ছোটবেলায় দাদি নানীদের মুখে শুনেছি অমবস্যার রাতে গোরস্থান কিংবা শ্মশানঘাটে গিয়ে মানুষের মুণ্ডু সংগ্রহ করতে পারলেই নাকি সাত রাজার ধনের চাবি পাওয়া যাবে। শুনে যতই লোভ লাগুক না কেন, অন্ধকার রাতে কেউ নরমুণ্ডু হাতে নেওয়ার কথা ভাবতেই পারে না! কিন্তু যদি এমন হয়, গোটা একটা যায়গা নরমুণ্ডুর আকৃতি পায়, তাহলে কেমন হবে? সম্প্রতি এমনই যায়গা আবিষ্কৃত হয়েছে ইংল্যান্ডে, যার নাম নরমুণ্ডু গুহা বা হডজ ক্লোজ কুয়েরি।
নরমুণ্ডু গুহা
নরমুণ্ডু আকৃতির একটি গুহা নিয়ে হৈচৈ পড়ে গেছে চারিদিকে। ইতিমধ্যেই রহস্যময়, অশুভ ও প্রাণঘাতী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এই 'হডজ ক্লোজ কুয়েরি' পার্বত্য গুহা। আজ চলুন দেখে নিই কিভাবে মৃত্যুর ফাঁদ পেতে রেখেছে এই নরমুণ্ডু গুহা।
সালটা ২০০৫ হবে, সেই সময় এক ডুবুরি এই গুহার পানির নিচে মানুষের মতো দেখতে একটা কিছু প্রত্যক্ষ করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন জ্ঞান হারানো ওই ডুবুরিকে গুহার পানি থেকে পাড়ে তুলতে এগিয়ে আসেন কোনিসটন মাউনটেন রেসকিউ টিমের সদস্যরা। তারা ওই ডুবুরিকে অসুস্থ অবস্থায় পানি থেকে উদ্ধার করেন।
এই ঘটনার পর একজন দুঃসাহসী ফটোগ্রাফার এবং ডুবুরি- পিটার বার্ডস লে পানিতে নামেন যায়গাটির ছবি তোলার জন্য। অনেক বিপদের মুখে পড়েও তিনি কোনোভাবেই পেছনে সরে আসেনি বরং ছবি তুলেই ক্ষান্ত হয়েছেন। তারপর নিজের তোলা ছবি দেখে নিজেই আঁতকে উঠেছেন তিনি। কারণ স্টুডিওতে ছবিটির কাজ শেষ করার পর দেখা গেলো এক মহাতাজ্জব ব্যাপার! গুহার মুখটা কলজে কাঁপানো একেবারে অলক্ষুণে নরমুণ্ডুর মতো। গুহাগুলোর ছবি দেখলে বুক কেঁপে ওঠে, মনে হয় দৈত্য-দানো এবং রাক্ষস-খোক্ষস বলে যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে এটাই তো সেসব কিছুর জলজ্যান্ত প্রমাণ!
মানুষের মনে এই গুহাটি নিয়ে কম প্রশ্ন নেই। কি আছে আসলে এই গুহাটিতে? এর অবস্থান গ্রেট ব্রিটেনের ক্যামব্রিয়া অঞ্চলের কোনিস্টন প্রশাসনিক এলাকার দুর্গম পর্বতে। আরও ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে- এই গুহার রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে ইতিমধ্যেই পানিতে নেমে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক ডুবুরি। এই নিয়ে বিবিসির রিপোর্টটি পড়ে দেখতে পারেন।
"হডজ ক্লোজ কুয়ারি" বা নরমুণ্ডু গুহা এর মুখ একসময় ছিল সম্পূর্ন পানির নিচে। এখন এর নরমন্ডু আকৃতি অরধেক ভাসমান। এর পানি বরফের মতো ঠাণ্ডা, তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর দৈর্ঘ্য ২৫ মিটার এবং গোলাকৃতি গহ্বরের আয়তন দুই বর্গমিটার। এই পানিভর্তি গুহাটি ডুবুরিদের কাছে খুব আদর্শ স্থান। প্রতি বছরই এখানে দুঃসাহসী ডুবুরিরা নামেন প্রকৃতির অপার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য। প্রায়ই শোনা যায় এক্লহানে নেমে ডুবুরিদের মৃত্যুর খবর। এ গুহায় অভিযানে নেমে গত বছর ৩ ডুবুরি মারা গেছেন। এ জন্য এটি এলাকাবাসীর কাছে ভুতুড়ে ও অলক্ষুণে স্থান হিসেবে পরিচিত। জলমগ্ন এই গুহা ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান হিসেবে পরিচিত। কর্ত্রিপক্ষের ওয়েবসাইটে এটি সম্পর্কে বলা আছে, যেসব ডুবুরির প্রশিক্ষণ উঁচুমাপের নয়, তারা যেন শখের বসে এ গুহায় না নামেন।
অনেকেই বিশ্বাস করেন পানির নিচে এক মৃত্যুর ফাঁদ পেতে রেখেছে এই গুহা। তাই তো মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে প্রতি বছর অনেক ডুবুরী এই গুহাতে নামেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আর বেঁচে ফিরে আসতে পারেন না! আর যারা ফিরে আসেন তাদের মুখে শোনা যায় ভয়ংকর সব অভিজ্ঞতার কথা!
এই ছিলো নরমুণ্ডু গুহা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। আগামীতে আরও রহস্যময় স্থানের উপর প্রতিবেদন নিয়ে হাজির হয়ে যাব। সে পর্যন্ত ভালো থাকেন সবাই।