What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিষ্টান্ন (1 Viewer)

Uu1KLRp.jpg


বাকলাভা

পেস্ট্রি যদি একটা শিল্প হয়, তাহলে বাকলাভা সেই শিল্পের সেরা শিল্পকর্ম। সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে মিষ্টান্ন হিসেবে বাকলাভার জনপ্রিয়তা বেশ তুঙ্গে। বিভিন্ন সময়ে নানা দেশে বাকলাভায় নানা উপকরণ যোগ করেছে, কিন্তু অটোমান শাসনামল থেকে বলকান দেশগুলোর বাকলাভার খ্যাতিতে কেউ ভাগ বসাতে পারেনি। ময়দা, চিনি আর বাদামের তৈরি এই খাবার এত বছর ধরে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে রাজত্ব করে আস্তে আস্তে এশিয়াতেও বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। আমাদের দেশের নামীদামি পেস্ট্রি শপ ও রেস্টুরেন্টের ডেজার্ট মেন্যুতে বাকলাভার সংযোজন বেশ কয়েক বছর ধরেই লক্ষণীয়।

'পৃথিবীর ফলের ঝুড়ি' হিসেবে পরিচিত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের প্রায় সব খাবারদাবারে শস্য–জাতীয় গম, যব, বার্লি বা ভুট্টা, প্রচুর বাদাম আর ফলে ভরপুর। বাকলাভার মূল আকর্ষণও সেখানেই। ময়দার তৈরি পাতলা ফিলো বা ফাইলো শিট, কুচি করা পেস্তা বা আখরোট, বেশ খানিকটা মাখনের সঙ্গে চিনির শিরা বা মধু। বাইরে বাদামি মুচমুচে ময়দা ও ডিমের আবরণ এবং ভেতরে হরেক রকমের বাদাম, কিশমিশ বা অ্যাপ্রিকোট, যা মুখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুগন্ধযুক্ত চিনির শিরায় মুখ ভরে যায়।

oCOQmuX.jpg


বাকলাভার মূল আকর্ষণ এর উপকরণে

যুগ যুগ ধরে তুরস্ক, গ্রিস, আরব, সিরিয়া, লেবানন, ইরান, আর্মেনিয়া, বুলগেরিয়াসহ আরও অনেক দেশ বাকলাভাকে নিজস্ব জাতীয় খাবার বলে দাবি করে আসছে। তারা সবাই একসময় অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। তাই বাকলাভার উৎপত্তির ইতিহাস কিছুটা বিতর্কিত। সবচেয়ে প্রাচীন যে সময়ের কথা জানা যায় তা হলো, খ্রিষ্টপূর্ব অস্টম শতকের শুরুতে আসিরিয়ানরা সমতল রুটির মধ্যে কাটা বাদাম আর মধু রেখে বেক করত। পঞ্চদশ শতাব্দীতে অটোমান শাসকেরা কনস্টান্টিনোপল, অর্থাৎ বর্তমান ইস্তাম্বুল দখল করে নিয়ে তাদের শাহি রান্নাঘর সেখানে স্থাপন করে এবং ফাতিহ সময়ের টপকাপি প্যালেসের রসনার নোটবুকে সেই সময়ে বাকলাভা–সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া একটা সাধারণ পেস্ট্রি থেকে শাহি মিষ্টান্ন হিসেবে বাকলাভার বেড়ে ওঠা ও বাকলাভা তৈরি করে বিশিষ্ট ধনী ব্যক্তিদের খুশি করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এসব বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

বাকলাভা শব্দের উৎপত্তি

JE0gFnu.jpg


বাকলাভা শব্দটি এসেছে তুর্কি থেকে

তুর্কি থেকে ধার করা বাকলাভা শব্দটি প্রথম ১৬৫০ সালে ইংরেজি ভাষায় প্রবেশ করে। মূল শব্দ 'বায়লা' অর্থ মোড়ানো, গাদা করে রাখা। আবার আর্মেনিয়ান শব্দ 'বাখ' অর্থ বীজ–জাতীয় এবং 'হালভা' মানে মিষ্টি। আরবে বাকলাভাকে বলা হয় 'বাকলাওয়া'।

শাহি বাকলাভা

TqBVCu2.jpg


তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ বাকলাভা, ছবি: উইকিপিডিয়া

বাদশাহদের জন্য বাকলাভা তৈরিতে বাবুর্চিরা দক্ষতা আর শৈলীতে বেশ মনোযোগ দিতেন। তাঁরা মনে করতেন, উপযুক্ত উপাদান আর বর্ষব্যাপী দক্ষতার মাধ্যমেই বাকলাভার আদর্শ মান বজায় থাকে। পরিবেশনের আগে মান যাচাই করার জন্য সোনার মুদ্রা দিয়ে পরীক্ষা করা হতো। আধা মিটার উঁচু থেকে ফেলা সোনার কয়েন যদি ফিলোগুলোর ওপর দিয়ে লম্বালম্বিভাবে ট্রের শেষ অবধি না যেতে পারত, তাহলে সেই ট্রে ফেরত পাঠানো হতো।

ধীরে ধীরে বাকলাভা ধনী ও অভিজাত শ্রেণির খাবার হয়ে ওঠে। সপ্তদশ শতাব্দীতে ইস্তাম্বুলে রমজানের ছুটির দিনে 'বাকলাভা প্যারেড' করানো হতো সৈন্যদের দিয়ে। ব্যারাক থেকে সৈন্যরা বাকলাভার ট্রে নিয়ে কুচকাওয়াজ করত আর দর্শকেরা উৎসাহ দিত।

বিশ্বের বিখ্যাত বাকলাভা

C8pW6Jw.jpg


তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ ও ইস্তাম্বুল, ইরানের তেহরান ও ইয়াজদ আর গ্রিসের সবচেয়ে বিখ্যাত বাকলাভাগুলোর বিশেষত্ব হলো তার ফাইলো বা ফিলো, ড্রাই ফ্রুটস আর বাদামে। ফিলোগুলো এতটা পাতলা হয় যে তার একদিক থেকে অন্যদিক খুব সহজে দেখা যায়। ট্রেতে বেশ খানিকটা মাখন মাখিয়ে নিয়ে একটা বা দুটা ফিলো বিছানো হয়, তার ওপর দেওয়া হয় চিনি আর বাদামকুচি। তার ওপর আবার ফিলো দিয়ে আবার বাদাম-চিনি দেওয়া যায় এভাবে মাখন, ফিলো আর বাদামের কয়েক স্তর ত্রিভুজাকৃতি, চতুর্ভুজাকৃতি, আয়তাকার বা ডায়মন্ড শেপ করে কেটে আরেকবার মাখন দিয়ে ব্রাশ করে ৩২০-৩৫০ ডিগ্রিতে ৪০ মিনিটের জন্য বেক করা হয়। এবার শিরা দেওয়ার পালা। গরম বাকলাভার ওপর সমপরিমাণ পানি ও চিনি, হালকা লেমন, অরেঞ্জ এসেন্স, গোলাপজল, মধু দিয়ে তৈরি সিরাপ ঢালা হয়। ব্যস! ঘণ্টাখানেক বা রাতভর ঘরের ভেতরের সাধারণ তাপমাত্রায় রেখে খাওয়া যায় রসাল কুড়মুড়ে বাদাম আর ড্রাই ফ্রুটসে ঠাসা বাকলাভা।

অঞ্চলভেদে ভাষায় যেমন আলাদাভাব থাকে, তেমনি বাকলাভার রেসিপিতেও বৈচিত্র্য দেখা যায়। কখনো ফিলোতে ডিম বা ভিনেগার দিয়ে শিটের পুরুত্বে, কখনো শুধু একপদের বাদাম দিয়ে, কখনো আবার সিরাপ তৈরিতে দারুচিনি, লবঙ্গ, মধু ব্যবহার করে। সাধারণত যে অঞ্চল যে জিনিস বিখ্যাত, সেটাই ব্যবহার করা হয়। যেমন: গ্রিসের দক্ষিণ–পূর্ব দিকে বাকলাভায় অলিভ ওয়েল ব্যবহার করা হয় মাখনের পরিবর্তে আর সঙ্গে দেওয়া হয় তিলের বীজ। ফিলিংসের জন্য ইরানে ব্যবহার করা হয় পেস্তা, আখরোট, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম কিন্তু অ্যাপ্রিকোট ভার্সন পাওয়া যায় হাঙ্গেরিতে।

lOTTCAi.jpg


বাকলাভার ফিলো হয় আধা স্বচ্ছ্ব

সিরিয়ার আলেপ্পোতে ব্যবহার করা হয় স্থানীয় পেস্তা আর হামা থেকে উৎপাদিত সামনা। বর্তমানে ক্ল্যাসিক্যাল ধাঁচ থেকে বেরিয়ে খেজুর, চেরি, চকলেট চিপস, ক্রিমের ব্যবহার করতেও দেখা যায়। গাজিয়ান্তেপ বাকলাভা, সোবিয়েত, পেস্তার শর্মা, বার্মিজ কাদায়েফ, বুলবুল ইউভাসি বা বুলবুল পাখির বাসা, ব্যাল্লোরিয়েহ, তাজ আর মালেক, আসাবি, বুকাজ, কুরু বাকলাভা—এসব হলো বাকলাভার বেশ কিছু ধরন।

4xxTHND.jpg


বাকলাভা তৈরির পদ্ধতি

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এই একই মিষ্টান্ন মুসলমানেরা রোজায়-ঈদে, খ্রিষ্টানরা বড়দিনে, ইহুদিরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এবং ধর্মবর্ণ–নির্বিশেষে বিয়ে, জন্মদিন বা কোনো আনন্দের সময়ে খেয়ে এবং খাইয়ে থাকে। এটা যেন একটা ঐতিহ্যের অংশে পরিণত হয়েছে। আর বর্তমান সময়ে উপকরণগুলো এত সহজলভ্য হওয়ায় এখন বাকলাভা খেতে কোনো উৎসব লাগে না। মিষ্টান্নের খায়েশ মেটাতে রান্নাঘরে থাকা উপকরণে এই ডেজার্ট তৈরি করা একদম সহজসাধ্য ব্যাপার।

* তাইয়্যেবা তাবাসসুম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top