What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মা কেবল ‘মা’, নারী নয়! (1 Viewer)

ABb5Rx3.png


মাকে নিয়ে কিছু লিখতে এলেই শৈশবে পড়া 'মাতৃভক্তি' কবিতায় কবি কালিদাস রায় বায়েজীদ বোস্তামীর মাতৃভক্তির যে অসামান্য চিত্র অঙ্কন করেছেন সেই দৃশ্যটি মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। যে সন্তান মায়ের ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় সারা রাত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন জলভর্তি গ্লাস হাতে করে, এমন দৃশ্য বাস্তবে নিতান্তই বিরল!

আমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ঝড়ের রাতে নিজের জীবন বাজি রেখে ভরা দামোদার সাঁতরে পাড়ি দেওয়ার গল্পও পড়েছি, কেবল অসুস্থ মায়ের কাছে পৌঁছানোর জন্য। এ কারণেই তাঁরা আর দশজন থেকে আলাদা। তাঁদের পক্ষেই এ সম্ভব, তাঁরা আমাদের সামনে যে দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন, আদতে মায়ের জন্য সন্তানের কর্তব্য, ভক্তি তেমনই হওয়া উচিত।

কিন্তু আমাদের চারপাশে কী দেখি আমরা? মায়ের স্থান-অবস্থান আমাদের সমাজে কোথায়-কেমন? পরিবারে মায়ের যে ভূমিকা, যে অবদান সন্তানদের কাছ থেকে মা তার বিনিময় হিসেবে কতটুকু পান? আজকাল মা দিবসে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েই আমরা ভেবে নিই আমাদের দায় শেষ। মাকে অপমান, নিগ্রহের অনেক নির্মম খবরও পড়ি আজকাল পত্রিকায়, যা নিন্দারও অযোগ্য।

rDSDqqz.jpg


ছবি: সংগৃহীত

বদলেছে সময়! জীবনের প্রয়োজনে আমাদের জীবনযাপনের স্টাইলে এসেছে পরিবর্তন। যৌথ পরিবারের ধারণা থেকে বেরিয়ে নিউক্লিয়ার পরিবারে মোড় নিয়েছি আমরা। যেখানে বৃদ্ধ বাবা-মাকে অনেকাংশেই বাড়তি মনে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাস্তবতাই আমাদের মা-বাবার যথাযথ দেখভাল করার সুযোগ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আবার অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সদিচ্ছারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আমাদের চিন্তা-চেতনা, জীবন ধারণের পদ্ধতিতে বৃদ্ধ মা-বাবা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাকডেটেড, ওল্ড ফ্যাশান। জেনারেশন গ্যাপ, আধুনিকতা, স্মার্টনেস এবং সহায়-সংগতিহীন মায়েরা সন্তানের স্ট্যাটাস কনসার্নও হয়ে ওঠে আজকের সমাজে।

দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, আমাদের ব্যক্তিজীবনের পরিবর্তনের হাওয়া সমাজ জীবনে তথা রাষ্ট্রীয় নীতি-নিয়মাবলির গায়ে একইভাবে লাগেনি। রাষ্ট্র আমাদের সিনিয়র সিটিজেনের সুস্বাস্থ্য এবং জীবন ধারণের জন্য কোনোরূপ দায়িত্ব নেয় না। আদতে আমাদের সামাজিক প্রথা অনুযায়ী এটাই অলিখিত রীতি যে বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মা সন্তানের দায়িত্বেই থাকবেন। কারণ, আমাদের বাবা-মায়েরা নিজেদের সম্পদ, সম্পত্তি, অর্থ প্রতিপত্তি সব দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনাসহ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার সব দায়িত্ব নেন। প্রতিদান হিসেবে বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবার দায়িত্ব সন্তানের ওপরেই বর্তায়। সুতরাং রাষ্ট্রের কোনো দায় নেই এখানে। এটাই আমাদের সামাজিক প্রথার এক অলিখিত চুক্তি।

পাশ্চাত্যের পরিবার প্রথা, জীবনযাপনের পদ্ধতি আমাদের থেকে আলাদা। সন্তান আঠারোতে পা দিলেই তারা স্বাধীন জীবন যাপন করে। নিজেরা রোজগার করে, বয়-গার্লফ্রেন্ড নিয়ে নিজেদের মতো আলাদা থাকে, সেটাই রীতি। ক্ষেত্রবিশেষে আঠারোর পরও মা-বাবা সন্তানকে আর্থিক সহযোগিতা করেন, তা–ও সামর্থ্যের ওপর, সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেন না কখনোই। সন্তানেরাও একইভাবে বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন, তবে বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের যাবতীয় ভার নেন না। সেই দায় রাষ্ট্রের।

যেহেতু পাশ্চাত্যের পরিবারে সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার একটা দূরত্ব তৈরি হয়েই যায় বাস্তবতার কারণে, সেহেতু বছরে একটি দিন মায়ের সঙ্গে দেখা করা উপলক্ষে মা-সন্তান একত্রে আনন্দঘন কিছু সময় কাটান, বাইরে খান, মায়ের জন্য উপহার কেনেন, কার্ড লিখেও মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সন্তানেরা এ দিনে। বেশ একটা উৎসবের মধ্য দিয়েই মা দিবসটি পালিত হয়।

বাংলাদেশেও এখন মা দিবস বেশ জোরেশোরে পালিত হয়। অন্তত সামাজিক মাধ্যমে মা দিবসকে ঘিরে যে উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখা যায় তা অনেকাংশে ঝড়ের শামিল। মনে হয় শো অফের প্রতিযোগিতা চলে। আদতে এই পোস্ট দানকারীরাই বাড়িতে মাকে কতটা সময় দেন, কতটা দায়িত্বশীল আচরণ করেন, কতটা শ্রদ্ধা করেন সেটা ভাবনার বিষয়।

বাংলাদেশের সমাজে মা দিবস খানিকটা বেখাপ্পা, কপি-পেস্ট সংস্কৃতি বলে মনে হয়। দেশে মায়েরা তো সন্তানের সঙ্গেই থাকেন, যে মায়ের ছেলে নেই তিনি মেয়ের সঙ্গেই থাকেন। যে মায়ের একাধিক ছেলে, তিনি মাস ভাগ করে আলাদা আলাদা ছেলের বাড়ি থাকেন। এটাই আমাদের সমাজের চিরাচরিত নিয়ম। এভাবেই আমাদের মায়েরা বৃদ্ধ বয়সে জীবন পার করেন।

কিন্তু আমরা কী জানি, এ ভাগের মায়েরা কিংবা একক সন্তানের মায়েরা কেমন আছেন ছেলেদের সংসারে? জীবনের শেষ বয়সে এসে কতটা প্রাপ্তি, সুখ, শান্তি নিয়ে জীবন কাটান? নাকি পুত্রের সংসারে এক উচ্ছিষ্ট জীব হয়ে অনাদরে, অসম্মানে কাল কাটান তাঁরা? সেসব খবর জানতে খুব দূরে যেতে হয় কি? আমাদের কাছেপিঠেই এমন অনেক সন্তান আছেন, যাঁরা এক ছাদের নিচে থেকেও দিনের পর দিন মায়ের সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলেন না। মা অসুস্থ হলে উঁকি দিয়েও দেখেন না, মা খেল কি না, খবর নেন না। কারণ তাঁরা ব্যস্ত, তাঁদের সময়ের বড় অভাব। কিংবা ব্যাকডেটেড মায়ের সঙ্গে কথা বলে পোষায় না তাঁদের।

yZgi9DL.jpg


ছবি: সংগৃহীত

পরিবারে আমাদের মায়েদের অবস্থা ও অবস্থান কেমন, সেসব শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন রচনায়ও উঠে এসেছে। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদের 'আমাদের মা' কবিতায় মায়ের যে রূপ অঙ্কিত হয়েছে, তা প্রকৃতই আমাদের দেশের মায়ের চিরচেনা রূপ। তিনি বলেছেন, 'বাবার সামনে মাকে খুব তুচ্ছ দেখাত, মাকে তাই আপনি বলার কথা মনেও আসত না।' 'বাবা ছিলেন আড়িয়াল বিলের প্রচণ্ড চিলের মতো, বাবা ছিলেন সিংহের মতো।' বাবা সম্পর্কে তাঁর এই উপমাগুলোই প্রমাণ করে বাবারা পরাক্রমশালী! আর মায়েরা ভীষণ দুর্বল, কোমল! তিনি বলেছেন, 'মা ছিলেন বনফুলের পাপড়ি, মা দুধভাত, মা ধানখেত।'এটিই আমাদের সমাজের মায়েদের চিরন্তন চরিত। মায়েরা চিরকোমল, চিররুগ্‌ণ, চিরদুর্বলের প্রতিনিধি এটাই সর্বৈব সত্য।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের 'মনে পড়া' কবিতায় যে মায়ের ছবি দেখি সেখানেও কবি পুজোর গন্ধের সঙ্গে মায়ের গন্ধ পান, আশ্বিনের শিউলিবনে ভোরের শিশিরের সঙ্গে মায়ের মুখ কবির স্মৃতিতে ভাসে। আদতে মায়েরা গৃহকর্মের বাইরে পুজো, সংসার-সন্তান, স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ি সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতেন। মাকে নিয়ে কবির আর কোনো স্মৃতি নেই। আমাদের গ্রামবাংলার মায়েদের এটিই সাধারণ ছবি।

কবি শামসুর রাহমান তাঁর 'কখনও আমার মাকে' কবিতায় লিখেছেন, গুরুজনদের ভয়ে হয়তো কখনও তাঁর মায়ের মনে কোনো গান লতিয়ে ওঠার সাহস পায়নি। কিংবা স্বামীর সংসারে এসেও বাসনকোসন মাজা, চুল বাঁধা, সেলাই ফোঁড়াই করার ফাঁকেও কখনও গান গাইতে শোনেননি।

কাজী নজরুল ইসলামের 'মা' কবিতায় তিনি বলেছেন, 'হেরিলে মায়ের মুখ, দূরে যায় সব দুখ। মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরাণ। মায়ের শীতল কোলে সকল যাতনা ভোলে কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান। সন্তানের মুখ চেয়ে তিনি উপবাসও থাকেন। কেন না তিনি যে মা।'

পাশ্চাত্য ধারণা উদ্ভূত এ মা দিবসে এবার দেখে নিই পাশ্চাত্যের কিছু বিশেষ ব্যক্তিত্বের মা সম্বন্ধে উপলব্ধি কেমন ছিল?

'তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব।'—নেপোলিয়ন বোনাপার্ট

'আমার জীবনের সমস্ত অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শারীরিক শিক্ষার ফল।'—জর্জ ওয়াশিংটন

'আমার বসার ঘরের দেয়ালে আমার মায়ের ছবি টাঙানো আছে, কারণ তিনিই আমার কাছে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ।'—এলেন ডে জেনেরিস

'কোনো একটা বিষয় মায়েদের দুইবার ভাবতে হয়-একবার তার সন্তানের জন্য আরেকবার নিজের জন্য।'—সোফিয়া লরেন

'আমার মা মনে করেন আমিই সেরা আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি।'—দিয়েগো ম্যারাডোনা

'যার মা আছেন তিনি গরিব নন।'—আব্রাহাম লিঙ্কন।

'আমার মা বিস্ময়কর আর আমার কাছে উৎকর্ষের আরেক নাম।'—মাইকেল জ্যাকসন

'মা হচ্ছেন জীবনের শ্রেষ্ঠ চিয়ারলিডার, যার কোনো ইউনিফরম দরকার নেই।'—রিচেল গুডরিচ

ওপরের বক্তব্যগুলো লক্ষ করলেই দেখি পাশ্চাত্যের বিখ্যাত এই ব্যক্তিবর্গ তাঁদের মাকে উপস্থাপন করেছেন জ্ঞান-বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, অবদান ও ধীশক্তির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে। কেননা, নিজেদের মাকে তাঁরা সেই সম্মান এবং মর্যদায়ই পেয়েছেন পরিবারে ও জীবনে। মাকে নিয়ে নেপোলিয়নের সেই বিখ্যাত উক্তিতেই সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় মা সম্পর্কে তাঁদের উচ্চকিত অবস্থানের কথা।

অপর পক্ষে রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে সবার লেখায়ই আমাদের মায়েদের হীনবল, আত্মভোলা, ত্যাগী চরিত্র ফুটে উঠেছে। কেননা, আমাদের সমাজই শিখিয়েছে, মা হবেন নিঃস্বার্থ, সংসার-সন্তানের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। সমাজ নির্ধারিত এই মতহী বৈশিষ্ট্যের আড়ালে মাকে বঞ্চনার এক সুস্পষ্ট চরিত্র লুকিয়ে আছে। মায়ের নিঃশেষিত চেহারাকেই সমাজ উচ্চ মর্যদার খোসলে আটকে রেখে করেছে নীরব নির্যাতন।
মায়ের এ চরিত্রে মহান তকমা থাকায় আমরাও ভুলে গেছি, মা-ও একজন মানুষ! তাঁরও আছে, রাগ-অভিমান, সুখ-দুঃখ, ক্ষুধা-তৃষ্ণা, মানবিক-জৈবিক চাহিদা। আমাদের সমাজে কত বাল্যবিধবা যে আত্মাহুতি দিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। অনেক বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্তা নারীরাও দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন না সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে। অনেক মা-ই আছেন সন্তানের কারণে আজীবন স্বামীর অন্যায়-অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করেন। নিজের আলাদা সত্তার ভাবনা মা নিজেও ভাবতে চান না লোকনিন্দার ভয়ে। আমাদের সমাজের এ সাংস্কৃতিক চর্চা মায়েদের মানুষ বানায়নি, অবলা-অসহায় নারী বানিয়ে রেখেছে কেবল।

সুতরাং যে দেশে, যে সমাজে নারী মানুষ নয়, সে দেশে মা-ও সম্মানের পাত্রী হওয়ার কোনো কারণ নেই। রাষ্ট্রীয়ভাবে সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে আনতে না পারলে নারী কখনোই মর্যদার অধিকারী হবে না।

পাশ্চাত্যের অনেক কিছুই আমরা অন্ধ অনুকরণ করি, একই সঙ্গে আমরা এ–ও ভাবি, জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থান অনেক ঊর্ধ্বে। আমাদের সংস্কৃতি নিয়েও গর্ব করি। আমাদের পরিবার প্রথা, পারস্পরিক বন্ধন অনেক সুদৃঢ় সেটাও ভাবি। আদতে, পাশ্চাত্যের সামাজিক প্রথায় অনেক মানবিক মূল্যবোধ বিরাজ করে, যা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় প্রচুর।

H22HFkX.jpg


পাশ্চাত্যের সমাজে নারীবান্ধব আইন রয়েছে। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও আইন নারীর পক্ষে থাকে। সন্তানের দায় মায়ের একার নয়, রাষ্ট্রের দায় এবং সিঙ্গেল মায়ের জন্য রাষ্ট্র আর্থিক সুবিধাদি দেয় অনেক বেশি। একইভাবে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায়, বৈষম্য দূরীকরণের জন্য পারিবারিক কলহে, পারিবারিক আইনে, নারীকেই বেশি মর্যাদা এবং উপকারভোগী হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে সমাজে নারীর অবস্থা ও অবস্থান এমনিতেই উঁচু মর্যাদায় থাকে।

আমাদের সমাজ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নারীকে অবমাননা করার জন্য মুখিয়ে থাকে। নারী-পুরুষের অধস্তন; এ বিশ্বাস পুরুষতন্ত্র মননে–মগজে সেঁটে রেখেছে। এক পুরুষের স্ত্রী যে নারী, আরেক পুরুষের মা সেই একই নারী। আমরা যখন মাকে ভালোবাসার কথা বলি, মায়ের পায়ের তলায় সন্তানের বেহেশতের কথা বলি, একইভাবে সন্তানের মায়ের পায়ের তলায়ও বেহেশত আছে সেই শিক্ষাটা সন্তানকে দিই না। পরিবারে শিশুরা মাকে-নারীকে সম্মান করতে শেখে না। বাবাকে কখনো মাকে সম্মান করতে দেখে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতে কোথাও নারীকে সম্মান করার রেওয়াজ নেই।
যে সমাজে নারী-যুবতী, কন্যারা অবহেলিত, নির্যাতিত; যৌন নির্যাতনসহ, ধর্ষণ, নিপীড়ন, হিংস্রতা ও সব রকমের অত্যাচার আর নিষ্ঠুরতার সাক্ষী হয় মেয়েশিশুরা, সেই সমাজে 'মা' দিবস কেবলই হাস্যকর। ওয়াজ মাহফিলে কুরুচিপূর্ণ নারীবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে নারীর প্রতি অসন্তোষ, অশ্রদ্ধার বিষ ছড়ানো হয় সর্বত্র। প্রকারান্তরে নারীকে অসম্মানের শিক্ষাই দেওয়া হয় সেখানে। প্রশ্ন আসে, এ নারীরা কারা? মাও কি নারী নন? কিংবা নারীরাই কি মা-মায়ের জাতি নন?

মা কেবল মা নন। তিনি নারীও। সমাজে নারীর অধস্তন অবস্থা দূর করতে হবে। নারীবান্ধব আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগে কঠোর নিয়মতান্ত্রিকতা অবলম্বন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব আচরণ বন্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে স্ব-উদ্যোগে কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বৃদ্ধাশ্রম ও সিনিয়র সিটিজেনের জন্য সুচিকিৎসা ও আবাসিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। করপোরেট বাণিজ্যের গোড়ায় ধুঁয়া তুলে পাশ্চাত্যের আমদানিকৃত মা দিবসের হুজুগে গা না ভাসিয়ে মাকে নারীর খোলস থেকে বের করে আনতে হবে। মাকে প্রকৃতই মানুষের মর্যাদা দিতে চাইলে, আগে নারীকে সম্মান করার তালিম দিতে হবে। পরিবারে তথা সমাজে নারীর অবদান প্রতিষ্ঠিত হলে, মায়ের অবদানের স্বীকৃতি মিলবে নিঃসন্দেহে। আর সেদিনই প্রকৃত অর্থে মা দিবস উদ্‌যাপন আনন্দ উৎসবে পরিণত হবে।

বিশ্বের সব মায়ের জন্য হৃদয়ের গভীর থেকে ভালোবাসা ও অকৃত্রিম শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। ভালো থাকুক আমার স্নেহময়ী গর্ভধারিণী মা, ভালো থাকুক আমার দেশ মা।

* লেখক: সঙ্গীতা ইয়াসমিন, টরন্টো, কানাডা
 
মা থেকেই মানবের সৃষ্টি তাই মাকে সম্মান করা উচিত
 

Users who are viewing this thread

Back
Top