What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বিরিয়ানির উৎপত্তি ও ইতিহাস (1 Viewer)

Nirjonmela

Administrator
Staff member
Administrator
Joined
Mar 1, 2018
Threads
2,762
Messages
23,256
Credits
825,322
Pistol
Crown
Thread Title Style (One)
Profile Music
WBYKRNQ.jpg


বিরিয়ানি পছন্দ করেনা এমন মানুষ ক'জন আছে বলুন? পুরনো ঢাকার কাচ্চি কিংবা তেহারীর নাম শুনেছেন অথচ জিভে জল চলে আসেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। এই চিত্র যে শুধু আমাদের দেশে তা কিন্তু নয়। গোটা ভারতবর্ষের প্রতিটি আনাচে কানাচে সেই চারশ বছর আগের মুঘল আমল থেকে আজ অবধি এতটুকুও কমেনি বিরিয়ানির আবেদন। তাই বিখ্যাত রম্যসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায় বলতে হয় "একি ভানুমতি! একি ইন্দ্রজাল"। হাজারো ভাষা, বর্ণ, গোত্র, জাতি ও ধর্মে বিভক্ত ভূ ভারতবাসীকে এক টেবিলে বসাতে পারে বোধ হয় দুটি জিনিস। তার মধ্যে একটি হল ক্রিকেট আর অন্যটি বোধহয় বিরিয়ানি। এই ঐন্দ্রজালিক বিরিয়ানির জানা অজানা নানা দিক নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদনটি।

7RCqtOV.jpg


যেভাবে শুরুটা হয়েছিল বিরিয়ানির

ভারতবর্ষের ইতিহাসে মুঘল সম্রাজ্ঞী মুমতাজ মহল শুধু তাজমহলের কারণে অমর হয়ে আছেন এমন কিন্তু নয়। তাজমহল ছাড়াও ভারতবর্ষের মানুষ আরও একটি আশ্চর্য জিনিস লাভ করেছে তাঁরই সুবাদে। সেই জিনিসটি হল আমাদের সকলের প্রিয় খাবার বিরিয়ানি। জনশ্রুতি আছে একবার মুমতাজ মহল মুঘল সৈন্যদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে ব্যারাকে গেলেন। কিন্তু সম্রাজ্ঞী অত্যন্ত দুঃখের সাথে দেখলেন সৈনিকদের স্বাস্থ্যের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। তাই মিলেটারি মেসের বাবুর্চিকে তিনি স্বয়ং নির্দেশ দিলেন চাল ও গোশত সমৃদ্ধ এমন একটা পুষ্টিকর খাবার তৈরি করতে যেটা সৈনিকদের ভগ্ন স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করে দিতে পারবে। সম্রাজ্ঞী মুমতাজ মহলের আদেশে বাবুর্চি যে খাবারটি তৈরি করলেন সেটাই আজকের দিনের বিরিয়ানি নামে পরিচিত। পরে ভোজন রসিক মুঘলদের খাবার টেবিলে জয়গা পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি সুস্বাদু বিরিয়ানির। মুঘলরাই ভারতে যেখানে যেখানে গিয়েছেন সেখানেই জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিরিয়ানির স্বাদ। সেটা আবার স্থানীয়দের হাতে পেয়েছে এককটি নতুন মাত্রা। আর তাই তো পূর্বে ঢাকা থেকে পশ্চিমে পেশোয়ার অবধি বিরিয়ানির এত রকমফের! এত বৈচিত্র্য!

BsNlLUc.jpg


বিরিয়ানি শব্দের উৎপত্তি যেভাবে

বিরিয়ানি শব্দের উৎপত্তি ফারসি বিরিয়ান শব্দ থেকে। ফারসিতে বিরিয়ান শব্দের অর্থ রান্নার আগে ভেজে নেওয়া। বাস্তবেও বিরিয়ানি রান্নার আগে সুগন্ধি চাল ঘি দিয়ে ভেজে নেওয়া হয়। তাই এই নামকরণ। জেনে রাখা ভাল আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিং অঞ্চলে যে "বিরন করা" শব্দটি ব্যবহৃত হয় সেটা এই ফারসি শব্দেরই পরিবর্তিতরূপ।
কাচ্চি বিরিয়ানি

আমাদের দেশে বিশেষত পুরান ঢাকায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হল কাচ্চি বিরিয়ানি। কাচ্চি শব্দটা এসেছে উর্দু কাচ্চা শব্দটি থেকে যার বাংলা অর্থ কাঁচা। যেহেতু সুগন্ধি চালের সাথে গোশত সরাসরি রান্না করা হয় তাই এর নাম হয়েছে কাচ্চি। এটি হিন্দি এবং উর্দুতেও একই নামে পরিচিত। সেদ্ধ ছাড়া খাসির গোশত টকদই দিয়ে মাখিয়ে তার উপর আলু আর চালের আস্তরণ দিয়ে রান্না করা হয় কাচ্চি বিরিয়ানি। অন্যদিকে সেদ্ধ বা পাক করা গোশত চালের সাথে মিশিয়ে তৈরি করা হয় পাক্কি বিরিয়ানি।

kkvWxHM.jpg


যেখানে তফাৎ পোলাও ও বিরিয়ানির

পোলাও ও বিরিয়ানি দুটো খাবারই সুগন্ধি চাল ও গোশত দিয়ে রান্না করা হয়। তারপরও এদের মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক। আমাদের দেশে যেটা আমরা পোলাও হিসেবে চিনি সেটাতে গোশত দেওয়া বা না দেওয়া ঐচ্ছিক। তবে পোলাও এর উৎপত্তি সেন্ট্রাল এশিয়ায়। সেখানে পোলাও গোস্তের সাথেই রান্না করা হয়। এমনকি ভারত এবং পাকিস্তানেও অনেকটা এভাবেই পোলাও রান্না করা হয়। মুঘলরা ছিলেন সেন্ট্রাল এশিয়ার মানুষ। পোলাও এর সংস্কৃতি তারা নিয়ে এসেছিলেন মাতৃভূমি থেকে। তবে পোলাও বিরিয়ানির মূল পার্থক্য যতটা না রান্নার প্রণালীতে তার চেয়েও অনেক বেশি মশলার ব্যবহারে। বিরিয়ানির মশলায় উপাদানের বৈচিত্র্য অনেক বেশি, মশলাও ব্যবহার করা হয় তুলনামূলক বেশি পরিমাণে। এ কারণে বিরিয়ানির মশলার ঝাঁঝ পোলাও এর চেয়ে অনেক বেশি কড়া।

এখনও সেন্ট্রাল এশিয়ার উজবেকিস্তান বা তুর্কমেনিস্তানে গেলে দেখা মেলবে এখনকার পোলাও এবং বিরিয়ানির আদিরূপের। তবে মজার ব্যাপার হল আমরা ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ এত বেশি মশলার ব্যবহারে অভ্যস্ত যে সমরখন্দ বা বুখারার সেই আদিম পোলাও আমাদের কাছে বেশ পানসে ও জৌলুসহীন মনে হয়। অন্তত বাস্তবে যারা দুটোই চেখেছেন তাদের প্রায় সবাই একই কথাই বলেছেন। তবে পোলাও এবং বিরিয়ানির আরেকটি বড় পার্থক্য লুকিয়ে আছে তাদের মৌলিক রন্ধন প্রণালীতে। পোলাও রান্নার আগে চাল ধুয়ে কিছুক্ষণ ফিজিয়ে রাখা হয় ও পরে পানিতে ফুটিয়ে সেদ্ধ করা হয়। কিন্তু বিরিয়ানিতে চালের সুঘ্রাণ অবিকৃত রাখতে চাল বেশি ধোয়া কিংবা ফোটানো হয়না।

cPlVlT0.jpg


তেহারি ও বিরিয়ানি মধ্যে পার্থক্য

তেহারিকে বিরিয়ানির একটি বিশেষ পরিমার্জিত ধরণ বলা চলে। তেহারীতে গোশতের পরিমাণ থাকে কম। আলু ও হাড় থাকে বেশি। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চড়া দামের কারণে খরচ বাঁচাতে এই বৈচিত্র্য আনা হয়েছিল। তবে প্রেক্ষাপট বদলে গেলেও এখনও আবেদন বদলে যায়নি তেহারীর। কাশ্মীরে তেহারী একটি অতি জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড।
বিরিয়ানির নানা বৈচিত্র্য

ভারতীয় উপমহাদেশে যে কত বিচিত্র রকমের বিরিয়ানির দেখা পাওয়া যায় তা বলে শেষ করা যাবেনা। এদের মধ্যে ঢাকাই, লাখনৌয়ি, সিন্ধী, হায়দারাবাদী, বোম্বাই, কলকাতাই, মালাবারী, থালেশ্বরী ও দিল্লীর বিরিয়ানি সবেচেয়ে প্রসিদ্ধ।


4XzaT1j.jpg


ঢাকাই বিরিয়ানী কথা

ঢাকা শহরের ট্রেড মার্ক হিসাবে যদি অল্পকিছু জিনিসকে বেছে নিতে বলা হয় নিঃসন্দেহে বলা যায় ঢাকাই কাচ্চি হবে অন্যতম। বিয়ে কিংবা অন্য যে কোন সামাজিক অনুষ্টান, বন্ধুদের আড্ডা কিংবা পুনর্মিলনী যেখানেই একবেলা খানাপিনার আয়োজন হোক না কেন বিরিয়ানিকে এড়িয়ে যাবার কোন জো নেই। মূলত ঢাকায় মুঘলদের হাত ধরে এসেছিল বিভিন্ন মোগলাই আইটেম যার মধ্যে বিরিয়ানি অন্যতম। বলা যায় ঢাকার গোড়াপত্তন আর ঢাকার বাহারি খাবারের বিকাশ যেন একই সূত্র গাঁথা।

তবে ঢাকাই বিরিয়ানির নাম উঠলে অবধারিতভাবে যে নামটি চলে আসবে সবার আগে সেটি হল হাজীর বিরিয়ানী। ১৯৩৯ সালে হাজী গোলাম হোসেন সাহেবের হাত ধরে যাত্রা শুরু হওয়া এই বিরিয়ানির রেসিপির কদর আজও ঢাকা শহরে মানুষের মুখে মুখে। তিন প্রজন্ম ধরে সুনামের ব্যবসা করে আসছেন হাজীর বিরিয়ানির স্বত্বাধিকারীরা এবং বলতে গেলে হাজীর বিরিয়ানির সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকার বিরিয়ানি শিল্প। এছাড়াও চানখাঁর পুলের হাজী নান্নার বিরিয়ানি, ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানি, নারিন্দার ঝুনুর বিরিয়ানিসহ আরও অসংখ্য বিরিয়ানি হাউজ গড়ে উঠেছে নতুন ও পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে। শুধু তাই নয় ঢাকাই বিরিয়ানি দেশের সীমা ছাড়িয়ে এখন পেট ও মন ভরাচ্ছে সুদূর প্রবাসে।

7y1CCe1.jpg


ভারতবর্ষের গত ৪০০ বছরের ইতিহাসে বিরিয়ানি এতটাই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে যে একে শুধু একটি খাবারের নাম বললে ভুল হবে। আনন্দ-বেদনায়, উৎসবে-পার্বণে এবং অনেক জাতীয় অর্জন ও শঙ্কটের নীরব সাক্ষী এক প্লেট বিরিয়নি। তাই নিছক পেট ভরানো কিংবা মুখোরোচকতার সীমা পেরিয়ে বিরিয়ানি যেন মিশে গেছে আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের সাথে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top