পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মে স্বর্গ এবং নরকের কথা বলা হয়েছে। যে ব্যক্তিরা জীবদ্দশায় ভাল কাজ করে, তারা মৃত্যুর পর স্বর্গে যায়। আর যারা খারাপ কাজ করে, মৃত্যুর পর শাস্তি হিসেবে তাদের স্থান হয় নরকে। নরকের শাস্তির যে কথা বলা হয়েছে তা প্রায় সব ধর্মেই কাছাকাছি। নরকে বিশাল আগুনের গর্তের মধ্যে পাপী ব্যক্তিতে ফেলে দেওয়া হবে, আর সেখানে সেই ব্যক্তি জ্বলতে পুড়তে থাকবে অনন্তকাল। কিন্তু যদি বলি এই নরকের দেখা পাওয়ার জন্য আপনাকে মৃত্যুর পরের জগতে যাওয়া লাগবে না, পৃথিবীতেই পাবেন নরকের অগ্নিকুন্ডের দেখা, তাহলে কি বিশ্বাস করবেন? জানি বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু আজ আমি আপনাদের এমন এক জায়গার সন্ধান দিব যেখানে গিয়ে আপনি সত্যিই নরক দেখার সু্যোগ পাবেন। মানুষ এই যায়গাটির নাম দিয়েছে- নরকের দরজা ।
নরকের দরজা এর অবস্থানঃ
তুর্কিমেনিস্তানের রাজধানী আশগাবাত থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে একটি গ্রাম আছে, যার নাম হচ্ছে দারভাযা। সাদামাটা এই গ্রামটিতে বাস করে তেকে উপজাতির প্রায় ৩০০ জন মানুষ। এই গ্রামে গেলে দেখতে পাবেন হাড় হিম করা এক দৃশ্য। দেখবেন, বিশাল একটি গর্ত যার ভেতরে জ্বলছে গনগনে আগুন! শুনলে আশ্চর্য হয়ে যাবেন যে গোলাকার সেই গর্তের ব্যাস হল প্রায় ৭০ ফিট! তেকে উপজাতির লোকেরা এই জায়গাটিকে খুব ভয় পায়। তারা যায়গাটিকে শুধু এড়িয়ে চলে তা না, তারা এর নাম দিয়েছে নরকের দরজা।
নরকের দরজা আবিস্কার
এটা কিন্তু কোন কোন প্রাকৃতিক গর্ত নয়। এতা মুলত ছিল একটি গ্যাস ক্ষেত্র। এই স্থানের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রাকৃতিক গ্যাসসমৃদ্ধ এই ক্ষেত্রটি আবিষ্কার করে। কিন্তু প্রথমে তারা মনে করেছিল এটি একটি তেল ক্ষেত্র তাই ড্রিলিং মেশিন দিয়ে তেল উত্তোলনের জন্য সেখানে তারা ক্যাম্প স্থাপন করে।
তেল উত্তলনের প্রচেষ্টায় কাজ করার সময় দুর্ঘটনাক্রমে সেখানকার মাটি ধসে পরে। পুরো ড্রিলিং রিগসহ সবকিছু চলে যায় মাটির নিচে। মারা যায় অনেক লোক। আর সৃষ্টি হয় আগুনে ভরা বিশাল গর্ত। বিশাল সেই গর্ত থেকে বেরিয়ে আস্তে থাকে বিষাক্ত মিথেন গ্যাস। পরিবেশে বিষাক্ত গ্যাস প্রতিরোধ করার জন্য ভূতত্ত্ববিদরা তখন গ্যাস ওঠার মুখটি জ্বালিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের ধারণা ছিল এখানে সীমীত পরিমাণ গ্যাস থাকতে পারে। কিছুক্ষন আগুন জালিয়ে রাখলে গ্যাস শেষ হয়ে যাবে এবং আবার তারা কাজ শুরু করতে পারবে। কিন্তু তাদের ধারণা ভুল প্রমান করে এটি সেই ১৯৭১ সাল থেকে শুরু করে এখনও জ্বলছে। এই আগুনের তাপ এত বেশি যে গরতের আশে পাশে ২ মিনিটের বেশি দাড়িয়ে থাকা অসম্ভব। আর এরপর থেকেই স্থানটির নাম রাখা হয়েছে 'নরকের দরজা'।
কবে শেষ হবে নরকের এই আগুন?
এ যেন আসলেও এক নরকের দরজা! যে দরজার মুখে জ্বলছে অনবরত জ্বলছে গনগনে আগুন। কোনো বিরতি নেই। জ্বলছে তো জ্বলছে। ৪৬ বছর পেরিয়ে গেছে, এখনও আগুন জ্বলছে। আর কতদিন জ্বলবে এই আগুন? আমাদের তা জানা নেই।
এই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাবেনঃ এনভানটুর সাইটে
আজকের আয়োজন এতটুকুই। আগামী দিন নতুন কোন রহস্য নিয়ে হাজির হবো। ধন্যবাদ।