পাক্কা সাতদিন পর ভেন্টিলেশন খোলা হল আমার। ডাক্তাররা জানান, আমি নাকি 'মির‍্যাকুলাস ফাইট' করেছি! একটু জন্য ব্রেইন বেঁচে গেছে আমার।

আমার এখন হাতদুটো ছাড়া সবই অবশ। তবু সারাদিন চেষ্টা করে যাই কথা বলার, পা নাড়ানোর। কবে অফিস যেতে পারব, স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারব, জানি না। আমি লড়ছি। ডাক্তাররা বলছেন, পুরোপুরিভাবে সুস্থ হতে তিন চারমাস লাগবে। কিন্তু প্রয়োজন vigorous ফিজিওথেরাপির।

একটা গোটা জীবনের কাছে তিন চার মাস কী এমন? সুস্থ আমাকে হতেই হবে। এই ওয়াকার, বেডপ্যানের দুনিয়া ছেড়ে বেরোতেই হবে। আমার মুখ অবশ, হাসতে বা কাঁদতে কিছুই পারি না। আকারে ইশারায় কাজ চালাই। বাড়ি আসা ইস্তক আমার পুত্র আমায় হাসানোর নানা কসরত করে চলেছে, আমি চোখ দিয়ে হাসি, কিন্তু অবোধ শিশু তো সেই হাসি বোঝে না, ভাবে মা হাসছে না কেন? নিজের পেছনে দড়ি আটকে এসে আমার অসাড় ঘাড় ধরে ঝুলে পড়ে সে, "ও মা, হাসো না মা! এই দ্যাখো, আমি কেমন জয় হনুমান হয়েছি!"

আমাকে হাসতে হবে। আমাকে কান এঁটো করা হাসি হাসতে হবে আমার ছেলের জন্য। আমায় সুস্থ হতে হবে। আমি পারব। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, when nothing else is working right, wear the confidence! সেই আত্মবিশ্বাসই আমার শক্তি।

এই দীর্ঘসময় আমার কাছে ফোন ছিল না। আমার যে বন্ধু, আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমার এই দীর্ঘসময়ে বারবার খোঁজ নিয়েছেন, তাঁদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম। বহু ইমেল, ই সাইনিং, মেসেজ পেন্ডিং আছে, জানি না কবে সেগুলো করতে পারব।

খুব সচেতনভাবে আমার এই সোশ্যাল মিডিয়া পেজে বই ও অনুষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্য ছাড়াও চেষ্টা করি শুধুমাত্র আলোর কথা, আশা, সদর্থক বার্তা দিতে। ব্যক্তিগত জীবনে সংগ্রাম এলেও চেষ্টা করি তা গিলে ফেলতে কারণ, যে বিপুলসংখ্যক পাঠক আমায় অনুসরণ করে থাকেন, তাঁদের পারলে আনন্দটুকুই দিতে, কোনরকম নেতিবাচকতা নয়।

কিন্তু এবার আর পারলাম না। কোভিড পরবর্তী সময়ে গুলিয়ান ব্যারি সিন্ড্রোম ক্রমশ বাড়ছে, তাই পা হঠাৎ অবশ লাগলে একেবারে দেরি করবেন না। অত্যন্ত দ্রুত ট্রিটমেন্ট শুরু হলে জি বি সিন্ড্রোম রুগীও বাঁচতে পারে। আমার এই লেখা পড়ে কেউ যদি আগে থেকে সতর্ক থাকেন, সেটা তো খুবই ভাল।

Fortis Healthcare হাসপাতালের ডঃ অমিত হালদার, ডঃ অপরাজিতা চ্যাটার্জি, অন্যান্য ডাক্তার, নার্সরা ছাড়াও আভূমি প্রণাম সেই হাউজকিপিং দিদিদের, যারা মায়ের মমতায় আমায় পরিষ্কার রেখেছিলেন। হ্যাঁ সেটা তাঁদের পেশা, কিন্তু যে স্নেহ, যে মায়ায় তাঁরা আমায় মুড়ে রেখেছিলেন, সেটার জন্য তাঁরা অর্থ পান না।

ডাক্তারদের কাছ থেকে শোনা ও নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লেখা, দয়া করে ডাক্তাররা ছোটখাটো ভুল ধরে লজ্জা দেবেন না। যিনি আমার বিজাতীয় জড়ানো উচ্চারণ শুনে শুনে অসীম ধৈর্যে এই লেখাটা টাইপ করে দিলেন, আমার সেই অর্ধাঙ্গীকে আর ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করলাম না। সে আছে বলেই আমি বেঁচে আছি এখনো!

কবে সুস্থ হব জানি না, তবে জিবি সিন্ড্রোম আমায় অনেক কিছু শিখিয়েছে, এখনো শেখাচ্ছে। আমি প্রতিনিয়ত বুঝছি, পরিবার, একমাত্র পরিবারই সবকিছুতে পাশে থাকে।

আ নো ভদ্রাঃ ক্রতবো যন্তু বিশ্বতঃ। সকলের মধ্যে শুভচিন্তার উদয় হোক।

দেবারতি মুখোপাধ্যায়।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top