What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made ভুল ❌❗❌❗❌❗❌❗❌❗ (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
নিপা লক্ষ্য করছে ইদানিং মাঝে মাঝেই সাদাতের জ্বর হচ্ছে। খাওয়া দাওয়াও তেমন করতে পারছে না। শরীর খারাপ কিনা জিজ্ঞেস করলেই সাদাত বলছে, " হ্যাঁ ঠিক আছি তো। কোন সমস্যা নেই আমার।"



নিপা একটা বেসরকারী ব্যাংকে চাকরী করে। সাদাত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়। ওদের বিয়ে হয়েছে পঁচিশ বছর আগে। অথচ নিপাকে দেখলে বোঝা যায় না ওর দুটো মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। এই পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সেও যেন ত্রিশ বত্রিশ দেখায় ওকে। নিপার বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী আর ছোট জন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। ইদানিং বড় মেয়ে সোহানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে। তবে সোহানী ওর বাবা মাকে জানিয়ে দিয়েছে, পড়ালেখা শেষ করে ওর ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করবে যে নাকি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।



"সাদাত আমি আর কোন কথা শুনবো না। আজ তোমাকে ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে।" নিপা বলে।

"শুধু শুধুই আমাকে নিয়ে ভাবছো। আমি ঠিক আছি নিপা।" সাদাতের উত্তর।



সাদাতের ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছে। দেশের নাম করা রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এই কথা বলেছেন। আচমকায় এমন কথায় নিপার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ডাক্তার বলেছেন, সাদাত আর মাত্র তিন মাসের মেহমান। কিন্তু নিপার মন মানছে না। ওর মনে হচ্ছে বিদেশে নিলে হয়তো ভালো হয়ে যেতে পারে সাদাত। খুব অল্প দিনের মধ্যেই সাদাতের শরীরটা বেশি খারাপ হয়ে গেলো। নিপা, সাদাতের ব্যাপারে সব সময়ই সাদাতের বন্ধু রুপমকে জিজ্ঞেস করে কি করবে না করবে ইত্যাদি। রুপম বলে,

-ভাবী অযথা টাকা নষ্ট করে কি হবে? ওতো বাঁচবেই না। এমন কেসে বাঁচার সম্ভাবনা নেই একেবারেই।

-তাই বলে কি আমি চিকিৎসা করাবো না? ফেলে রাখবো?

-তাতো বলিনি। বলতে চাচ্ছি আপনাদের তিন মা মেয়ের ভবিষ্যতের কথা। টাকা এক্ষেত্রে অনেক বড় বিষয়।



সাদাত নিজেও নিপাকে বলেছে, " আমাকে বিদেশে নিয়েও বাঁচাতে পারবে না নিপু। তুমি আমার মেয়েদেরকে দেখে রেখো। তোমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি অথচ কিছুই করে যেতে পারলাম না তোমাদের জন্য। নিপু তুমি এখনো অনেক সুন্দরী ! আচ্ছা আমি চলে যাবার পর কি তুমি বিয়ে করবে ? করলে করবে !" সাদাত কথাটা বলছে আর কাঁদছে। চোখের দু'পাশ দিয়ে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে ওর। শরীরের কষ্ট মনের কষ্ট মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে সাদাতের।



সাদাতের মারা যাবার চল্লিশ দিন পার হয়েছে মাত্র ! বাবার জন্য মেয়ে দুটোর মন খারাপ থাকে সব সময়। নিপাও মন খারাপ করে। নিকট আত্মীয়রা কিছুদিন আসলো গেলো।কিন্তু এখন ওদের বাড়িটা একেবারেই নিরিবিলি। নিপার মা কিছুদিন ছিলো মেয়ের বাসায়। কিন্তু অতি আধুনিক মেয়ে এবং নাতনীদের বেশ ভুষা কথা বার্তায় নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে না বলে উনিও চলে গেছেন মেয়ের বাড়ি থেকে। ফোনেই নিপার মা মেয়ের সাথে কথা বলেন।



অফিসে ইদানিং নিপা বেশ টিপটপ ফিটফাট হয়ে আসে। অনেকেরই আবার তা সহ্য হয় না। আড়ালে আবডালে অনেকেই বিশেষ করে নারী সহকর্মীরা বলে, " স্বামী মরেছে শোক করবে, তা না জি-বাংলার নায়িকা সেজে উনি অফিসে আসছে। কি মতলব আছে কে জানে!"



রুপম ইদানিং প্রায়ই চলে আসে নিপার বাসায়। এত ঘন ঘন রুপম আসায় দুই মেয়েই অনেক রাগারাগী করে নিপার সাথে। প্রায় সময়ই ডিনার খেয়ে নিজের বাসায় যায় রুপম। এদিকে আজ নিপার ছোট মেয়ে বলেই ফেললো,

-আমাদের বাবা মারা গেছে। কিন্তু তার বন্ধুকে এত ঘন ঘন আসতে হবে কেন আমাদের বাসায়? মা বলতো এত কি কথা থাকে তোমার সাথে উনার? নিজের বউ তো ডিভোর্স করেছে এই লোককে। এখানে এখন কোন মতলবে আসছে এই লোক, বলো?



মেয়েদের এসব কথায় নিপা একটুও রাগ করতো না প্রথম দিকে। কিন্তু ইদানিং নিপাও বাজে ব্যবহার শুরু করেছে মেয়েদের সাথে।আজকাল প্রায় সময়ই মা মেয়েদের ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকে। এরই মাঝে একদিন রাতে বড় মেয়ে বললো,

-মা তোমাকে দেখলাম ব্যাংক থেকে বেরিয়ে যাচ্ছো রুপম আংকেলের সাথে।দুজন মিলে রুপম আংকেলের গাড়িতে উঠলে। কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?



নিপা একটু হকচকিয়ে গিয়েছে বড় মেয়ের কথায়।ওর বড় মেয়ে একটু ঠান্ডা প্রকৃতির। বরাবরই কথা কম বলে। নিপা বলে,

-একটু কাজ ছিলো রে মা আমার। তাই রুপম ভাইকে আমি ডেকেছিলাম।

-কাজ ছিলো তোমার? ডাকলে রুপম আংকেল কে? কেন? তোমার কোথাও যাবার দরকার হলে তুমি আমাকে সাথে নিয়ে যাবে। আমরা মা মেয়ে মিলে কাজ করবো। আমরা তো কেউই মূর্খ নই মা।

-তোর বাবার ব্যাংকের টাকা পয়সার বিষয়গুলো আমি জানি। আবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে টাকা কড়ি পাবো সেসব কিভাবে তুলবো নিবো তাও আমি জানি কিন্তু আমাদের এই ফ্ল্যাটের লোন আছে কিছু।আর তাছাড়া জমি জমার কিছু বিষয় যেমন খাজনা টাজনা দেওয়া এগুলো সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তাই একজন পুরুষ মানুষের সাহায্য দরকার। রুপম ভাই ভালো মানুষ বলেই কাজগুলো উনাকে নিয়ে করছি। এতে এত রাগ করার কি আছে রে?

-তুমি রুপম আংকেলের সাথে সত্যি সত্যি কাজে গিয়েছিলে মা, আমার কসম করে বলতো! যে লোক নিজের স্ত্রীকে কথায় কথায় শারীরিক নির্যাতন করতো তাকে তুমি ভালো লোক বলছো মা ! আর সেই লোকের সাথে তোমার এত ভালো সম্পর্ক ঠিক কেমন যেন। উনার সাথে তোমার চলাফেরাটা খুবই চোখে লাগে মা।



নিপা ওর বাবার বাড়ির কারো সাথেই তেমন একটা সম্পর্ক রাখে না। মা আর একমাত্র বড় বোন দুলাভাই ছাড়া অবশ্য কেউ নেইও ওর। বোনের দুই ছেলেই দেশের বাহিরে থাকে।



সাদাতরা তিন ভাইবোন ছিলো। দুই ভাই এক বোন। সাদাত মারা যাবার পর নিপা ভাশুর আর ননদের সাথে যোগাযোগ রাখেনি।নিপা সাদাতের প্রেমের বিয়ে ছিলো বলে সেই পঁচিশ বছর আগে থেকেই শ্বশুরবাড়ির সাথে কখনোই নিপার ভালো সম্পর্ক ছিলো না। এখনো নেই।



নিপার চালচলন দুই মেয়েকে ইদানিং খুবই কষ্ট দিচ্ছে। প্রায় রাতেই দুই বোন নিজেরা বলাবলি করে, " বাবা মারা যাবার পর মা এমন ভাবে বদলে যাবে ভাবতেই পারিনি। আজকাল মাকে মা ভাবতেও কষ্ট লাগছে। মা আমাদের দুই বোনের কথা ভাবে বলে তো মনে হয় না। সব সময় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। আর সাথে তো আছেই রুপম নামের অসহ্য লোকটা !"



আজ শুক্রবার। ছুটির দিন। তিন মা মেয়েই বাসায় আছে। সকালে নাস্তা খেতে খেতে নিপা হঠাৎ ই বড় মেয়েকে বলে,

-সোহানি তুই বিয়ের কথা কিছু ভাবছিস? কিছুদিন পরেই তো তোর মাস্টার্স পরীক্ষা।

-না মা বিয়ের কথা এখনও ভাবছি না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বিয়ে করবো।

-বিয়ের পরে কেউ নিজের পায়ে দাঁড়ায় না? আমি কি করেছি? তোদের দু'বোনকে নিয়ে পড়ালেখা শেষ করেছি। পড়া শেষে জবেও ঢুকেছি। তুইও তাই করবি।

-আমার এত তাড়া নেই মা বিয়ের।

-তোর নেই কিন্তু আমার আছে !

-মানে?

-আমি রুপমকে বিয়ে করবো। বর্তমান সময়ে একটা মেয়ের একা থাকা খুবই সমস্যা। এগুলো তোরা বুঝবি না। চারিদিক থেকে অনেক আজে বাজে কথা শুনতে হয়। তার'চে ভালো বিয়ে করা।

-মা ! এসব কি বলছো ? তুমি বিয়ে করলে আমাদের মান সম্মান থাকবে? আমরা মুখ দেখাবো কেমন করে? তোমার ঘরে বিয়ে যোগ্য দুই মেয়ে। মেয়েদের রেখে মা বিয়ে করবে ! ছিহ.. মা !



রুপম নিপা কোর্ট ম্যারেজ করেছে। সাদাতের মৃত্যুর এক বছর হয়নি এখনও। নিপার অফিসে এইসব নিয়ে অনেকেই কানাঘুষো করে। অবশ্য নিপা এসব কথাকে মোটেও পাত্তা দেয় না। বরাবরই ওর মন যা চেয়েছে তাই ই করেছে নিপা।



রুপম ধানমন্ডির নিজের ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে এখন এলিফ্যান্ট রোডে নিপার ফ্ল্যাটে থাকছে। রুপমের দুই ছেলেকে নিয়ে ওর প্রাক্তন স্ত্রী কানাডায় থাকে।রুপমের তাই কোন পিছুটান নেই। বরং সুন্দরী নিপাকে বিয়ে করে এখন আরাম আয়েশের জীবন ওর।



নিপার দুই মেয়ে ইদানিং মায়ের সাথে তেমন একটা কথা বলে না। খুবই অস্বস্তিকর একটা অবস্থা বিরাজ করছে ওদের বাড়িতে। সম্পূর্ণ বাইরের একটা লোক ওদের বাবার ঘরে থাকছে। এসব মেনে নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে সোহানী আর নূরানীর। এত কিছুর মধ্যেও দু'বোন ঠিক করেছে ওরা লেখাপড়াটা শেষ করবে এবং চাকরীও করবে। তারপর বিয়ে করে এ বাড়ি ছাড়বে। নিপাও মেয়েদের সাথে তেমন একটা কথা বলে না।



রুপম, নিপার মেয়েদের সাথে কথা বলে ভাব জমানোর চেষ্টা করে। তবে ওরা দু'বোন একেবারেই পাত্তা দেয় না ওদের মায়ের দ্বিতীয় স্বামীকে। সবচে বড় কথা মেয়েরাতো এখন ছোট নেই। দু'বোন মাঝে মাঝেই বলে, " আমরা বাবাকে ভুলতেই পারি না। পারবোও না কখনও। আর মা ! মা কি করে এই লোকের সাথে বাবার রুমে থাকছে?"



একদিন রাত প্রায় তিনটার দিকে সোহানীর বিকট চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গে নিপার। নিপা দৌড়ে বড় মেয়ের রুমে আসতেই দেখে রুপম ঐ রুম থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যাচ্ছে। আর এদিকে সোহানী থরথর করে কাঁপছে। নিপা, রুপমের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠেই বড় মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে।

-কি হয়েছে সোহানী বল বল আমাকে। রুপম কি করেছে বল।বল আমাকে।

সোহানীর কথা বলার শক্তি নেই। থরথর করে কাঁপছে ওর পুরো শরীর। মুখে বলে,

-মা পানি খাবো, পানি।



সকালেই নুরানী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে বাড়ি চলে এসেছে। সোহানী ছোট বোনকে ফোন করেছিলো বাড়ি আসার জন্য। নুরানী পরীক্ষার সময় বান্ধবীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকে। নুরানী এসেই বোনকে বলছে,

-বল কি হয়েছে? ঐ কুত্তাটা কি করেছে তোর সাথে?

-কিছু করেনি। তবে করতে চেয়েছিলো। মা সময় মত আসাতে কুত্তাটা চলে গিয়েছে।



নুরানী নিজের মায়ের উপর ক্ষেপে গিয়ে, মা মা বলে চিৎকার করতে করতে নিপার রুমে যেয়ে দেখে বিছানায় নিপার দেহটা পড়ে আছে। রুমে রুপমও নেই। " মা ও মা কি হয়েছে তোমার? আপা...!" নুরানীর বিকট চিৎকারেই সোহানী মায়ের রুমে আসে।



নিপার যখন জ্ঞান ফেরে তখন ওর পাশে দুই মেয়ে, নিপার মা বোন দুলাভাই সবাই ছিলো। নিপা নিজেই লজ্জায় কষ্টে ঘুমের বেশ ক'টা ঔষধ খেয়েছিলো মরবে বলে। কিন্তু আল্লাহ ওকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন হয়তো মেয়ে দুটোর জন্যই। নিপা কাঁদছে আর বারবার একই কথা মেয়েদেরকে বলছে,

-তোরা আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি সব সময়ই ভুল করি। আর কখনো ভুল করবো না। কখনো না। তোদের নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিবো। তোদের বাবার কথা আমি রাখবো।



দুই মেয়ে মায়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,

" তুমি আমাদের বেঁচে থাকার শক্তি মা। তুমিও যদি চলে যাও তবে আমরা কি নিয়ে বাঁচবো? কোথায় থাকবো? এবার আমাদের কথা ভাবো মা!"


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top