What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ: মুঘল সাম্রাজ্যের পুনরূত্থান (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
yrwHGXJ.png


"দুই সেনাদল এমন সংঘর্ষ করেছিল
যে তারা পানির ভেতর থেকে আগুন উদিত করেছিল;
বাতাস ছিল টকটকে লাল ছুরির মত।
তাদের সব তরবারি নিরেট রুবিতে পরিণত হয়েছিল।"

আবুল ফজল, আকবরনামা

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের পানিপথ শহরটি ইতিহাসে বিখ্যাত দুটি কারণে৷ মহাভারতে বলা আছে পঞ্চপাণ্ডব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রাচীন এ নগর। তবে মহাভারতের উপাখ্যান পেরিয়ে পানিপথ বিখ্যাত হয়ে আছে আরো একটি কারণে৷ এই পানিপথের উন্মুক্ত প্রান্তরেই ইতিহাসের সাড়া জাগানো তিনটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। ১৫২৬ সালে বাবুরের বিরুদ্ধে দিল্লি সালতানাতের সুলতান ইব্রাহিম লোদী যুদ্ধে নামেন৷ ভারতের ইতিহাসের মোড় পরিবর্তনকারী এ যুদ্ধের পর পানিপথ সাক্ষী হয়েছে আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধের৷ ১৫৫৬ সালে সম্রাট আকবর আর হেমচন্দ্র হিমু নেমেছিলেন এই পানিপথে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের শিরোনামে। ১৭৬১ সালে মারাঠাদের বিরুদ্ধে আহমদ শাহ আব্দালীর লড়াই ছিল ইতিহাসের শেষ পানিপথের যুদ্ধ। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে বাবুরের হাতে ভারতে যে মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটেছিল পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের প্রাক্কালে সেই সাম্রাজ্য হুমকির মুখে পড়েছিল এক হিন্দু জেনারেলের দাপটে৷ হেমচন্দ্র বিক্রমাদিত্য হিমুর সাথে মুঘলদের যুদ্ধ ইতিহাসে নাম নিয়েছে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ নামে।

কেই এই হিমু?

পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে গর্জন করা হিমু একটা সময় ছিলেন মুদি দোকানদার। শের শাহের আমলে সামান্য বাজার পরিদর্শক থেকে পাঞ্জাবের গভর্ণর হয়ে যান তিনি। শের শাহ তখন মুঘল সম্রাট হুমায়ূনকে দিল্লি ছাড়া করে পুরো ভারতে আফগান কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। শের শাহের মৃত্যুর পর তার পুত্র ফিরোজ শাহকে হত্যা করে ভাগ্নে আদিল শাহ সূরি আফগানদের নেতা বনে যান।

aNDd2Zj.jpg


সামান্য মুদি দোকানদার থেকে আদিল শাহ সূরির প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান হিমু। আমুদে শাসক আদিল শাহ তার সকল দায়িত্ব হিমুর উপর ন্যাস্ত করে ফূর্তিতে দিন গুজরাতে থাকেন। হিমুও নিজ যোগ্যতায় আদিল শাহের বিশ্বস্ত হয়ে সূরিদের প্রধান জেনারেলে পরিণত হন। হুমায়ূনের মৃত্যুর সময় হিমু বাংলায় অবস্থান করছিলেন। এই সুযোগে হিমু দিল্লি ও আগ্রা দখল করতে ৫০ হাজার সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে অভিযান প্রেরণ করেন। মুঘল শাসক তার্দি বেগকে সহজেই পরাজিত করতে সক্ষম হোন তিনি৷ আর এভাবেই হেমচন্দ্র হিমু বিক্রমাদিত্য উপাধি নিয়ে দিল্লির মসনদে আরোহন করেন।

পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

দিল্লি দখল করে হিমু ততদিনে হয়ে উঠেছেন প্রবল প্রতাপশালী সম্রাট। মুঘলদের সামনে সাপের ফণার মত ভয় দেখাচ্ছিল হিমুর শক্ত সামরিক শক্তি। মুঘলদের অধীনে তখন আফগানিস্তান, পাঞ্জাব এবং কান্দাহারের কিছু এলাকা বাদে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। আলোকিত সূর্যের মত মুঘল সাম্রাজ্যের আগমন স্থিমিত হতে দিলেন না মুঘল সাম্রাজ্যের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা সেনাপতি বৈরাম খা। কিশোর সম্রাট আকবরকে সাথে নিয়ে হিমুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু প্রথমেই সভাসদদের পক্ষ থেকে জোর প্রতিবাদ আসে। হিমুর বিশাল সেনাবাহিনীর সাথে এখন যুদ্ধে না জড়ানোর পরামর্শ দেন তারা৷ কিন্তু দূরদর্শী বৈরাম খা বুঝতে পেরেছিলেন এখন হিমুকে না থামাতে পারলে মুঘল সাম্রাজ্যের সূর্য আর উদিত হবেনা। তাই সম্রাট আকবরের অনুমতি নিয়ে হিমুর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের ডাক দেন মুঘল সেনাপতি বৈরাম খা। মুঘল শক্তির সমর্থনে পাশে এসে দাঁড়ান আলী কুলী খান, সিকান্দার খান, হোসেন কুলি বেগ। বৈরাম খা মোটামুটি মানের একটি সেনাদল তৈরি করতে সক্ষম হলেন। অন্যদিকে হিমু ৩০ হাজার সৈন্য এবং ৫০০ যুদ্ধবাজ হাতি নিয়ে মুঘল বাহিনীর দ্বিগুণ শক্তি তৈরি করতে সক্ষম হোন।

8WhqoWy.jpg


যুদ্ধের ময়দানে মুঘল-হিমু

হিমুর বিশাল সৈন্য থাকা সত্ত্বেও তার মুঘলদের নিয়ে ভয় ছিল। কারণ হিমু জানতেন যুদ্ধের মাঠে মুঘলরা কত বেপরোয়া হতে পারে। তাই আগে থেকে গোলাবারুদের আমদানি করেছিলেন কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আলী কুলি খানের অশ্বারোহী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে সব গোলাবারুদ নষ্ট হয়ে যায়। পানিপথের ঐতিহাসিক প্রান্তে বৈরাম খা তার সেনাদলকে বাম, ডান ও কেন্দ্রের তিনটি ভাগে ভাগ করে সিকান্দার ও আব্দুল্লাহ উজবেক খানকে বাম ও ডান ভাগের নিয়ন্ত্রণ দেন। মধ্যভাগের দায়িত্ব আলী কুলিকে দিয়ে বৈরাম খা পিছনে থাকেন। যুদ্ধ শুরু হলে হিমুর হস্তিবাহিনী মুঘলদের গতিরোধ করে। মুঘল বাহিনী হিমুর বাহিনীকে ঘিরে রাখতে চাইলেও হাতির কারণে সম্ভব হয়নি। এদিকে মুঘলদের ডান ও বাম বাহিনীর উপর উপর্যুপরি আক্রমণ করে দিশেহারা করে দেয় হিমুর বাহিনী। তখন অনেকটা আত্মরক্ষামূলক নীতি গ্রহণ করে মুঘলরা। কিন্তু হিমু কিছুতেই মুঘলদের কেন্দ্রের সীমানা বেধ করতে পারছিলেন না। যুদ্ধে তখন মুঘলরা প্রায় পরাজিত হয়ে পড়ছে। এমন সময় হঠাৎ করে বৈরাম খা হিমুকে হত্যা করার জন্য মুঘল তীরন্দাজকে নির্দেশ দিলেন। কিন্তু এ কাজ কঠিন হয়ে পড়েছিল৷ কেননা হিমুর পুরো দেহ বর্ম দিয়ে আবৃত ছিল। শুধুমাত্র তার চোখ দুটোই অনাবৃত ছিল। আর তাতেই নিশানা করে মুঘল তীরন্দাজ। ততক্ষণে মুঘলদের উপর চারদিক থেকে আক্রমণের ছক কষছে হিমুর বাহিনী। হঠাৎ করে হিমু মুঘল তীরন্দাজদের সীমানার ভিতরে ঢুকে পড়েন। কালবিলম্ব না করে হিমুর চোখ বরাবর তীর নিশানা করে এক মুঘল তীরন্দাজ। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। সম্রাটের হাতির পিঠ থেকে পড়ে যাওয়ায় হঠাৎ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে হিমুর বাহিনী। আর এই সুযোগে মুঘলরা তাড়া করে হিমুর বাহিনীকে। মুহূর্তের মধ্যেই যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে শক্তিশালী হিমু বাহিনীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করে মুঘলরা। হিমুকে নিজ হাতে হত্যা করতে সম্রাট আকবরকে পরামর্শ দিলেও বৈরাম খানের এই পরামর্শ আকবর মানেননি। অতঃপর বৈরাম খা নিজেই হিমুর মস্তক কর্তন করে কাটা মস্তক কাবুলে পাঠিয়ে দেন। আর এরই সাথে সম্রাট আকবরের হাতে পুনরায় প্রায় অস্তমিত মুঘল সাম্রাজ্যের সূর্যোদয় হয়।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top