অনুর কাছে শেষ দুপুরের সময়টা সব সময়ই পছন্দের । এই সময় সব কিছু কেমন নিশ্চিত আর নিস্তব্ধ হয়ে থাকে। ঢাকার বাসার চিৎকার চেঁচামিচির থেকে এই বাড়িটার নিস্তব্ধতা ওর বেশি পছন্দ । এই বাসাটাতে প্রথম যখন এসেছিলো তখন কেবল অবাক হয়ে ভেবেছিলো এতো নিশ্চুপ কি কোন বাড়ি হতে পারে ? কোন আওয়াজ নেই, আসে পাশে কেউ নেই । অনুর মনে হতে হত যেন এই পুরো দুনিয়াতে কেবল এই বাড়িটা রয়েছে । আর কেউ নেই ।
সামনে আর পেছনে বিশাল জায়গা পড়ে আছে । তবে তার সব টুকুই বিভিন্ন গাছ গাগাছালি দিয়ে ভর্তি । পুরো বাসাটাকে সব সময় ছায়া ভরে রেখেছে । পুরো বাড়িটা দেওয়াল দিয়ে ঘেরা । চাইলেও বাইরে থেকে কেউ বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারবে না ।
প্রথম যখন সে এই বাসার বাইরে গিয়ে হাজির হল তখন অদ্ভুদ একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলো । এই বাসাকে এই গ্রামের মানুষ ভয় পায়। এটার কাছে কেউ আসতে চায় না । ও যে এই বাড়িতে থাকে এটা শোনার পর সবাই ওকে একটু অন্য চোখে দেখা করেছিলো প্রথমে । আস্তে আস্তে বাড়িটা সম্পর্কে সব শুনতে পায় বাড়ির কেয়ারটেকার সুরুজ আলীর কাছ থেকে । এই বাড়িতে বেশ কয়েকটা মানুষ মারা গিয়েছে । এটা শোনার পর অনুর মা তো ওর বাবার সাথে কি সে রাগারাগি । এমন একটা বাড়ি সে কেন কিনতে গেল ! আর কিনেছে বলেই তাদেরকে নিয়ে এখানে থাকতে আসতে হবে ! ওদের ঢাকার বাসাটা নতুন সংস্কারের কাজ চলতেছে । কয়টা দিন তাই অন্য কোথাও থাকতে হবে ওদের । ঢাকা ভেতরে ওদের কিছু পরিচিত মানুষজন আছে অবশ্য কিন্তু ওর বাবা ঠিক অন্য মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পছন্দ করে না আর অন্যের বাসায় থাকা তো অনেক পরের ব্যাপার । তাই অনুদের আর এই বাড়িটা ছেড়ে যাওয়া হল না । অল্প কটা দিনই তো এখানে থাকতে হবে । তারপর আবারও ফিরে যাবে ওদের আগের বাসাতে !
প্রথম কটাদিন খারাপ লাগলেও অনুর এখন বেশ ভাল সময় কাটছে । ওর বড় আপু সারা দিন বই পড়েই দিন কাটিয়ে দেয় । ওর মা রান্না ঘরে ব্যস্ত থাকে এদিকে ওর বাবা থাকে তার অফিসে । অনু সারাটা দিন বাড়ির আশে পাশে ঘুরে বেড়ায় । এতো সবুজের ভেতরে নানান ধরনের পাখির ডাক শুনে আর তারপর সেই পাখি খুজতে খুজতে তার সময় পেরিয়ে যায় !
আজও অনুর তেমনই সময় কাটছিলো । বাড়ির পেছনে বসে ছিল একটা গাছের নিচে । অনেকটা সময় জামরুল গাছটার দিকে তাকিয়ে রইলো । একটু আগেই নীল রংয়ের পাখিটা ঐ ডালেই বসে ছিল । সেদিকেই তাকিয়ে ছিল এক মনে । পাখিটাও যেন ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল । অন্তত অনুর তো তাই মনে হল । এক ডাল থেকে অন্য ডালে গিয়ে বসলেও অনুর সাথে পাখিটার ঠিকই চোখাচোখি হচ্ছিলো । অনু এক ভাবে পাখিটার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল । তখনই ওর মনযোগ গেল বাড়ির কেয়ার টেকার সুরুজ মিয়ার দিকে । সুরুজ মিয়া বাড়ির দেওয়ালের কাছে জমে থাকা আগাছা গুলো পরিস্কার করছিলো আপন মনে । আর সেই সাতে গুন গুন করে গানও গাচ্ছিলো । সেই গানের শব্দেই অনুর চোখ সরে গিয়েছিলো সুরুজ মিয়ার দিকে । তবে সেটা কয়েক মুহুর্তের জন্য । সাথে সাথেই আবার ফিরে তাকালো সেই জামরুম গাছটার দিকে ।
কিন্তু সেই নীল রংয়ের পাখিটা আর কোথাও দেখতে পেল না । অনু এ ডাল ও ডাল থেকে পুরো গাছটাকে একটা ভাল করে খুজে দেখলো কিন্তু পাখিটাকে আর খুজেই পেল ।
-কি খুজো আম্মাজি ?
পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে সুরুজ মিয়া ওর পাশে চলে এসেছে । তার হাতে বড় একটা কোদাল । সেটা দিয়ে একটু আগে দেওয়ালের পাশের আগাছা পরিস্কার করছিলো । কাজ সম্ভবত শেষ হয়ে এসেছে । এখন ওর থেকে একটু দুরে বসে রয়েছে । অনু বিরক্ত হয়ে সুরুজ মিয়ার দিকে তাকালো । তারপর বলল
-ওহ দাদু ! তোমার জন্য পাখিটা চলে গেল ?
সুরুজ মিয়া দাঁত বের করে হাসলো । হাসি দেখে অনুর বিরক্তিটা আরও একটু বেড়ে গেল । তারপর বলল
-তুমি খুব পঁচা । তোমার সাথে কথা নাই ।
সুরুজ মিয়া অনুর দিকে এগিয়ে এলেন । এই কদিনেই এই মেয়েটার উপর তার একটা আলাদা ভাবে ভালবাসা জন্মে গিয়েছে । মালিক কর্মচারি সম্পর্ক হলেও সুরুজ মিয়ার কখনই মনে হয় নি এই মেয়েটি তাকে কর্মচারি হিসাবে দেখে । বরং নিজের আপন দাদুর মতই আচরন করে আসছে । এই বুড়ো বয়সেও সুরুজ মিয়াও যেন নিজের আপন নাতনি কে খুজে পেয়েছে ।
সুরুজ মিয়া আরেকটু হেসে বলল
-মন খারাপ কইরো না দাদু মনি । তোমার জন্য পাখি নিয়ে আসবো নে !
-কিভাবে শুনি ? উড়ে যাবে যে !
-না । খাঁচায় ভরে নিয়ে আসবো ।
অনু খানিকটা মুখ বেঁকিয়ে বলল
-নাহ । আম্মু বলেছে পাখি আটকানো ভাল না ।
-ও ! তাইলে ?
-তুমি পঁচা । তোমার জন্য পাখি চলে গেছে ।
অনু এক দৌড় দিয়ে বাসার ভেতরে চলে এল । তার মা দুপুরের এই সময়টা বিছানাতে গা এলিয়ে দেয় । অন্য দিকে তার বাবার বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় । অনু ওর বড় বোনের দিকে একটু উকি দিল । ওর বড় আপু খুব মনযোগ দিয়ে বই পড়ছে । সহজে তার মনযোগ অন্য কোন দিকে যাবে না । এখনই সময় । অনু পা দিয়ে টিপে টিপে এবার চলে গেল ওদের স্টোর রুমের দিকে । এই বাসার স্টোর রুম টা ছাদে যাওয়ার সিড়ি ঘরের ঠিক পাশেই । পুরো বাড়ির অপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র গুলো এখানে জমা হয়ে থাকে । পুরাতন জিনিস পত্র খুজতো যদি সেখানে নিজের খেলার জন্য কিছু পাওয়া যায় এই আশাতে । খুজতে খুজতেই সে আবিস্কারটা করে ফেলেছিলো সেদিন ।
স্টোর রুমের ডান দিকের দেওয়ালে একটা দরজা রয়েছে । ঘরটা এমনিতেও দেখতে খানিকটা অন্ধকার । একটা ২০ পাওয়ারের লাইটের ব্যবস্থা আছে কেবল । সেটা জ্বালিয়ে অনেক কিছুই ঠিক মত দেখা যায় । তাই এতো দিন দরজাটা চোখে পড়ে নি । তবে স্টোর রুমটা অনু প্রথম যেদিন দেখেছিলো সেদিনই ওর মনে হয়ছিল স্টোর রুমটা বাইরে থেকে দেখে যতটা বড় মনে হয় ভেতর থেকে ততটা মনে হয় না । এখন সেটার আসল কারন বুঝতে পারলো ও । দরজাটা খানিকটা সময় ধরে টানা করার পরেই খুলে গেল ।
দরজা টা খুলে যেতেই নিচে নেমে যাওয়া একটা সিড়ি দেখতে পেল সে । বাড়ির নিচে যাওয়ার রাস্তা । অনু বুঝতে কষ্ট হল না যে এটা বেজমেন্টে যাওয়ার রাস্তা । যাবে কি যাবে না সেটা নিয়ে বেশ কিছুটা সময় দ্বিধায় ভুগলো । তারপর নিচে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সে । তবে সেদিন যাওয়ার আর সময় ছিল না তার হাতে । বিকেল হয়ে আসছিলো । ওর বাবা এখনই ওকে খুজতে বের হবে। প্রতি বিকেলে ওরা দুজন এক সাথে হাটতে বের হয় । তাই আজকে সুযোগ পেয়েছে । আজকে দেখবে ভেতড়ে কি আছে !
তবে নিচে নামার পরে অনু একটু হতাশই হল । মনে হয়েছিলো এই বেজমেন্টেই সে অনেক কিছু খুজে পাবে । বিশেষ করে এই বাড়ি সম্পর্কে এতো দিন মানুষের কাছ থেকে যা শুনে এসেছে তার কিছুটা রহস্য হয়তো জানতে পারবে । চার্জার লাইটের আলোতে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এল । একটা ভ্যাপসা গন্ধ আসছিলো । অনেক দিন এখানে কেউ আসে না । বদ্ধ একটা পরিবেশ । লাইটের আলোতে চারিদিক দেখতে লাগলো । খুবই সাধারন একটা ঘর । পাথর দিয়ে তৈরি দেওয়াল । পুরো বাড়িটাই কালো পাথরের তৈরি । বেজমেন্টেও যে পাথরের হবে সেটাই স্বাভাবিক ।
অনু চারিদিকে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিল । অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়লো না । চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু পুরানো জিনিস পত্র পড়ে আছে । অনু খানিকটা হতাশই হল । এখানে তেমন কিছুই নেই । অনু আবারও সিড়ির দিকে পা বাড়াবে তখনও একেবারে শেষ দেওয়ালের দিকে চোখ গেল । কিছু একটা যেন দাড়িয়ে আছে ।
পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল সেদিকে । আলোটাতে জিনিসটা আরও বেশি পরিস্কার হল । দেওয়ালের ঠিক কাছেই একটা ছোট্ট বেদি । তার উপরেই মুর্তিটা রাখা রয়েছে । লম্বাতে ফুট খানেকের মত হবে । মুর্তিটা কুচকুচে কালো । চার্যারের আলো সেই কালো দেহে প্রতিফলিত হচ্ছে । অনু কেবল এক ভাবে মুর্তিটার দিকে তাকিয়ে রইলো । চোখ দুটো যেন এখনও জ্বলছে । ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।
অনু এক ভাবেই সেদিকে তাকিয়ে রইলো । অনুর মনে হল ওটা যেন ওকে কিছু বলার চেষ্টা করছে । মন্ত্র মুগ্ধের মত অনুর মুর্তিটার দিকে হাত বাড়ালো । অনুর কেবল মনে হতে লাগলো মুর্তিটা ওকে তীব্রভাবে আকর্ষন করছে । মুর্তিটা ছোঁয়ার সাথে সাথেই অনু যেন ইলেক্ট্রিক শক খেল । শকের ধাক্কায় ছিটকে পড়লে একটু দুরে । সাথে সাথেই জ্ঞান হারালো ও ।
সামনে আর পেছনে বিশাল জায়গা পড়ে আছে । তবে তার সব টুকুই বিভিন্ন গাছ গাগাছালি দিয়ে ভর্তি । পুরো বাসাটাকে সব সময় ছায়া ভরে রেখেছে । পুরো বাড়িটা দেওয়াল দিয়ে ঘেরা । চাইলেও বাইরে থেকে কেউ বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারবে না ।
প্রথম যখন সে এই বাসার বাইরে গিয়ে হাজির হল তখন অদ্ভুদ একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলো । এই বাসাকে এই গ্রামের মানুষ ভয় পায়। এটার কাছে কেউ আসতে চায় না । ও যে এই বাড়িতে থাকে এটা শোনার পর সবাই ওকে একটু অন্য চোখে দেখা করেছিলো প্রথমে । আস্তে আস্তে বাড়িটা সম্পর্কে সব শুনতে পায় বাড়ির কেয়ারটেকার সুরুজ আলীর কাছ থেকে । এই বাড়িতে বেশ কয়েকটা মানুষ মারা গিয়েছে । এটা শোনার পর অনুর মা তো ওর বাবার সাথে কি সে রাগারাগি । এমন একটা বাড়ি সে কেন কিনতে গেল ! আর কিনেছে বলেই তাদেরকে নিয়ে এখানে থাকতে আসতে হবে ! ওদের ঢাকার বাসাটা নতুন সংস্কারের কাজ চলতেছে । কয়টা দিন তাই অন্য কোথাও থাকতে হবে ওদের । ঢাকা ভেতরে ওদের কিছু পরিচিত মানুষজন আছে অবশ্য কিন্তু ওর বাবা ঠিক অন্য মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পছন্দ করে না আর অন্যের বাসায় থাকা তো অনেক পরের ব্যাপার । তাই অনুদের আর এই বাড়িটা ছেড়ে যাওয়া হল না । অল্প কটা দিনই তো এখানে থাকতে হবে । তারপর আবারও ফিরে যাবে ওদের আগের বাসাতে !
প্রথম কটাদিন খারাপ লাগলেও অনুর এখন বেশ ভাল সময় কাটছে । ওর বড় আপু সারা দিন বই পড়েই দিন কাটিয়ে দেয় । ওর মা রান্না ঘরে ব্যস্ত থাকে এদিকে ওর বাবা থাকে তার অফিসে । অনু সারাটা দিন বাড়ির আশে পাশে ঘুরে বেড়ায় । এতো সবুজের ভেতরে নানান ধরনের পাখির ডাক শুনে আর তারপর সেই পাখি খুজতে খুজতে তার সময় পেরিয়ে যায় !
আজও অনুর তেমনই সময় কাটছিলো । বাড়ির পেছনে বসে ছিল একটা গাছের নিচে । অনেকটা সময় জামরুল গাছটার দিকে তাকিয়ে রইলো । একটু আগেই নীল রংয়ের পাখিটা ঐ ডালেই বসে ছিল । সেদিকেই তাকিয়ে ছিল এক মনে । পাখিটাও যেন ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল । অন্তত অনুর তো তাই মনে হল । এক ডাল থেকে অন্য ডালে গিয়ে বসলেও অনুর সাথে পাখিটার ঠিকই চোখাচোখি হচ্ছিলো । অনু এক ভাবে পাখিটার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল । তখনই ওর মনযোগ গেল বাড়ির কেয়ার টেকার সুরুজ মিয়ার দিকে । সুরুজ মিয়া বাড়ির দেওয়ালের কাছে জমে থাকা আগাছা গুলো পরিস্কার করছিলো আপন মনে । আর সেই সাতে গুন গুন করে গানও গাচ্ছিলো । সেই গানের শব্দেই অনুর চোখ সরে গিয়েছিলো সুরুজ মিয়ার দিকে । তবে সেটা কয়েক মুহুর্তের জন্য । সাথে সাথেই আবার ফিরে তাকালো সেই জামরুম গাছটার দিকে ।
কিন্তু সেই নীল রংয়ের পাখিটা আর কোথাও দেখতে পেল না । অনু এ ডাল ও ডাল থেকে পুরো গাছটাকে একটা ভাল করে খুজে দেখলো কিন্তু পাখিটাকে আর খুজেই পেল ।
-কি খুজো আম্মাজি ?
পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে সুরুজ মিয়া ওর পাশে চলে এসেছে । তার হাতে বড় একটা কোদাল । সেটা দিয়ে একটু আগে দেওয়ালের পাশের আগাছা পরিস্কার করছিলো । কাজ সম্ভবত শেষ হয়ে এসেছে । এখন ওর থেকে একটু দুরে বসে রয়েছে । অনু বিরক্ত হয়ে সুরুজ মিয়ার দিকে তাকালো । তারপর বলল
-ওহ দাদু ! তোমার জন্য পাখিটা চলে গেল ?
সুরুজ মিয়া দাঁত বের করে হাসলো । হাসি দেখে অনুর বিরক্তিটা আরও একটু বেড়ে গেল । তারপর বলল
-তুমি খুব পঁচা । তোমার সাথে কথা নাই ।
সুরুজ মিয়া অনুর দিকে এগিয়ে এলেন । এই কদিনেই এই মেয়েটার উপর তার একটা আলাদা ভাবে ভালবাসা জন্মে গিয়েছে । মালিক কর্মচারি সম্পর্ক হলেও সুরুজ মিয়ার কখনই মনে হয় নি এই মেয়েটি তাকে কর্মচারি হিসাবে দেখে । বরং নিজের আপন দাদুর মতই আচরন করে আসছে । এই বুড়ো বয়সেও সুরুজ মিয়াও যেন নিজের আপন নাতনি কে খুজে পেয়েছে ।
সুরুজ মিয়া আরেকটু হেসে বলল
-মন খারাপ কইরো না দাদু মনি । তোমার জন্য পাখি নিয়ে আসবো নে !
-কিভাবে শুনি ? উড়ে যাবে যে !
-না । খাঁচায় ভরে নিয়ে আসবো ।
অনু খানিকটা মুখ বেঁকিয়ে বলল
-নাহ । আম্মু বলেছে পাখি আটকানো ভাল না ।
-ও ! তাইলে ?
-তুমি পঁচা । তোমার জন্য পাখি চলে গেছে ।
অনু এক দৌড় দিয়ে বাসার ভেতরে চলে এল । তার মা দুপুরের এই সময়টা বিছানাতে গা এলিয়ে দেয় । অন্য দিকে তার বাবার বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় । অনু ওর বড় বোনের দিকে একটু উকি দিল । ওর বড় আপু খুব মনযোগ দিয়ে বই পড়ছে । সহজে তার মনযোগ অন্য কোন দিকে যাবে না । এখনই সময় । অনু পা দিয়ে টিপে টিপে এবার চলে গেল ওদের স্টোর রুমের দিকে । এই বাসার স্টোর রুম টা ছাদে যাওয়ার সিড়ি ঘরের ঠিক পাশেই । পুরো বাড়ির অপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র গুলো এখানে জমা হয়ে থাকে । পুরাতন জিনিস পত্র খুজতো যদি সেখানে নিজের খেলার জন্য কিছু পাওয়া যায় এই আশাতে । খুজতে খুজতেই সে আবিস্কারটা করে ফেলেছিলো সেদিন ।
স্টোর রুমের ডান দিকের দেওয়ালে একটা দরজা রয়েছে । ঘরটা এমনিতেও দেখতে খানিকটা অন্ধকার । একটা ২০ পাওয়ারের লাইটের ব্যবস্থা আছে কেবল । সেটা জ্বালিয়ে অনেক কিছুই ঠিক মত দেখা যায় । তাই এতো দিন দরজাটা চোখে পড়ে নি । তবে স্টোর রুমটা অনু প্রথম যেদিন দেখেছিলো সেদিনই ওর মনে হয়ছিল স্টোর রুমটা বাইরে থেকে দেখে যতটা বড় মনে হয় ভেতর থেকে ততটা মনে হয় না । এখন সেটার আসল কারন বুঝতে পারলো ও । দরজাটা খানিকটা সময় ধরে টানা করার পরেই খুলে গেল ।
দরজা টা খুলে যেতেই নিচে নেমে যাওয়া একটা সিড়ি দেখতে পেল সে । বাড়ির নিচে যাওয়ার রাস্তা । অনু বুঝতে কষ্ট হল না যে এটা বেজমেন্টে যাওয়ার রাস্তা । যাবে কি যাবে না সেটা নিয়ে বেশ কিছুটা সময় দ্বিধায় ভুগলো । তারপর নিচে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সে । তবে সেদিন যাওয়ার আর সময় ছিল না তার হাতে । বিকেল হয়ে আসছিলো । ওর বাবা এখনই ওকে খুজতে বের হবে। প্রতি বিকেলে ওরা দুজন এক সাথে হাটতে বের হয় । তাই আজকে সুযোগ পেয়েছে । আজকে দেখবে ভেতড়ে কি আছে !
তবে নিচে নামার পরে অনু একটু হতাশই হল । মনে হয়েছিলো এই বেজমেন্টেই সে অনেক কিছু খুজে পাবে । বিশেষ করে এই বাড়ি সম্পর্কে এতো দিন মানুষের কাছ থেকে যা শুনে এসেছে তার কিছুটা রহস্য হয়তো জানতে পারবে । চার্জার লাইটের আলোতে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এল । একটা ভ্যাপসা গন্ধ আসছিলো । অনেক দিন এখানে কেউ আসে না । বদ্ধ একটা পরিবেশ । লাইটের আলোতে চারিদিক দেখতে লাগলো । খুবই সাধারন একটা ঘর । পাথর দিয়ে তৈরি দেওয়াল । পুরো বাড়িটাই কালো পাথরের তৈরি । বেজমেন্টেও যে পাথরের হবে সেটাই স্বাভাবিক ।
অনু চারিদিকে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিল । অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়লো না । চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু পুরানো জিনিস পত্র পড়ে আছে । অনু খানিকটা হতাশই হল । এখানে তেমন কিছুই নেই । অনু আবারও সিড়ির দিকে পা বাড়াবে তখনও একেবারে শেষ দেওয়ালের দিকে চোখ গেল । কিছু একটা যেন দাড়িয়ে আছে ।
পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল সেদিকে । আলোটাতে জিনিসটা আরও বেশি পরিস্কার হল । দেওয়ালের ঠিক কাছেই একটা ছোট্ট বেদি । তার উপরেই মুর্তিটা রাখা রয়েছে । লম্বাতে ফুট খানেকের মত হবে । মুর্তিটা কুচকুচে কালো । চার্যারের আলো সেই কালো দেহে প্রতিফলিত হচ্ছে । অনু কেবল এক ভাবে মুর্তিটার দিকে তাকিয়ে রইলো । চোখ দুটো যেন এখনও জ্বলছে । ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।
অনু এক ভাবেই সেদিকে তাকিয়ে রইলো । অনুর মনে হল ওটা যেন ওকে কিছু বলার চেষ্টা করছে । মন্ত্র মুগ্ধের মত অনুর মুর্তিটার দিকে হাত বাড়ালো । অনুর কেবল মনে হতে লাগলো মুর্তিটা ওকে তীব্রভাবে আকর্ষন করছে । মুর্তিটা ছোঁয়ার সাথে সাথেই অনু যেন ইলেক্ট্রিক শক খেল । শকের ধাক্কায় ছিটকে পড়লে একটু দুরে । সাথে সাথেই জ্ঞান হারালো ও ।