What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made জীবনের প্রতিচ্ছবি🏦🏦🏦 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
কিছুদিন আগে এক ছুটির দিনের ভোরবেলা ইনটারকমের আওয়াজে আমার ঘুম ভাঙল । গার্ড জানালো,আমার বড় ছেলের এক বন্ধুর বাবা মা এসেছেন আমাদের সাথে দেখা করতে ।

আমি কিঞ্চিত বিস্মিত হলাম । এত সকালে তারা দেখা করতে এসেছেন!আমার পুত্রের নামে কোন অভিযোগ নয় তো ?

ভাই ভাবী উপরে এলেন । তাঁদের সাথে আমাদের সাক্ষাত প্রথম বারের মত হলেও তাঁদের পুত্রের সাথে আমার খুব পরিচয় আছে ।

অতি লক্ষ্মী ছেলে সে । সেই আমার ছেলের একমাত্র বন্ধু যাকে আমার "হিউম্যান বিইং"মনে হয় । বাকীরা এখনো বন মানুষ স্টেজে আছে ইনক্লুডিং মাই পুত্র ।

যাই হোক ,পরিচয় পর্ব শেষ হবার পরে ভাই জানালেন , সামান্য কথা কাটাকাটির জের ধরে তাদের সেই হিউম্যান বিইং পুত্র ভোর বেলা ফজরের আজানের সময় বাসা থেকে কোথাও চলে গেছে । তারপর থেকে তার ফোন বন্ধ । পুত্রশোকে কাতর বাবা মায়ের মনে আতঙ্ক - যদি আত্মহত্যা করে ফেলে !

উদ্বিগ্ন অভিভাবক এসেছেন পুত্রের খোঁজে, যদি তার বন্ধু জানে সে কোথায় গেছে ।

বন্ধু,মানে আমার পুত্রকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বলা হল ওর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতে । দুইঘন্টা চেষ্টার পর তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হল এবং আরও একঘণ্টা অনুনয় বিনয় করার পরে সে আমার বাসায় আসতে রাজি হল ।

তাঁদের পুত্র আমার বাসায় আসার পর তার অসহায় বাবা মা তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন ঝরঝর করে ।

আমি দুইজন অতি ভাল মানুষ , অতি উচ্চশিক্ষিত ,অতি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বাবা মা(মেধাবী এবং উচ্চপদে কর্মরত)কে তাঁদের সতের বছর বয়সী পুত্রের সামনে হেরে যেতে দেখলাম ।

এবং তাঁদের হিউম্যান বিইং পুত্রের এহেন আচরণ দেখে একটু সান্ত্বনাও নিলাম যে ,তাঁদের এত লক্ষ্মী ছেলেটাও যদি এত অবিবেচক হতে পারে তাহলে আমার অর্ধমানব যা করে তা ঠিকই আছে । কষ্ট পাবার কিছু নাই ।

অনেকেই আমাকে বলে ,আপনার বাচ্চারা তো বড় হয়ে গেছে, আপনি তো ফ্রি ,আমাদের গুলা যে কবে বড় হবে ।

আমি মুখে বলি ,হ্যাঁ হ্যাঁ তা তো অবশ্যই । আর মনে মনে বলি বড় হতে দেন তারপর বুঝবেন কত গমে কত আটা । নিজের চুল টেনে ছিঁড়বেন তখন ।

বাবা মায়ের জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল টিন এজার বাচ্চা ডিল করা । আর তার থেকেও বড় চ্যালেঞ্জ হল তাকে মানুষ বানানো!বড় তো সবাই হয়,মানুষ সবাই হয় না ।

এদের মানসিকতা এবং চাহিদার সাথে এডজাস্ট করতে গিয়ে পিতামাতাকে সবসময় উচ্চাঙ্গ নৃত্যের উপরে থাকতে হয় । এরা যে কি চায়,আর অন্যদের কি করতে বলে সেটা বোঝা রকেট সাইন্সের চেয়ে কঠিন ।

আমিও বয়ঃসন্ধির সময় প্রচুর পাগলামি করেছি , কিন্তু আমার মাতা সেই পাগলামি নিয়ে মোটেও চিন্তিত হন নাই । উনি যে এপ্রোচ নিয়ে আমাকে ডিল করেছিলেন তা হল, তুই পাগল হলে আমি পাগলি সমাজের রানী । উনি প্রমাণ করেছিলেন স্যান্ডেলের বারির উপরে কোন ওষুধ নাই ।

অথচ আমার পুত্রকে রাত তিনটা পর্যন্ত আব্বা সোনা করে কাউন্সেলিং করে আসার পরে সকাল বেলা সে ভিডিওর লিঙ্ক ইনবক্স করে - "হাও টু রেইজ আ কিড"।

মাঝে মাঝে মনে হয় সবকিছুর আধুনিকায়ন হলেও প্যারেন্টিং এর প্রাগৈতিহাসিক হিটলারি সিস্টেমটাই ভাল ছিল । দেখেন, সেই সিস্টেম এর মধ্যে বড় হয়েও আমরা তো মানুষের মতই হয়েছি,আর আমাদের বাচ্চাদের সাথে আধুনিক প্যারেন্টিং টেকনিক এপ্লাই করার পরেও এরা হয়েছে একেকটা ডিপ্রেশনের ফ্যাক্টরি ।

আমি প্রায়ই এর কারণ খুঁজি ,কেন ?কোথায় সমস্যা?কি ভুল হয়েছে ? যা চেয়েছে তার বেশী তো দিয়েছি,কিছুই এক্সপেক্টও করিনি জীবনেও ,পড়ালেখার প্রেশার দেই নি, তাহলে কেন এই ইম্ব্যালেন্স ।

তারপর পুত্রের কাছ থেকেই শোনা একটা দর্শন মনে পড়ে গেল -

একদিন কথা প্রসঙ্গে পুত্র বলছিল

আম্মু আজকাল রিলেশনশিপ গুলা টিকে না কেন জান?

বললাম - কেন?

সে বলল - কারণ এখন বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড এর যে কোন একজন সমস্ত এফর্ট দেয়,আরেকজন খালি এক্সপেক্টই করে । কিন্তু রিলেশনশিপ বিষয়টা হলও একটা খালি গ্লাসের মত। দুইপক্ষকেই সেইম এফরট দিয়ে গ্লাসটা ভরতে হয় সমান সমান । নইলে সম্পর্কে ইম্ব্যালেন্স তৈরি হয় ।

তার বক্তব্য শুনেই মনে হল এই কথা সমস্ত রিলেশনশীপের ক্ষেত্রেই সত্য ।এমনকি বাবা মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ।

এবং এই বিষয়ে হাতে কলমে প্রমাণ পেলাম একদিন যেদিন তাকে কলেজে ভর্তি করাতে গেলাম সেদিন

ডেস্কে বসে ফরম ফিল আপ করছিলাম , হঠাৎ সামনের ডেস্কের নিচে একজোড়া পায়ের দিকে চোখ আঁটকে গেল । পিতা পুত্রের পা ।

বিখ্যাত ব্রান্ড এর দামী জোড়া জুতার পাশে মিনিমাম সাত বছর আগে কেনা সাতশ টাকার বাটা স্যান্ডেল । মাত্রাতিরিক্ত ব্যাবহারের ধকল সইতে না পেরে গোড়ালির কাছের অংশটা গোল হয়ে ক্ষয়ে গেছে হয়ত আরও মাস দুয়েক আগেই ।

এটা দেখার পড় আমি অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম এবং সব বাবার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখতে শুরু করলাম ।

বিশ্বাস করেন কছুক্ষন পর এই মানব জনম আমার কাছে অর্থহীন মনে হল ।

শতকরা আশি জন পিতার জুতা পুরানো মলিন শতচ্ছিন্ন আর শতকরা একশ ভাগ পুত্রের পায়ে দামী জুতা ।

আমার হঠাৎ মনে হল এই পিতারাই একদিন বৃদ্ধাশ্রমে যাবেন ।

কারণ,পিতারা পুত্রদের পায়ের আরামের জন্য নিজেদের পায়ের গোড়ালি ফাটিয়ে ফেলেছেন,একসময় তাদের উন্নত জীবনের জন্য তিলে তিলে নিজেদের সমস্ত অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়ে বাতিল রদ্দি জিনিস হয়ে যাবেন।

ঝা চকচকে ফ্ল্যাটে কি কেউ শেষ হয়ে যাওয়া,বাতিল জিনিস রাখে...?

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top