নতুন নতুন স্কিন কেয়ার ট্রেন্ড চালু করতে কোরীয়দের জুড়ি মেলা ভার। নিত্যনতুন ট্রেন্ডের জন্ম দিয়ে সবাইকে তাক লাগানোই যেন তাঁদের জীবনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সৌন্দর্যচর্চার ক্ষেত্রে কোরীয়রা কিছু একটা করলে এখন সারা দুনিয়া তাঁদের পিছেই ছুটতে থাকে। এই যেমন কয়েক মাস ধরে যখন তাঁরা মুখে সমানে পেট্রোলিয়াম জেলি মেখে বেড়াচ্ছে, ঠিক তখন থেকে সবার বাসার ড্রেসিং টেবিলে অনাদরে পড়ে থাকা পেট্রোলিয়াম জেলির কৌটার হঠাৎ কদর বেড়ে গেল।
পেট্রোলিয়াম জেলি মাখার এই ট্রেন্ডের নাম স্লাগিং
বলছি পশ্চিমের কথা। করোনার ভেতরেও কেউ কেউ আবার লাইন দিয়েছেন ফার্মেসি স্টোরগুলোয়। ওষুধ কিনতে নয়, পেট্রোলিয়াম জেলি কিনতে। পেট্রোলিয়াম জেলি মাখার এই ট্রেন্ডের আবার একটা গালভরা নামও রাখা হয়েছে—স্লাগিং। টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট—সবখানেই এখন স্লাগিংয়ের দৌরাত্ম্য। অভিধান ঘাঁটলে এর কোনো বাংলা অর্থ পাওয়া যায় না। এর অর্থ 'কী' খোঁজার পেছনে সময় খরচ না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক 'কেন' এই স্লাগিং!
বিশ্বায়নের ফলে কোরীয়দের বিখ্যাত টেন স্টেপ বিউটি রুটিন সম্পর্কে আমরা মোটামুটি সবাই অবগত। বাংলাদেশের সৌন্দর্যসচেতন মানুষের কাছে এর বেশ জনপ্রিয়তা আছে। এ দেশে এখন অনেক বিউটি শপে টেন স্টেপ স্কিন কেয়ার আইটেম কিনতে পাওয়া যায়। এখন অবশ্য দশ ধাপের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও একটি ধাপ, আর তা হলো এই পেট্রোলিয়াম জেলি মাখা ওরফে স্লাগিং।
বাঙালিদের সঙ্গে পেট্রোলিয়াম জেলির আবেগের সম্পর্ক, ছবি: উইকিপিডিয়া
পশ্চিমের দেশে এর কেমন কাটতি জানা না থাকলেও এ দেশে আমরা সবাই জানি বাঙালিদের সঙ্গে পেট্রোলিয়াম জেলির আবেগের সম্পর্ক। শীতকালে এটিই হয়ে ওঠে আমাদের পরম বন্ধু। শীতে যখন ঠোঁট শুকায়, চামড়ায় টান লাগে, গোড়ালিতে ফাটল ধরে, তখন 'সবার ওপর পেট্রোলিয়াম জেলি সত্য' হয়ে ওঠে, তাহার ওপর আর কিছুই চলতে চায় না। আর অন্য সময়, কাটাছেঁড়া, পোড়া-ফাটা হলেই সবার আগে এর খোঁজ পড়বেই পড়বে।
তো, স্লাগিংয়ের কথা শুনে আমরা আহ্লাদে একটু গদগদ হতেই পারি। এখন কেউ যদি বলেন, 'ও, কোরীয়রা যা করছে তা আমরা বাপের জন্মের সময় থেকেই করে আসছি', তাহলে বলাটা খুব একটা ভুল হবে না। কারণ, সেই ব্রিটিশ আমলে, যখন বাজারে বাহারি ক্রিম লোশন ময়েশ্চারাইজারের সম্ভার বসেনি, তখন ভরসা ছিল এটি। আর এখন এ দেশে এমন কোনো বাসা খুঁজে পাওয়া কঠিন, যেখানে ছোট বা বিশাল কৌটার পেট্রোলিয়াম জেলি নেই।
যখন বাজারে বাহারি ক্রিম লোশন ময়েশ্চারাইজারের সম্ভার বসেনি, তখন আমাদের ভরসা ছিলো পেট্রলিয়াম জেলি, ছবি: সংগৃহীত
ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার বিশেষ ক্ষমতা আছে এর। এ জন্যই কোরীয়রা টোনার, এসেন্স, সিরাম, ময়েশ্চারাইজার ক্রিম লাগানোর পর আর্দ্রতাকে আরও ভালো করে তালা দিতেই একদম শেষ ধাপেই লাগিয়ে নিচ্ছেন পেট্রোলিয়াম জেলি। কোনো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টই কিন্তু পুরোপুরি আর্দ্রতা বা পানি ধরে রাখতে পারে না। কিন্তু পেট্রোলিয়াম জেলি এই অসাধ্যসাধন করতে পারে। এ জন্য রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখে সবকিছু মাখার পর এটি লাগান। লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর বিছানায় যান।
তবে এই স্লাগিং কিন্তু সবার জন্য নয়। শুধু শুষ্ক আর স্বাভাবিক ত্বক যাদের, তাদের জন্য। অবশ্য মিশ্র ত্বকের অধিকারীরা শুধু তাদের ত্বকে শুষ্ক অংশেই জেলির আস্তরণ লাগাতে পারবে। ত্বক যদি হয় তৈলাক্ত, তাহলে স্লাগিং দিন। 'ত্যালা ত্বকে তেল দেওয়া' নিরর্থক। আর সংবেদনশীল ত্বক হলে এর ধারেকাছে যাওয়ার দরকার নেই। কে জানে, কখন কী অঘটন হয়ে যায়!
বাজারে বহু রকমের পেট্রোলিয়াম জেলি কিনতে পাওয়া যায়। দামও হাতের নাগালে। তাই বলে একটা কিনলেই কিন্তু হলো না। কোকো বাটার, শিয়া বাটার, অ্যালোভেরা, নারকেল, লেবু, স্ট্রবেরি, কমলাযুক্ত পেট্রোলিয়াম জেলি কিনুন। এগুলো ত্বকের জন্য বেশ ভালো। আর হ্যাঁ, ভুলেও অপরিষ্কার ত্বকে এটি লাগাতে যাবেন না। তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে কিন্তু—এই আমি বলে দিলাম!