আমি আয়েশার সব কথা শুনে মনে মনে ভয়ংকর একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। সেটার জন্য চাই মাথাকে ঠান্ডা রেখে প্লেনিং করা। ওকে বললাম, তুমি এখন কোথায় যাবে? ও বললো, আপু আমি অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে দেশে জায়গা কিনেছি ঘর করেছি ওখানে চলে যাবো।
আমি বললাম, আমি না বলা পর্যন্ত তুমি এখানেই থাকো। আর আমি ছাড়া কেও কল দিলে তুমি রিসিভ করবেনা। আমি থাকতে তোমাকে কেও কিছু করতে পারবে না। এসবের বিচার হবে। তারপর যাবে।
এবার তুমি আমাকে ওই ভিডিও মেসেজটি ফরোয়ার্ড করো। মেয়েটি আমাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে তাই করলো।
আমি আয়েশার ওখান থেকে বাসায় চলে এলাম।
আমি এসে খুব কাঁদলাম!! আমার স্বামী এমন একটা কাজ করেছে সে জন্য না, আমার মনে হচ্ছিলো, আমি এই পাঁচ বছর এতো কষ্ট করে কি করলাম? আমি তো এই বখে যাওয়া ছেলেকে ঠিক করতে পারিনি। নিজের অপারগতার জন্য নিজের উপর রাগ হতে লাগলো। আমি তো তাকে ইতিমোধ্যে ভালবেসে ফেলেছি।
এবার আমার প্রতিশোধ নেয়ার পালা...!!
আমি আমার প্রতিমন্ত্রী মামুজানকে ফোন করলাম, মামা কেমন আছেন? মামার উওর,আর থাকা এতোদিনেও আমারে তুই মন্ত্রি বানাইতে পারলিনা। আবার জিগায় কেমন আছেন? আমি বললাম, আমার একটা কাজ করে দেন। মামা উত্তেজিত হয়ে বললো, মিনিষ্টারের পুতের বউ এর কাজ করমু আমি? কস কি ভাগ্নি?
মামু সব কাজ কি সবাইরে দিয়া হয়?
মামা জানতে চাইলো, কি কাজ বল।
আমি একজনের ফোন নাম্বার দিচ্ছি তার নাম সাত্তার তুমি ওই লোকেরে আগামিকাল বিকেলে হোটেল সোনারগাঁও নিয়া আসবা। সে জানে তুমি শাহেদের মামা, সে ফুরফুর কইরা চইলা আসবো।
আমি থাকমু ওইখানে তুমি খালি কইবা আমি তোমার ভাগ্নি আর শাহেদের বউ ব্যাস এই তোমার কাম। এরপর তুমি চলে যাইবা।
কাম আমার তার সাথে। ঠিক মতো যদি না করো আগামি ইলেকশনে তোমার নোমিনেশন ক্যানসেল..। মামা ফোন রাখার সময় খালি বললো, এইটা আমার বাঁ হাতের কাজ। ওই পোলারে আমি চিনি দুনিয়ার বদ। মামার উত্তরে আমি বললাম, হুম মামু রতনে রতন চিনে..!
আমি ফোন রাখতে রাখতে শুনি মামা বলতেছে, এই মাইয়া এতো ডেঞ্জারাস হইলো কেমনে? আমি মনে মনে বললাম,তুমি তো আমারে এই পর্যন্ত আনছো। শাহেদ আসার আগেই আমার যা করার করতে হবে।
পরদিন বিকেলে আমি প্ল্যান মতো সেখানে যাই, দূর থেকে আমাকে দেখে মামা আর সাত্তার এগিয়ে আসে। সাত্তারের চোখে রাজ্যের বিস্ময়!!! মিনিষ্টার ইমরুল চৌধুরীর একমাত্র ছেলের বউ এবং চৌধুরী কোম্পানির মালিকের বউ তার সামনে জলজ্যান্ত!! মামা আমাদের বসিয়ে কথামতো চলে গেলেন। ওই ব্যাটা তো নার্ভাস প্লাস উত্তেজিত হয়ে বললো, ম্যাডাম আপনি কেনো কষ্ট করে আসলেন? আমি আপনার সাথে দেখা করতাম।
আমি খুব বিনয়ের সাথে বললাম, সময়ে সিংহকে কুকুরের কাছে আসতে হয়!! ওই শয়তানটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, জ্বি জ্বি।
আমি মনে মনে হাসলাম, এদের মতো শয়তান যেমন আছে এই সমাজে তেমনি আছে সাধু মানুষ নইলে যে দেশটা পঁচে যেতো। এই কিছু আগাছা সাফ করতে পারলে গাছ লকলক করে বেড়ে উঠবে..!
এবার আমি সোজা হয়ে বসলাম আমার ক্ষমতা খাটাতে হবে আমার বর্তমানের।
আমি তাকে বললাম, আমাকে গতকাল একজন ফোন করে বললো আপনি নাকি আমার স্বামী শাহেদ চৌধুরীর একটা বাজে ভিডিও করেছেন? তাকে ব্ল্যাকমেইল করবেন? আমি তা কিছুতেই হতে দিবো না।
সাত্তার সাথে সাথে ভান করতে লাগলো, ম্যাডাম এটা একদম মিথ্যা কথা। শাহেদ স্যার আমার বস উনার জন্য আমি চারটা রুজিরোজগার করতে পারি আর আমি করবো এটা?
আমি খুবই কড়া ভাবে বললাম, আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। আমি প্রমাণ ছাড়া আসিনি। তখন ওই লোক বেলুনের মতো চুপসে গেলো।
এবার আমি বললাম, আপনি কি এটা আরো কপি করেছেন বা কাওকে দিয়েছেন?
জ্বিনা ম্যাডাম.! ল্যাজকাটা কুকুরের জবাব। এবার আমি বললাম, যদি সত্যি বলে থাকেন দ্যাটস ফাইন। এবার আপনার মোবাইল বের করেন। সে তাই করলো। আমি বললাম, আমার সামনে ওই ভিডিও ডিলিট করেন। সে চুপ করে থাকলো। এবার আমি বললাম, যদি বেশি তেড়িবেড়ি করেন তবে আপনার কোম্পানি তো যাবেই সাথে আপনাকে জেলে দিবো আমার শ্বশুরকে বলে। উনাকে আমি এখনো কিছু বলিনি।
আর আমার চারিদিকে সিকুরিটির লোক আছে সাধারণ পোশাকে। গিভ মি টু ইউর ফোন।
সে ফোনটা দিয়ে দিলো আমি সাথে সাথে ফোনটা নিয়ে উঠে চলে এলাম। গাড়িতে বসে ভিডিওটা ডিলিট করে কিছু ইনফরমেশন নিয়ে সিমটা খুলে ব্যাগে রাখলাম। গাড়ির জানালা খুলে একটা ফকিরের হাতে ফোনটা দিয়ে মনেমনে হাসলাম.. অনেক সময় মুল্যবান জিনিস মূল্যহীন মানুষকে দিতে হয়। এরা অন্ততপক্ষে খারাপ মূল্যায়ন করবেনা...!
আমি আসার সময় সাত্তারের চেহারায় পাগলা কুকুরের ভাব দেখতে পেয়েছি। সে জানে নুসরাত ওরফে আয়েশার কাছে এই ভিডিও আছে এবং এটা নুসরাতই করেছে। ও আয়শার অনেক বড় ক্ষতি করবে যা আমি বেঁচে থাকতে হবেনা। আমি আয়েশাকে ফোন করে বললাম, তুমি এক্ষন মুন্না আর বাচ্চাদের নিয়ে আমার বাসায় চলে যাও। সামনে অনেক বিপদ। মাজেদকে ফোন দিয়ে বললাম, আয়েশাদের জন্য গেষ্ট রুম খুলে দাও। আর আমি না আসা পর্যন্ত তুমি কারো ফোন ধরবেনা এবং দরজা খুলবেনা। ওদের বলবে রুমে দরজা বন্ধ করে থাকতে।
আমি ড্রাইভারকে বললাম, মিন্টু রোড যাও। আমার শ্বশুরের সাথে কথা বলা খুব দরকার। শাহেদ আসতে আরো নাকি দুদিন দেরি এর মাঝেই আমাকে সব করতে হবে। গাড়ী ছুটে চললো আমার গন্তব্যে...!!
অহনার ফোন পেয়ে আয়েশা খুব ভয় পেলো। সে বুঝে নিলো অহনা আপু না বুঝে কিছু বলেনি। তার জন্য না হোক তার বাচ্চাদের আর মুন্নার সেফটির জন্য তাকে যা করার করতে হবেই। সমস্যা হলো মুন্না..! ওকে সে কি বলবে? মুন্না তো জানতে চাইবে
কেনো আমরা ওই বাসায় যাবো? মেয়েরা স্বামীর কাছে সব বলতে পারে কিন্তু নিজের খারাপ পথে যাওয়ায় কথা বলা যায়না..প্রতিটা মেয়ের পায়েই স্বামীর দেয়া শেকল থাকে, হোক স্বামী অথর্ব..!
কোনো কোনো সময় বিধাতার তরফ থেকে কেমন করে যেনো সাহায্য চলে আসে নিজের অনুকূলে।
মুন্নাকে ওদের দলের কে যেনো ফোন করে বলেছে, বাসা থেকে শীঘ্রই সরে যেতে নইলে ওর বাচ্চাদের উপর বিপদ হবে। এটা শুনে মুন্না বললো, আয়েশা তাড়াতাড়ি আমদের এই বাসা থেকে সরে পড়তে হবে। ব্যাস আয়েশা তার কথার সুযোগ পেয়ে গেলো। সে বললো, অহনা আপুর স্বামী দেশের বাহিরে আমার অহনা আপুর সাথে কথা হইছে। উনার বাসায় আমরা দ্রুত যেতে পারবো আর ওটা আমাদের জন্য নিরাপদ।
নিজের বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য একজন বাবা সব করতে পারে।
মুন্নাকে আর বাচ্চাদের নিয়ে আয়েশা খুব দ্রুত অহনার বাসায় চলে এলো। আয়েশার ফোনে সাত্তারের অফিসের ফোন থেকে না হলেও দশটা কল। সে ফোন বন্ধ করে রাখলো।
আমার গাড়ি সরকারি বাসভবনের সামনে থামলো, আমি দেখছি আমার শ্বাশুড়ির গাড়িতে ড্রাইভার লাগেজ উঠাচ্ছে। আমি ভয় পেলাম আমার শ্বশুর বাহিরে যাচ্ছে নাকি? তবে তো আমার কাজের কিছুই হবেনা। আমি গাড়ি থেকে নেমে তাড়াতাড়ি ভিততে গেলাম। আমার শ্বাশুড়ি আমাকে দেখে মুখ কালো করে রাখলো,উনি আমার উপর খুব অসন্তুষ্ট কারণ আমি তার ছেলেকে নিয়ে আলাদা থাকি তাই। কেনো যে এই বাসায় থাকা যায়না সেটা তো উনাকে বলা যাবেনা ইনি বুঝবেনওনা।
এই দেশে যে মহিলার স্বামী বড় কর্মকর্তা হয় তাদের পাওয়ার তাদের স্বামীদের থেকেও বেশি থাকে।
উনি আমাকে বললো, অহনা তুমি বস চা নাস্তা দিবে ওরা, আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে পাঁচদিনের ট্যুরে সিংগাপুর যাচ্ছি। তোমার শ্বশুর তার রুমেই আছে। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। উনি থাকলে আমার শ্বশুরের সাথে কথা বলাই মুশকিল হতো উনার আড়িপাতার যন্ত্রণায়।
আল্লাহ কি যে ভালো একটা সুযোগ করে দিলেন।
ভালো কাজে মানুষ কখনো ঠেকেনা এটাই তার প্রমাণ।
শ্বাশুড়িকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আমি উপরে আমার শ্বশুরের রুমে গেলাম। আমার বাবা মারা গেছে সেই কবে আমি উনার কাছে সেই আদরটুকু
পাই। উনি আমাকে দেখে উঠে এসে জড়িয়ে ধরলেন। বাসায় ঢুকেই যে কোল্ড রিসিপশন পেয়েছিলাম উনার আদরে তা কাটাকাটি।
কিরে মা কেমন আছিস? আমি উনাকে সালাম করে বললাম,ভালো আছি। আপনার শরীর কেমন আব্বু?
উনি খুব ভোজন রসিক মানুষ কিন্তু ডাইবেটিস হাই। তবুও লুকিয়ে হলেও মিষ্টি খাবেন।
আমাকে বললেন, ফ্রিজে কুমিল্লার রসমালাই আছে। গতকাল একজন নিয়ে আসছে, তোর শ্বাশুড়ি খেতে দেয়নি। আমি বললাম, আব্বু আগে আপনার সুগার মাপবো তারপারে ওটা দিবো।
আমি সুগার মেপে দেখি ঠিক আছে খেতে দেয়া যায়। দুজনে মজা করে খেলাম, আমার স্মৃিতি বিজরিত কুমিল্লার রসমালাই।
আমি এবার আমার কাজের কথায় এলাম।
আব্বু আমার একটা কাজ করে দিবেন।
আমি জানি উনি কোনো সুপারিশ পছন্দ করেননা। তবে যদি জেনুইন হয়। তাহলে করেন। একটা নারী ব্যাবসায়িকে ধরিয়ে দেয়া নিশ্চয়ই জেনুইন।
আমি উনাকে সাত্তারের কথা সব বললাম, শুধু উনার ছেলের কথা বলি নাই উনার মনে কষ্ট পাবেন। তবে উনি আন্দাজ করতে পারেন উনার ছেলে মায়ের আস্কারা পেয়ে খারাপ কিছু করে।
উনাকে দিয়ে পুলিশের আইজিকে ফোন করিয়ে সাত্তারের কোম্পানি সিস করা এবং রাতেই সাত্তারকে গ্রেফতার করার ব্যাবস্থা করে তবেই আমি বাসার পথে রওনা করলাম।
রাত প্রায় দশটা বাজে জ্যামের শহর ঢাকায় আজ কেনো জানি জ্যাম নেই। বাহিরে ঠান্ডা বাতাস আমি গাড়ির গ্লাস খুলে দিলাম নিজেকে অনেক হাল্কা লাগছে... কি শান্তি।
আসার সময় আমার শ্বশুরকে ধরে আমি খুব কাঁদলাম। উনার চোখে আমি জলের আভাস দেখেছি।
উনি আমাকে বলেছে, অনেক তো চেষ্টা করলি, এবার ঘরে ফিরে যা তোর জীবন তুই বানিয়ে নে। একটা মেয়ের বড় প্রাপ্তি হচ্ছে মা হওয়া তোর সেই ক্ষমতা আছে। তুই চলে যা।
আমি বললাম, আব্বু আমার কাছে মা হওয়ার চেয়ে ভালোবাসা আর সম্মানের মুল্য অনেক বেশি। বাচ্চা? সেতো বাংলাদেশে কত অনাথ আর পথশিশু আছে ওদের নিয়ে বড় কিছু একটা করলে ওটা কি বাচ্চার চেয়ে কম হবে? শুধু গর্ভে ধারণ করলেই মা হওয়া যায়না। উনি আমার দিকে গভির মমতায় তাকিয়ে ছিলেন।
গাড়ি বাসায় চলে আসছে। আমি বাসায় যেয়ে সোজা ওয়াসরুমে যাই ব্যাগ থেকে ওই সিমটা কমোডে ফ্ল্যাস করে দেই।
আয়েশাকে আমি যা করেছি সব বললাম। আয়েশার চোখে কৃতজ্ঞতার ভাষাটা এমন ছিলো আমার৷ মনে হচ্ছিলো ও বলছে,তোমার এই ঋণ আমি শোধ না করে মরবোনা। ও খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো আমরা তাহলে বাসায় চলে যাই। আমি বললাম আজকের রাতটা থেকে সকালে যেও। ওরা রাজি হলো।
পরদিন পত্রিকায় বড় বড় হেডলাইন দিয়ে সাত্তারের গ্রেফতার এর খবর।
আমার আরো কাজ বাকি সেটা হলো শাহেদের মুখোমুখি হওয়া। ও আসতে আরো দুদিন সে
আসার তারিখ বাড়িয়েছে। আমি কি করবো?
আমার শ্বশুরের জন্য অনেক মায়া হয়। এই দেশে সৎ মানুষেরা এই ধরনের পোস্টে বেশিদিন থাকতে পারেনা। উনি সৎ কিন্তু উনার স্ত্রী আর ছেলে উনার সততার পুরোই অবমাননা করছে। উনি এই পদে না থাকলে উনাকে দু পয়সারও দাম দিবেনা এরা।
তবুও আমাকে আমার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শাহেদ আসলে সব ফয়সালা করবো..! রাগে,ঘৃণায় আমার অসহ্য লাগছে।
আয়েশারা দেশে চলে যাবে। ওখানে ও কোনো স্কুলে চাকরি নিবে। গ্রামে বাচ্চারা ভালো মানুষ হবে। আমি কি করবো?
যে মামা আমার জীবনের এই পরিনতি করেছে তার বিচার আগে করবো?
আমাকে আয়েশা বলেছিলো, আপনার মতো এতো ভালো আর সাহসি মেয়ের জীবন যে এভাবে নষ্ট করেছে তাকে আমি যদি সুযোগ পাই উচিত শিক্ষা দিবো। রাত এগারোটা বাজে ঘুম আসছেনা, টিভি অন করলাম, নিউজে হেডলাইন "প্রতিমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেনকে গুরুতর ভাবে আহত অবস্থায় হোটেল শেরাটন থেকে উদ্ধার।" যে তাকে এমন করেছে সে একজন নেকাব পড়া মহিলা। পুলিশ তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। "
আমি এক দৌড়ে বারান্দায় গেলাম আয়েশাদের বাসা অন্ধকার। ওরা তো আগামীকাল রাতের ট্রেনে যাবার কথা। হঠাৎ আমার ফোনে আননোন নাম্বারে ফোন.... আপু আমি আয়েশা, আপু আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলাম না আপনার জীবন নষ্ট করা আপনার মামাকে। আজ আমি উনাকে কল করি, নুসরাত কলগার্লের অফার কেও মিস করেনা। উনি আমাকে শেরাটনে যেতে বলে, আমি যাই সেখানে, এরপর ওরে আমিই এমন ভাবে আহত করি সারা জীবন সে আর মেয়েদের ক্ষতি করতে পারবে না। সে বেঁচে থাকবে। কিন্তু হিজরার জীবন নিয়ে। আপু আমি শুধু তোমার ঋণটুকু পরিশোধ করেছি। আমাকে মাফ করে দিও।
আমি পুলিশের কাছে নিজেকে ধরা দিবো।
তুমি কি বলছো তুমি জানো আয়েশা? তোমার দুটো বাচ্চা আছে পংগু স্বামী ওদের কি হবে?
আপু আমি ওদের সকালের ট্রেনে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওরা নিরাপদ আছে।
তুমি এখন কোথায়?
আমি কাওরান বাজারের একটা বস্তিতে লুকিয়ে আছি।
শোন আয়েশা তুমি সোজা একটা সিএনজি নিয়ে বিমান বন্দর রেল ষ্টেশনে চলে যাও রাত বারোটায় একটা ট্রেন আছে ওটা ধরে সোজা দেশে চলে যাও। তোমার নেকাবের আড়ালে কেও তোমায় চিনেনা।
আমি এক্ষন রওনা দিচ্ছি।
আমি সাথে সাথে উবার কল করে বেরিয়ে পড়ি। যাবার সময় মাজেদের হাতে একটা চিঠি দিয়ে বলি, সাহেব এলে উনাকে দিবে। চিঠিটা আমি আজ দুপুরে লিখেছি।
ওই চিঠিতেই শাহেদের প্রতিশোধ.... !! কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয়না। তবে কেটে ফেললে লেজকাটা কুকুর হয়ে ভেউ ভেউ করবে। চিঠির ভাষাতেই লেজ কেটেছি..ভাষা এমন এক অস্ত্র যা দিয়ে সব করা যায়। এর ব্যাবহার খারাপ ভালো দুভাবেই হয়... পরিস্থিতি বুঝে!
মনের ভাষা লেখায় যেভাবে প্রকাশ করা যায় তা অনেক সময় মুখেও যায়না। আমি তাই করেছি.. প্রতিহিংসার আগুন খুব খারাপ সামনে থাকলে হয়তো আরেকটি খুন হতো।
সে লেজকাটা কুকুরের মতো ভেউ ভেউ করতে করতে আমাকেই খুঁজবে। কারণ আমাকে ছাড়া সে অচল প্রাণী। এটাই ওর শাস্তি...!!
আমার লোভি মামার প্রতিশোধ আমার নিতে হয়নি। আমার প্রতিচ্ছবি নিয়েছে....!
আয়েশাকে আমার রক্ষা করতেই হবে। ওর দুই ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে হবে। মুন্নাকে আবার আগের জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। ওরা যে আমাদের সহযোদ্ধা । একজন নারীই পারে সমাজকে ঠিক করতে।
নারীর শক্তি হচ্ছে একজন সবল সৎ পুরুষ আর পুরুষের শক্তি হচ্ছে সৎ নারী যার অন্তরে থাকবে শুধু মমতা ঠিক আমার মায়ের মতো....
(সমাপ্ত)
আমি বললাম, আমি না বলা পর্যন্ত তুমি এখানেই থাকো। আর আমি ছাড়া কেও কল দিলে তুমি রিসিভ করবেনা। আমি থাকতে তোমাকে কেও কিছু করতে পারবে না। এসবের বিচার হবে। তারপর যাবে।
এবার তুমি আমাকে ওই ভিডিও মেসেজটি ফরোয়ার্ড করো। মেয়েটি আমাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে তাই করলো।
আমি আয়েশার ওখান থেকে বাসায় চলে এলাম।
আমি এসে খুব কাঁদলাম!! আমার স্বামী এমন একটা কাজ করেছে সে জন্য না, আমার মনে হচ্ছিলো, আমি এই পাঁচ বছর এতো কষ্ট করে কি করলাম? আমি তো এই বখে যাওয়া ছেলেকে ঠিক করতে পারিনি। নিজের অপারগতার জন্য নিজের উপর রাগ হতে লাগলো। আমি তো তাকে ইতিমোধ্যে ভালবেসে ফেলেছি।
এবার আমার প্রতিশোধ নেয়ার পালা...!!
আমি আমার প্রতিমন্ত্রী মামুজানকে ফোন করলাম, মামা কেমন আছেন? মামার উওর,আর থাকা এতোদিনেও আমারে তুই মন্ত্রি বানাইতে পারলিনা। আবার জিগায় কেমন আছেন? আমি বললাম, আমার একটা কাজ করে দেন। মামা উত্তেজিত হয়ে বললো, মিনিষ্টারের পুতের বউ এর কাজ করমু আমি? কস কি ভাগ্নি?
মামু সব কাজ কি সবাইরে দিয়া হয়?
মামা জানতে চাইলো, কি কাজ বল।
আমি একজনের ফোন নাম্বার দিচ্ছি তার নাম সাত্তার তুমি ওই লোকেরে আগামিকাল বিকেলে হোটেল সোনারগাঁও নিয়া আসবা। সে জানে তুমি শাহেদের মামা, সে ফুরফুর কইরা চইলা আসবো।
আমি থাকমু ওইখানে তুমি খালি কইবা আমি তোমার ভাগ্নি আর শাহেদের বউ ব্যাস এই তোমার কাম। এরপর তুমি চলে যাইবা।
কাম আমার তার সাথে। ঠিক মতো যদি না করো আগামি ইলেকশনে তোমার নোমিনেশন ক্যানসেল..। মামা ফোন রাখার সময় খালি বললো, এইটা আমার বাঁ হাতের কাজ। ওই পোলারে আমি চিনি দুনিয়ার বদ। মামার উত্তরে আমি বললাম, হুম মামু রতনে রতন চিনে..!
আমি ফোন রাখতে রাখতে শুনি মামা বলতেছে, এই মাইয়া এতো ডেঞ্জারাস হইলো কেমনে? আমি মনে মনে বললাম,তুমি তো আমারে এই পর্যন্ত আনছো। শাহেদ আসার আগেই আমার যা করার করতে হবে।
পরদিন বিকেলে আমি প্ল্যান মতো সেখানে যাই, দূর থেকে আমাকে দেখে মামা আর সাত্তার এগিয়ে আসে। সাত্তারের চোখে রাজ্যের বিস্ময়!!! মিনিষ্টার ইমরুল চৌধুরীর একমাত্র ছেলের বউ এবং চৌধুরী কোম্পানির মালিকের বউ তার সামনে জলজ্যান্ত!! মামা আমাদের বসিয়ে কথামতো চলে গেলেন। ওই ব্যাটা তো নার্ভাস প্লাস উত্তেজিত হয়ে বললো, ম্যাডাম আপনি কেনো কষ্ট করে আসলেন? আমি আপনার সাথে দেখা করতাম।
আমি খুব বিনয়ের সাথে বললাম, সময়ে সিংহকে কুকুরের কাছে আসতে হয়!! ওই শয়তানটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, জ্বি জ্বি।
আমি মনে মনে হাসলাম, এদের মতো শয়তান যেমন আছে এই সমাজে তেমনি আছে সাধু মানুষ নইলে যে দেশটা পঁচে যেতো। এই কিছু আগাছা সাফ করতে পারলে গাছ লকলক করে বেড়ে উঠবে..!
এবার আমি সোজা হয়ে বসলাম আমার ক্ষমতা খাটাতে হবে আমার বর্তমানের।
আমি তাকে বললাম, আমাকে গতকাল একজন ফোন করে বললো আপনি নাকি আমার স্বামী শাহেদ চৌধুরীর একটা বাজে ভিডিও করেছেন? তাকে ব্ল্যাকমেইল করবেন? আমি তা কিছুতেই হতে দিবো না।
সাত্তার সাথে সাথে ভান করতে লাগলো, ম্যাডাম এটা একদম মিথ্যা কথা। শাহেদ স্যার আমার বস উনার জন্য আমি চারটা রুজিরোজগার করতে পারি আর আমি করবো এটা?
আমি খুবই কড়া ভাবে বললাম, আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। আমি প্রমাণ ছাড়া আসিনি। তখন ওই লোক বেলুনের মতো চুপসে গেলো।
এবার আমি বললাম, আপনি কি এটা আরো কপি করেছেন বা কাওকে দিয়েছেন?
জ্বিনা ম্যাডাম.! ল্যাজকাটা কুকুরের জবাব। এবার আমি বললাম, যদি সত্যি বলে থাকেন দ্যাটস ফাইন। এবার আপনার মোবাইল বের করেন। সে তাই করলো। আমি বললাম, আমার সামনে ওই ভিডিও ডিলিট করেন। সে চুপ করে থাকলো। এবার আমি বললাম, যদি বেশি তেড়িবেড়ি করেন তবে আপনার কোম্পানি তো যাবেই সাথে আপনাকে জেলে দিবো আমার শ্বশুরকে বলে। উনাকে আমি এখনো কিছু বলিনি।
আর আমার চারিদিকে সিকুরিটির লোক আছে সাধারণ পোশাকে। গিভ মি টু ইউর ফোন।
সে ফোনটা দিয়ে দিলো আমি সাথে সাথে ফোনটা নিয়ে উঠে চলে এলাম। গাড়িতে বসে ভিডিওটা ডিলিট করে কিছু ইনফরমেশন নিয়ে সিমটা খুলে ব্যাগে রাখলাম। গাড়ির জানালা খুলে একটা ফকিরের হাতে ফোনটা দিয়ে মনেমনে হাসলাম.. অনেক সময় মুল্যবান জিনিস মূল্যহীন মানুষকে দিতে হয়। এরা অন্ততপক্ষে খারাপ মূল্যায়ন করবেনা...!
আমি আসার সময় সাত্তারের চেহারায় পাগলা কুকুরের ভাব দেখতে পেয়েছি। সে জানে নুসরাত ওরফে আয়েশার কাছে এই ভিডিও আছে এবং এটা নুসরাতই করেছে। ও আয়শার অনেক বড় ক্ষতি করবে যা আমি বেঁচে থাকতে হবেনা। আমি আয়েশাকে ফোন করে বললাম, তুমি এক্ষন মুন্না আর বাচ্চাদের নিয়ে আমার বাসায় চলে যাও। সামনে অনেক বিপদ। মাজেদকে ফোন দিয়ে বললাম, আয়েশাদের জন্য গেষ্ট রুম খুলে দাও। আর আমি না আসা পর্যন্ত তুমি কারো ফোন ধরবেনা এবং দরজা খুলবেনা। ওদের বলবে রুমে দরজা বন্ধ করে থাকতে।
আমি ড্রাইভারকে বললাম, মিন্টু রোড যাও। আমার শ্বশুরের সাথে কথা বলা খুব দরকার। শাহেদ আসতে আরো নাকি দুদিন দেরি এর মাঝেই আমাকে সব করতে হবে। গাড়ী ছুটে চললো আমার গন্তব্যে...!!
অহনার ফোন পেয়ে আয়েশা খুব ভয় পেলো। সে বুঝে নিলো অহনা আপু না বুঝে কিছু বলেনি। তার জন্য না হোক তার বাচ্চাদের আর মুন্নার সেফটির জন্য তাকে যা করার করতে হবেই। সমস্যা হলো মুন্না..! ওকে সে কি বলবে? মুন্না তো জানতে চাইবে
কেনো আমরা ওই বাসায় যাবো? মেয়েরা স্বামীর কাছে সব বলতে পারে কিন্তু নিজের খারাপ পথে যাওয়ায় কথা বলা যায়না..প্রতিটা মেয়ের পায়েই স্বামীর দেয়া শেকল থাকে, হোক স্বামী অথর্ব..!
কোনো কোনো সময় বিধাতার তরফ থেকে কেমন করে যেনো সাহায্য চলে আসে নিজের অনুকূলে।
মুন্নাকে ওদের দলের কে যেনো ফোন করে বলেছে, বাসা থেকে শীঘ্রই সরে যেতে নইলে ওর বাচ্চাদের উপর বিপদ হবে। এটা শুনে মুন্না বললো, আয়েশা তাড়াতাড়ি আমদের এই বাসা থেকে সরে পড়তে হবে। ব্যাস আয়েশা তার কথার সুযোগ পেয়ে গেলো। সে বললো, অহনা আপুর স্বামী দেশের বাহিরে আমার অহনা আপুর সাথে কথা হইছে। উনার বাসায় আমরা দ্রুত যেতে পারবো আর ওটা আমাদের জন্য নিরাপদ।
নিজের বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য একজন বাবা সব করতে পারে।
মুন্নাকে আর বাচ্চাদের নিয়ে আয়েশা খুব দ্রুত অহনার বাসায় চলে এলো। আয়েশার ফোনে সাত্তারের অফিসের ফোন থেকে না হলেও দশটা কল। সে ফোন বন্ধ করে রাখলো।
আমার গাড়ি সরকারি বাসভবনের সামনে থামলো, আমি দেখছি আমার শ্বাশুড়ির গাড়িতে ড্রাইভার লাগেজ উঠাচ্ছে। আমি ভয় পেলাম আমার শ্বশুর বাহিরে যাচ্ছে নাকি? তবে তো আমার কাজের কিছুই হবেনা। আমি গাড়ি থেকে নেমে তাড়াতাড়ি ভিততে গেলাম। আমার শ্বাশুড়ি আমাকে দেখে মুখ কালো করে রাখলো,উনি আমার উপর খুব অসন্তুষ্ট কারণ আমি তার ছেলেকে নিয়ে আলাদা থাকি তাই। কেনো যে এই বাসায় থাকা যায়না সেটা তো উনাকে বলা যাবেনা ইনি বুঝবেনওনা।
এই দেশে যে মহিলার স্বামী বড় কর্মকর্তা হয় তাদের পাওয়ার তাদের স্বামীদের থেকেও বেশি থাকে।
উনি আমাকে বললো, অহনা তুমি বস চা নাস্তা দিবে ওরা, আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে পাঁচদিনের ট্যুরে সিংগাপুর যাচ্ছি। তোমার শ্বশুর তার রুমেই আছে। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। উনি থাকলে আমার শ্বশুরের সাথে কথা বলাই মুশকিল হতো উনার আড়িপাতার যন্ত্রণায়।
আল্লাহ কি যে ভালো একটা সুযোগ করে দিলেন।
ভালো কাজে মানুষ কখনো ঠেকেনা এটাই তার প্রমাণ।
শ্বাশুড়িকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আমি উপরে আমার শ্বশুরের রুমে গেলাম। আমার বাবা মারা গেছে সেই কবে আমি উনার কাছে সেই আদরটুকু
পাই। উনি আমাকে দেখে উঠে এসে জড়িয়ে ধরলেন। বাসায় ঢুকেই যে কোল্ড রিসিপশন পেয়েছিলাম উনার আদরে তা কাটাকাটি।
কিরে মা কেমন আছিস? আমি উনাকে সালাম করে বললাম,ভালো আছি। আপনার শরীর কেমন আব্বু?
উনি খুব ভোজন রসিক মানুষ কিন্তু ডাইবেটিস হাই। তবুও লুকিয়ে হলেও মিষ্টি খাবেন।
আমাকে বললেন, ফ্রিজে কুমিল্লার রসমালাই আছে। গতকাল একজন নিয়ে আসছে, তোর শ্বাশুড়ি খেতে দেয়নি। আমি বললাম, আব্বু আগে আপনার সুগার মাপবো তারপারে ওটা দিবো।
আমি সুগার মেপে দেখি ঠিক আছে খেতে দেয়া যায়। দুজনে মজা করে খেলাম, আমার স্মৃিতি বিজরিত কুমিল্লার রসমালাই।
আমি এবার আমার কাজের কথায় এলাম।
আব্বু আমার একটা কাজ করে দিবেন।
আমি জানি উনি কোনো সুপারিশ পছন্দ করেননা। তবে যদি জেনুইন হয়। তাহলে করেন। একটা নারী ব্যাবসায়িকে ধরিয়ে দেয়া নিশ্চয়ই জেনুইন।
আমি উনাকে সাত্তারের কথা সব বললাম, শুধু উনার ছেলের কথা বলি নাই উনার মনে কষ্ট পাবেন। তবে উনি আন্দাজ করতে পারেন উনার ছেলে মায়ের আস্কারা পেয়ে খারাপ কিছু করে।
উনাকে দিয়ে পুলিশের আইজিকে ফোন করিয়ে সাত্তারের কোম্পানি সিস করা এবং রাতেই সাত্তারকে গ্রেফতার করার ব্যাবস্থা করে তবেই আমি বাসার পথে রওনা করলাম।
রাত প্রায় দশটা বাজে জ্যামের শহর ঢাকায় আজ কেনো জানি জ্যাম নেই। বাহিরে ঠান্ডা বাতাস আমি গাড়ির গ্লাস খুলে দিলাম নিজেকে অনেক হাল্কা লাগছে... কি শান্তি।
আসার সময় আমার শ্বশুরকে ধরে আমি খুব কাঁদলাম। উনার চোখে আমি জলের আভাস দেখেছি।
উনি আমাকে বলেছে, অনেক তো চেষ্টা করলি, এবার ঘরে ফিরে যা তোর জীবন তুই বানিয়ে নে। একটা মেয়ের বড় প্রাপ্তি হচ্ছে মা হওয়া তোর সেই ক্ষমতা আছে। তুই চলে যা।
আমি বললাম, আব্বু আমার কাছে মা হওয়ার চেয়ে ভালোবাসা আর সম্মানের মুল্য অনেক বেশি। বাচ্চা? সেতো বাংলাদেশে কত অনাথ আর পথশিশু আছে ওদের নিয়ে বড় কিছু একটা করলে ওটা কি বাচ্চার চেয়ে কম হবে? শুধু গর্ভে ধারণ করলেই মা হওয়া যায়না। উনি আমার দিকে গভির মমতায় তাকিয়ে ছিলেন।
গাড়ি বাসায় চলে আসছে। আমি বাসায় যেয়ে সোজা ওয়াসরুমে যাই ব্যাগ থেকে ওই সিমটা কমোডে ফ্ল্যাস করে দেই।
আয়েশাকে আমি যা করেছি সব বললাম। আয়েশার চোখে কৃতজ্ঞতার ভাষাটা এমন ছিলো আমার৷ মনে হচ্ছিলো ও বলছে,তোমার এই ঋণ আমি শোধ না করে মরবোনা। ও খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো আমরা তাহলে বাসায় চলে যাই। আমি বললাম আজকের রাতটা থেকে সকালে যেও। ওরা রাজি হলো।
পরদিন পত্রিকায় বড় বড় হেডলাইন দিয়ে সাত্তারের গ্রেফতার এর খবর।
আমার আরো কাজ বাকি সেটা হলো শাহেদের মুখোমুখি হওয়া। ও আসতে আরো দুদিন সে
আসার তারিখ বাড়িয়েছে। আমি কি করবো?
আমার শ্বশুরের জন্য অনেক মায়া হয়। এই দেশে সৎ মানুষেরা এই ধরনের পোস্টে বেশিদিন থাকতে পারেনা। উনি সৎ কিন্তু উনার স্ত্রী আর ছেলে উনার সততার পুরোই অবমাননা করছে। উনি এই পদে না থাকলে উনাকে দু পয়সারও দাম দিবেনা এরা।
তবুও আমাকে আমার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শাহেদ আসলে সব ফয়সালা করবো..! রাগে,ঘৃণায় আমার অসহ্য লাগছে।
আয়েশারা দেশে চলে যাবে। ওখানে ও কোনো স্কুলে চাকরি নিবে। গ্রামে বাচ্চারা ভালো মানুষ হবে। আমি কি করবো?
যে মামা আমার জীবনের এই পরিনতি করেছে তার বিচার আগে করবো?
আমাকে আয়েশা বলেছিলো, আপনার মতো এতো ভালো আর সাহসি মেয়ের জীবন যে এভাবে নষ্ট করেছে তাকে আমি যদি সুযোগ পাই উচিত শিক্ষা দিবো। রাত এগারোটা বাজে ঘুম আসছেনা, টিভি অন করলাম, নিউজে হেডলাইন "প্রতিমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেনকে গুরুতর ভাবে আহত অবস্থায় হোটেল শেরাটন থেকে উদ্ধার।" যে তাকে এমন করেছে সে একজন নেকাব পড়া মহিলা। পুলিশ তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। "
আমি এক দৌড়ে বারান্দায় গেলাম আয়েশাদের বাসা অন্ধকার। ওরা তো আগামীকাল রাতের ট্রেনে যাবার কথা। হঠাৎ আমার ফোনে আননোন নাম্বারে ফোন.... আপু আমি আয়েশা, আপু আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলাম না আপনার জীবন নষ্ট করা আপনার মামাকে। আজ আমি উনাকে কল করি, নুসরাত কলগার্লের অফার কেও মিস করেনা। উনি আমাকে শেরাটনে যেতে বলে, আমি যাই সেখানে, এরপর ওরে আমিই এমন ভাবে আহত করি সারা জীবন সে আর মেয়েদের ক্ষতি করতে পারবে না। সে বেঁচে থাকবে। কিন্তু হিজরার জীবন নিয়ে। আপু আমি শুধু তোমার ঋণটুকু পরিশোধ করেছি। আমাকে মাফ করে দিও।
আমি পুলিশের কাছে নিজেকে ধরা দিবো।
তুমি কি বলছো তুমি জানো আয়েশা? তোমার দুটো বাচ্চা আছে পংগু স্বামী ওদের কি হবে?
আপু আমি ওদের সকালের ট্রেনে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওরা নিরাপদ আছে।
তুমি এখন কোথায়?
আমি কাওরান বাজারের একটা বস্তিতে লুকিয়ে আছি।
শোন আয়েশা তুমি সোজা একটা সিএনজি নিয়ে বিমান বন্দর রেল ষ্টেশনে চলে যাও রাত বারোটায় একটা ট্রেন আছে ওটা ধরে সোজা দেশে চলে যাও। তোমার নেকাবের আড়ালে কেও তোমায় চিনেনা।
আমি এক্ষন রওনা দিচ্ছি।
আমি সাথে সাথে উবার কল করে বেরিয়ে পড়ি। যাবার সময় মাজেদের হাতে একটা চিঠি দিয়ে বলি, সাহেব এলে উনাকে দিবে। চিঠিটা আমি আজ দুপুরে লিখেছি।
ওই চিঠিতেই শাহেদের প্রতিশোধ.... !! কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয়না। তবে কেটে ফেললে লেজকাটা কুকুর হয়ে ভেউ ভেউ করবে। চিঠির ভাষাতেই লেজ কেটেছি..ভাষা এমন এক অস্ত্র যা দিয়ে সব করা যায়। এর ব্যাবহার খারাপ ভালো দুভাবেই হয়... পরিস্থিতি বুঝে!
মনের ভাষা লেখায় যেভাবে প্রকাশ করা যায় তা অনেক সময় মুখেও যায়না। আমি তাই করেছি.. প্রতিহিংসার আগুন খুব খারাপ সামনে থাকলে হয়তো আরেকটি খুন হতো।
সে লেজকাটা কুকুরের মতো ভেউ ভেউ করতে করতে আমাকেই খুঁজবে। কারণ আমাকে ছাড়া সে অচল প্রাণী। এটাই ওর শাস্তি...!!
আমার লোভি মামার প্রতিশোধ আমার নিতে হয়নি। আমার প্রতিচ্ছবি নিয়েছে....!
আয়েশাকে আমার রক্ষা করতেই হবে। ওর দুই ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে হবে। মুন্নাকে আবার আগের জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। ওরা যে আমাদের সহযোদ্ধা । একজন নারীই পারে সমাজকে ঠিক করতে।
নারীর শক্তি হচ্ছে একজন সবল সৎ পুরুষ আর পুরুষের শক্তি হচ্ছে সৎ নারী যার অন্তরে থাকবে শুধু মমতা ঠিক আমার মায়ের মতো....
(সমাপ্ত)