What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বদলায় না মা (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
FBexZgU.jpg


বদলাননি শুধু আমার মা।

সেবার ছিল যুদ্ধের বছর। মা ও ছোট সন্তান রেখে বাবা যুদ্ধে গেলেন। মা পড়লেন মহাবিপদে। চারদিকে মৃত্যু, ধ্বংস শূন্যতা। হু হু করে চাল–ডালের দাম বাড়ছে। ঘরে কোনো খাবার নেই। তার ওপর মা ছিলেন সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়ে। জীবনে কোনোদিন কষ্টের মুখ দেখেননি। কারও কাছে হাত পাতেননি। সাহায্য চাননি। এসব ছিল তাঁর কাছে প্রায় অসম্ভব। মা তাঁর বাবার বাড়ি থেকে চাল-ডাল এনে সন্তানদের খাওয়াতেন।

খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতেন না। একসময় অর্থের অভাবে আমাদের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার অবস্থা হলো। মা তখন অবরুদ্ধতা ভেঙে খোলা আকাশের নিচে এলেন। ঘর থেকে বের হলেন চাকরির খোঁজে । পেয়েও গেলেন একটি সরকারি চাকরি। মায়ের কঠিন শপথ, যে করেই হোক তাঁর সন্তানদের মানুষ হতেই হবে। চাকরি, সংসার সব মিলিয়ে দিন-রাত অমানুষিক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। মায়ের এই পরিশ্রম সার্থক হয়েছিল কি না জানি না।

তবে তাঁর সন্তানদের যেটুকু অর্জন, তার পেছনে রয়েছে মায়ের অসামান্য অবদান। মা খুব বেশি পড়াশুনা করেননি। কিন্তু শুনেছি যে কয়টা ক্লাসে পড়েছেন জীবনে প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হননি। সংসারের সব সিদ্ধান্ত মা–ই নিতেন। বিভিন্ন বিষয়ে আমরা গোল বৈঠকে বসতাম। মা থাকতেন এই বৈঠকের অলিখিত সভাপতি। অনার্স-মাস্টার্স পাস করার পরও আমাদের সবার চেয়ে মায়ের সিদ্ধান্ত হতো সবচেয়ে ভালো। খুব অবাক হতাম, জীবনের এই পর্যায়ে এসেও মায়ের মতো ভাবতে পারতাম না।

কারও কিছু না বলে আনলে মা ভীষণ রেগে যেতেন। কমছে কম তিন বেলার খাবার বন্ধ করে দিতেন। খুব ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে শিখেছি, অন্যের জিনিস না বলে আনতে হয় না। মানুষকে কষ্ট দিতে হয় না। মা কখনো অভাবের কথা অন্যকে বলতে দিতেন না। মা বলতেন, কেউ তোমাকে সাহায্য করবে না, বরং তোমার দীনতা নিয়ে উপহাস করবে। মায়ের এ কথা জীবনভর সত্য হয়েছে।

0XEfCBi.jpg


চরম দুঃখ-কষ্ট ধারণ করার এক অসম্ভব ক্ষমতা ছিল মায়ের। তাঁর কষ্টগুলো কখনো আমাদের বুঝতে দেননি। মাকে খুব কঠিন মনে হতো। মাকে কখনো শব্দ করে কাঁদতে দেখিনি। সংসারের অসচ্ছলতার জন্য অনেকটা চাপ এসে পড়েছিল বড় ভাইয়ের ওপর। ছোট ছোট ব্যবসা করে ভাই সংসারের খরচ জোগাড় করতেন। তাঁর ঘুম ছিল খুব বেশি। মা এটা পছন্দ করতেন না। এ নিয়ে প্রায়ই রাগারাগি করতেন। অভাবের সংসার, মায়ের বকাবকি, সবকিছু নিয়ে ভাই ছিলেন কিছুটা বিপর্যস্ত। হঠাৎ একদিন কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন।

মা তাঁর নিজের ভাইদের ডেকে আনলেন সন্তানকে খুঁজে আনার জন্য। আত্মীয়স্বজন সবাইকে খোঁজ করতে পাঠালেন। একবুক আশা নিয়ে মা প্রতিদিন অপেক্ষা করতেন কেউ একজন এসে বলবেন আপনার সন্তানকে পাওয়া গেছে। কিন্তু না, কেউ আসেনি। রাত গভীর হলেই মা বিছানায় বসে কাঁদতেন।

একসময় মায়ের বড় ভাই ছিলেন কুষ্টিয়া থানার দারোগা। আমাকে সেখানে পড়ালেখার জন্য পাঠানো হবে। বারবার রবীন্দ্রনাথের ছুটি গল্পের কথা মনে পড়ছে মায়ের। যাওয়ার আগে যে কয়দিন বাড়িতে ছিলাম, প্রতিরাতে মাকে কাঁদতে দেখেছি। মামাকে দেওয়া এক চিঠিতে দেখেছিলাম মা ছুটি গল্পের কথা লিখেছেন।

মাকে ছেড়ে চলে আশার দিনটি হয় খুব কঠিন। সারাক্ষণ দোয়া-দরুদ পড়তে থাকেন। মায়ের কাছ থেকে রওনা হওয়ার শেষ মুহুর্তে মাথায় হাত রাখবেন, কপালে মাথায় ফুঁ দেবেন। শব্দহীনভাবে কী যেন পড়তে থাকবেন। মায়ের চোখ ভারী হয়ে আসে। দুই–এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়বেই।

অনেকবার ভেবেছি শেষবার মায়ের দিকে তাকাব না। কোনোবারই এই প্রতিজ্ঞা রাখতে পারিনি। মাও কান্না করে ফেলেন। আমারও চোখ দিয়ে পানি পড়ে। সেই মার জন্য এখন অনেক কষ্ট হয়। বাবা চলে যাওয়ার পর মার শুরু হয়েছে এক দীর্ঘস্থায়ী শূন্যতা। ভাইবোন সবাই কাজের সূত্রে বাইরে থাকি। মা এখন একাকী বাড়িতে থাকেন। যে প্রিয় সন্তানদের জন্য জীবনের সুখ–শান্তি বিসর্জন দিয়েছেন। অথচ আজ তাঁর জীবনের অবেলায় কেউ পাশে নেই।

মায়ের দুই হাঁটুতে ব্যথা। হাঁটতে-চলতে, উঠতে-বসতে অনেক কষ্ট হয়। সাধ্যমতো চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু ভালো হয় না। সন্তানদের কাছে তার কিছুই চাওয়ার নেই। জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলো ব্যথামুক্ত হয়ে বেঁচে থাকতে চান এই তাঁর প্রার্থনা।

আজকে পৃথিবীর সবকিছু বদলে গেছে। আমাদের বাড়ির পাশের নদীটিও আগের মতো নেই। মানুষের মধ্যে আগের মতো প্রেম ভালোবাসা নেই। আমরা ভাইবোনেরা বদলে গেছি। আমাদের স্ত্রীরা বদলে গেছেন। চারপাশের সবকিছু বদলে গেছে। 'বদলাননি শুধু আমার মা।' আজও চোখের জল ফেলেন। আজও আগের মতোই ভালোবাসেন। আজও পথ চেয়ে থাকেন...।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top