What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected গল্প নম্বর 5 (1 Viewer)

Nil328

Member
Joined
Sep 13, 2018
Threads
101
Messages
101
Credits
3,429
অনুর কাছে শেষ দুপুরের সময়টা সব সময়ই পছন্দের । এই সময় সব কিছু কেমন নিশ্চিত আর নিস্তব্ধ হয়ে থাকে। ঢাকার বাসার চিৎকার চেঁচামিচির থেকে এই বাড়িটার নিস্তব্ধতা ওর বেশি পছন্দ । এই বাসাটাতে প্রথম যখন এসেছিলো তখন কেবল অবাক হয়ে ভেবেছিলো এতো নিশ্চুপ কি কোন বাড়ি হতে পারে ? কোন আওয়াজ নেই, আসে পাশে কেউ নেই । অনুর মনে হতে হত যেন এই পুরো দুনিয়াতে কেবল এই বাড়িটা রয়েছে । আর কেউ নেই ।

সামনে আর পেছনে বিশাল জায়গা পড়ে আছে । তবে তার সব টুকুই বিভিন্ন গাছ গাগাছালি দিয়ে ভর্তি । পুরো বাসাটাকে সব সময় ছায়া ভরে রেখেছে । পুরো বাড়িটা দেওয়াল দিয়ে ঘেরা । চাইলেও বাইরে থেকে কেউ বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারবে না ।

প্রথম যখন সে এই বাসার বাইরে গিয়ে হাজির হল তখন অদ্ভুদ একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলো । এই বাসাকে এই গ্রামের মানুষ ভয় পায়। এটার কাছে কেউ আসতে চায় না । ও যে এই বাড়িতে থাকে এটা শোনার পর সবাই ওকে একটু অন্য চোখে দেখা করেছিলো প্রথমে । আস্তে আস্তে বাড়িটা সম্পর্কে সব শুনতে পায় বাড়ির কেয়ারটেকার সুরুজ আলীর কাছ থেকে । এই বাড়িতে বেশ কয়েকটা মানুষ মারা গিয়েছে । এটা শোনার পর অনুর মা তো ওর বাবার সাথে কি সে রাগারাগি । এমন একটা বাড়ি সে কেন কিনতে গেল ! আর কিনেছে বলেই তাদেরকে নিয়ে এখানে থাকতে আসতে হবে ! ওদের ঢাকার বাসাটা নতুন সংস্কারের কাজ চলতেছে । কয়টা দিন তাই অন্য কোথাও থাকতে হবে ওদের । ঢাকা ভেতরে ওদের কিছু পরিচিত মানুষজন আছে অবশ্য কিন্তু ওর বাবা ঠিক অন্য মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিতে পছন্দ করে না আর অন্যের বাসায় থাকা তো অনেক পরের ব্যাপার । তাই অনুদের আর এই বাড়িটা ছেড়ে যাওয়া হল না । অল্প কটা দিনই তো এখানে থাকতে হবে । তারপর আবারও ফিরে যাবে ওদের আগের বাসাতে !

প্রথম কটাদিন খারাপ লাগলেও অনুর এখন বেশ ভাল সময় কাটছে । ওর বড় আপু সারা দিন বই পড়েই দিন কাটিয়ে দেয় । ওর মা রান্না ঘরে ব্যস্ত থাকে এদিকে ওর বাবা থাকে তার অফিসে । অনু সারাটা দিন বাড়ির আশে পাশে ঘুরে বেড়ায় । এতো সবুজের ভেতরে নানান ধরনের পাখির ডাক শুনে আর তারপর সেই পাখি খুজতে খুজতে তার সময় পেরিয়ে যায় !

আজও অনুর তেমনই সময় কাটছিলো । বাড়ির পেছনে বসে ছিল একটা গাছের নিচে । অনেকটা সময় জামরুল গাছটার দিকে তাকিয়ে রইলো । একটু আগেই নীল রংয়ের পাখিটা ঐ ডালেই বসে ছিল । সেদিকেই তাকিয়ে ছিল এক মনে । পাখিটাও যেন ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল । অন্তত অনুর তো তাই মনে হল । এক ডাল থেকে অন্য ডালে গিয়ে বসলেও অনুর সাথে পাখিটার ঠিকই চোখাচোখি হচ্ছিলো । অনু এক ভাবে পাখিটার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল । তখনই ওর মনযোগ গেল বাড়ির কেয়ার টেকার সুরুজ মিয়ার দিকে । সুরুজ মিয়া বাড়ির দেওয়ালের কাছে জমে থাকা আগাছা গুলো পরিস্কার করছিলো আপন মনে । আর সেই সাতে গুন গুন করে গানও গাচ্ছিলো । সেই গানের শব্দেই অনুর চোখ সরে গিয়েছিলো সুরুজ মিয়ার দিকে । তবে সেটা কয়েক মুহুর্তের জন্য । সাথে সাথেই আবার ফিরে তাকালো সেই জামরুম গাছটার দিকে ।
কিন্তু সেই নীল রংয়ের পাখিটা আর কোথাও দেখতে পেল না । অনু এ ডাল ও ডাল থেকে পুরো গাছটাকে একটা ভাল করে খুজে দেখলো কিন্তু পাখিটাকে আর খুজেই পেল ।
-কি খুজো আম্মাজি ?

পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে সুরুজ মিয়া ওর পাশে চলে এসেছে । তার হাতে বড় একটা কোদাল । সেটা দিয়ে একটু আগে দেওয়ালের পাশের আগাছা পরিস্কার করছিলো । কাজ সম্ভবত শেষ হয়ে এসেছে । এখন ওর থেকে একটু দুরে বসে রয়েছে । অনু বিরক্ত হয়ে সুরুজ মিয়ার দিকে তাকালো । তারপর বলল
-ওহ দাদু ! তোমার জন্য পাখিটা চলে গেল ?
সুরুজ মিয়া দাঁত বের করে হাসলো । হাসি দেখে অনুর বিরক্তিটা আরও একটু বেড়ে গেল । তারপর বলল
-তুমি খুব পঁচা । তোমার সাথে কথা নাই ।

সুরুজ মিয়া অনুর দিকে এগিয়ে এলেন । এই কদিনেই এই মেয়েটার উপর তার একটা আলাদা ভাবে ভালবাসা জন্মে গিয়েছে । মালিক কর্মচারি সম্পর্ক হলেও সুরুজ মিয়ার কখনই মনে হয় নি এই মেয়েটি তাকে কর্মচারি হিসাবে দেখে । বরং নিজের আপন দাদুর মতই আচরন করে আসছে । এই বুড়ো বয়সেও সুরুজ মিয়াও যেন নিজের আপন নাতনি কে খুজে পেয়েছে ।
সুরুজ মিয়া আরেকটু হেসে বলল
-মন খারাপ কইরো না দাদু মনি । তোমার জন্য পাখি নিয়ে আসবো নে !
-কিভাবে শুনি ? উড়ে যাবে যে !
-না । খাঁচায় ভরে নিয়ে আসবো ।

অনু খানিকটা মুখ বেঁকিয়ে বলল
-নাহ । আম্মু বলেছে পাখি আটকানো ভাল না ।
-ও ! তাইলে ?
-তুমি পঁচা । তোমার জন্য পাখি চলে গেছে ।

অনু এক দৌড় দিয়ে বাসার ভেতরে চলে এল । তার মা দুপুরের এই সময়টা বিছানাতে গা এলিয়ে দেয় । অন্য দিকে তার বাবার বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় । অনু ওর বড় বোনের দিকে একটু উকি দিল । ওর বড় আপু খুব মনযোগ দিয়ে বই পড়ছে । সহজে তার মনযোগ অন্য কোন দিকে যাবে না । এখনই সময় । অনু পা দিয়ে টিপে টিপে এবার চলে গেল ওদের স্টোর রুমের দিকে । এই বাসার স্টোর রুম টা ছাদে যাওয়ার সিড়ি ঘরের ঠিক পাশেই । পুরো বাড়ির অপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্র গুলো এখানে জমা হয়ে থাকে । পুরাতন জিনিস পত্র খুজতো যদি সেখানে নিজের খেলার জন্য কিছু পাওয়া যায় এই আশাতে । খুজতে খুজতেই সে আবিস্কারটা করে ফেলেছিলো সেদিন ।

স্টোর রুমের ডান দিকের দেওয়ালে একটা দরজা রয়েছে । ঘরটা এমনিতেও দেখতে খানিকটা অন্ধকার । একটা ২০ পাওয়ারের লাইটের ব্যবস্থা আছে কেবল । সেটা জ্বালিয়ে অনেক কিছুই ঠিক মত দেখা যায় । তাই এতো দিন দরজাটা চোখে পড়ে নি । তবে স্টোর রুমটা অনু প্রথম যেদিন দেখেছিলো সেদিনই ওর মনে হয়ছিল স্টোর রুমটা বাইরে থেকে দেখে যতটা বড় মনে হয় ভেতর থেকে ততটা মনে হয় না । এখন সেটার আসল কারন বুঝতে পারলো ও । দরজাটা খানিকটা সময় ধরে টানা করার পরেই খুলে গেল ।

দরজা টা খুলে যেতেই নিচে নেমে যাওয়া একটা সিড়ি দেখতে পেল সে । বাড়ির নিচে যাওয়ার রাস্তা । অনু বুঝতে কষ্ট হল না যে এটা বেজমেন্টে যাওয়ার রাস্তা । যাবে কি যাবে না সেটা নিয়ে বেশ কিছুটা সময় দ্বিধায় ভুগলো । তারপর নিচে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সে । তবে সেদিন যাওয়ার আর সময় ছিল না তার হাতে । বিকেল হয়ে আসছিলো । ওর বাবা এখনই ওকে খুজতে বের হবে। প্রতি বিকেলে ওরা দুজন এক সাথে হাটতে বের হয় । তাই আজকে সুযোগ পেয়েছে । আজকে দেখবে ভেতড়ে কি আছে !

তবে নিচে নামার পরে অনু একটু হতাশই হল । মনে হয়েছিলো এই বেজমেন্টেই সে অনেক কিছু খুজে পাবে । বিশেষ করে এই বাড়ি সম্পর্কে এতো দিন মানুষের কাছ থেকে যা শুনে এসেছে তার কিছুটা রহস্য হয়তো জানতে পারবে । চার্জার লাইটের আলোতে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এল । একটা ভ্যাপসা গন্ধ আসছিলো । অনেক দিন এখানে কেউ আসে না । বদ্ধ একটা পরিবেশ । লাইটের আলোতে চারিদিক দেখতে লাগলো । খুবই সাধারন একটা ঘর । পাথর দিয়ে তৈরি দেওয়াল । পুরো বাড়িটাই কালো পাথরের তৈরি । বেজমেন্টেও যে পাথরের হবে সেটাই স্বাভাবিক ।
অনু চারিদিকে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিল । অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়লো না । চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু পুরানো জিনিস পত্র পড়ে আছে । অনু খানিকটা হতাশই হল । এখানে তেমন কিছুই নেই । অনু আবারও সিড়ির দিকে পা বাড়াবে তখনও একেবারে শেষ দেওয়ালের দিকে চোখ গেল । কিছু একটা যেন দাড়িয়ে আছে ।

পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল সেদিকে । আলোটাতে জিনিসটা আরও বেশি পরিস্কার হল । দেওয়ালের ঠিক কাছেই একটা ছোট্ট বেদি । তার উপরেই মুর্তিটা রাখা রয়েছে । লম্বাতে ফুট খানেকের মত হবে । মুর্তিটা কুচকুচে কালো । চার্যারের আলো সেই কালো দেহে প্রতিফলিত হচ্ছে । অনু কেবল এক ভাবে মুর্তিটার দিকে তাকিয়ে রইলো । চোখ দুটো যেন এখনও জ্বলছে । ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।

অনু এক ভাবেই সেদিকে তাকিয়ে রইলো । অনুর মনে হল ওটা যেন ওকে কিছু বলার চেষ্টা করছে । মন্ত্র মুগ্ধের মত অনুর মুর্তিটার দিকে হাত বাড়ালো । অনুর কেবল মনে হতে লাগলো মুর্তিটা ওকে তীব্রভাবে আকর্ষন করছে । মুর্তিটা ছোঁয়ার সাথে সাথেই অনু যেন ইলেক্ট্রিক শক খেল । শকের ধাক্কায় ছিটকে পড়লে একটু দুরে । সাথে সাথেই জ্ঞান হারালো ও ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top