মাঘের শীত। গ্রামে তো বটেই, শহরেও তার আঁচ লাগছে। সবাই তাই গরম কাপড়ে উষ্ণতা খোঁজেন। তবে শুধু গরম কাপড় নয়, এমন কিছু খাবার আছে, যা শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে। সাধারণভাবে যে খাবারগুলো হজম হতে বেশি সময় নেয়, সেসব খাবার শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে আপনাকে উষ্ণ বোধ করতে সাহায্য করে।
এই প্রক্রিয়াটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে থার্মোজেনেসিস, যা খাদ্য বিপাককরণের ফলে আপনার শরীরের তাপ উৎপাদনে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন ও জটিল কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ খাবারগুলো হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে।
চলুন এমন কিছু খাবার সম্পর্কে এবার জানা যাক।
শুকনা ফল
শীতে শরীর গরম রাখতে বেশ কার্যকর শুকনা ফল (ড্রাই ফ্রুটস)। কাঠবাদাম, কাজুবাদাম বা আখরোট ভালো চর্বির বিশেষ উৎস। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ও শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। খেজুর ও কিশমিশ খেলেও ভালো ফল মিলবে। শীতপ্রধান দেশগুলোতে নাশতা হিসেবে এসব খাবার প্রাধান্য পায়। আয়রন পেতে খেজুর দুর্দান্ত। গর্ভবতী নারীরা দিনে এক মুঠো শুকনা ফল খেতে পারেন। নবজাতকের মায়েরা (যাঁরা শিশুকে দুধ পান করান) প্রতিদিন এক মুঠো শুকনা ফল খেতে পারেন। সরাসরি খেতে না চাইলে এগুলো দিয়ে তৈরি লাড্ডুও খেতে পারেন। বাচ্চারা যারা শুকনা ফল খেতে পছন্দ করে, তাদেরও প্রতিদিন একটি মুঠো দেওয়া যেতে পারে। শুকনা ফল গুঁড়া করে দুধ বা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়েও খাওয়া যায়।
বাদাম ও খেজুর খেলে শরীর গরম থাকে
বিভিন্ন মসলা
শরীরের উষ্ণতা বজায় রাখতে মসলা একটি কার্যকর উপাদান। যেহেতু আমাদের রন্ধনপ্রণালিতে মসলার ব্যবহার বেশি, তাই এটি সহজেই আমাদের দৈনন্দিন খাবারে মিশে যায়। শরীর উষ্ণ রাখতে পারে যেসব মসলা, তার মধ্যে আছে আদা, জিরা, গোলমরিচ ও দারুচিনি। রান্নার মসলার বাইরেও চা ও স্যুপে আদা ব্যবহার করে খাওয়া যায়। জিরা দীর্ঘ সময়ের জন্য শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। তাই আপনার খাবারে জিরা যোগ করতে পারেন।
মসলা খেলেও শরীর উষ্ণ হয়, ছবি: সংগৃহীত
ডিম
ডিমকে বলা হয় ‘শক্তির পাওয়ার হাউস’। ডিম কেবল আপনার শরীরকেই উষ্ণ রাখে না, এতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন ও ভিটামিন, যা আপনার শরীরকে শীতকালে বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে। তাই এই শীতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে একটি করে ডিম।
ডিম বিশ্বের জনপ্রিয় খাবারগুলোর ভেতর অন্যতম, ছবি: ইনস্টাগ্রাম
মধু
কিছুটা গরম পানিতে প্রতিদিন এক চা-চামচ মধু আপনার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। মধু আপনাকে সর্দিকাশি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। মধু প্রকৃতিগতভাবে উষ্ণ খাবার। নিয়মিত মধু পান এই শীতে আপনার শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করবে।
মধু খেলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে
আয়রন-সমৃদ্ধ খাবার
আপনার হাত-পা যদি সব সময় ঠান্ডা থাকে, তাহলে আপনার আয়রনের ঘাটতি বা রক্তশূন্যতা থাকতে পারে। শরীরের সমস্ত অংশে অক্সিজেন বহন করার জন্য আয়রন সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শরীর উষ্ণ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রনজাতীয় খাবার খেতে হবে। লাল মাংস (গরু, খাসি), কলিজা, হাঁস ও মুরগির মাংসেও আয়রন আছে। আয়রন পেতে আরও খেতে পারেন কলা, কচু, ডাঁটাশাক, লালশাক, শিম, শিমের বিচি, কাঁচকলা, চিড়া, ফুলকপির ডাঁটা, ধনেপাতা, কালোজাম, শালগম, পাকা তেঁতুল, মটরশুঁটি, স্ট্রবেরি, তরমুজ, আপেল, পেয়ারা, বেদানা, ওটস, লাল চাল ইত্যাদি। শুকনা ফলের মধ্যে কিশমিশ, কুমড়োর বিচি, খেজুর, আখরোট, বাদামেও আয়রন আছে। এসব খাওয়ার ফলে শরীর ঠিকঠাক আয়রন পাবে আর তার মাধ্যমে বাড়বে উষ্ণতা।
তিল
শীতে শরীর গরম রাখতে তিল দারুণ উপকারী। এটি ক্যালসিয়াম ও আয়রনে ভরপুর। গুড় ও তিলের লাড্ডু বানিয়ে খেতে পারেন। লেপের নিচে বসে চাল আর তিলভাজা খেতে ভালোবাসেন অনেকে। শরীর গরম রাখা ছাড়াও তিলের অন্য উপকারিতাও রয়েছে। তিল ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। চুল লম্বা হতে সাহায্য করে, হাড় ভালো রাখে ও শ্বাসযন্ত্রের রোগের জন্যও দুর্দান্ত কাজ করে।
তিলের তৈরি খাবারও খেতে পারেন উষ্ণতা পেতে
বিভিন্ন তরল খাবার
শরীরকে উষ্ণ রাখতে এই শীতে ধোঁয়া ওঠা মসলা চা কিংবা কফির জুড়ি মেলা ভার। পাশাপাশি রাখতে পারেন বিভিন্ন সবজি ও মুরগি দিয়ে তৈরি স্যুপ। দিনের সব ক্লান্তি মুছে ফেলতে দিনের শেষ ভাগে রাখতে পারেন এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ। এসব খাবার আপনাকে ভেতর থেকে উষ্ণতা দেবে। শীত তাড়াতে এর চেয়ে ভালো উপায় আছে কী!
[FA]pen[/FA] লেখক: নাহিদা আহমেদ, পুষ্টিবিদ