What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বাংলার ভূত (পর্ব-১) – ভূত, পেত্নী, রাক্ষস, শাকচুন্নি, ডাইনী, ডাকিনী কি? (1 Viewer)

MOHAKAAL

Mega Poster
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
2,271
Messages
15,991
Credits
1,456,188
Thermometer
Billiards
Sandwich
Profile Music
French Fries
cSN1ySv.jpg


বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে অজস্র ভূত। এইসব ভূত আমরা কখনো না দেখলেও দাদী-নানীদের মুখে এদের অনেক নাম শুনেছি। ছোটবেলায় পড়া গল্পের বইগুলোর কল্যাণে এদেরকে খানিকটা হলেও চেনার সৌভাগ্য হয়েছে। আজ আসুন, বাংলার ভূত নিয়ে আমাদের প্রথম আয়োজনে ভূত, পেত্নী, রাক্ষস, শাকচুন্নি, ডাইনী, ডাকিনী সম্পর্কে আরেকবার জেনে নেই।

বাংলার ভূত:

সাধারণ অর্থে ভূত হচ্ছে অশরীরী আত্না। ধারণা করা হয় মানুষ মরে যাওয়ার পর তাদের আত্মা ফিরে আসে ভূত হয়ে। তবে সব আত্মা ফিরে আসে না। শুধুমাত্র যে সব আত্মা কোনো কারণে অতৃপ্ত হয়ে আছে কিংবা অপঘাতে মৃত্যু বরণ করেছে, তারাই ফিরে আসে ভূতের রূপ নিয়ে।

এই ভুত দুই রকম হতে পারে। ভালো ভুত, খারাপ ভুত। ভালো ভূতগুলোর কোনো প্রকারভেদ নাই, এরা মানুষের আশে পাশে ঘোরে কিন্তু ক্ষতি করে না বা ভয় দেখানোর চেষ্টা করে না। তবে মন্দ ভূতগুলো বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।

পেত্নী:

পেত্নী হচ্ছে ব্যাসিক্যালি বাংলার ভূত এর ফিমেইল ভার্সন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় পেত্নী হচ্ছে অপঘাতে মৃত্যু বরণ করা নারী, হয়তো তারা কোনো অতৃপ্ত আশা নিয়ে মারা গেছে, ফলে আবার ফিরে এসেছে আশা পূরণ করার অন্য। যাদের অত্যাচার করে মেরে ফেলা হয়েছে তারাও পেত্নী হয়ে ফেরত আসে প্রতিশোধ নেবে বলে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অবিবাহিত নারী যে ভালোবাসার মানুষকে না পেয়ে মারা গেছে, সে পেত্নী হয়ে কোনো পরিত্যক্ত বাড়িতে গিয়ে বসবার শুরু করে, ভালোবাসার মানুষের জন্য যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করতে থাকে।

পেত্নী সাধারনত যেকোনো আকৃতি ধারন করতে পারে। এরা সাধারনত ভীষণ বদমেজাজী হয়ে থাকে এবং মূল ভিক্টিম হয়ে পুরুষেরা, নারীদেরকে এরা মারতে চায় না। অনেক গল্পের বইতে পেত্নী চেনার উপায় হিসেবে বলা হয়েছে- এদের পায়ের পাতা পিছনের দিকে ঘোরানো থাকে।

রাক্ষস:

রাক্ষসের খিদে অসীম। এদের সারাক্ষণ খিদে পেয়ে থাকে। হাজার খেলেও পেট ভরে না। তবে এরা সবকিছু খায় না। এদের সবচেয়ে প্রিয় খাবার হচ্ছে মানুষ। তাই এদেরকে বলা চলে মানুষখেকো ভুত। কিছু কনসেপ্টে বলা হয়েছে রাক্ষস চোখে দেখে না কিন্তু এদের গন্ধ শোঁকার অদ্ভুত ক্ষমা আছে। গন্ধ শুকে শুকে এরা মানুষ ধরে খায়। একবার মানুষের গন্ধ পেলেই বলে ওঠে- হাউ মাউ খাউ, মানুষের গন্ধ পাউ! তবে রাক্ষসরা রাস্তা ঘাঁটে চলাফেরা করে না। সাধারণত পুরনো ভাঙা বাড়ি কিংবা পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে থাকে এরা। সারাক্ষণ মানুষের আশায় ওঁত পেতে বসে থাকে।

রাক্ষসের জাত ভাই হচ্ছে খোক্ষস। এরাও রাক্ষসের মতোই স্বভাবের। তবে আকৃতিতে অনেক ছোট আর চলাচলে খুব স্লো হয়ে থাকে। কিছু গল্পের বইতে দেখা গেছে রাক্ষস চোখে না দেখলেও খোক্ষসরা চোখে দেখতে পায় এবং এরা বাইরে গিয়ে মানুষের গতিবিধি দেখে এসে রাক্ষসদের খবর দেয়।

শাকচুন্নি:

শাকচুন্নি হচ্ছে পেত্নীর আরেকটা রূপ কিন্তু পেত্নির চেয়ে অনেক বেশি ভয়ংকর। শাকচুন্নি বিবাহিত মহিলাদের ভূত যারা শাড়ি, চুরি, গলায় মালা পরে থাকে। এরা খুব একগুয়ে, যার উপর ভর করে তাকে সহজে ছাড়ে না। এদের টাকা পয়সার প্রতি খুব লোভ। তাই তো ধনী লোকদের বউরা এদের টার্গেট হয়। অনেকক্ষেত্রে হ্যান্ডসাম পুরুষের বউরাও এদের টার্গেট হয়। ধরুন, আপনি খুব হ্যান্ডসাম কিংবা অনেক টাকার মালিক। একটা শাকচুন্নি এসে আপনার বউয়ের শরীরে ভর করে আপনার সাথে দাম্পত্য জীবন কাটিয়ে দেবে, আপনি টেরও পাবেন না! কি ভয়ংকর! ভাবা যায় এইগুলা? খবরদার আপনার বউকে আমগাছের নিচে যেতে দেবেন না! লোকগাঁথা অনুসারে শাকচুন্নিরা আম গাছে বসবাস করে।

ঝেঁয়ো পেত্নী:

এটাও পেত্নীর আরেকটা রূপ। তবে এরা সাধারণত ঝাউগাছে নিজেদের লুকিয়ে রাখে এবং শুধুমাত্র সন্ধ্যাবেলায় এরা শক্তি লাভ করে। সন্ধ্যাবেলায় কোনো পথিক (অবশ্যই পুরুষ) যদি একা একা সেই ঝাউবন বা জঙ্গল পেরুতে যায়, তখন তার কাঁধে লাফিয়ে পড়ে। তারপর তাকে ধরে নিয়ে যায় ঝাউয়ের মগডালে। প্রথমে এরা পুরুষটির সাথে মজা নেয়, তারপর ঘাড় মটকে ফেলে দেয়। এইটা কোনো কথা বলেন?

স্কন্ধকাটা/কল্লাকাটা ভুত:

এই ভূতেরা মাথাবিহীন হয়ে থাকে। সচরাচর এরা হলো সেইসব লোকের আত্মা যাদের মৃত্যুর সময় মাথা কেটে গেছে যেমন, রেল দূর্ঘটনা বা অন্য কোন দূর্ঘটনা। রাজ-আমলে যখন জল্লাদরা কল্লা কেটে মানুষের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতো, তখন এই কল্লাকাঁটা ভূতের কনসেপ্ট গড়ে ওঠে। বলা হয়ে থাকে যে নিরপরাধ লোককে মৃত্যু দন্ড দেওয়া হলে তারা কল্লা কাঁটা ভুত হয়ে ফিরে আসে। এই ভূতেরা সবসময় তাদের হারানো মাথা খুঁজে বেড়ায় এবং সামনে অন্য মানুষকে পেলে ধরে মেরে ফেলে। অনেক মানুষকে এরা মারে না, দাস হিসেবে বাঁচিয়ে রাখে, তাদেরকেও মাথা খোঁজার কাজে নিয়োগ করে।

ডাইনী:

ডাইনী অন্যান্য ভূতের মতো কোনো আত্মা না, এরা জীবিত নারী। বাংলা লোকসাহিত্যে সাধারণত যেসব মহিলা যারা কালো জাদু বা ডাকিনীবিদ্যাতে পারদর্শী, তাদেরকেই ডাইনি বলা হয়ে থাকে। ডাইনীরা গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ধরে নিয়ে তাদের হত্যা করে এবং তাদের হাড়, মাংস ও রক্ত খেয়ে ১০০ বছর বেঁচে থাকে। ইংরেজি সাহিত্যে এদের উইচ বলা হয়। ইনফ্যাক্ট, মধ্যযুগে উইচ হান্টিং বলেও একটা ব্যাপার ছিলো। ডাইনীদের অত্যাচারে মানুষ দিশে হারা হয়ে গিয়েছিলো। ফলে বিভিন্ন গ্রাম থেকে ধরে এনে এদেরকে দলে দলে হত্যা করা হতো। এখনও ইউরোপ আমেরিকার অনেক প্রাচীন কবর খুঁড়ে বিশেষভাবে সমাহিত করা ডাইনীদের কংকাল পাওয়া যায়। এই নিয়ে সিনেমা-টিভি সিরিজের কোনো অভাব নেই।

ডাকিনী:

এরা হচ্ছে ডাইনি বুড়িদের অনুগত ভূত। ডাইনীরা তন্ত্র মন্ত্রের সাধনা করে ডাকিনীদের ডেকে আনে, তারপর তাদের দিয়ে নিজের মনবাঞ্চা পূর্ণ করে। ডাকিনীরা পাতিহাঁস খেতে খুব ভালোবাসে এরা। থাকে পুকুর বা দিঘীর ধারে কোনো তাল বা নারিকেল গাছে। রাতদুপুরে মেয়েলোকের বেশে ঘুরে বেড়ানো এদের অন্যতম অভ্যাস।

আজ এই কয়টাই থাক। বুঝতে পারছি এদের কথা পড়েই ভয়ে আপনাদের আত্নারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার দশা হয়েছে। আগামীকাল আরো কিছু বাংলার ভূত নিয়ে হাজির হয়ে যাবো। আপনাদের যদি বিশেষ কোনো ধরনের ভূত সম্পর্কে জানার ইচ্ছে থাকে, কমেন্টে জানাতে পারেন। আমার যদি জানা থাকে, তাহলে তো ভালোই। না জানলেও, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো সেই ভূত সম্পর্কে জেনে আপনাকে জানাতে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top