What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সত্তা (2 Viewers)

নির্জনে পথিক

Special Member
Elite Leader
Joined
Mar 3, 2018
Threads
185
Messages
26,611
Credits
192,870
Statue Of Liberty
Watch
এটি কোনো চটি নয়, অসাধারণ এক প্রেমকাহিনী......

___________________________________________________

সত্তা
user008

প্রথম পর্ব :

কবির সবুজ ঘাসে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়েছিল। সেখানে লালচে ও গোলাপি রংয়ের মেঘের ফাঁকে ফাঁকে একটি দুটি তারা উঁকি দিচ্ছে। কবির এবার উঠে বসল, চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। চারিদিকে বিস্তৃত প্রান্তর জুড়ে সোনালী ধানক্ষেত, তার বুক চিরে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে একটি খাল, সেখানে গোধুলির গোলাপী আভায় এক অপার্থিব সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। কবির বসে আছে খালটির পারে। খালটির স্বচ্ছ পানিতে মৃদু স্রোত বয়ে যায়। কবির একটি ঢিল ছুঁড়ে দিয়ে স্রোতটিকে লন্ডভন্ড করে দিল। দুরের লোকালয়ে মিটিমিটি তারার মত বাতি জ্বলছে, সেদিক থেকে আযানের শব্দ ভেসে আসছিল কিছুক্ষন আগে। এখন রাত নেমে আসছে, কবিরের বাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু এখনই বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না। কবির আবারও ঘাসে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল।
আকাশে মস্তবড় চাঁদ, ধিরে ধিরে আরো উজ্জল হচ্ছে। তার আসে পাসে হাজার হাজার তারা, কবির উদাস দৃষ্টিতে সে দিকে তাকিয়ে থাকে।
কবিরের বয়স পনের বছর, কিন্তু তাকে দেখে সতের আঠার বলে মনে হয়। মাথা ভর্তি উস্কোখুস্কো চুল, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ কিন্তু মুখে গাম্ভীর্যের ছাপ পড়েছে। তার বয়সী অন্য কিশোরদের মতো কবির সারাদিন খেলাধুলা, গান, আড্ডা নিয়ে মেতে থাকেনা। ইদানিং পড়াশোনাও তার ভাল লাগেনা। তার দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে সুজাবাদের এই প্রান্তরে।

কবির যখন বাড়ি ফিরল তখন রাত এগারোটা বাজে। কবির ড্রয়িং রুম দিয়ে পা টিপে টিপে নিজের রুমে ঢুকে পড়ে, সেখানে তার মাকে দেখে ভীষণ চমকে ওঠে।

"কবির, কোথায় গিয়েছিলি? এতো রাত হল কেন? তোকে কতোদিন বলেছি সন্ধার সাথে সাথে ঘরে ফিরবি? পড়াশোনা নেই? সামনের বছর তুই না এস এস সি দিবি, এখন পড়াশোনা ছেড়ে দিলে চলে?"
কবির মাথা নিচু করে তার মায়ের রাগত স্বরে দিয়ে যাওয়া লেকচারগুলো শুনতে থাকে। কবিরের মা পারভীন একটু বিরতি নেয়, তারপর বলে "এক্ষুনি পড়তে বস, দুই ঘন্টার আগে উঠবি না।"
কবির টেবিলে বসে একটি বই টেনে নেয়। তখন তার মা আবার বলে "আগে খেয়ে আয়, ডাইনিং টেবিলে খাবার ঢাকা আছে।"
কবির বাধ্য ছেলের মতো ডাইনিং রুমে চলে যায় ও খেতে বসে। কবির খাওয়া শেষে আবার নিজের রুমে ফিরে যায়। পারভীন তখনো তার রুমে।

"মা, তুমি খেয়েছ?"
"আমাকে নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবেনা। তুই পড়তে বস।"

কবির পড়তে বসে, পারভীন তাকে পড়ায়, প্রথমে অংক তারপর ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি। পড়তে পড়তে রাত একটা বেজে যায়। পারভিন তখন বলে "অনেক রাত হয়েছে, এখন শুয়ে পড়। আমি লাইট নিভিয়ে দিচ্ছি।"
কবির শুয়ে পড়ে কিন্তু ঘুমাতে পারেনা। কিছুক্ষন আগেও ঘুমে চোখ ঢুলু ঢুলু করছিল। কিন্তু শোয়ার সাথে সাথে ঘুম গায়েব! কিছুক্ষন পর পারভিন ফিরে আসে ছেলের ঘরে, হাতে মশার কয়েল।

"তুই তো আবার মশারী টানাতে চাস না। কয়েলটা জ্বালিয়ে দেই?"
"আমার ঘুম আসছে না মা, আমার পাসে একটু বসবে?"
পারভীন কয়েল জ্বালিয়ে ছেলের পাসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। এভাবে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে কবিরের খুব ভাল লাগে, শান্তিতে চোখ বুজে আসে আর ঘুমিয়ে পড়ে সে।

কবির আধশোয়া হয়ে পাশের দেয়ালে ঘড়িটির দিকে তাকায়। নয়টা বাজে। কবিরের স্কুল দশটা থেকে, স্কুলে যেতে হলে আরো আগে ঘুম থেকে উঠতে হতো। কিন্তু কবির সপ্তাহ খানেক হল স্কুলে যায়না, আজকে যাবেই বলে মনস্থির করল।
কবির উঠে টুথ ব্রাসে পেস্ট ভরে নিয়ে দাঁতে ঘসতে ঘসতে রান্নাঘরের দিকে এগোয়, সেখান থেকে খুট খুট শব্দ আসছিল।
রান্নাঘরে সুলতানা থালা বাসন ধুচ্ছিল, কবিরকে দেখে মুখে হাসি টেনে এনে জিজ্ঞাসা করল "কবির বাবু, ঘুম হইল?"
কবির কোন উত্তর দিলনা।
"আইজকা কি খাবেন? শৌল মাছ রান্দি?"
কবির হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নেড়ে চলে গেল।
সুলতানা এ বাড়িতে কাজ করে, দুইবেলা এসে রান্না, ঘর ঝাড় ও কাপড় ধুয়ে দিয়ে যায় ।

কবির হাত মুখ ধুয়ে স্কুল ড্রেস পরে, কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
কবির তাদের বাড়ির সামনের সরু রাস্তাটি পেরিয়ে বাইপাস রোডে উঠতেই সেখানে কালো রংয়ের একটি ল্যান্ড ক্রুসার দাড়িয়ে থাকতে দেখল। গাড়িটিকে সে চেনে, এটি সাফাকাত সাহেবের গাড়ি।

ডক্টর সাফাকাত হোসেন কবিরের জন্যেই অপেক্ষা করছিলেন। কবিরকে দেখেই গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে বললেন "কবির উঠে পড়, আমি তোমাকে স্কুলে পৌঁছে দেই।" কবির অনিচ্ছা সত্তেও গাড়িতে উঠে বসল।

ডক্টর সাফাকাত হোসেন মেডিকো ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি মাল্টিন্যাশনাল ঔষধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার। কবিরের বাবা সেই কোম্পানিতে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভ হিসেবে ঢুকেছিলেন। সেখান থেকে যে তিনি ডেপুটি ম্যানেজার পর্যন্ত পদোন্নতি পেয়েছিলেন তাতে যেমন তার নিজের পরিশ্রম দায়ী তেমনি সাফাকাত সাহেবের সাপোর্টও ভুমিকা রাখে।

"মাসুদ শুধু আমার অফিস স্টাফ ছিলনা, আমার ছোট ভাই ছিল, ভাইয়ের চেয়েও আপন ছিল। ওর মতো পরিশ্রমী মানুষ আমি আর একটাও দেখিনি।"

সাফকাত সাহেব একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন-
"শুনলাম তুমি নাকি আজকাল নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছনা? পড়াশোনায় অবহেলা কোরোনা, সামনে তোমার এস এস সি পরীক্ষা। এ প্লাস কিন্তু পেতেই হবে।"

"জি চেষ্টা করব।"

সাফাকাত সাহেব একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করেন -

"কবির, মাঝে মাঝে আমার মনে হয় তোমার মা বাবার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী। আমি নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করি যে সেটা ছিল নিছক একটি এক্সিডেন্ট, কিন্তু কিছুতেই সান্তনা খুঁজে পাইনা।"

সেদিন ছিল সাফাকাত সাহেবের ছোট মেয়ের বিয়ে। অনুষ্ঠানে কবির তার বাবা মায়ের সাথে এসেছিল, সাথে তার পিচ্চি বোন তুলিও ছিল। একটি ফাইভ স্টার হোটেলে বেশ জাকজমকপুর্ন আয়োজন। বিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত এগারোটা বেজে গিয়েছিল। বাড়ি ফেরার সময় সাফাকাত সাহেব নিজের গাড়ি দিয়ে পাঠিয়েছিলেন।
কবির বসেছিল ড্রাইভারের পাসের সিটে, মা বাবা পিছের সিটে। তুলি ঘুমিয়ে গিয়েছিল মায়ের কোলে। সামনে একটি স্পীড ব্রেকার দেখে ড্রাইভার যেই গাড়ি স্লো করেছে তখনই পিছনের কার্গো ট্রাকটি সজোরে আঘাত করে গাড়ির পিছে, অমনি গাড়িটা এক ডিগবাজি দিয়ে উল্টে যায় রাস্তার মাঝখানে। এম্বুলেন্সে করে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল কিন্তু কবির ছাড়া আর কাউকেই বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল কবির, কিন্তু তার দৃষ্টি সেখানে নেই। তার চোখের সামনে ভেসে আসছে হাসপাতালের মেঝেতে পরপর সাজিয়ে রাখা তিনটি লাশ।

"কবির, তোমার স্কুল এসে গেছে" সাফাকাত সাহেবের কথায় কবিরের ধ্যানভঙ্গ হয়। সে দরজা খুলে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে হেঁটে যেতে থাকে।
স্কুলে পৌঁছে প্রথমে সে ওয়াসরুমে ঢোকে, দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে সে হু হু করে কেঁদে ওঠে।
এক বছর হয়ে গেল সে তার পুরো পরিবারকে হারিয়েছে। কবিরের বাবা মা দুজনই বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল, নানা নানি, দাদা দাদি কেউ বেঁচে নেই। কবিরের কোন নিকট আত্মীয় নেই।
সাফাকাত সাহেব কবিরকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কবির রাজি হয়নি।
কবির একা থাকে, সম্পুর্ন একা। ব্যাংকে কবিরের নামে চৌদ্দ লক্ষ টাকা আছে। তা থেকে যে ইন্টারেস্ট পায় তা দিয়ে তার বেশ চলে যায়।

কিন্তু একা একটি বাড়িতে থাকা সহজ নয়। মা বাবার মৃত্যুর দুদিন পরেই সে তার পুরো পরিবারকে দেখতে পেয়েছিল রাতের বেলা। যেন সব কিছু আগের মতোই আছে। বাবা টেবিলে বসে তার অফিসের ফাইল ঘাঁটছেন, মা ড্রয়িংরুম সোফায় বসে টিভি দেখছেন, পিচ্চি তুলি মেঝেতে বসে খেলনা নিয়ে খেলছে।
কবিরকে দেখে তুলি থ্যাপ থ্যাপ করে এগিয়ে গিয়ে বলল "বাইয়া"। কবির তাকে কোলে তুলে নিয়ে গালে চুমু দিল।
মা তখন বলল "ওকে কোলে নিতে হবেনা। পড়তে বস।"
কবির তুলিকে ছেড়ে দিয়ে পড়তে বসল। কিন্তু তখন তার ভীষন খিদে পেয়েছিল, সারাদিন সে কিছু খায়নি।
কিছুক্ষন পরই ডাক পড়ল "খেতে আয়, ভাত বেড়েছি।"

সেই রাতের ঘটনাটি কবির সুলতানাকে বলেছিল। সুলতানা ভয় পেয়েছিল কিন্তু খুব বেশী অবাক হয়নি। সুলতানা বলেছিল আত্মারা নাকি মৃত্যুর চল্লিশ দিন পর্যন্ত নিজের বাড়িতে ঘোরাফেরা করে। পরের দিনই সুলতা ইমাম সাহেবের পরামর্শ মতো দুটি তাবিজ এনে একটা বাড়ির দরজায়, অন্যটা কবিরের বালিশের নিচে রেখে দিয়েছিল।
এরপর এক বছর কেটে গেছে, এখনো মাঝে মাঝে সে কখনো তার মাকে কখনো বা পুরো পরিবারকে দেখতে পায়।

কবির যখন ক্লাসে পৌঁছল তখন প্রথম ক্লাস প্রায় শেষের দিকে। ফরিদ স্যার ক্লাস নিচ্ছেন।

"স্যার আসতে পারি।"
 

Users who are viewing this thread

Back
Top