What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected আড়ি (1 Viewer)

Pegasus

Member
Joined
Mar 8, 2018
Threads
103
Messages
171
Credits
28,977
মাহিন অফিস থেকে ফিরে এসেই দরজাটা ধাক্কা দিতেই দরজাটা কেমন খুলে গেল। রুমের মধ্যে ঢুকেই কেমন শুনশান নীরবতা অনুভব করলো।একটি রুম বাদে বাকিগুলো কেমন অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে।আলোকিত রুমটার বিছানার উপরে কেউ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।তবুও মাহিন গুটি গুটি পায়ে ভেতরে এদিক সেদিক কাউকে খুঁজতে লাগলো।কিন্তু পুরো ঘরটা খোজার পরেও কাউকে পেলো না।পর মূহুর্তে মাহিন কাউকে না পেয়ে হতাশায় ডুব দিতে থাকে।এর পরেই তার চোখ আটকে যায় টেবিলের উপরে থাকা একটা কাগজ দেখে।
.
মাহিন একটা চিঠি ধরে আছে আর তার সাথে তার হাতজোড়া কম্পিত হচ্ছে।চিঠি পড়ছে আর সে হঠাৎ-ই অনুভব করল তার চোখের কোণে জমে একবিন্দু অশ্রু।লুকোতে চাইলেও অবাধ্য
জলকণা ভূপতিত হয়।হ্যাঁ মাহিন কাঁদছে কোন একজন তাকে ছেড়ে চলে গেছে।চিঠিটা পড়ে মাহিনের শরীর যেন পাথরের মূর্তীর মত এক জায়গায় ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেছে।সে মনের মধ্যে শূন্যতার আভাস পায়।চিঠিতে ছোট্ট করে লেখা "আমি আর তোমার সাথে থাকতে পারবো না!আমার সাথে আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করো না"।মাহিন আর কিছুই ভাবতে পারছে না।সাত বছরের সম্পর্ক কেউ এভাবে ছেড়ে চলে যেতে পারে মাহিন সেটা কল্পনাও করতে পারছে না।এতদিনে কী কোন একজন কে ভালবাসার টানে বাঁধতে পারেনি।এসব আর ভাবতে পারছে না মাহিন।নিজেকেই কেন জানি তার আর বিশ্বাস হচ্ছে না।
.
কিন্তু আজ সকাল পর্যন্তও সব ঠিকই ছিল।হঠাৎ করে কী এমন হলো যে ফাতেমাকে এভাবে চলে যেতে হলো।হ্যাঁ যে চলে গেছে তার নাম ফাতেমা ফেরদৌস! মাহিনের স্ত্রী।দুই বছর প্রেম করার পর তারা বিয়ে করে।বিয়ের পাঁচ বছর হয়ে গেছে।বেশ ভালই চলছিলো তাদের জীবন কিন্তু হঠাৎ করেই অজানা একটা ঝড় এসেছে সব এলোমেলো করে দিলো তবে কিছুই বুঝতে পারছে না মাহিন।
.
মাহিন ফাতেমা কে ফোন দিতে লাগলো! কিন্তু ওপাশ থেকে বার বারই ফোনটা বন্ধ আসছে।মাহিন বুঝতেও পারছে না ফাতেমা কে সে এখন কোথায় খুঁজবে।কোথায় যেতে পারে সে।ফাতেমা তো সাত বছর আগেই সব ছেড়ে চলে এসেছিলো তার কাছে।তবুও সে কৌতুহল বসত দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে গেল ফাতেমাদের বাড়ির উদ্দেশ্য।এর কিছু পরেই মাহিন ফাতেমাদের বাড়ীতে পৌঁছিয়ে কলিংবেল টিপতে লাগলো।কয়েকমিনিট পর যিনি দরজাটা খুলল তাকে দেখেই মাহিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো।
-ফাতেমা কী হয়েছে তোমার?
-কি হবে কিছুই হয়নি।
-তাহলে এই চিঠির মানে কী?
-মানে কী বুঝতে পারছো না?আমি আর তোমার সাথে থাকতে চাই না।
>মাহিন কথাটা আরেকবার শোনার জন্য বলল,কী বললে আবার বলো?
-ফাতেমা একটু জোর গলায় বলল-আমি আর তোমার সাথে থাকতে চাই না।
>কথাটা শোনার পর মাহিনের যেন বুকের ভেতরটা মোচড় দিতে লাগলো।কথা যেন আর বের হতে চাই না তবুও সে বলল-
-কেন আমার অন্যায়টা কী?
-জানিনা আমি কিছু।শুধু তোমাকে আর আমার সহ্য হচ্ছে না।
-তুমি কী কোন কারনে আমার উপরে বিরক্ত?বলো আমি সব কিছুর জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।
-কিসের ক্ষমা?
-তাহলে এভাবে ছেড়ে আসলেন কেন আমাকে?আজ সকাল পর্যন্তও সব ঠিক ছিল।আমার কথা বাদ দাও।আমাদের তো,,,,?
কথা শেষ না হতেই ফাতেমা মাহিন কে থামিয়ে দিয়ে বলল-তোমরা তোমাদের মত থাকো।আমি আর তোমার সাথে থাকতে চাই না।
-হঠাৎ করে এত পরিবর্তন।আমার ভালবাসা কী কোন কম ছিলো বলো?
-(...)
-কী কথা বলো?
-(...)
-পাশ থেকে ফাতেমার বাবা বলল-ওর যা বলার সব বলে দিয়েছি তুমি এখন আসতে পারো।
-কিন্তু আঙ্কেল...?
-আর কোন কিন্তু নয়।যা বলার ফাতেমা বলে দিয়েছে আর কোন ঝামেলা না করে এখান থেকে বিদায় হও।
মাহিন তবুও অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করে তবুও যেন কোন কিছুতেই কিছু হলো না।
.
মাহিন চোখ দিয়ে অঝোরে বয়ে চলেছে নোনা জল।মাহিন বাসায় এসেই বিছানায় নিজের শরীরটা কে এলিয়ে দিল।আর অতীতের স্মৃতিগুলো ঝাপসা ঝাপসা চোখের সামনে ভাসতে লাগলো।
এই তো সেদিনের কথা....
ঝিনাইদহর মৌসুমী শপিংমলে যেতে প্রায় ত্রিশ মিনিটের মত সময় লাগলো আমার। রিক্সা থেকে নেমেই পঞ্চাশ টাকার একটা নোট দিলাম রিক্সাওয়ালা কে। পকেট থেকে দশ টাকা বের করে দিতেই বাধা দিলাম তাকে।
-রেখে দেন।
-আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।
কথাটা বলেই একটা ছোট্ট হাঁসি দিয়ে
রিক্সা নিয়ে চলে গেলেন তিনি।শপিংমল থেকে মার্কেট
থেকে একটা সুন্দর লাল টকটকে শাড়ি
কিনলাম আমি। সাথে কিছু চুড়ি আর চুল
বাধার জন্য সুন্দর দেখে একটা খোপাও
কিনলাম।এরপর সোজা বাসায় আসলাম
আমি।গতপরশু দিন আমাদের বিবাহ বার্ষীকি ছিল।সেদিন আমার বউটাকে একটা নতুন শাড়ী কিনে
দিতে পারিনি। কিন্তু সে বিষয়ে কোন
অভিযোগ নেই তার। বাসায় পৌঁছাতে
পৌঁছাতে প্রায় পাঁচ টা বেজে গেল। বরাবরই লুকিয়ে উপহার দিতে ভালবাসি আমি।আজকের পরিকল্পনাও তার ব্যতিক্রম নয়।
বাসায় ঢুকেই দেখি পুরো বাসা একদম
ঠিকঠাক। সারাদিন বসে গুছিয়েছে
পাগলীটা।
-কী ব্যাপার এত দেরি হলো কেন?
-নাহ্ এমনিতে একটু বেশী কাজ ছিল তাই।
-একদম মিথ্যা বলবা না।
-নাহ্ সত্যি বলছি।কি ব্যাপার এখনো তুমি গোসল করোনি?
-এই একদম কথা এড়িয়ে যাবে না বললাম।তোমার সাথে আড়ি দিবো কিন্তু।
আমি অনেকটা জোর করেই বাথরুমে ঢুকিয়ে দিলাম তাকে আড়ি করার আগেই।আজকে দুজন ঘুরতে বের হবো।
বাথরুম থেকে বের হতেই লাল শাড়ীটা হাতে ধরিয়ে দিলাম তার। শাড়ীটা হাতে
নিয়েই এক ঝলক হাঁসি দিল।
-ফাতেমা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও। আমরা আজ ঘুরতে বের হবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি দশ মিনিট
অপেক্ষা কর। আমি রেডি হচ্ছি।
আমি জানি যতই দশ মিনিট বলুক না কেন!কম করে আধা ঘন্টা লাগবে তার।
.
বাসা থেকে বের হয়েই একটা রিক্সা
ডাকলাম আমি। রিক্সাতেই ঘুরবো আজ।
-মাহিন দেখছ ঐ বাড়ীটা কত সুন্দর..!!
-হুম, দেখলাম। অনেক সুন্দর।
-আমাদের বাড়ীটাও না.....
কথাটা শেষ করলো না ফাতেমা। কিছু একটা ভেবে আবার কথা বলা শুরু করলো-
-বাবু সরি.....
-সরি কেন..?
-তুমি আড়ি করছো তাই।
-কই আড়ি করছি?
-এই যে আমাদের বাড়ীর কথা মুখ ফসকে
বেরিয়ে গেল।মাহিন আমি সত্যি সরি।
-হুম।ওকে।
অনেক বড় ব্যবসায়ির মেয়ে ফাতেমা। আমার মত ছেলে কোন দিক থেকেই যোগ্য না তার।কিন্তু কি দেখে যে আমার প্রেমে পরে গেল তাই আবিষ্কার করতে পারলাম না আজও।
.
ইউনিভার্সিটিতে একসাথেই পড়তাম দুজন।ভাল বন্ধুও ছিলাম দুজন। বন্ধু
থেকে কখন যে সম্পর্কটা ভালবাসায় রূপ
নিল তাই বুঝতে পারলাম না। সেই থেকে
পথ চলা। বাবা-মা রাজি হবে না তাই
পালিয়ে এসেছিল আমার সাথে।
-মাহিন তুমি কি এখনও আমার উপর রাগ করে আছো?
-না।
-তাহলে কথা বলছ না কেন..?
-ভাবছি.....
-কি ভাবছ তুমি...?
-ভাবছি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো
কোথাও। কক্সবাজার কিংবা সিলেট। এই
দুইটা জায়গা আমার অনেক পছন্দের।
- রিসেন্টলি তুমি কি ঘুষ খাওয়া শুরু করছো নাকি?
- নাতো!কেন এই কথা কেন?
- তাহলে তুমি এত টাকা কোথায় পাবে?
শোন আমার কিচ্ছু চাই না!
না চাই কোন দামি গহনা, না চাই কোন
ভাল শাড়ী। আমি চাই আমার বরটা
আমাকে সারাক্ষন পাগলের মত ভালবাসুক।আর....
- আর কি..?
- আর পিচ্চি একটা বেবী চাই। যে
সারাদিন আমার চারপাশে ঘুরঘুর করবে।
আম্মু আম্মু করে আমাকে পাগল করে
দিবে।ব্যাস এইটুকুই যথেষ্ট।
- হুম।বেবী পেলে তো আমাকে আর যত্নই
করবে না।আমাকে তো তাইলে আর ভালও বাসবে না।
- হিহিহি...তখন তো তুমি বুড়ো হয়ে যাবে।
তখন আর তোমাকে ভাল লাগবে না।
-আচ্ছা আমাদের বেবীর কি নাম রাখবে?
-ফাওজিয়া..নামটা সুন্দর না..?
- অনেক সুন্দর।
কবর স্থানের পাশে এসে থামলো রিক্সাটা। তবে আজকে রিক্সায় ফাতেমা নেই। তার পরিবর্তে রিক্সা থেকে হাত ধরে নামালাম ফাওজিয়া কে।
.
হ্যাঁ সেদিনের পর অনেকবার করে ফাতেমাদের বাড়ীতে যেতাম।কিন্তু কোনভাবেই দেখা করতে পারতাম না ফাতেমার সাথে।এক সময় মনে মনে প্রচন্ড রাগ হতো ফাতেমার উপর এতটুকু বাচ্চা কে ফেলে রেখে একটা মানুষ কিভাবে চলে গেলো।হ্যাঁ সত্যিই চলে গেছে তবে এই পৃথীবি ছেড়ে চলে গেছে।আমার আর ফাওজিয়ার কাছ থেকে অনেক দূরে আমাকে নরক যন্ত্রনা দিতে না ফেরার দেশে পাড়ী জমিয়েছে ফাতেমা।
.
সেদিন খুব করে কাঁন্না করেছিলাম ফাওজিয়া কে জড়িয়ে ধরে যেদিন ফাতেমা কে দেয়া শেষ চিঠিটা আমি পড়েছিলাম।
"এই মাহিন শুনছো আমি তোমার ফাতেমা বলছি।জানি আমাকে ভুল বুঝছো।কিন্তু কি করবো বলো?আমি যেদিন জানতে পারলাম আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না সেদিন যেন আমার ভালবাসার দুনিয়া উল্টে গেল।তোমাকে আর ফাওজিয়া কে ছেড়ে একমূহুর্ত থাকতে পারবো না আমি।তবুও সেদিন চলে যেতে হলো।তুমি বার বার আমাকে নিতে আসতে আর আমার মনটা বার বার তোমার সাথে যেতে চাইতো।কিন্তু আমি তো আর কিছুদিনের অতিথি ছিলাম মাত্র তাই আর মায়া বাড়াতে চাইনি।তুমি চলে গেলে বার বার হাওমাও করে কেঁদে উঠতাম আমি।কিন্তু যেতে তো হবেই।তাই আগে থেকেই দূরে সরে গেলাম।আর আমাদের ভালবাসার ফাওজিয়া কে দেখে রাখবে।তুমি ছাড়া আর কেউ নেই পৃথীবিতে ওকে ভালবাসার মত......
.
সেদিন আমার ছোট্ট মেয়েটাও কেমন করুন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।ফাতেমার ক্যান্সার হয়ে ছিলো সেটা কখনো জানতেও দিলো না আমাকে।বুকের বাম পাজড় থেকে কেউ আমার হৃদস্পন্দনটা ছিড়ে নিয়ে যেতে লাগল।একেবারের জন্য আড়ি দিয়ে চলে গেলো এই পৃথিবী থেকে।
সেই থেকে ফাওজিয়া
আমার সাথে।সমস্ত সুখ দুঃখের সাথী এই

তিন বছরের মেয়েটি।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top