What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected গল্প নম্বর 2 (1 Viewer)

Nil328

Member
Joined
Sep 13, 2018
Threads
101
Messages
101
Credits
3,429
হাসপাতাল ব্যাপারটা আমার কোনদিনই ঠিক পছন্দ ছিল না কিন্তু ডাক্তার কন্যা বেশ পছন্দ ছিল সব সময় । আমার প্রেমিকা একজন ডাক্তার হবে এটা ভাবতেই মুখে একটা আনন্দের হাসি চলে আসতো । তবে আমি জানতাম যে আমার দ্বারা কোন ডাক্তা মেয়ে পটবে না কোন দিন । সেই হিসাবে খুব বেশি দরকার না হলে আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে না । এটা একটা স্বস্তির ব্যাপার ছিল ।

কিন্তু কপালে থাকে সেটা কোন ভাবেই এড়ানো যায় না । আমার প্রেমিকা না একেবারে ডাক্তারের সাথে বিয়ে হয়ে গেল । কিভাবে সেই বিয়ে হল সেই গল্পে না যাই, সেটা শেষ করতে গিয়ে রাত পার হয়ে যাবে । আজকের ব্যাপারটা অন্য কিছু নিয়ে

যাই হোক তৃষার তখনও ঠিক ডাক্তারী পড়া শেষ হয় নি । মাঝে ওর পা ভাঙ্গার কারনে ও একটা বছর গ্যাপ দিয়েছিলো । এখন ওর ইন্টার্নশীপ চলছে ডিএমসিতে । মাঝে মাঝেই ওর নাইট ডিউটি পড়ে । তখন আমার ডাক পড়ে । যদিও খানিকটা নিয়ম নীতি বহির্ভূত তবুও খুব একটা সমস্যা হয় না । এই সময় গুলোর বেশির ভাগই আমরা তৃষার অফিস রুমে কাটাই । মাঝে মাঝেই ওর রাতে রাউন্ড দিতে যায় । কোন কোন সময় আমি ওর সাথে সাথে যাই, মানুষজন দেখি । রাতের নিরব হাসপাতলে করিডোরে ওর হাত ধরে হাটতে বেশ লাগে । তখন আর আমার হাসপাতাল খারাপ লাগার ব্যাপারটা মাথায় থাকে না । অবশ্য তৃষা সাথে থাকলে আমার কাছে আমার কাছে সব কিছুই চমৎকার মনে হয় ।

সেদিনও আমি রাতে হাজির হয়ে গেলাম হাসপাতালে । হাসপাতালের স্টাফদের প্রায়ই সবাই আমাকে ততদিনে বেশ ভাল করে চিনে ফেলেছে । তাই হাসপাতালে ঢুকতে খুব একটা সমস্যা হল না । তৃষাকে ফোন দিতেই ও লাইণ কেটে দিল । এর মানে হচ্ছে ও এখন ব্যস্ত আছে । আমি ওকে আর বিরক্ত করলাম না । একটা ছোট মেসেজ করে রাখলাম যে আমি চলে এসেছি ।

তারপরেই আস্তে আস্তে হাসপাতালের করিডোর দিয়ে হাটতে লাগলাম । ততক্ষনে প্রতিটা ওয়ার্ডের লাইট প্রায় অফ হয়ে গেছে । সব রোগীরা ঘুমিয়ে পড়েছে । তবে কেউ কেউ তখনও জেগে আছে । হাটার পথে আমার সাথে দুজন নার্সের সাথে দেখা হল । একজন আমাকে দেখে একটু হাসলো । একটু জানতে চাইছে যে আমার একা একা হাটতে কোন সমস্যা হচ্ছে কি না । আমিও প্রতি উত্তরে একটু হাসলাম ।

একটা সময় হাটতে হাটতে বেশ ভেতরে চলে এলাম । কেমন যেন অপরিচিত মনে হল । একটু যেন ঠান্ডা ঠান্ডাও লাগতে লাগলো । আসলে হাসপাতালটা আমার মাঝে মাঝে গোলক ধাঁধা মনে হয় ঠিক মত চিনতে পারি না । আমি আবার পেছনে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম তখনই আমার চোখ গেল করিডোরের একেবারে শেষ মাথায় । একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে চুপচাপ বসে আছে । করিডোরের মাথার উপরে একটা ৮০ পাওয়ারের লাইট জ্বলছে । সেই আলোতে মেয়েটার বিষণ্ণ মুখ দেখা যাচ্ছে

আমি খানিকটা অবাক না হয়ে পারলাম না । এই বাচ্চাটা এখানে কি করছে ?

রোগীদের ওয়ার্ড আমি বেশ পেছনে ফেলে এসেছি । এদিকে কি আছে আমার ঠিক মত জানা নেই । বাচ্চাটাও কি আমার মত হাটতে হাটতে এখানে চলে এসেছে । হয়তো বাচ্চাটার মা এখানে ভর্তি আছে । রাতের বেলা ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে একা একা বের হয়ে গেছে ।

আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম বাচ্চা মেয়েটার কাছে ।

আমার উপস্থিতি পেয়েও মেয়েটা মাথা তুলে তাকালো না । সামনের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলো একভাবে । আমি ডাক দিলাম

-এই যে বাবু ! এখানে কি ?

মেয়েটা তবুও কোন কথা বলল না । চুপ করে বসেই রইলো নিজের যেখানে বসে ছিল । তৃষা সব সময় আমাকে বকাবকি করে এই নিয়ে যে আমি বাচ্চাদের সাথে ঠিক মত মিশতে পারি না । বাচ্চাদের সাথে তৃষা খুব সহজেই মিশতে পারে । প্রথম বার দেখেও তাদের এমন মোলায়েম ভাবে ডাক দিবে যে মনে হবে বাচ্চাটাকে সে কতদিন ধরেই না চিনে । আমি এমন করে ডাকতে পারি না । তবুও যথা সম্ভব গলা নমনীয় করে বললাম

-এই বাবু তোমার নাম কি ?

এবার মনে হল ডাকে একটু কাজ হল । মেয়েটা আমার দিকে মুখ তুলে তাকালো । তারপর বলল

-নিমু ।

-তো নিমু মামনি, তুমি এখানে একা একা কি করছো ? তোমার আম্মু কোথায় ?

আমার প্রশ্ন শুনে নিমুর মুখটা আবারও কালো হয়ে গেল । সে কোন উ্ত্তর দিল না । আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে মেয়েটা নিশ্চিত ভাবে হারিয়ে গেছে । ওর মা কোন ওয়ার্ডে আছে এটা আর খুজে পাচ্ছে না । আমি একটু হেসে বললাম

-তোমার কোন ভয় নেই । আমরা দুজন মিলে তোমার আম্মুকে খুজে বের করবো । কেমন ! এমন চল এখান থেকে !

এবারও মেয়েটা আমার কথায় উঠে দাড়ালো । মুখে যেন একটু হাসিও দেখা গেল । তবে সেটা ওর বিষণ্ণতাকে ঠিক কাটিয়ে উঠতে পারলো না । আমরা আবারও ওয়ার্ডের দিকে হাটা দিলাম । তৃষার কাছে বললেই সে কোন না কোন ব্যবস্থা করে ফেলবে । চলতে চলতেই আমি নিমুকে নানান প্রশ্ন করতে লাগলাম । মেয়েটা কেমন টুকটুক করে সেই সব প্রশ্নের জবাব দিতে লাগলো । বুঝতেই পারছি মেয়েটা স্বাভাবিক অবস্থায় প্রচুর কথা বলে । এখন অচেনা পরিবেশ বলেই হয়তো বেশি কথা বলছে না ।

মেয়েটা সম্পর্কে অনেক কথাই জানা গেল । সে আজিমপুরে থাকে, আজিমপুর সরকারী কলনী । তার বাবার নাম সেলিম আর মায়ের নাম রাবেয়া । মেয়েটা স্কুলে পড়ে আর প্রতিবারই সে ফার্স্ট হয় । কিন্তু এইবার সে পরীক্ষায় ফার্স্ট হতে পারে নি । তাই তার মা তাকে বকা দিয়েছে । এই জন্য তার মন খারাপ !

হাটতে হাটতে তৃষার কেবিনের সামনে এসে দাড়ালাম । ভেতরে ঢুকে দেখি সেখানে কেউ নেই । তৃষা সম্ভবত এখনও রাউন্ড থেকে বের হয় নি । আমি ওকে চেয়ারের উপর বসিয়ে বললাম

-তুমি কিছু খাবে ? ক্ষুধা লেগেছে ?

নিমু কোন কথা না বলে কেবল তাকিয়ে রইলো । আমি তৃষার ব্যাগ খুজতে লাগলাম । হাসপাতালে আসার সময়ে হ্যান্ড ব্যাগ ছাড়াও আরও একটা বড় ব্যাগ নিয়ে আসে । সেখানে রাজ্যের জিনিস পত্র থাকে । বিশেষ করে আমার জন্য নানান ধরনের খাবারে ভর্তি থাকে । টেবিলের এক পাশে ব্যাগটা খুজে পেলাম । সেটা খুলতেই একটা জুসপ্যাক খুজে পেলাম । সেটঐ নিমুর সামনে দিয়ে বললাম

-আগে এটা শেষ কর । তারপর অন্য কিছুর ব্যবস্থা করছি । আর একদমই চিন্তা করবা না । আমি তোমার আম্মুকে ঠিকই খুজে বের করবো !

এমন সময় তৃষার ফোন এসে হাজির । কেবিন নাম্বার ৬ এর সামনে আসতে বলল । আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই লাইণ কেটে গেল । একবার মনে হল নিমুকে সাথে নিয়ে যাই কিন্তু তারপর মনে হল দরকার নেই । ও এখানে বসে জুস খেতে থাকুক । আমি তৃষাকে বরং এখানে ডেকে নিয়ে আসি । বের হওয়ার আগে নিমুকে ভাল করে বলে গেলাম যে ও যেন কোন ভাবেই কেবিন থেকে না বের হয় । আমি এখনই আসছি ।

তৃষাকে খুজে পেতে খুব একটা সময় লাগলো না । ওর মুখের দিকে তাকিয়েই মনে হল ওর মন খারাপ । আমি বললাম

-কি ব্যাপার মন খারাপ কেন ?

-কিছু না ।

-আরে বলবা তো !

-তোমাকে একটা ছবি ইনবক্স করেছি দেখো ।

-কিসের ছবি ?

-এক্সিডেন্ট কেস ! মারা গেছে ।

-এই জন্য মন খারাপ ?

-হুম !

আমি তৃষাকে জড়িয়ে ধরলাম । আমি জানি আমার জড়িয়ে ধরাটাই কেবল ওর মন খানিকটা ভাল করে তুলতে পারে । এই মেয়েটার বাইরে বাইরে এমন শক্ত একটা ভাব দেখাবে অথচ ভেতরে ভেতড়ে এমন নরম মনের মানুষ । আমার মনে আছে ওর সামনে প্রথম যে রোগীটা মারা গিয়েছিলো সেদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে ও সে কি কান্না ! মনে হচ্ছিলো যেন ওর নিজের কাছের কেউ মারা গেছে ।

অনেকটা সময় পরে তৃষা নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে বলল

-একটু চেষ্টা করে দেখো দেখি মেয়েটার পরিচয় জানতে পারো কি না । এক্সিডেন্ট কেস । পথচারিরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছে । কেউ চেনে না ।

আমি মোবাইল বের করে ইন্টারনেট ডাটা অন করতেই হোয়াটসএপ নোটিফিকেশন আসলো । ছবিতে ক্লিক করতেই আমি বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলাম । চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম কেবল ছবিটার দিকে ।

সাদা কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখা হয়েছে মেয়েটাকে । কেবল মুখটা দেখা যাচ্ছে । তবে নিমুর চেহারাটা আমার চিন্তে মোটেই কষ্ট হল না । আমার চেহারা দেখেই তৃষা ঠিক বুঝতে পেরেছে যে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে । ও বলল

-এই কি হয়েছে ? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন ছবিটার দিকে !

আমি তৃষার দিকে তাকিয়ে রইলাম বেশ কিছুটা সময় । কোন কথা বলতে পারলাম না । তারপর ওর হাত ধরে বলতে গেলে এক প্রকার টানতে টানতেই নিয়ে এলাম ওর অফিসে ।

টেবিলের উপর সেই জুসের প্যাকেট টা রয়েছে । আর কেউ নেই । তৃষা তখনও আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । কিছুই বুঝতে পারছে না । আমি জুসের প্যাকেট টা হাতে নিয়ে দেখলাম সেটা প্রায় খালি । তৃষা আমার দিকে তাকিয়ে বলল

-কি হয়েছে বলবা প্লিজ ! এমন কেন করছো ?

আমি কিছুটা সময় চুপ করে থেকে সব কিছু খুলে বললাম । ও কেবল চুপ করে তাকিয়ে রইলো । আমি যে ওর সাথে কোন প্রকার মজা করছি না সেটা আমার চেহারার ভাব দেখেই বুঝতে পেরেছে । তৃষা বলল

-তুমি কি বলছো বুঝতে পারছো তো ?

-হ্যা । কিভাবে আমি জানি না । তবে আমার মনে হচ্ছে যে এটা সত্য হবে । এক কাজ করো কাউকে আজিমপুর সরকারী কলনীতে পাঠাও । মেয়ের নাম নিমু, বাবার নাম সেলিম আর মায়ের নাম রাবেয়া । মনে হয় খুজে পেতে সমস্যা হবে না ।

তৃষা তাই করলো । আমি এই ফাঁকে নিমুর বডিটা দেখে আসলাম । আমার কোন সন্দেহ নেই যে এই মেয়ের সাথেই আমি কথা বলেছি ।

ঘন্টা খানেক পরেই নিমুর বাবা মা এসে হাজির হল । আমার চোখের সামনেই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো । তৃষা আমার দিকে তখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে । আমি নিজে কি কম অবাক হয়েছি ।

নিমুকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে সকাল হয়ে গেল । শেষ বারের মত নিমুকে দেখে ওর বাবা মায়ের কাছে তুলে দিয়ে এলাম । খোজ নিয়ে জানতে পারলাম যে ওর মা ওকে রেজাল্টর জন্য বকা দিয়েছিলো । তাই দুপুর বেলা যখন ওর মা ঘুমিয়ে ছিল তখন রাগ করে মেয়েটা বাসা থেকে একা একা বের হয়ে যায় । তারপরই রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে ! আহা রে বাচ্চা মেয়েটা !

তৃষার তখন ডিউটি শেষ হয়ে গেছে । গাড়ির ভেতরে ও আমার কোলে মাথা রেখেই খানিকটা শুয়ে পড়লো । চোখ বন্ধ করেই তৃষা বলল

-আমাদের মেয়েকে কিন্তু আমরা কোনদিন বকবো না । বুঝেছো !

আমি বললাম

-আমি তো বকবো না , তবে তুমি নাকি বকবা । তুমিই তো বলেছিলে ?

-নাহ । কোন দিন বকবো না । ওর যা জেদ হবে ! আর কোন দিন যদি ও একা একা বাসা থেকে বের হয়ে যায় তাহলে তোমার কিন্তু খবর আছে !

আমি হাসলাম । তারপর বলল

-আচ্ছা খবর আছে ! এখন একটু ঘুম দাও ।

ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতেই মনে মনে বললাম যে আমাদের মেয়েকে আমি কোন দিন চোখের আড়াল করবো না, কোন দিন না ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top