What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

স্প্যানিশ ফ্লুঃ পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল যে ভাইরাসে (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
KvJXrCv.jpg


১৯১৮ সালে দিকে এমন একটি মহামারী আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীকে আক্রমণ করেছিল, যার ফলে পৃথিবীর তৎকালীন জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষের আক্রান্ত হয়েছিল। বলছিলাম স্প্যানিশ ফ্লু নিয়ে, যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে প্রায় দশ কোটি মানুষ মৃত্যু বরণ করেছিল।

প্রাথমিকভাবে এই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ইউরোপে দেখা গেলেও, ভাইরাসটি খুব দ্রুতই আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকাসহ পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কোন ভ্যাকসিন মানুষের কাছে ছিল বিধায় মহামারীটি প্রকট আকার ধারণ করেছিল খুব দ্রুতই।

স্প্যানিশ ফ্লু এর লক্ষণ যেমন ছিল

১৯১৮ সালে এই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রথম ধাক্কাটি এসেছিল বসন্তের সময় এবং প্রথম অবস্থায় এটি তেমন মহামারী আকার ধারণ করে নি। যারা স্পানিশ ফ্লুতে ভোগা শুরু করেছিলেন, তাদের মধ্যে সাধারণ ফ্লু এর লক্ষণ অর্থাৎ জ্বর, সর্দি কাশি, অবসাদ দেখা যেত। তারা সাধারণত কয়েক সপ্তাহ ভুগেই সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন এবং প্রাথমিক অবস্থায় মৃত্যুর হারও বেশ কম দেখা গিয়েছিল।

তবে সেই একই বছরের শরৎ কালের সময় এই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের দ্বিতীয় প্রকোপটি দেখা যেতে শুরু করে। তখন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ভাইরাসের লক্ষণগুলো দেখা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের মধ্যেই তারা মৃত্যু বরণ করছিলেন। সে সময় ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক নীলচে বর্ণ ধারণ করছিল এবং ফুসফুস তরল পদার্থ দিয়ে ভরে যাচ্ছিল, যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দম বন্ধ হয়ে যেত। আক্রান্ত ব্যক্তিদের নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত পড়ত।

স্প্যানিশ ফ্লু এর কারণ

স্পানিশ ফ্লুর প্রকৃত উৎপত্তিস্থল কোথায় তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ১৯১৮ সালের দিকে এই ফ্লুটি সর্বপ্রথম ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার কিছু অংশে দেখা গিয়েছিল। পরবর্তীতে তা দ্রুত পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পরে।

যদিও ধারণা করা হয়, স্প্যানিশ ফ্লু প্রথম সনাক্ত করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস নামন এক শহরের একটি সামরিক ক্যাম্প থেকে। সে ক্যাম্পে প্রায় ৫০ হাজার সৈন্যের থাকার ব্যবস্থা ছিল। পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাবে এই ক্যাম্প থেকেই মার্কিন সৈন্যদের মাঝে এই ফ্লুটি ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে মার্কিন সেনারা যুদ্ধের প্রয়োজনে ইউরোপে গেলে তাদের সাথে এই ভাইরাসটিও ইউরোপে প্রবেশ করে।

যদিও এই ফ্লুটি স্পেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না তবুও এর নামকরণ করা হয়েছে স্প্যানিশ ফ্লু নামে। কেননা সে সময়ে ইউরোপের মধ্যে স্পেনেই এই রোগের প্রকোপ খুব বেশি দেখা গিয়েছিল। স্প্যানিশ সংবাদ মাধ্যম এই মহামারীর কথা সবার আগে প্রকাশ করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া দেশগুলো তাদের সরকারের অনুমতি ছাড়া সেসময় কোন সংবেদনশীল খবর প্রকাশ করতো না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে স্পেনের নিরপেক্ষ ভূমিকার কারণে সেদেশের সংবাদ মাধ্যমে এত বিধিনিষেধ ছিল না।

স্প্যানিশ ফ্লু এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ!

১৯১৮ সালের এই ফ্লুর অস্বাভাবিক দিকটি ছিল এটি অনেক সুস্থ যুবক যুবতিদের আক্রমণ করেছিল, যাদের দেহে সাধারণত এই ধরনের ফ্লু প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বেশি থাকে।

আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এমনকি ১৯১৮ সালে যুদ্ধের সময় নিহত না হলেও অনেক আমেরিকান সৈন্য এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। মার্কিন নৌবাহিনীর শতকরা চল্লিশ শতাংশ সৈন্য এবং সেনাবাহিনীর প্রায় ছত্রিশ শতাংশ সৈন্য এই ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। সে সময়ে আমেরিকান সৈন্য বাহিনী পুরো পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, আর ফলাফল স্বরূপ এই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসও তাদের মাধ্যমে খুব দ্রুত পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছিল।

স্প্যানিশ ফ্লুতে মৃতর সংখ্যা বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী ২ কোটি থেকে ৫ কোটি। অনেকেই ধারণা করেন যে মৃতের সংখ্যা কম করে হলেও ১০ কোটি! তবে চিকিৎসা জনিত বিভিন্ন রেকর্ড সংরক্ষিত না থাকার কারণে সঠিক সংখ্যাটি বের করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

স্প্যানিশ ফ্লু যখন প্রথম আক্রমণ করেছিল তখন ডাক্তার এবং বিজ্ঞানীরা কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না এই ভাইরাসের কারন কি এবং কীভাবে এর চিকিৎসা করা সম্ভব! আমেরিকাতে সর্ব প্রথম এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আসে ১৯৪০ সালের দিকে। পরবর্তীতে প্রতিষেধক তৈরি করা কোম্পানিগুলো খুব দ্রুত এই প্রতিষেধক তৈরি করতে থাকেন যার ফলে ভাইরাসটির ভবিষ্যৎ আক্রমণের সম্ভাবনা বন্ধ করা সম্ভব হয়।

এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে স্কুল, বাসা সহ অনেক বিল্ডিংকেই সাময়িক হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছিল। আর সেখানে চিকিৎসকদের সংখ্যা কম থাকায় মেডিকেল ছাত্রদেরও স্বাস্থ্যসেবা দিতে হত।

আমেরিকার বেশ কিছু অঞ্চলকে ভাইরাসের প্রকোপ বেশি থাকার কারণে আশেপাশের এলাকা থেকে একদমই আলাদা করে দেয়া হয়েছিল। তখন সবাইকে মাস্ক পড়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং স্কুল-কলেজ, গির্জা, থিয়েটার সহ লোক সমাগমের সবগুলো জায়গা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, তৎকালীন মহামারী চলাকালীন সময়ে যদি কেউ আমেরিকার কোথাও রাস্তায় থুথু ফেলত তাহলে বয় স্কাউটরা তাদের হাতে একটি কার্ড দিয়ে আসত, যেখানে লেখা থাকত, "আপনি স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিরোধী কাজ করছেন!।"

স্প্যানিশ ফ্লুর ভয়াবহতা

১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু যেভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল, তেমন ঘটনার সাক্ষী মানুষ এর আগে কখনো হয়নি। এই ভাইরাসটি এতটাই ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিল যে, দেখা গেছে অনেক ব্যক্তি সকাল বেলায় অসুস্থ বোধ করছেন আর দুপুরের মধ্যেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। কোথাও এমন হয়েছে যে পুরো পরিবার সহ আত্মীয় স্বজনদের কেউ বেঁচে নেই! এক অন্যরকম ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।

কখন কে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পরে কেউ জানে না। কে কখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে কেউ বুঝতে পারছিল না। নিয়তির এক অমোঘ খড়াঘাত মানুষকে একদম চরম পরিস্থিতিতে নিয়ে গিয়েছিল। এমন অবস্থা হয়েছিল যে, যারা মৃত দেহ সৎকারের কাজ করতেন তাদের নিজেদের মৃত দেহ সৎকার করার মত কোথাও কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পাছে আবার যদি কেউ মৃত দেহ ধরার কারণে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, এই ভয়ও সবার মধ্যে জেঁকে বসেছিল!

আবার এদিকে চাষাবাদ করার মত মানুষেরও অভাব হয়ে গিয়েছিল, ফলে বুঝতেই পারছেন খাদ্য ব্যবস্থাসহ পুরো অর্থনীতিকে একদম অচল করে দিয়েছিল এই ভাইরাসটি।

ফ্লুর শেষ

১৯১৯ সালের গ্রীষ্মকালের সময়ে এই ভয়াবহ ফ্লুর প্রকোপ কিছুটা কমে আসতে শুরু করে। ইতোমধ্যে যারা আক্রান্ত হয়ে হয়েছিলেন তারা হয় মারা গেছেন অথবা তাদের দেহে প্রাকৃতিকভাবে এই ভাইরাস মোকাবেলা করার মতো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়েছিল।

প্রায় নব্বই বছর পর বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন যে কেন স্প্যানিশ ফ্লু এতটা মহামারী আকার ধারণ করেছিল। তারা জানান তিনটি জিন একত্রীত হয়ে এই ভাইরাসটিকে ভয়াবহ রূপ দিয়েছিল। যার ফলে ভাইরাসটি সরাসরি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্রোঙ্কিয়াল টিউব এবং ফুসফুসকে দুর্বল করে দিত যাতে করে নিউমোনিয়ার ব্যাকটেরিয়া খুব দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পরে।

সেই ১৯১৮ সালের পরেও বেশ কয়েকটি দেশে বেশ কয়েকবার ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগটি মহামারী আকার ধারণ করলেও তার ভয়াবহতা কখনই ১৯১৮ সালকে ছাপিয়ে যায়নি। তবুও ১৯৫৭ সালের দিকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে প্রায় বিশ লক্ষ মানুষ মৃত্যু বরণ করেছিলেন।

আধুনিক সময়ে অনেকেই এই স্প্যানিশ ফ্লু নামের মহামারী'র কথা ভুলেই গিয়েছেন, কেননা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ঘটে থাকা এই মহামারীর সাথে বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ অবস্থা মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল।

 

Users who are viewing this thread

Back
Top