What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review ঢাকা অ্যাটাক : বিদেশি মানের দেশি ছবি (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
7QzAckH.jpg


ঢাকা অ্যাটাক
পরিচালক : দীপংকর দীপন
অভিনয়ে : আরিফিন শুভ, মাহিয়া মাহি, এ বি এম সুমন, তাসকিন রহমান, নওশাবা প্রমুখ।
রেটিং: ৪/ ৫

কথায় আছে 'ঘর পোড়া সিঁদুর মেঘ দেখলে ভয় পায়'। 'ঢাকা অ্যাটাক' মুক্তির আগে আমার অবস্থা তেমনটিই হয়েছিল। ট্রেলার ভীষণ ভালো লেগেছিল। আর ভয়ের উৎস সেখানেই; কারণ অতীতে যেসব দেশীয় ছবির ট্রেলার দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলাম, কাকতালীয়ভাবে সেসব ছবিই বড় পর্দায় মাথা ব্যাথার কারণ হয়েছিল।

ভয় ছিল পরিচালক দীপংকর দীপনকে নিয়েও। ছোটপর্দার গুণী পরিচালক তিনি। অতীতে ২/১টি ব্যতিক্রম ছাড়া ছোটপর্দার কোনো নির্মাতার রূপালী পর্দায় বড় ধরনের সাফল্য দেখাবার নজীর নেই। বিয়ের পর চিত্রনায়িকা মাহির প্রথম ছবি 'ঢাকা অ্যাটাক'। পরিবেশক, হল মালিকদের প্রাচীনতম প্রবাদ: বিবাহিত নায়িকার প্রতি নাকি দর্শকের আগ্রহ কম থাকে। সুতরাং এক গুচ্ছ ভয়'কে সঙ্গী করে দেখতে গেলাম বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ অ্যকশন থ্রিলার ছবি 'ঢাকা অ্যাটাক'; যে ছবিতে পুলিশের আগমন শেষ দৃশ্যে 'আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না'-সংলাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং প্রথম দৃশ্য থেকে শেষ পর্যন্ত র্যা ব, পুলিশ, সোয়াট, গোয়েন্দা-সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এরকম টানটান উত্তেজনায় ঠাসা থ্রিলার ছবি আমি এর আগে দেখিনি।

দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ছিল দেশের সিনেমা হলে বিদেশি মানের দেশীয় ছবি দেখবো। ভণিতা না করেই বলি 'ঢাকা অ্যাটাক' সে স্বপ্ন পূরণ করেছে। কাহিনি যতই এগিয়েছে, মুগ্ধ হয়ে ভেবেছি ঢাকা অ্যাটাক সম্পূর্ণ বাংলাদেশের ছবি। যারা কথায় কথায় বিশাল বাজেটের বিদেশি ছবির সঙ্গে আমাদের ছবির তুলনা করেন তাদের এ ছবিটি দেখবার অনুরোধ জানাই। বিশেষ করে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে বিশ্বব্যাপী পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো ছবি আর হয় না। পরবর্তীতে পুলিশ বাহিনী নিয়ে কেউ চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাইলে অবশ্যই 'ঢাকা অ্যাটাক'কে রেফারেন্স হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

এই একটি ছবির ক্ষেত্রে দেখেছি চুপিসারে দর্শকদের শ্রেণী বিভেদ ঘুচিয়ে দিয়েছে। সিনেপ্লেক্সগুলোর কিছু অবুঝ দর্শকের কথা বাদ দিলে (যারা হাসির দৃশ্যে পণ করেন-রামগুরুদের ছানা হাসতে তাদের মানা, আর আবেগী/সংবেদনশীল দৃশ্যে দম ফাটানো হাসির বন্যা বইয়ে দেন) ছবির প্রতিটি দৃশ্য এমনকি অ্যলফাবেটিক কোড, নিউম্যারিক কোড, রিমোট ডি অ্যকটিভেটর এই বিষয়গুলো আমজনতার কাছেও দুর্বোধ্য ঠেকেনি।

'ঢাকা অ্যাটাক' ঘরে বসে দেখার ছবি নয়। আমি তো প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দুইবার দেখেছি। ভেবেছিলাম যেহেতু ছবিটি থ্রিলার, দ্বিতীয়বার আর ভালো লাগবে না। তবে নবাগত নির্মাতার কৌশলী নির্মাণ, দেশের চলচ্চিত্রের জন্য আনকোড়া আনপ্রেডিকটেবল গল্প, ২৩৮টি চরিত্রের সুনিপুণ অভিনয় (এমনকি প্রযোজক মোহাম্মদ আলী হায়দার থেকে গৃহপরিচারিকা কলিসহ মালয়শিয়ান অভিনয়শিল্পীদের অভিনয়), বাস্তবিক শিল্প নির্দেশনা ও আলোক সম্পাত, 'এ ক্লাস' চিত্রগ্রহণ ও কালার গ্রেড, লোমহর্ষক আবহ সংগীত ও শব্দগ্রহণ, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চোখ ধাঁধানো শুরুর টাইটেল কার্ড, চিরাচরিত ধারা থেকে কিছুটা আলাদা অ্যকশন-সবকিছু দ্বিতীয়বারও আমাকে আমার আসনে সুপারগ্লুর মত বসিয়ে রাখতে বাধ্য করেছে।

D8jL4dj.jpg


নির্দ্বিধায় বলতেই হয় ঢাকাই চলচ্চিত্র একজন গুণী নির্মাতাকে পেল এ ছবির মাধ্যমে। সাধারণত বিকল্প ধারার ছবিগুলোই জাতীয়ভাবে কিংবা বড় পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। তবে নির্মাতা দীপংকর দীপন মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির সব উপকরণ ব্যবহার করেও একটি শিল্পমানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণ করাতে আমার দৃষ্টিতে তিনি এ বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচালক। সব শ্রেণীর দর্শককে এক ছাতার নীচে নিয়ে আসবার জন্য এই দীপংকর দীপনকে সমীহ করতেই হবে।

কাহিনিকার সানি সানোয়ারের গল্প ও সিনেমাস্ গ্রুপের স্ক্রিপ্টকে বড় পর্দায় নিজের মেধার সবটুকু দিয়ে রঙ ছড়িয়েছেন পরিচালক। থ্রিলার ছবিতে গান দিয়ে বোঝাই করা চেষ্টা করেননি। 'টিকাটুলি'র মত জনপ্রিয় গানকে আমজনতার জন্য নতুনভাবে উপস্থাপন করেছেন। এ ক্ষেত্রে নৃত্য পরিচালক তানজীল, নতুন করে সংগীতায়োজনের জন্য ডিজে রাহাত ও নৃত্যে অংশ নেবার জন্য সানজু জন ও মিমো শতভাগ সফল। 'ঢাকা অ্যাটাক' ছবিতে কমেডিও আছে, তবে পরিমিত। সানি সানোয়ার পুলিশ কর্মকর্তা হলেও 'ঢাকা অ্যাটাক' প্রামাণ্যচিত্র হয়নি। শেষ দৃশ্যে বাংলাদেশের পতাকা ও দেশপ্রেম অনুভব করে আবেগাপ্লুত হয়েছি। সোয়াট কমান্ডার আশফাকের মেয়ে হবার খবরে আপ্লুত হয়েছি। চোখ ভিজেছে অভিনয়শিল্পীদের অভিনয়ে।

আরিফিন শুভ এ ছবিতে এসি আবিদ রহমান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যে চরিত্রে প্রেমের সংলাপ নেই, কমেডি নেই, পরিবারের প্রতি সেন্টিমেন্ট নেই এমন চরিত্রে অভিনয় করে একটি ছবিকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য শুভ এ বছর আমার দৃষ্টিতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা। এ ছবিতে তিনি 'নায়ক' হবার চেষ্টা করেননি। এসি আবিদ হয়ে থেকেছেন। বলিউডে আমির খান, সালমান খান, অক্ষয় কুমাররা পুলিশ অফিসার চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে কৃত্রিম গোঁফ ব্যবহার করেছেন। আমাদের আরিফিন শুভ চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেই গোঁফ রেখেছেন। এ জন্য তাকে সাধুবাদ জানাতে হয়। ছবির বেশ কটি দৃশ্যে তার ও এবিএম সুমনের চুলের ধারাবাহিকতা ছিল না। এ ক্ষেত্রে শিল্পীদের চেয়ে নির্মাতার ওপর দায় বেশি বর্তায়। সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক সময়ে কাজ শেষ হলে হয়তো এরকমটি হতো না।

কাহিনিকারদের উদ্দেশ্যে একটি প্রশ্ন, খল চরিত্র জিসান কেন এত বিধ্বংসী আচরণ করেন তার বিষদ বর্ণনা আছে শৈশব থেকে বর্তমান পর্যন্ত। কাহিনির প্রয়োজনে খল চরিত্র জিসানের (তাসকিন) ছোটবেলা (ফারদীন মাহি বেশ ভালো অভিনয় করেছেন), এমনকি জিসানের সৎ মায়ের গল্পও বলা হয়েছে। সোয়াট কমান্ডার আশফাকের (এবিএম সুমন) আবেগ-অনুভূতি, পরিবারের প্রতি সেন্টিমেন্ট সবই আছে শুরু থেকে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত। অথচ মূল নায়কের পরিবার-ই নেই। কেন? এসি আবিদ রহমান চরিত্রটি পুরোপুরি সরলরেখার মত এগিয়েছে। প্রয়োজনীয় আবেগ নেই, অথচ মাত্র একবার গাড়িতে চড়বার সঙ্গে সঙ্গেই নায়িকার সাথে মনে মনে বিক্রিয়া। অতঃপর প্রেমানুভূতির জন্ম! সবকিছু এত সহজে ঘটে যায় বলেই হয়তো 'টুপটাপ' গানটি বড় পর্দায় কোনো উত্তাপ ছড়াতে পারেনি। এমনকি 'পথ যে ডাকে' গানে আশফাক ও তার স্ত্রীর রসায়ন মনে দোলা দিতে পারলেও আবিদ-চৈতীর রসায়ন বিন্দুমাত্র আবেগানুভূতির জন্ম দিতে পারেনি।

তাছাড়া যে দৃশ্যে এসি আবিদ বোম অপসারণ করলেন, সে দৃশ্যে মাহির কান্না আমাকে কাঁদাতে পারেনি। এ দৃশ্য নিয়ে আরেকটি অনুযোগ, 'ঢাকা অ্যাটাক' এ পর্যায়ে এসেও শেষ হতে পারতো। অযথাই সোয়াট কমান্ডারকে নাস্তানাবুদ করে জিসান পালিয়ে যাবার পর দ্বিতীয় আরেকটি ক্লাইমেক্স তৈরি করে সোয়াট কমান্ডারকে দিয়ে খল চরিত্রকে গুলি করানোর যৌক্তিকতা পাইনি। এসি আবিদ কেন গুলি করলেন না? তার হাতে কি অস্ত্র ছিলনা? তাছাড়া জিসান যখন আবিদ রহমানকে টেক্সট ম্যসেজ করেন, আবিদ কোন যুক্তিতে আবিষ্কার করেন যে, কোনো এক অলৌকিক দিনে এই 'গুড সৌল'-এর সাথে তার দেখা হয়েছিল? এর মাঝে কি এই সুন্দর পৃথিবীতে আর একজনও সাদা মনের মানুষের দেখা পাননি তিনি? ছবির শেষ দৃশ্যে নায়কের মুখ থেকে ইস্পাত কঠিন হৃদয় ছোঁয়া কিছু সংলাপ আশা করেছিলাম। পাইনি। সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে সামাজিক ও জনসচেতনতা তৈরির বার্তাটি নায়কের মুখ থেকে স্পষ্টভাবে এলে ছবির শিল্পমান আরো বেড়ে যেত। অবশ্যই গল্পকে আমরা সব ছবির নায়ক হিসেবে দেখতে চাই। তবে একজন নায়ক কিংবা একজন নায়িকা যখন কোনো ছবিতে পিছিয়ে পড়েন, গল্পও কিন্তু তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।

যেমন নায়িকা মাহিয়া মাহি এ ছবিতে ক্রাইম নিউজ রিপোর্টার চৈতীর চরিত্রে দর্শকদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন। ভালোবাসার মানুষ এসি আবিদ যখনই পেশাগত দায়িত্বে চ্যলেঞ্জিং কোনো অভিযানে বা কাজে যাবে, ঠিক তখনই চৈতীর বাধ ভাঙা প্রেমের অতি বহিঃপ্রকাশ ও বালিকাসুলভ সংলাপ ও আচরণ ছবির অন্যতম দুর্বল দিক। এসি আবিদকে দায়িত্ব থেকে সরে এসে নিজের জীবনের কথা ভাবতে অনুরোধ করেন চৈতী। এসি আবিদ বলেন, আমার পেশা আমাকে নিজের কথা ভাবতে শেখায় না। প্রশ্ন জাগে, ক্রাইম নিউজ রিপোর্টারের পেশা কি স্বার্থপরতা শেখায়? বাস্তবে কখনো কথায় কথায় ক্রাইম নিউজ রিপোর্টারকে 'দর্শকমন্ডলী' বলতে শুনিনি। চৈতীর সংলাপ শুনে মনে হচ্ছিল তিনি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছেন। মাহির অফিস ডেস্কে এটিএন বাংলার অসংখ্য কাগজ দেখে মনে হচ্ছিল তিনি সেই চ্যনেলে কাজ করেন। কিন্তু ছবিতে তো তিনি বলছিলেন অন্য চ্যানেলের রিপোর্টার! এটা ঠিক দর্শকরা যে মাহিকে পছন্দ করেন তার প্রমাণ মাহির ছবিতে আগমন দর্শকরা হাত তালি কিংবা শিস দিয়ে বরণ করেছেন। অথচ এ ছবির সবচাইতে দুর্বল চরিত্র মাহির চরিত্রটিই। ক্রাইম নিউজ রিপোর্টার হিসেবে তার মেকআপ কিছু ক্ষেত্রে বেশ চড়া ছিল। মেকআপের ধারাবাহিকতাও ছিল না। মাহির সংলাপ প্রক্ষেপণ এবং অভিনয়ও প্রশ্নবিদ্ধ। মাহিকে তো এর আগে অগ্নি, অনেক সাধের ময়না, কৃষ্ণপক্ষসহ বেশ কটি ছবিতে পরিমিত অভিনয় করতে দেখেছিলাম। তাহলে 'ঢাকা অ্যাটাক' ছবিতে মাহির দর্শককে বিরক্ত করবার পেছনে মূল কারণটি কি? যদিও দিন শেষে আশার কথা হলো এই, প্রচলিত মিথ্যে প্রবাদকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিয়ের পরও বড় ধরনের হিট ছবি ঝুলিতে ভরলেন মাহি। এই অর্জনকেও ছোট করে দেখবার সুযোগ নেই।

CUUSmG9.jpg


নায়ক-নায়িকার সঠিক চরিত্রায়ণ নিয়ে অতটা না ভাবলেও দুটি চরিত্রের প্রতি কাহিনিকার ও নির্মাতা বেশ যত্ন দিয়েছেন-সোয়াট কমান্ডার আশফাক ও খল চরিত্র জিসান। আশফাক চরিত্রে এবিএম সুমনের কালো সানগ্লাসের আড়ালে নিরুত্তাপ পাথরের মত মুখের ভঙ্গির কথা দর্শক আজীবন মনে রাখবে। আড়াই কেজি ওজনের এম-৪ কারবাইন হাতে নিয়ে গোলাগুলির চরিত্রও যে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় সুমন প্রমাণ করলেন। সুমনের ভাগ্য সুপ্রসন্ন, কারণ এ ছবিতে তিনি উৎকৃষ্ট মানের সংলাপ পেয়েছেন (ব্যটল ফ্রন্ড আর ফ্যমিলি ফ্রন্ট এক জিনিস না। বিয়ে করেন। তারপর বুঝবেন)। খল চরিত্রের বিনাশ তার মাধ্যমেই হয়েছে। প্রেম থেকে অ্যকশন, সেন্টিমেন্ট-সব উপকরণই ছিল আশফাক চরিত্রে। আর এই সুবর্ণ সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন সুমন। নির্মাতাকে ধন্যবাদ সাহস করে একজন মডেলকে এ চরিত্রে নেবার জন্য। অনেকে বিশ্বাস করেছেন, সুমন সত্যি সত্যিই একজন সোয়াট কমান্ডার। আশা করা যায়, 'ঢাকা অ্যাটাক' ছবির পর নির্মাতারা সুমনকে নিয়ে নতুন করে ভাববেন। এরকম শারীরিক গঠন, লুক, অভিব্যক্তি আমরা অন্য ছবিতে ব্যবহার করতে পারছি না কেন?

একই কথা প্রযোজ্য 'ঢাকা অ্যাটাক' ছবির 'ডার্ক হর্স' তাসকিন রহমানের ক্ষেত্রে। দেশের বাইরের ছবিগুলোতে আমরা দেখেছি খল চরিত্রের অভিনেতাদের ওপর মেয়ে দর্শকদের 'ক্রাশ' হতে। তাসকিন এবার দেশের ছবিতে সেই ধারার সূচনা করলেন। 'ক্যটস আই' তাসকিন শুরু থেকে এদিক সেদিক উঁকি দিয়ে বিরতির পর মাঠে ঢোকার পর শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত দোর্দন্ড প্রতাপে বেড়িয়েছেন। কী সংলাপ প্রক্ষেপণ, কী অভিব্যক্তি! নিঃসন্দেহে তাসকিন এ বছরের অন্যতম সেরা আবিষ্কার। নির্মাতাকে ধন্যবাদ ছবি মুক্তির আগে তাসকিনকে প্রচারের আলো থেকে দূরে রাখবার জন্য। ছবি দেখতে গিয়ে জিসান চরিত্রটি এ কারণেই তুলনামূলক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে। আশা করছি এ ছবির পর তাসকিনকে একই ধরনের চরিত্রে না ভেবে নির্মাতারা ভিন্ন স্বাদের কিছু উপহার দেবেন। কারণ নতুন কিছু করে দেখাবার আগুন এই নবাগত অভিনেতার মধ্যে আছে।

গোয়েন্দা বিভাগের এডিসি সাজেদুল করিম চরিত্রে শতাব্দী ওয়াদুদ বরাবরের মতই নিখুঁত। শক্তিশালী। তার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরই তাকে যে কোনো চরিত্রে কয়েক ধাপ এগিয়ে দেয়। যদিও ঢাকা অ্যাটাক ছবিতে শতাব্দী ওয়াদুদের চরিত্রটি নিয়ে আরেকটু খেলা যেত। তারপরও দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে মনকে সান্তনা দিয়েছি, তাও তো বড় পর্দায় এরকম অভিনেতার দেখা মিললো। আমরা যারা পাশের দেশের অভিনেতা ইরফান খানকে নিয়ে এসে বাংলা ছবিতে অভিনয় করাই কিংবা মনোজ বাজপায়ী, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, রাজকুমার রাওদের অভিনয় দেখে গালভরা প্রশংসার স্তুতিতে ফেসবুক কিংবা চায়ের কাপে ঝড় তুলি, তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন শতাব্দী ওয়াদুদের মত অভিনেতাদের আমরা চলচ্চিত্রে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারছিনা কেন? কেন তাকে চোখের দেখা'র মত মানহীন ছবিতে কিংবা মানসম্পন্ন 'ঢাকা অ্যাটা'ক ছবিতে যোগ্যতার তুলনায় অপ্রধান চরিত্র নিয়েই খুশি থাকতে হয়?

'ঢাকা অ্যাটাক' ছবিতে নওশাবাও আছেন। ছোট্ট অথচ অর্থবহ চরিত্র। নওশাবার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, ভালোবাসা, স্বপ্নের সঙ্গে দর্শকরাও একাত্ম হতে পেরেছে। চলচ্চিত্রে তাকেও নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত। বেশ ক'জন গুণী অভিনেতা অতিথি চরিত্রে কাজ করেছেন। তবে তাদের চরিত্রেও এমন কিছু নেই, যা আমাদের ভেতর ভাবাবেগ তৈরি করবে। আইজিপি চরিত্রে বরেণ্য অভিনেতা আলমগীরের ব্যক্তিত্ব, বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর বরাবরের মতই মুগ্ধ করেছে। তবে একটি দৃশ্যে তার ঠোঁটে অতিরিক্ত লিপস্টিকের ব্যবহার দৃষ্টিকটু লেগেছে। মেকআপম্যনকে এ ক্ষেত্রে আরো একবার দায়ী করা যায়। দীর্ঘদিন পর আফজাল হোসেনকে বড় পর্দায় দেখতে পেয়েছি। তবে আফসোস, শুনতে পারিনি। এ চরিত্রের ডাবিং তিনি না করায় কানে লেগেছে। উল্টো কারণে চিত্রনায়ক শিপনের অতিথি চরিত্র উপভোগ করেছি। শিপনের ডাবিং অন্য কেউ করায় সব মিলিয়ে তিনি উতরে গেছেন। যদিও তার ধুলো পড়া টুপি চোখে লেগেছে। সমালোচকের চোখ দিয়ে দেখলে এরকম আরো বেশ কিছু খুঁত চাইলেই খুঁজে বের করা যাবে। যেমন: টুপটাপ গানের শেষটুকু জোড়াতালি দিয়ে মেলানো হয়েছে। এ ছবিতে শুধু পুরুষ পুলিশেরই বীরত্ব দেখানো হয়েছে। দেশে কি নারী পুলিশের অস্তিত্ব নেই? বশীরের মৃত শরীর কিংবা জিসানের মায়ের খুনের দৃশ্যে ভায়োলেন্স কোমলমতি দর্শকদের বুক কাঁপাবে। বশীর চরিত্রের কোনো পেছনের গল্প না দেখাবার কারণে দর্শকদের কাছে এ চরিত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু কোনো অনুভূতিরই জন্ম দিতে পারেনি। দোয়েল চত্বরের ভিএফএক্স, অফিসের দৃশ্য সহ বেশ কিছু দৃশ্যের সিজিআই আরো নিখুঁত হতে পারতো। স্কুলের বাচ্চাদের বাসে বোমা বিস্ফোরনের পর রাস্তায় একটি মাত্র ব্যগ না দেখিয়ে সব কটি বাচ্চার ব্যগ, ফ্লাক্স, টিফিন বক্স দেখানো যেতে পারতো। শেষাংশে বাংলাদেশের পতাকায় সবুজের রঙ পুরোপুরি সবুজ হতে পারতো। মালয়শিয়ার গল্পের ব্যপ্তি আরো কমিয়ে আনা যেত। হুট করে ছবিটি শেষ না হতে পারতো। ছবির ব্যপ্তি অন্তত ১০ মিনিট সম্পাদনা করলে আরো মচমচে হতো।

তবে এ সব খুঁত-ই অণুবীক্ষন যন্ত্র দিয়ে খোঁজা। আমি জানি, পৃথিবীর কোনো শিল্পকর্মই নিখুঁত নয়। তাছাড়া খালি চোখে দেখলে, সাম্প্রতিক সময়ে বোমা হামলা ও জঙ্গিবাদ/ সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত ও বিবেচিত। এমন গুরুতর সমস্যা নিয়ে বিনোদনমূলক ছবি নির্মাণ করে দর্শককে হলে ফেরানোর মত অসাধ্য সাধন করেছেন 'ঢাকা অ্যাটাক' টিম। এজন্য বছর শেষে অন্যতম সেরা ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় ছবির তালিকায় অবশ্যই থাকবে ঢাকা অ্যাটাক। দীপংকর দীপন ও তার দল আবারো প্রমাণ করলেন, দর্শক এখনো দেশীয় ছবি দেখতে চায়। সমস্য আমাদের। আমরা ব্যস্ত দলাদলি নিয়ে। ল্যং মারার নোংরা রাজনীতি নিয়ে। সময় হয়েছে এসব নিয়ে নতুন করে ভাববার, চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির জন্য কিছু করবার। 'ঢাকা অ্যাটাক'-এর মাধ্যমে দর্শক কিন্তু চুপচাপ সে সংকেতই আরেকবার দিয়ে গেল!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top