What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made নিরিবিলি বৃদ্ধাশ্রম 🏠🏦🏠🏦🏯🏘🏣🏘 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
মাকে আজ সকালে নিরিবিলিতে নামিয়ে দিয়ে আসলাম।



নিরিবিলি বেশ আধুনিক মানের একটা বৃদ্ধাশ্রম।



নামিয়ে দিয়ে আসার সময় মাকে বলেছি, "মা শোন, আমাদেরকে নিয়ে কোন চিন্তা করার একদম দরকার নাই। ঘন ঘন ফোন করারও দরকার নাই। তুমি নিজের মতো করেই সময় কাটাবে, গল্প করবে, হাসিখুশি থাকবে। ঠিক আছে?"



আমার মা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলেছে।



মনটা বেশ হাল্কা লাগছে এখন। অনেক বড় একটা দুশ্চিন্তার পাথর মনেহচ্ছে মাথা থেকে নেমে গেল। তৃষাও ভীষণ খুশি আমার এই সিদ্ধান্তে। মূল পরিকল্পনাটা তৃষার মাথায় প্রথম আসে। তৃষাদের ফার্ম থেকে স্পন্সর করে ধিরে ধিরে বড় আর উন্নত করা হচ্ছে এই বৃদ্ধাশ্রমটাকে। আমার বাসার কাছেই বৃদ্ধাশ্রমটা। এইতো, আমার অফিসে আসা যাবার পথেই।



অনেক কষ্টে মাকে এতোদিনে রাজি করালাম। মাকে কিছুতেই বাসা থেকে বের করতে পারছিলাম না। মা সারাদিন বাসায় বসে বসে খালি পান খায় আর টিভি দেখে। প্রায়ই শুনি বুয়ার সাথে খিটমিট করছে কারণে অকারণে! রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গিয়ে হাঁড়িপাতিল নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে! বারান্দায় বসে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সারাদিন ঘরে শুয়ে বসে থাকতে থাকতে মায়ের ওজন অনেকটা বেড়ে গেছে আর যতসব অলস চিন্তা মাথায় ঢুকছে। মাত্র তেষট্টি বছর বয়সী আমার মাকে দেখতে বেশ অনেকটা দুর্বল আর বুড়ো লাগছে ইদানীং।



তৃষা প্রায়ই মার সাথে রাগারাগি করে এসব নিয়ে। মা চুপচাপ শুনে যায়। মা একমাত্র তৃষাকেই ভয় পায়। আমি মার সামনে গেলে ভীষণ রকমের অসহায় ফিল করি। যেখানে তৃষা মাকে রীতিমত ধমক দিয়ে দিয়ে এটা ওটা করতে বাধ্য করছে সেখানে আমি ধমকতো দূরের কথা, জোর দিয়ে কিছু বলতে গেলে গলা বুজে আসে! চল্লিশ বছরের অভ্যাস এত সহজে কেমনে বদলাই! তবুও আমাকে এই কঠোর সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হল তৃষার কথা মতো। তৃষা কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয় না। আমাদের সংসার নিয়ে ভীষণ রকমের কেয়ারিং সে।



তৃষা আমার বউ। এইতো সেদিন, সাত বছর আগে এক বন্ধুর বিয়েতে তৃষাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে মাকে এসে বলি, "মা, আমি এই মেয়েকেই বিয়ে করব। প্লিজ প্লিজ মা"।



মা হা করে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তারপর শান্ত গলায় কঠিন স্বরে ধীরে ধীরে আমাকে বলেছিলো, "বিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় মানুষের জীবনে! আর তোমার কথা শুনে মনেহচ্ছে, তুমি বন্ধুদের সাথে সেন্টমারটিন যাবার আবদার করছো!! আই এম রিয়েলি শকড!"



তারপর আমার দিকে না তাকিয়েই মা হাতের কাজ গুছাতে গুছাতে বল্ল, "রুমে যাও রুমেল। লেট মি থিংক ফার্স্ট"।



আমি ভয় পেয়ে সেদিন মা'র সামনে থেকে সরে গেলাম। মা প্রচণ্ড রকমের রেগে থাকলে এই স্বরে কথা বলেন। ভীষণ জেদি আর কঠিন আমার মা। তবুও আমি জানতাম মা কিছু একটা ব্যবস্থা করবেই আমার জন্য। তারপর মাও দেখি ভীষণ পছন্দ করে ফেললেন ছিমছাম মায়া মায়া চেহেরার মেয়েটাকে।



তৃষাকে সাথে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিয়ের শপিং করেছে মা। সংসারের টুকিটাকি জিনিসপত্র, ফার্নিচার এমনকি একই রঙের কাপড়চোপড়ও দেখি দুজন মিলে বেশ খুশিমনেই কিনছে! তৃষার সাথে মার পছন্দ অপছন্দ দেখলাম ভীষণ রকমের মিল! আমি অবাক হয়ে মাঝেমাঝে দেখতাম, মা আর তৃষা এমনভাবে কিছু একটা নিয়ে গল্প করছে বা রান্না করছে যে দূর থেকে কেউ দেখলে ভাবতেই পারবে না তারা বউশাশুড়ি! বরং ভাবতে বাধ্য হবে সমবয়সী দুজন তরুণী গুটুর গুটুর করে গসিপ করছে!



আমার বন্ধুবান্ধবরা এসব দেখে দেখে বেশ হিংসা করা শুরু করলো একসময় আমাকে। সত্যি বেশ সুখী সংসার আমাদের। এরমধ্যে টুইটি আসলো আমাদের ছোট্ট পরিবারের নতুন আনন্দ নিয়ে। টুইটি আমার একমাত্র কন্যা, ভীষণ আদুরে। দাদু বলতে পাগল। এই ফেব্রুয়ারিতেই টুইটি পাঁচে পরবে।



তৃষার অফিসের পাশেই একটা কিন্টারগার্ডেনে অনেক কসরত করে টুইটির ভর্তির ব্যবস্থা করা হল। তৃষার কলিগ আর বান্ধবীদের মুখে শুনে শুনে গত একবছর ধরে দিনরাত আমার মাথার পোকা প্রায় বের করে ফেলার অবস্থা। যেন আর কোন স্কুল ভালোনা এই শহরে! এই স্কুলে দিতেই হবে! তৃষা এমনই জেদ করে মাঝেমধ্যে এবং একসময় হাসিমুখে আমাকে মেনে নিতেই হয় সবটুকু।



টুইটিকে স্কুলে দেবার পর থেকে মা একা একা বাসায় শুয়ে বসে সময় কাটায়। কিন্তু ডাক্তার বলেছে মাকে কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। নিজেকে সচল রাখতে হলে বাইরে যেতে হবে, বাইরের দুনিয়ার সাথে মিশতে হবে। এভাবে একাএকা দিন কাটালে মা একসময় ডিপ্রেশনে চলে যাবে। এই বয়সের একাকীত্ব এবং একাকীত্ব থেকে ডিপ্রেশন মরণঘাতী হতে পারে আমার মায়ের জন্য!



ডাক্তারের কথা শুনে তৃষা বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকায়। দুশ্চিন্তায় সারারাত ঘুমাতে পারেনা। সেদিন রাতেই আমাকে সে জানায় যে আমার অফিসের কাছেই নিরিবিলি নামের এই বৃদ্ধাশ্রমটাকে ওদের এডভারটাইজিং ফার্ম স্পন্সর করছে। বেশ ভালো সময় কাটবে মায়ের সেখানে। তৃষা বেশ দৃঢ়তার সাথে বলে, মায়ের রিটায়ার্ডেরর পর উনাকে নিয়ে নতুন করে আমাদের ভাবা উচিৎ।



পরদিন সকালে ব্রেকফাস্টের টেবিলে তৃষা সরাসরি মাকে বলে বৃদ্ধাশ্রমটির কথা। মা সাথে সাথেই না করে দিলো। তৃষাও নাছোড়বান্দা। রাজি করিয়েই ছাড়লো মাকে।



রিটায়ার্ডের পর মানুষের মনেহয় "আমি ফুরিয়ে গেছি"! নিজেকে অকোজো ভাবতে শুরু করে মানুষ তখন। এই ধারনা যদি একবার মনের কোণে জায়গা করে নেয় তাহলে অবস্থা খুবই ভয়ংকর হবে। উন্নতবিশ্বে সত্তর আশি বছর বয়সী মানুষগুলো নিজেদের তারুণ্য ধরে রাখার জন্য নতুন নতুন উপায় বের করে, কড়াসাজে রঙবেরঙের কাপড় পরে যেখানে আনন্দে মেতে থাকে সেখানে আমাদের দেশে এই বয়সে আমরা "আমি আর কয় দিন বাঁচবো" বলে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করি! পরিবারের মানুষগুলোও কম যায় না! প্রতিটা মুহূর্তে মনে করিয়ে দিতে ভুলেনা "তুমি পারবে না, এসব করার বয়স আর নাই তোমার! তুমি এখন রঙহীন তাই সাদা বা হালকা রঙের কাপড় পরো!! তুমি বিধবা তাই তোমার জীবন এখন বিবর্ণ! মানুষ হাসবে বলবে এক পা কবরে! বলবে বুড়া বয়সের ঢং! বিশ্বাস করুন আপনার অনেক ভালো সময় কাটবে নিরিবিলি বৃদ্ধাশ্রমে"।



তৃষা হাত নেড়ে নেড়ে ভাষণের মত করে মাকে এতক্ষণ এসব বুঝাতে সক্ষম হলো যে, সারাদিন এমন অলসভাবে এই পনেরশো স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাটে সময় কাটানো মায়ের একদম ঠিক হচ্ছেনা।



মা কখনো আমার কোন ইচ্ছে অপূর্ণ রাখেনি। আমার যখন তিনমাস মাত্র বয়স, বাবা হটাত রোডএক্সিডেন্টে মারা যায়। মা আমাকে বুকের সাথে চেপে ধরে অচেনা শহরে অচেনা মানুষের ভিড়ে নিজের মত করে জীবন শুরু করে। মায়ের বয়স ছিলো তখন মাত্র তেইশ বছর। তেইশ বছরের এক টগবগে তরুণী বিঁধবার ট্যাগ লাগিয়ে বসে থাকবে আমার মামারা খালারা সে কথা ভাবতেই পারেনি। তাই ছয়মাস যেতে না যেতেই সবাই মা কে আবার বিয়ে দেবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। নয়মাস তখন আমার বয়স, মার গ্রাজুয়েশনের রেজাল্ট বের হয়েছে মাত্র। মা গোপনে উনার বান্ধবী, সিনিয়র আপাদের সাথে যোগাযোগ করে প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় মেয়েদের একটা স্কুলের টিচারের চাকুরী ঠিক করে ফেলে। মামা, খালা কারো অনুমতি না নিয়েই একদিন সকালে নয় মাস বয়সী আমাকে বুকের সাথে চেপে ধরে বাসে উঠে বসে মা। পাহাড়ঘেরা সবুজ এক মনোরম স্নিগ্ধ শহরে আমার আর মার নতুন জীবন শুরু হয়। মা এর নিজেকে জাহির করার সংগ্রাম শুরু হয়। আমার দুই মামা আর দুই খালা মনে অনেক কষ্ট পেয়েছিল আমার মায়ের এই অবাধ্য ব্যবহারে। প্রচণ্ড মনকষ্ট পেয়ে অনেক অনেক দিন উনারা মা এর সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ রাখেননি। অন্যদিকে আমার প্রচণ্ড জেদি মা ভারী এক অভিমানের পাথর বুকে নিয়েই আপনজনদের কাছ থেকে সরে আসে। বড় হয়ে শুনেছি মামারা নাকি এক প্রবাসী পাত্রের সাথে মা'র বিয়ে ঠিক করেছিল। বিয়ের পর মা ইউরোপের কোন এক দেশে সেটেল হবে, আর আমি মামা খালাদের কাছে বড় হব এই সিদ্ধান্ত মা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি তাই আমাকে নিয়ে পালিয়ে আসে।



আমার বেড়ে উঠা শুরু হয় প্রকৃতিকে সাথে নিয়ে সবুজ আর সতেজের মাঝখানে। আমাকে আর নিজের জীবন সংগ্রামকে একসাথে বুকে আর কাঁধে করে মা একা হাতে সামাল দিতে থাকে। আমি আর মা একসাথে বেঁচে থাকা শিখি প্রতিদিন। মা আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে আর আমি মা'র বুকের উপর মাথা রেখে স্বপ্ন দেখা শিখি। একদণ্ড আমাকে না দেখলে মায়ের শ্বাস আটকে যেত। আমিই ছিলাম মায়ের একমাত্র বেঁচে থাকার উপাদান এবং মা আমার! সেই মাকে আমি কিভাবে ফুরিয়ে যেতে দিই চোখের সামনে! তাই আমি আর তৃষা অনেক ভেবেচিন্তে এই পরিকল্পনাটা করলাম মাকে সতেজ রাখার জন্য।



সারাদিন অফিসে বেশ ভালই সময় কাটলো আমার। বিকেলে তৃষাকে ফোন দিলাম।



"তৃষা, চলো আজকে আমরা শপিং করি সবাই মিলে। সিনেমাও দেখতে পারি। তারপর রাতে সবাই মিলে বাইরে খাবো"।



তৃষাও দেখলাম বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে আজ। ফোনের ওপাশ থেকে বেশ খোশমেজাজেই বলছে, "হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি গেইটে এসেই আমাকে ফোন দিও। আমরা একদম রেডি। অনেক মজা হবে আজ"।



আমি গাড়িটা ঠিক গেইটের সামনে পার্ক করেই তৃষাকে ফোন দিলাম। ওরা হৈ চৈ করেই গাড়িতে উঠে বসলো। সবাই বেশ ফ্রেশ আজকে। যাক! মাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করার দিন শেষ।



আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বল্লাম,



"কি? কেমন লাগলো তোমার নতুন চাকুরী মা"?



মা বেশ লাজুক লাজুক মুখে জবাব দিলো,



"তোদের জ্বালায় আর পারি না। তবে মানুষের মনের পজিটিভিটি বাড়ানোর, তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেবার এই কাজটাকে আমি বেশ উপভোগ করলাম প্রথমদিনেই। সত্যিইতো! এই মানুষগুলোরই সবচেয়ে বেশী মানসিক সাপোর্টের দরকার! তৃষার কথা একদম ঠিক। আমরা ঘরে বসেই ফুরিয়ে যাই"।



আমি গাড়ির মিররে পিছনে বসা তৃষার মুখে বিজয়িনীর হাসি দেখছি...।



মা'কে নিরিবিলি বৃদ্ধাশ্রমের মানুষগুলোর মনে সাহস ফিরিয়ে দেবার জন্য কাউন্সিলর হিসেবে নিয়োগ দেবার পরিকল্পনাটা তৃষার মাথায়ই প্রথম আসে ।


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top