What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected বকুল ফুল (1 Viewer)

Joined
Aug 23, 2020
Threads
74
Messages
111
Credits
7,126
ছোটবেলায় অনেক ছোট ছোট ডিঙ্গিতে উঠতাম, কীযে মজা পেতাম ! ভৈরবের উথাল পাথাল পানি তে যখন আছড়ে পড়তো ডিঙ্গি নৌকা, আমিও পা দিয়ে হেলেদুলে দুলাতাম । মনে হতো ঢেউয়ের তালে আমিও ভেসে যাচ্ছি, দুলছি দুলছি !
আজও কালিবাড়ি খেয়াঘাট পার হবার সময় মনে হচ্ছিলো নৌকার উপর দাঁড়িয়ে দুপা ফাঁক করে
দাঁড়িয়ে সেই ছোটবেলার মতো নৌকায় দোল দিই।
নদীতে ভরা জোয়ার, ইঞ্জিনের নৌকা যাচ্ছে আর আসছে। বিরাম নেই কারো। আগে আধা ঘণ্টা লাগতো একটা নৌকা ভরতে। এখন পাঁচ মিনিটে ভরে যায় নৌকা গুলো। দাঁড় নেই। ইঞ্জিনে চলে।
ইস ছোটবেলার মত যদি আজও নৌকাটাকে দুলাতে পারতাম ! ইঞ্জিনের নৌকার সামনেই বসে ছিলাম । বাবা আমাকে আগলে নিয়ে বসে আছেন, যদি নৌকা থেকে পড়ে যাই ! আমারও যে ভয় করছিলো না তা নয় ! ভয় পাচ্ছিলাম । বাবার এই অতি সাবধানী ভাবটাকে আমার একদম পছন্দ নয় । বাবা যে আমাকে খুব ভালোবাসেন তা নয় ।
কিন্তু কর্তব্য পালন করতেই সাবধানতা। কারো চোখ না পড়ে। কারো সাথে আমার চোখাচোখি না হয়। এসব নিয়েই বাবার মাথা ব্যথা। ভালোবাসাটাসা পুরুষ মানুষের ভিতর আছে আমার বিশ্বাস হয় না। বিশেষ করে বাবার ভিতর।
ভালোবাসলে আমার মার কাছ থেকে আমাকে বাঘের মত হালুম করে কেড়ে রাখতেন না । মা ছেড়ে গেছেন তাতে বাবার ল্যাপ ছিলো অনেক। আর মানসিক গ্যাপতো আর মেপে বলা যায় না।
বলতে পারি আকাশ পাতাল। বাবা মাঝারি আকারের। দেখতে রাজপুত্র নয়। বাবার ভিতর কর্তৃত্ববাদী ভাব ছিলো প্রখর। ভালোবাসা আবেগ অনুভূতি এসবের ধার ধারতেন না। মা ছিলেন স্বপ্ন বিলাসী আবেগী। সাহিত্যের প্রতি ছিলো গভীর অনুরাগ। বঙ্কিমচন্দ্র থেকে রবীন্দ্রনাথ সব ছিলো মার সেল্ফে। গান পাগল আর প্রকৃতি প্রেমি মায়ের সাথে বাবার পড়তো না। কাঠখোট্টা ধরনের মানুষ ছিলেন বাবা। মার শখ ছিলো বহুমাত্রিক, বিচিত্র । বাবার সাথে পড়েনি তার একদিনও । বাবা সারাক্ষণ কপাল কুঁচকে থাকতেন, মার আপত্তি ছিলো অনেক । আমল দিতেন না বাবা । মা নিজের পথ বেছে নিলেন। চরম প্রতিশোধ নিলেন বাবার প্রতি। এখানেই আমার একটু বাঁধে। মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেননি। বাবা বলেছিলেন, মেয়েটিকে পেতে হলে এই সংসারে তোমার ফিরে আসতে হবে। মা বিনাবাক্য ব্যয়ে বাবার বন্ধু দত্তকে সঙ্গী করে নিলেন । আমার জন্য তিনি নরক পুরীতে থাকলেন না। এই সংসার তার কাছে বিষের মতো তেঁতো হয়ে গিয়েছিল।
স্বজাতি নয় তাতে মার কিচ্ছু এসে যায়নি, বিয়ে ছাড়ায় প্রাচ্য দেশগুলোর মত এক ঘরে থাকেন।
লোকে নানা কথা বলে মার চরিত্র নিয়ে। মুসলিম হয়ে কীভাবে দত্ত কাকাকে শয্যা সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন অনেকের মাথায় ঢোকে না। এ জন্য অবশ্য মাকে সমাজচ্যুত হতে হয়নি, যারাই মার নিন্দা করেন তারাই মারা ভালো মন্দের খোঁজ খবর নিয়ে এসে বাবাকে শুনান।
ইদানিং তারা এসে শোনাচ্ছেন মা নাকি দত্ত কাকাকে বিয়ে করে নিয়েছেন। এই বাড়িতে প্রবেশের শেষ রাস্তাও নাকি মায়ের বন্ধ হয়ে গেল। শোনা যায় উনারা রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছেন তবে কে ধর্ম বিসর্জন দিয়েছেন তার সত্যতা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না।

আমি বাবাকে বলেছিলাম, বাবা মাকে ফিরিয়ে আনো
বাবা মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। উত্তর দেননি।
আমি আকুল হয়ে বলেছিলাম,
বাবা মার জন্য বুকের ভিতর কান্দে!
বাবা উদাস কণ্ঠে বলেছিলেন, কাঁদতে দে, হাঁফসে গেলে থেমে যাবে
বলেছিলাম, ফেরাও ওঁদের! বাবা দত্ত কাকু তোমার ছেলেবেলার বন্ধু
বাবা থিতু হয়ে বসেই ছিলো। ফেরাতে যায়নি।
বাবা উত্তর দেয় না।
আমি বারবার বলি, বাবা দত্ত কাকু তোমার ছেলেবেলার বন্ধু?
বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, জানিনা।

আমি জানি দত্ত কাকু বাবার ছেলে বেলার বন্ধু। এক স্কুলে পড়তেন একসময় । দহরম মহরম সম্পর্ক ছিলো।দাদাবাড়ী ভালো রান্না হলে দত্ত কাকু হাজির হয়ে যেতেন। দাদীও শুনেছি দত্ত কাকুকে ছেলের মতো ভালোবাসতেন।
বাবাও ব্যতিক্রম ছিলেন না। বাড়িতে ভালো রান্না হলেই মাকে বলতেন, দত্তকে ফোন দিই?
মা বলতেন, দাও।
বাবা বলতেন, ওকে ভালো মন্দ না খাওয়াতে পারলে ভালো লাগেনা। ওদের সবাই নিরামিষ। দত্ত আমাদের বাড়িতে এলে ওসব মানতো না। মাসি জিজ্ঞেস করলে বলতো, গাল শুঁকে দেখো মাছ মাংস কিচ্ছু খাইনি। মাসি ঠিক বিশ্বাস করতেন না। বলতেন জাতপাত রক্ষে করো ভগবান।

বাবা দত্ত কাকুর গল্প বলতেন, মা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচাতেন। দত্ত কাকুর প্রসঙ্গ মানেই অদ্ভুত কিছু শোনা। বাবা বলতেন, দত্ত সুন্দর ছবি আঁকতে পারে একদিন অবিকল আমাকেই এঁকে দিলো! কি যে খুশি হয়েছিলাম! আর দত্ত যখন বাঁশি বাজায় তখন বনের পক্ষীকূলও ছুটে আসে। দত্ত জানেনা এমন কিছু আছে? পালাগান, যাত্রায় চলে যেতো, তিনদিন পরে ফিরতো। মাসিমা দাঁবড়ে বাড়ির বাইরে দিতো, দত্ত আমাদের বাড়িতে এসে শুয়ে থাকতো, পরদিন মাসিমাই আবার তেল মালিশ করে বাড়ি নিতো।
মা দত্ত কাকুর প্রসঙ্গ এলেই হা করে শুনতেন। বাবার অন্য পাঁচটা কথা মার পছন্দ হতো না।
বাবার ভালো মন্দ খেয়াল করতেন না। বাবার সেদিন খুব জ্বর ছিলো। গায়ে তাপে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। বাবার কষ্টে আমার কষ্ট হচ্ছিলো। মাকে
বলতাম, মা বাবার বোধ হয় জ্বর!
মা অবাক হয়ে তাকাতেন। মনে হতো নতুন শুনলেন। বলতেন, ভেটকি মেরে আছে। কিচ্ছু হয়নি।
গায়ে একবার হাত দিয়েও দেখতেন না। বাবা মনে করতেন জোর খাটিয়ে সব সমাধান হয়ে যায়। সব পাওয়া যায়। মা তার প্রমাণ দিয়ে গেছেন জোর করে কিছুই পাওয়া যায় না।
বাবা জ্বরে কাঁতরাতেন মা গ্রাহ্য করতেন না। অথচ আমার জ্বর হলে মা খাওয়া ঘুম ছেড়ে দিতো।
বাবাকে বলতো, তুমি ডাক্তার ডাকো।
আমার জ্বর মেপে নিরানব্বই পাওয়া গেলে বাবা বলতেন, সর্দি জ্বর সেরে যাবে, মাত্র নিরানব্বই
মা খুব বিশ্রী ভাবে বাবার দিকে তাকিয়ে বলতেন, তুই বুঝবি কী? নিরানব্বই মানেই খারাপ এরকম খুঁতখুঁত জ্বর ভালো না।
বাবা সিংহের মতো হুঙ্কার দিয়ে মার চুল ধরে ঝুলে পড়তো। বিলকিস খালা আসলে বাবা বলতেন, কাজের বুয়া এখানে কেনো? পারিবারিক ব্যাপার।
তারপর মাকে কিল-ঘুষি মারতেন আর বলতেন, তুই করে বলার শখ হয়েছে না? খুন করে ফেলবো

মা নীরবে হজম করতেন। চুপচাপ ঘরে বিছানায় শুয়ে পড়তেন। মায়ের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তো। আমি পাশে বসলেই মা বুকে টেনে নিতো। বুকের ভিতর চেপে ধরে সারা মুখে আমার চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিতো। আর অঝোর ধারায় পানি পড়তো মার চোখ দিয়ে।
হয়তো তখনই মা ঠিক করে ফেলেছিলেন বাবার সব থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে চলে যাবেন।

ভৈরবে থইথই জল। জল কেটে চলছে আমাদের নৌকা। বাবার দুহাঁটুর ভাজে আমাকে চেপে ধরে আবার দু'হাতেও ধরে রেখেছেন। আমার অসহ্য লাগছে। বাবা ছাড়ো।
কে কার কথা শোনে কিছুতেই আমাকে পানিতে পড়তে দেবেন না।
বাবার হাঁটুর ফাঁক গলে দেখছি আমার দূরাবস্থা দেখে একজন যুবক মুচকি মুচকি হাসছেন।
আমার লজ্জা করছে। কিন্তু বাবা ছোট শিশুর মতো আমাকে জাপ্টে ধরে আছেন।

চলবে-----
 

Users who are viewing this thread

Back
Top