What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made আশির দশকের গল্প ◼◽◾⬛⬜🔲🔳⚪❤💅 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
দুদিন আগেও আমি জানতাম না আজ আমার বিয়ে হবে। হঠাৎ করেই চাচী এসে বলল, ছেলের ছুটি কম,দেখা-দেখির সময় নেই।ছেলে নাকি তোকে চিনে।

তাই আজই তোর বিয়ে।



ছেলে বিমান বাহিনীর অফিসার।নাম ফয়সাল রাব্বি। পাশের গ্রামে বাড়ি। ভালো বংশের ছেলে।খুব ভালো প্রস্তাব।তোর আব্বা তো এক বাক্যে রাজী হয়ে গেলো।।আমরা আর কেউ না করি নি"



আমি সব শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।আমার লজ্জারাঙা চেহারায় বিয়ের সম্মতি স্পস্ট দেখতে পেয়ে, চাচী আলহামদুলিল্লাহ বলে চলে গেল।

আমাদের এলাকার মসজিদে বিয়ের কাজটা শেষ করে, জামাইকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসলো।



খান বাড়ির মেয়ে আমি।আমার বাবা ফারুখ খান সাধ্য মতো বিয়ের আয়োজন করেছে।



আমাকেও সুন্দর ভাবে বৌ সাজিয়ে খাটে বসিয়ে রেখেছে।আমাদের টিনের দোতলা বাড়ির চারপাশে রয়েছে হাসনা হেনা এবং বাগান বিলাস গাছের মনোরম শোভা।।



আমার রুমটা দোতলায়।আমার রুমটাকে তাজা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।ফুলের ঘ্রানে ঘরটা মৌ মৌ করছে

আমি ফুলে ভরা খাটে বসে,ভয়,লজ্জা,

ভালোবাসা মিশ্রিত অনুভুতি নিয়ে অপেক্ষা করছি আমার সপ্নের রাজকুমারের জন্য।



ঠিক দশটা বাজে রাজকুমারকে তার বন্ধুরা রুমে নিয়ে আসলো।



সবাই কিছুক্ষণ হাসি তামাসা করে চলে গেল। আমি বিশাল বড় ঘোমটা দিয়ে বসে ছিলাম।কেউ আমাকে দেখতে পায় নি।



জামাই দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে কাছে এসে বলল,আমার সপ্নের রাজকুমারী,এবার তোমার ঘোমটাটা খোল। প্রান ভরে তোমাকে দেখি।



এরপর সে নিজে এসে আমার ঘোমটা খুলে ফেলল।আমি আশির দশকের নায়িকাদের মত স্বলাজ ভঙিতে চোখ বন্ধ করে রাখলাম।

বুঝতে পারলাম জামাই আমাকে দেখছে।এরপর যা হলো। আমি তা দেখে বিস্মিত হলাম।

জামাই আমাকে দেখেই, পাঁচশ ভোল্টের বিদ্যুতে পিষ্ট হলো যেনো। হঠাৎ খাট থেকে নেমে দাঁড়ালো।

কিছুক্ষন পর বলতে লাগলো,

আপনি কে ! আপনি কে!



আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।



সে বার বার বলতে লাগলো বড় রকমের একটা ভুল হয়েছে। সে সাড়া ঘরে পায়চারি করতে লাগলো।



এরপর আমার কাছে এসে বসে আমাকে বলল,আমি কিছু কথা বলবো আপনাকে ধৈর্য ধরে শুনতে হবে।এছাড়া আমার আর কিছু করার নেই।



আমি শক্ত হয়ে বললাম, আপনি র্নিদিদ্ধায় সব বলেন।আমি শুনবো। এবার তিনি বলতে লাগলেন,

"আমি খাঁ বাড়ির মেয়ে সোহেলিকে ভালোবাসি।সোহেলিও আমাকে ভালোবাসে।"



আমার হৃদয়ের প্রতিটা শিরা উপশিরায় শুধু ওরই নাম ধ্বনিত হয়।আমার হৃদয় ক্যানভাসে শুধু ওরই ছবি আঁকা।সেই ছবি মুছে অন্য কারো ছবি আঁকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

আমি আপনাকে ঠকাতে পারবো না।মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় করতে পারবো না।"



এই কথাগুলো বলে বেলকোনিতে চলে গেল রাব্বি ।ওখানে একটা চেয়ারে বসলো।

আমি আস্তে করে গিয়ে তার পাশে দাড়াঁলাম। দেখি সে কাঁদছে।আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম।জোসনার আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম তার চোখের জলের স্রোতধারা।আমি কোন পুরুষকে এভাবে কাঁদতে দেখি নি কখনও।



আমি আস্তে করে আমার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।আমি বুঝতে পারিনি ভুলটা কোথায় হয়েছে।



আমার দুচোখে অশ্রু বন্যা বয়ে যাচ্ছে।বাহিরে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ওরা গভীর দুঃখে কাঁদছে।ইচ্ছে করছে তাদের সাথে আমি ও সুর তুলে কাঁদি।



গভীর রাত।মানুষটা একা একা বেলকোনিতে বসে আছে, আমার খুব মায়া লাগলো।



আমি উঠে গিয়ে বললাম, আপনি ভিতরে গিয়ে শুয়ে পড়ুন। নতুন জায়গা এভাবে একা একা বেলকোনিতে বসে আছেন।

আপনাকে জ্বীনে ধরবে।

এই কথাটা শুনে সে বলল, তাহলে আপনিও এখানে বসেন।

আমি বসলাম। দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। আমি বললাম,পানি খাবেন?

সে বলল,

খাওয়া যায়।

আমি উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি আর একটা কেক দিলাম।আমার রুমেই ছিল এগুলো।

সে আমাকে বলল,__আপনি কিভাবে বুঝলেন আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে।



আমি বললাম, __রাত জাগলে খিদা লাগে।আর চোখের পানি পড়লে পানির পিপাসা লাগে।এগুলো তো সবাই বুঝে।

আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?

__হ্যাঁ পারেন।



__আপনার প্রেমিকার চেহারাটা কেমন।কত দিনের প্রেম আপনাদের।



__ ওকে আমি প্রথম দেখেছি আমার কলেজে যাওয়ার পথে।



স্কুল ড্রেস পড়া ছিল। ছিপছিপে লম্বা শ্যামল বরণ।ওর ডাগর কালো চোখের দিকে হঠাৎ চোখ পড়ে যায় আমার সেদিন। আমি চোখ ফিরাতে পারলাম না।সেও অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার দৃষ্টিতে কত যে মধু! কি করে আপনাকে তা বোঝাবো। আমি চোখ ফিরাতে পারি নি। তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষন।মনে হয়েছে ও আমার আপনের চেয়ে ও আপন।

এরপর প্রতিদিন একবার দেখা হতো ওর সাথে কলেজে আসা যাওয়ার পথে।



একদিন একটা চিঠি দিলাম।সেও একটা চিঠি দিল। চিঠিতে লিখা ছিল শুধু একটা কথা।

ভালবাসি।

ইতি সোহেলি।

আমি খোঁজ নিয়ে জানলাম,সে খান বাড়ির মেয়ে।ক্লাস নাইনে পড়ে।"

আমাদের প্রেম গাঢ় হতে থাকে। আমি এইচ এস. সি.পাস করে ঢাকা চলে এলাম। আসার আগে ওকে বললাম, আমার জন্য অপেক্ষা করো।



আমি ঢাকা এসে কমিশনে টিকে গেলাম।এরপর এক ফাঁকে কয়েকদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে আসলাম কিন্তু ওর দেখা পেলাম না।

ওদের স্কুল তখন বন্ধ ছিল। আমি বিমান বাহিনীর ট্রেনিংয়ে চলে গেলাম।একটা দিনও ওকে আমি ভুলে থাকতে পারি নি। ওর সাথে যোগাযোগের কোন মাধ্যম খুজেঁ পেলাম না।



এর মধ্যে আমি ট্রেনিং শেষ করে দেশে আসলাম। অনেক কষ্টে ওর সাথে দেখা করলাম।



এত যে ভীতু।খুব ভয়ে ভয়ে থাকতো। গ্রামের কেউ জেনে গেলে তার বাবার মান সন্মান চলে যাবে, এটাই ছিল ওর বড় চিন্তা। আমি বললাম, তুমি টেনশন করো না। আমি ঠিক সময় মতো তোমাকে বৌ করে আমার কাছে নিয়ে আসবো।এরপর আর কোন যোগাযোগ হয় নি ওর সাথে।



আমি আমার ভালোবাসার কথা আমার বড় ভাবীকে বলেছি।



সোহেলি বলল,আজ আপনি ওকে বিয়ে করবেন এটা ওকে জানান নি কেন।

রাব্বি বলল, সে রকম সুযোগ ছিল না।ভাবলাম,একেবারে বিয়ে করেই চমকে দিবো ওকে।

এরপর একটা সাদাকালো পাসপোর্ট সাইজের ছবি তার ওয়ালেট থেকে বের করে সোহেলিকে দেখালো। ছবিটা দেখে সোহেলি চমকে গেলো।

সোহেলি বলল,এতো আমার ফুফাতো বোন।

ওদের বাড়ি থেকে স্কুল অনেক দুরে, তাই কোহেলী আমাদের বাড়ি অর্থাৎ তার নানাবাড়ি থেকে পড়াশুনা করতো। কোহেলী নিজের নাম না বলে আমার নাম বলল কেন? মনে হয় ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে।



রাব্বি বলল, হতেও পারে।তবে এই ছবিটার মেয়ে যদি কোহেলি হয়, তাহলে আমি কোহেলিকেই ভালোবাসি। আমি ওর জায়গায় কাউকে বসাতে পারব না।



সোহেলি বলল, এখন সমাধান কি?

রাব্বি বলল ডিভোর্স।

সোহেলি বলল,আমাকে ডিভোর্স দিলে আমাদের পরিবার কি কোহেলিকে আপনার হাতে তুলে দিবে?

___

__আমি জোড় করে কোহেলিকে তুলে নিয়ে যাবো।

সোহেলি খিক খিক করে হেসে ওঠে বলল, সিনেমার হিরোদের মতো।



সোহেলি চিন্তায় পড়ে গেলো।



সোহেলি ভাবতে লাগলো, রাব্বি যদি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়,তাহলে এই সমাজে আমি মুখ দেখাবো কি করে।



কি করবো আমি এখন? তবে কি আমার মৃত্যুই একমাত্র সমাধান?



আত্মহত্যা মহাপাপ। এটা জেনেও আমাকে এই কাজটি করতে হবে। বেঁচে থেকে তিলে তিলে মরে যাওয়ার চাইতে এক সাথেই মরে যাবো। এটাই ভালো। অথবা একটা চাকরি যোগার করে ওদের জীবন থেকে সরে যাবো।যা করবো ধীরে সুস্থেই করবো।



এর মধ্যেই ফজরের আজানের ধ্বনি শুনতে পেলো সোহেলি।



সোহেলি অজু করে নামাজ পড়ে নিল।

রাব্বিকে বলল,আপনি এবার একটু ঘুমান।আমি নীচে যাই।বাড়ি ভর্তি মেহমান।ওদের জন্য মা নিশ্চয়ই পিঠা বানাতে বসে গেছে।আমিও যেয়ে হাত লাগাই।

সোহেলি কে দেখে তার ভাবী রসাত্বক টিপ্পনি কাটতে লাগলো।

সোহেলি সবার সাথে অভিনয়ের হাসি হেসে পিঠা বানাতে বসে গেল।



সকাল ন 'টার মধ্যে মেহমানদের নাস্তা খেতে দিল।রাব্বিও বেশ কয়েকটি পিঠা খেলো।

এরপর চা খাওয়ার পর পরই রাব্বির বুকে হঠাৎ ব্যথা শুরু হলো। পাশেই হসপিটাল থেকে ডাক্তার এনে চিকিৎসা দিল। রাব্বিদের বাড়িতেও খবর পৌঁছে গেল।



রাব্বির আব্বা আম্মা শুনেই ছুটে আসলো বিয়াই বাড়ি। রাব্বিকে ইমারজেন্সি ঢাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিল ডাক্তার।

রাব্বির আব্বা আম্মা আমাকে বলল, মা তুমি ও রেডি হও।আমি বললাম __ আমি কেন যাবো।



__কি বলো মা।তোমাকে আমার ছেলেটা কত ভালোবাসে।তোমাকে নিয়ে যাবে বলে সে কত বড় ফ্লাট নিয়েছে।



আমি মনে মনে বললাম, আপনারা ভুল জানেন। আমি তার ভালোবাসার কেউ না।তার ভালোবাসার মানুষ হলো অন্য কেউ।



এরপর আমার আব্বাকে বলল, কি বিয়াই সাহেব,সোহেলি কে নিয়ে গেলে কোন সমস্যা আছে?

__ সোহেলি এখন আপনাদের বৌ।আপনাদের ইচ্ছেটাই মুখ্য।

অবশেষে সবার ইচ্ছেতেই ঢাকা এলাম মরা লাশের মতো।

ঢাকা এসে সি এম এইচে ভর্তি করানো হলো রাব্বিকে। একটা ছোট অপারেশন হলো রাব্বির। আমি রাব্বির সেবায় নিয়জিত হলাম।

সকাল বিকাল টাইম করে ঔষধ খাওয়াচ্ছি।

পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় একমাস চলে গেল।

আমি একদিন একটা লাল রঙের শাড়ি পরে চা নিয়ে সবাইকে দিচ্ছিলাম। আমার শ্বাশুড়িমা আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, আমার ছেলের পছন্দের প্রশংসা করতে হয়।এত সুন্দর বৌ আমরা খুঁজে আনতে পারতাম না।মাশাআল্লাহ।



রাব্বির দিকে চোখ পড়তেই দেখি সে ফ্যাল ফ্যাল করে হাসছে।



আমি রুমে চলে গেলাম।রাব্বিও পিছনে পিছনে আসলো।

আমি বললাম,

__

বসেন কথা আছে।।সামাজিক ভাবে আমি আপনার স্ত্রী,তাই সেবা যত্ন করেছি।

এখন আপনি সুস্থ হয়ে গেছেন।এখন আমাকে মুক্তি দিয়ে কোহেলিকে তুলে আনেন।



এই কথাটা শুনে ,রাব্বি তার ওয়ালেট থেকে কোহেলির ছবিটা বের করে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে

আমার হাতে দিয়ে বলল, __কোহেলির ছবিটা ছিড়ে ফেললাম।তোমার সাথে মিথ্যা বলবো না। ওকে মন থেকে ভুলতে পারবো কিনা জানিনা। হয়তোবা এ প্রেম থাকবে চির যৌবনা।

তবে এটা হলো আবেগ আর তুমি হলে আমার বাস্তব। বাস্তবের উপরে সবর থাকা প্রকৃতির ইচ্ছা। বাস্তবতাকে মেনে নেয়াটাই মানুষের ধর্ম।



আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। তাই সব কথা ভুলে গিয়ে,তুমি যদি আমাকে ভালোবেসে তোমার হাতটি ধরার সুযোগ দাও তবে দুজনে একসাথে এই জীবন তরী বইয়ে যাবো।

এরপর আমার হাতটা তার হাতের মুঠোয় নিলো।মনে হলো যেনো একটা নির্ভরযোগ্য ভালবাসার হাত আমাকে স্পর্শ করলো।



তার ভালোবাসার হাতটা এতই মজবুত ছিল আমার এই চল্লিশ বছরের বিবাহিত জীবনে এক মুহুর্তের জন্য ওকে ছেড়ে যাবার ইচ্ছে হয় নি কোন দিন।



আজ আমাদের বিবাহিত জীবনের চল্লিশ বছর। মানুষটা আমাকে বলল,

সেই গানটা গেয়ে শুনাও তো আমাকে, যে গানটা তুমি প্রায় অফিসার্স ক্লাবের পার্টিতে গাইতে।



আমি হারমোনিয়ামটায় হাত রেখে তার চোখের দিকে তাকিয়ে গানে সুর তুললাম।



ভালোবেসে সখি নিভৃত যতনে আমার নামটি লিখ তোমার মনেরও মন্দিরে।

আমার পরানে যে গান বাজিছে

তাহার তালটি শিখো-- তোমার

চরণমঞ্জীরে॥

ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে

আমার মুখর পাখি-- তোমার

প্রাসাদপ্রাঙ্গণে॥

মনে ক'রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো

আমার হাতের রাখী-- তোমার

কনককঙ্কণে॥

আমার লতার একটি মুকুল

ভুলিয়া তুলিয়া রেখো-- তোমার

অলকবন্ধনে।



(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top