What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made অংক ➕➖❌➗⭕✅💱💲❗ (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
বৃষ্টির রাত! কাজেই রোগী আসার সম্ভাবনা খুব কম। অতএব, একটা গল্পের বই পড়তে শুরু করলাম।



এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যা হল এখানে বিদ্যুৎ থাকেনা সব সময়। আমি একটু ভীতু প্রকৃতির। সব সময় আমার স্বামীকে নিয়ে আসি ডিউটিতে।আজ ও বাসায় নেই,অফিসের কাজে ঢাকায়।অতএব, আজ রাতে আমার ঘুম হবেনা আমি ধরেই নিয়েছি।আর আমার মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট যিনি ডিউটিতে আছেন উনিও পুরুষ। মহিলা হলে বলতাম আমার সাথে ডক্টরস রুমে এসে বসতে। বিদ্যুৎ না গেলে অবশ্য সমস্যা নেই।



একটা জেনারেটর আছে হাসপাতালের কিন্তু সেটা চালু করতে বলা হলে কোন এক অদ্ভুত কারণে হাসপাতালের স্টাফ মামুন মিয়া তেলতেলে হাসি দিয়ে বলবে,



"আপা, হুদাহুদি জেনরটার চালাইয়া কি কাম? চার্জার লাইট টা জ্বালান, বিস্টি বাদলার মইধ্যে তো গরম ও লাগেনা। জেনরটার টারে একটু শান্তি দেন। মেশিনের জীবনেও শান্তি দরকার"



সত্যি বলতে গেলে শান্তি টা আসলে মামুন মিয়ার পকেটের। কারণ জেনারেটরের তেল কেনার দায়িত্বটা তার কাঁধে।



এখন অবশ্য লাইট জ্বলছে। আমি হুমায়ুনের "আনন্দ বেদনার কাব্য" বইটা বের করলাম।



রাত ৩ টার দিকে, দরজায় নক।

মামুন মিয়া বলছে,

" আফা, ইমারজেন্সি তে রুগি আসছে"



আমি উঠে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে ইমারজেন্সি রুমে গেলাম।



৪০/৪৫ বছর বয়সী একজন অজ্ঞান ব্যক্তি। সাথে একজন মহিলা অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে।



আমি দ্রুত পালস, বিপি মেপে নিলাম।

পালসের ভলিউম খুবই কম। প্রেসার ও প্রায় আবরেকর্ডেবল। এদিকে শ্বাস প্রশ্বাসের গতিও অস্বাভাবিক। সাথে থাকা মহিলাকে দ্রুত কিছু প্রশ্ন করলাম,

" আপনি কি উনার স্ত্রী?"

মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

" হ"

" কি হয়েছে বলুন তো?"

" আপা,হেতে বাজারে দুকান করে,যেদিন মাল পত্র আসে সেইদিনফিরতে ফিরতে রাইত হয়!আজকে বইলা গেছে রাইত হবে। আমি রাইত নয়টা নাগাদ শুইয়া পড়ছি! রাইত ১ টা বাজে দুকানের লোকজন তারে প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় দিয়া গেছে বাসায়। সে নাকি সন্ধ্যা থেইকা কইতেছিল ভাল্লাগতাসে না। রাইতে মাথা ঘুরাইয়া পইড়া যায় "

"জানামতে উনার কোন অসুখ আছে?"

"ডায়বেটিস আছে।আর কিছুনা!"

" ইনসুলিন নিতে হয়?"

" হুম"

" কন্ট্রোলে থাকে?"

" জ্বেনা আপা, খাওয়া কন্টোল করেনা। হেইদিন মাপছে, ২৩ হইছে"



খুব সমস্যার মধ্যে পড়া গেলো। কারণ এখানে রোগী শকে আছে। তবে এটা কি গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়ার কারণে নাকি কমে যাওয়ার কারণে তা বোঝা যাচ্ছেনা। ডায়বেটিস পরীক্ষা না করে চিকিৎসা শুরু করা প্রায় অসম্ভব। গত মাসেই হাসপাতালে ইনস্ট্যান্ট স্ট্রিপ টেস্টের কিটের কথা বলা হয়েছে। আফসোস সেটা এখনো আসেনি।



আমি রোগীর সাথে আসা পুরুষ একজন কে পাঠালাম আশে পাশের কোন ফার্মেসি তে ইনস্ট্যান্ট ডায়বেটিস পরীক্ষার মেশিন পাওয়া যায় কিনা দেখতে।



এদিকে রোগীকে চিকিৎসা শুরু করলাম প্রেসার বাড়ানোর স্যালাইন দিলাম। যদি ডায়বেটিস বেড়ে থাকে তবে ইনসুলিন দিতে হবে,তবে যদি এটা উল্টো কেস হয় মানে সুগার কমে থাকে তবে ইনসুলিন দিলে রোগী মারা যাবে। আবার কমে থাকলে গ্লুকোজ দিতে হবে, কিন্তু গ্লুকোজ দিলে সুপগার বেশি থাকলে আর রোগীকে ফেরত পাওয়া যাবেনা।উফ কি বিপদ।



মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট একজন আমার কানে এসে বললেন,

" আপা, সদরে রেফার করেন৷ এই রোগী ঘন্টা খানেক ও বাঁচবেনা! রাস্তায় মরুক! "



এদিকে রোগীর আত্মীয় জানালো।আশে পাশে কোন দোকান খোলা নেই।



রোগীর স্ত্রী কে মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট রা বোঝাচ্ছে সদরে নিয়ে যেতে। কিন্তু রোগী রাজি না। তার ইচ্ছা এখানেই চিকিৎসা হোক। সদরে যেতে ঘন্টা দুই লাগবে। এতক্ষণ সে রিস্ক নিবেনা।



আমি আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সুমনকে জানালাম। উনি বললেন, সম্ভবত সুগার বেড়ে গেছে। তুমি রিস্ক বন্ড নাও পার্টি থেকে। ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু কর।



আমি যখন ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করলাম তখন ভোর হয়ে গেছে।



প্যাথলজির এক টেকনিশিয়ান কে ফোন করে আনালাম, ভোর ছয়টায়। বললাম রোগীর সুগার চেক করতে। সে খুব বিরক্ত হয়ে রোগীর রক্তের স্যাম্পল নেয় ঘুম ঘুম চোখে।



আর তার দশ মিনিটের মাথায় রোগীটা মারা যায়। মহিলাটি চিৎকার করে কাঁদছে।আমি এখনো ডেথ ডিক্লেয়ার করিনি। ইসিজি না দেখে সেটা বলাও সম্ভবনা।



আমি ইসিজি মেশিন আনতে পাঠিয়ে নিজের ঘরে বসে আছি।মাথাটা ধরে আছে। এমন সময় প্যাথলজি রিপোর্ট এলো। রিপোর্ট দেখে আমার মাথা ঘুরাচ্ছে।



রোগীটার সুগার নিল অর্থাৎ প্রায় শুন্য। আমি ভুল চিকিৎসা করেছি। সুগার নেই এমন রোগীকে ইনসুলিন দিয়েছি অথচ গ্লুকোজ দেয়া উচিত ছিল।আমার সারা শরীর কাঁপছে। এ আমি কি করলাম। যদিও আমি নিরুপায় ছিলাম, তবুও তো ভুলটা আমারই। আমি নিজ হাতে একটা রোগীকে মেরে ফেললাম!



আমি মাথা নিচু করে ইমারজেন্সি রুমে গেলাম। ইসিজি মেশিন এসেছে। রিপোর্ট টা খুব স্পষ্ট। লোকটা আর নেই।



খবরটা সাথে থাকা পুরুষ ব্যাক্তি টিকে জানালাম।



পুরো ব্যাপারটা আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে জানালাম।উনি বললেন,



" তামান্না, চেপে যাও। একদম চুপ থাকো।রোগীর পার্টিকে বল রোগীটা খারাপ অবস্থায়ই এসেছে। প্যাথলজি রিপোর্ট টা ছিঁড়ে ফেলো "



আমি ফোন রেখে চেয়ারে বসলাম। প্রচন্ড ঘামছি। মনে হচ্ছে এক্ষুনি মাথা ঘুরে পড়ে যাব। তখনো জানতাম না আমার সামনে আরো অনেক কিছু অপেক্ষা করছে।



মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট রাজিব বলল,

" আপা, আগেই বলছিলাম, রোগী বাঁচবোনা। এখন তাড়াতাড়ি একটা ডেথ সার্টিফিকেট লেখেন। এদের বিদায় দেন "



আমি হালকা করে হু বললাম।



এই ছয়মাসের চাকরি জীবনে এই প্রথম ডেথ সার্টিফিকেট লিখব। এর উপর আমাকে পেয়ে বসেছে যে, এই মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী।



আমি মৃত ব্যক্তির ছেলেকে ডাকলাম,

নাম বলেন,

"আব্বার নাম?"

"জ্বি"

"নাম ঃমোফাজ্জল ইসলাম"

"বয়স?"

"৪৫"

"পিতার নাম? "

"মোবারক মিয়া"

ঠিকানা?"

"গ্রামঃ কাশখালি

ইউনিয়নঃ বেলতা

থানাঃ সখীপুর"



ঠিকানাটা লিখে আমি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম। কারণ আমার মনে হচ্ছে এই নাম, এই ঠিকানা এই লোক আমার চেনা। অনেক অনেক দিনের চেনা। এই লোক কে আমি খুঁজেছি, গত প্রায় ২০ বছর ধরে খুঁজেছি।



আমি কোন মতে সার্টিফিকেট টা লিখে বাসায় গেলাম। হাসপাতাল কোয়ার্টারেই আমার বাসা।সময় লাগলো না। তন্নতন্ন করে আলমারির প্রতিটি ড্রয়ার খুঁজলাম। একসময় পেয়েও গেলাম, একটা ন্যাশনাল আইডি কার্ড। কার্ড টার দিকে তাকিয়ে আমার হাসি পেল। সত্যি বলতে আমি, হো হো করে হেসে উঠলাম। ২০ বছর ধরে জমানো একটা কার্ড।



২০ বছর আগে আমার তখন ১২ বছর বয়স। আমি তখন শহরতলীতে একটা দুই কামরার বাসায় ছোট ভাই আর মায়ের সাথে থাকি। আমার ছোট ভাইটা ক্লাস টু তে পড়ে, আমি সিক্সে।



সেদিন মা আমার ভাইটাকে নিয়ে স্কুলে গেলো। আর আমি বাসায়।আমার সেদিন প্রচুর মাথা ব্যাথা করছিল। তাই স্কুলে যাইনি। ছুটা বুয়া কাজ করে চলে গেলো। এগারোটা নাগাদ।



বারোটায় আমার ভাইয়ের স্কুল ছুটি হবে।মা আসতে আসতে সোয়া বারোটা। আমি একটা তিন গোয়েন্দা বই নিয়ে পড়তে শুরু করলাম।



হঠাৎ দরজায় নক।

"কে?"



ওপাশ থেকে উত্তর,

"আমি টিভি সারাই৷ আপনের আম্মায় পাঠাইছে আমারে। "

আমাদের টিভি নষ্ট হয়েছিল কয়েকদিন আগেদুই মিস্ত্রী এসে সেরে গেছিল। তবে এখন তো সমস্যা নেই।আম্মা কেন পাঠাবে?



আমি জিজ্ঞেস করলাম,

"কেন আসছেন? আমাদের টিভিতে তো সমস্যা নেই"



"তুমার আম্মা বাজার পাঠাইছে"



এটা অবশ্য আম্মা করে মাঝে মাঝে। আমি দরজা খুলে দিলাম। ঠিক সেই মূহুর্তে লোকটা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভেতরে ফেলে দরজা আটকে দিল। আমি সর্বশক্তি দিয়ে তাকে লাত্থি মারলাম। কিন্তু ১২ বছর বয়সী আমার কি এমন শক্তি ছিল!



লোকটার মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছিল। প্রায় আধঘন্টা পর সে চলে যায়। যাওয়ার সময় খ্যাকখ্যাক করে হাসতে হাসতে বলে

"শোন সেইদিন আইসসা দেখছি তরে, পর্দা করস না, তগো মত মাইয়ার দরকার নাই এই দুনিয়ায়, এই দুনিয়া থেকে তর নাম মুইচ্ছ্যা দেয়া উচিত ,বুঝছস?"



আমি রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকি।সম্ভবত জ্ঞান হারাই। যখন জ্ঞান ফেরে তখন একটা আইডি কার্ড পাই ঘরের ভেতর। হয়তো ধ্বস্তাধস্তির সময় পড়ে গিয়েছিল।আমি মাকে সব বলি,আইডি কার্ড টাও দেখাই।বোকা বলে খুব বকেছিলেন মা আমাকে।



আমার বুদ্ধিমতী মা খুব সুন্দর করে সামলে নিয়েছিলেন সব কিছু। কেউ টের পায়নি কিছু। এমনকি আমার বাবাও না।



শুধু আমিই সামলাইতে পারিনি। আমি মিশতে পারতাম না কারো সাথে। সবাইকে ভয় পেতাম। সারাদিন ঘরবন্দী হয়ে থাকতাম, আর রাজ্যের বই পড়তাম।

এতে অবশ্য একটা লাভ হল, আমি ছাত্রী হিসেবে ভালো হয়ে গেলাম। ইন্টার পাশ করে মেডিকেলে ভর্তি হয়ে গেলাম। এরপর অবশ্য একটু স্বাভাবিক হয়েছি।



আর ওই আইডি কার্ড টা বয়ে বেড়িয়েছি এত গুলো দিন। একটু সাহস হলেই আমি এই লোকটাকে খুন করব এই আশায়।



আজ আইডি কার্ড টা আমার হাতে।

ভেতরে লেখা,

নাম ঃ মোফাজ্জল ইসলাম

জন্ম তারিখ ঃ ১-১-১৯৭৪

পিতাঃ মোবারক মিয়া

ঠিকানা ঃ গ্রামঃ কাশখালি

ইউনিয়ন ঃ বেলতা

থানাঃ সখীপুর



আমি হাসছি। উপর থেকে কেউ একজন এক দারুণ অংক কষেছেন। আমার হাসি থামছেইনা।



আচ্ছা, ডেথ সার্টিফিকেট টাতে সাইন করা হয়নি। আমি আবার হাসপাতালে গেলাম। ডেথ সার্টিফিকেট টাতে বড় বড় করে নিজের নাম লিখলাম।



সে আমার নাম মুছতে পারেনি। আমার নাম তার ডেথ সার্টিফিকেটে জ্বল জ্বল করছে।


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top