What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made গল্পগুলো আমাদের (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
আমি আমার ছাত্রের সামনে এখনো বসে আছি। সেই তিনটায় পড়াতে ঢুকেছি এখন বাজছে পাঁচটা। পাক্কা দুই ঘন্টা ক্লাস সিক্সের একটা বাচ্চাকে পড়াচ্ছি আমি। বেচারা হাঁপিয়ে উঠেছে, হয়ত মনে মনে এতক্ষণে গালি ও দিচ্ছে দুই একটা। কিন্তু আমি যে কেন এতক্ষণ ধরে পড়াচ্ছি সেটা কেবল আমি ই জানি।

আজ মাসের ২৭ তারিখ। আমার তিন হাজার টাকা ভীষণ দরকার,আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফর্ম ফিলাপের লাস্ট ডেট। কাল অবশ্যই জমা দিতে হবে। কোনভাবেই টাকাটা ম্যানেজ করতে পারিনি ,তাই শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলাম টিউশানের বেতনটা লজ্জা ভেঙে অগ্রিম চেয়ে ফেলব। এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

কিন্তু গত দু ঘন্টা যাবত আমি বিভিন্ন ভাবে মনে মনে অনুশীলন করেছি কিভাবে ছাত্রের মার কাছে টাকা টা চাওয়া যায়। আমি যথেষ্ট ঘামছি। প্রবল টেনশান কাজ করছে। চুপচাপ বসে আছি,আমার ছাত্রটা খাতায় কি সব আঁকিবুকি করছে। অথচ আমি তাকে কয়েকটা ম্যাথ করতে দিয়েছিলাম। আমার চেহারায় অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্ট। এ জীবনে আমি কত হাজার হাজার শব্দ কথা বলেছি। অথচ আজ জীবনের একটা দারুণ কঠিন মুহূর্তে এসে আমার একটা বাক্য বলতে ভীষণ লজ্জা করছে। ছাত্রের মা আমার সামনে থেকে নাস্তার ট্রে টা নিয়ে চলে যাচ্ছে। ওনাকে আমার ডাক দেয়া উচিত,ডেকে বলা উচিত "আন্টি এই মাসের বেতনটা যদি আমায় অগ্রিম দেয়া যেত,তাহলে খুব হেল্প হত"। অথচ আমি বলতে না পেরে কাচুমাচু করছি। আমার ভিতর থেকে ঢুকরে কেদে উঠতে ইচ্ছে করছে। নিজেকে মনে মনে শাসিয়ে বলছি "এত লজ্জা কিসের তোর? না,আমি বলতে পারব না। এই নিম্ম মধ্যবিত্ত স্বভাব আমায় মেরে ই ফেলবে লজ্জায়।

অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে অপারগ আমি ছাত্রকে বিদায় জানিয়ে উঠতে যাব ঠিক সেই মুহূর্তে আন্টি একটা খাম বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। আন্টির দিকে অবাক হয়ে তাকালাম। আন্টি আদরমাখানো কন্ঠে বললেন -"নাও বাবা ধর,তোমার এ মাসের পেমেন্ট"। আমার অন্তরাত্মায় যেন আকাশ ভেঙে ঝুপ করে এক পশলা বৃষ্টি নেমে এল,যে বৃষ্টির প্রতিটা ফোটা এই মুহূর্তে আমার দিকে খাম বাড়িয়ে দেয়া মানুষটার জন্যে দোয়া করছে প্রবলভাবে। আমি খামটা আন্টির হাত থেকে নিতে নিতে বললাম "আন্টি মাস তো এখনো......"। আন্টি আমায় অবাক করে দিয়ে বলল,"আমি তোমার সমস্যা বুঝি বাবা,আমি গত দুই ঘন্টায় তোমার চেহারা টা খেয়াল করেছি। এইতো বছর দশেক আগে আমিও কত দিন মধ্যবিত্ত লজ্জাগুলো নিয়ে হাজারটা সমস্যা নিয়ে টিউশান টেবিলে বসে থেকেছি। ঘন্টার পর ঘন্টা পড়িয়েছি কিন্তু মুখ ফুটে নিজের প্রাপ্যটা সময়ের আগে চাইতে পারিনি কোনদিন। অথচ আমার পুরোনো ভ্যানিটিব্যাগটায় ছিল এক আকাশ অভাব। এমনও সময় গেছে মাস ফুরিয়ে গেছে অথচ অভিভাবক দায়িত্ব নিয়ে টাকাটা দেয়নি। আমারও আর মুখ ফুটে চাওয়া হয়নি। কত সংগ্রাম করেছি। সেদিনগুলো ভুলি কি করে? তোমার সমস্যাটা আমি বুঝি বাবা। যাও আগে সমস্যা মেটাও।

"শখ আর আহ্লাদ করে কেউ নিজের পড়া রেখে আরেরেকজনের বাচ্চার দায় নিতে আসে না বাবা।"

আমি আর আমার ছাত্রটা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আন্টির দিকে তাকিয়ে আছি। আমার ছাত্র কি শিখেছে জানিনা কিন্তু আমি শিখেছি মায়া,আমি শিখেছি আরেকটা মানুষের কষ্ট বোঝার ক্ষমতা। আমি আন্টিকে সালাম বলে বের হয়ে গেলাম। বের হয়ে খামটা খুলে দেখি টাকার সাথে একটা ছোট্ট চিরকুট। তাতে সুন্দর করে লেখা -"আজকে যে মুহুর্তটা তুমি কষ্ট করে পেছনে ফেলে গেলে,মনে রাখবে সেটা আর কোনদিন ফেরত আসবে না। জীবন ঘুরে দাঁড়াবে। শুধু সময়ের সাথে নিয়ম করে সখ্যতা রাখা চাই।"

ইতি
তোমার ছাত্রের আম্মু

আমি কেঁদে দিলাম।

আর মনে মনে বললাম-"আপনার ছেলে মানুষ হবে নাতো কার ছেলে মানুষ হবে?"


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top