ডলি মর্টনের স্মৃতিকথা
লেখক- perigal
লেখক- perigal
মাস দুয়েক আগে মার্কিন ফিল্ম, 'টুয়েলভ ইয়ার্স অ্যা স্লেভ', দেখতে বসে প্রায় এক যুগ আগে পড়া 'মেমোয়ার্স অফ ডলি মর্টন'এর কথা মনে পড়ে গেল। উনবিংশ শতাব্দীর শেষার্দ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা বিরোধী সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা এই উপন্যসটি ইংরেজী যৌন সাহিত্যের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য নাম। তাক থেকে নামিয়ে ধুলো ঝেড়ে আর একবার পড়ে ফেললাম, আর দ্বিতীয়বারও একই রকম ভাল লাগল। আর তখনই মনে হল এই গল্পটিকে যদি অনুবাদ করে CensorShip আপলোড করি কেমন হবে? যতদূর জানি এই গল্পটির বাংলা অনুবাদ হয়নি, তবুও মনে অনেকরকম শঙ্কা ছিল। অনেকেই হয়তো গল্পটি মূল ইংরেজীতে পড়েছেন, তাছাড়া একটি একশো বছরেরও পুরোনো গল্প আজকের পাঠকের ভাল নাও লাগতে পারে। আবার মনে হল, সবাই হয়তো পড়েননি, অনেক বিদেশী গল্পই আমরা অনুবাদে পড়ি, আর পুরোনো গল্প অনেকটা পুরোনো মদের মত, নেশা ধরায়। তাই সাহস করে অনুবাদের কাজে হাত দিলাম। আপনাদের যদি ভাল লাগে তাহলেই আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।
'ডলি মর্টনের স্মৃতিকথা' বা 'মেমোয়ার্স অফ ডলি মর্টন' প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৯৯ সালে। চার্লস ক্যারিংটন সাহেব এটা প্যারিস থেকে ছেপে বার করেন, লেখকের নাম উগো রেবেল, যদিও অনেক সমালোচক মনে করেন বইটি ক্যারিংটন সাহেব নিজেই লিখেছিলেন। ডলি নামে একটি অনাথ মেয়ে কি ভাবে দাসপ্রথা বিরোধী সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ল এবং ফলে তার জীবনে নানান দুর্ভোগ এল, তাই নিয়ে এই গল্প। যৌনতার সাথে এই গল্পে সেই সময়ের মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে, বিশেষ করে দক্ষিন মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে প্রচলিত দাস প্রথা, দাসেদের জীবন, তাদের ওপর সাদা চামড়ার মালিকদের অত্যাচার, এ সবেরই বর্ণনা পাওয়া যায়, যা গল্পটিকে বাস্তবানুগ করে তোলে। গল্পে একদিকে যেমন সেই সময়ের নানান ঘটনাবলীর উল্লেখ আছে, তেমনি তখনকার জীবনযাত্রা, পোশাক আষাক , বিশেষ করে নারীদের পোশাকের কথা আছে, এই সম্বন্ধে সংক্ষেপে দু চার কথা বললে আপনাদের গল্পটি পড়তে সুবিধা হবে।
১৬১৯ খ্রীস্টাব্দে আফ্রিকা থেকে কিছু কালো মানুষকে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের ভার্জিনিয়া রাজ্যে নিয়ে আসা হয় তামাকের ক্ষেতে কাজ করার জন্য, তখন থেকেই আমেরিকায় দাসব্যবস্থার শুরু। পরবর্তী দুই শতাব্দী এই ব্যবস্থার রমরমা চলে বিশেষ করে দক্ষিন যুক্তরাস্ট্রের রাজ্যগুলিতে। অনেক ঐতিহাসিকের মতে শুধু অস্টাদশ শতাব্দীতেই ষাট থেকে সত্তর লাখ দাস আফ্রিকা থেকে আনা হয় দক্ষিনের তামাক অথবা তুলোর ক্ষেতে কাজ করার জন্য। এদের জীবন দুর্বিষহ ছিল, দিনে বার থেকে আঠার ঘন্টা খাটানো হত, যথেষ্ট পরিমান খেতে দেওয়া হত না, এবং কথায় কথায় শারীরিক অত্যাচার করা হত। এদের নিয়ে মর্মস্পর্শী উপন্যাস 'আঙ্কল টমস কেবিন' আমরা অনেকেই পড়েছি। উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এই অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে অ্যাবলিশনিস্ট আন্দোলন শুরু হয়, উত্তরের অনেক সাদা মানুষ এই আন্দোলনে সামিল হয়। এরা দক্ষিনের দাস রাজ্যগুলো থেকে দাসেদের পালিয়ে উত্তরে আসতে সাহায্য করত, পলাতক দাসদের আশ্রয় দেবার জন্য অ্যাবলিশনিস্টরা গোপন আস্তানা চালাত, রাতের অন্ধকারে দাসেরা পালিয়ে এক আস্তানা থেকে আরেক আস্তানায় পৌছত, এই ব্যবস্থাকে আন্ডারগ্রাউন্ড রেলরোড বলা হত, আর আস্তানাগুলোকে আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন। আমাদের গল্পের নায়িকা ডলি এই রকম একটি আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশন চালাবার কাজে জড়িয়ে পড়েছিল। দাসব্যবস্থা নিয়ে উত্তর আর দক্ষিন আমেরিকার বিরোধ ক্রমশ তীব্র হয়, ১৮৬০ সালে দক্ষিনের রাজ্যগুলি মার্কিন যুক্ত্ররাস্ট্র থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং পরের বছর উত্তর আর দক্ষিনের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। পাঁচবছর ব্যাপী এই যুদ্ধে উত্তরের জয় হয় এবং তারপরেই আমেরিকায় দাসব্যবস্থার সমাপ্তি ঘটে।
দক্ষিনের সাদা খামার মালিকরা দাসেদের খাটিয়েই ক্ষান্ত ছিল না, তাদের মেয়েদের যথেচ্ছ ভোগ করত এবং এর ফলে যে সব সন্তান সন্ততি হত তাদের ওপরও মালিকদের অধিকার থাকত। এই সব বর্ণসংকর ছেলেমেয়েদের মধ্যেও বিভেদ করা হত, যাদের মা বাবার একজন কালো তাদেরকে মুলাটো বলা হত, যাদের শরীরে এক চতুর্থাংশ কালো মানুষের রক্ত অর্থাৎ বাবা মার একজন মুলাটো এবং অন্যজন সাদা, তাদের কোয়াদ্রুন বলা হত, আর যাদের শরীরে এক অস্টমাংশ কালো রক্ত, তাদের অক্টোরুন বলা হত। বলা বাহুল্য পুরুষটি সব সময় সাদা চামড়ার হত এবং মেয়েটি কালো অথবা বর্ণসংকর। আমাদের বিয়ের বিজ্ঞাপনের ভাষায় কোয়াদ্রুনরা উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ আর অক্টোরুনরা রীতিমত গৌরবর্ণ হত। এবার আসি পোশাকআষাকে, প্রথমে যখন আমরা ডলিকে দেখি সে পরে আছে একটি ক্রিনোলিন ফ্রক। এই ফ্রকগুলোর কোমর খুব সরু হত এবং কোমরের নীচে ফুলে ফেঁপে গোড়ালি পর্যন্ত পৌছত, ফ্রকের ডিজাইনও নানান রকম, কোনটায় কলার আছে, কোনটা গোল গলা, পুরো হাতা বা আধা হাতারও চল ছিল। ফ্রকের তলায় মেয়েরা পেটিকোট, সেমিজ এবং ড্রয়ার্স পড়ত। পেটিকোট আমাদের সায়ার সমগোত্রীয়, সেমিজও আমাদের অপরিচিত নয়, তখনকার দিনে সেমিজের ঝুল হাঁটুর উপর পর্যন্ত হত, আর ড্রয়ার্স ছিল আজকের প্যান্টির পুর্বসুরী, এগুলো ঢিলে ঢালা ইজের যার ঝুল হাঁটু পর্যন্ত হত, কোমরে ফিতে বেঁধে পরতে হত, আর অনেক সময় পেছন দিকটা লম্বালম্বি ভাবে কাটা থাকত। অনেক মেয়ে ড্রয়ার্সের বদলে প্যান্টালেটস পরত, এগুলো ড্রয়ার্স থেকে টাইট এবং এর পা দুটো আরো লম্বা হত। ফ্রকের সাথে মহিলারা হিলতোলা জুতো, টুপি এবং দস্তানা পরত। ডলিকে একবার আমরা রাপার পরতে দেখি, এটা বাড়ীতে পরার ঢিলে ঢালা ড্রেসিং গাউনের মত। ঘোড়ায় চড়ার সময় মেয়ে পুরুষ ব্রীচেস বা চোঙ্গা প্যান্ট আর রাইডিং বুটস, অর্থাৎ হাঁটু অব্দি উঁচু জুতো পড়ত। পোশাক নিয়ে এত কথা বলার একটাই কারন, যে কোন যৌন উপন্যাসেই পোশাক পরা বা খোলার একটা ভূমিকা থাকে। অবশ্য এ সব তথ্যই পত্র পত্রিকা এবং ইদানীং ইন্টারনেটে সহজলব্ধ, অতএব অযথা আপনাদের সময় নষ্ট না করে মূল বইটিতে যাই।
বইটির শুরুতেই আছে লেখক উগো রেবেলের ভুমিকা, যেখানে উনি বর্ননা করছেন কি ভাবে নিউ ইয়র্ক শহরে ডলি মর্টনের সাথে ওর আলাপ হল আর উনি ডলির সাথে রাত কাটালেন। এরপর আমরা ডলির মুখে ওর জীবন কাহিনী শুনি এবং সবশেষে রেবেলের উপসংহার। প্রথমে উগো রেবেলের ভূমিকা।